ঢাকা ০১:১৩ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শরণার্থী থেকে নায়করাজ হওয়ার গল্প

বিনোদন ডেস্কঃ
‘আমি আমার জীবনের অতীত ভুলি না। আমি এই শহরে রিফিউজি হয়ে এসেছি। স্ট্রাগল করেছি। না খেয়ে থেকেছি। যার জন্য পয়সার প্রতি আমার লোভ কোনোদিন আসেনি। ওটা আসেনি বলেই আজকে আমি এতদূর শান্তিতে এসেছি।’ এক বিশেষ সাক্ষাত্কারে কথাগুলো বলেছিলেন নায়করাজ রাজ্জাক।
আজ তিনি চলে গেলেন না ফেরার দেশে। কিন্তু তার এই দীর্ঘপথ চলা কি এতো সহজ ছিলো? ভক্তদের কাছে রাজ্জাক হিসেবে পরিচিত হলেও উনার নাম আব্দুর রাজ্জাক। জন্ম ১৯৪২ সালে কলকাতায়। ১৯৬৪ সালে শরণার্থী হয়ে ঢাকায় আসেন এই মহান নায়ক। এর পর জড়িয়ে পড়েন চলচ্চিত্রে। দু’একটা সিনেমায় ছোটখাটো চরিত্রে অভিনয় করার পর ৬৭ সালে মুক্তি পায় নায়ক হিসেবে তার প্রথম ছায়াছবি বেহুলা। সেই থেকে শুরু।
প্রায় ৫০ বছরের অভিনেতা হিসেবে রাজ্জাকের ঝুলিতে রয়েছে ৩০০’র মতো বাংলা ও উর্দু ভাষার চলচ্চিত্র। এর মধ্যে বেশ কয়েকটিই পেয়েছে ক্লাসিকের খ্যাতি।
১৯৬৪ সালের ২৬ এপ্রিল শূন্য হাতে ঢাকায় পৌঁছেন রাজ্জাক। সঙ্গে নিয়ে এসেছিলেন পীযূষ বসুর চিঠি এবং পরিচালক আবদুল জব্বার খান ও শব্দযন্ত্রী মনিবোসের ঠিকানা। স্ত্রী ও শিশুপুত্রকে স্টেডিয়ামে শত-শত উদ্ধাস্তুদের ভিড়ে রেখে রাজ্জাক গিয়ে দেখা করেন পরিচালক আবদুল জব্বার খানের সঙ্গে। তিনি রাজ্জাককে আশ্বাস দেন। রাজ্জাক পরে কমলাপুর এলাকায় মাসিক আশি টাকা ভাড়ায় বাসা ঠিক করে স্ত্রী-পুত্র নিয়ে ওঠেন। উদ্বাস্তু রাজ্জাকের আশ্রয় মিলল ঠিকই কিন্তু জীবিকা অর্জনের কোনো পথ নেই। তিনি দেখা করেন শব্দযন্ত্রী মনিবোসের সঙ্গে। ঘুরে বেড়ান চিত্রপুরীর অফিসে-অফিসে কাজের তাগিদে। দেখা করেন এহতেশাম, মোস্তাফিজ, সুভাষ দত্ত, সৈয়দ আওয়াল প্রমুখের সঙ্গে। কিন্তু ততটা পাত্তা পান না। কিন্তু জীবন থেমে থাকে না। পরিচালক আবদুল জব্বার খান তাকে কাজের সুযোগ করে দেন ‘ইকবাল ফিল্মস’ প্রতিষ্ঠানে। এ প্রতিষ্ঠানের ছবি ‘উজালা’য় তিনি হন পরিচালক কামাল আহমেদের সহকারী। সহকারী হিসেবে দ্বিতীয় ছবি ‘পরওয়ানায়’ কাজ শুরু করেন। কিন্তু ছবির কাজ শতকরা আশি ভাগ হওয়ার পরই তিনি সহকারীর কাজ ছেড়ে দেন। কাজ ছেড়ে দেয়ার কারণ, তিনি ছবিতে অভিনয় করবেন। এ জন্য শুরু হয় রাজ্জাকের আবার নতুন সংগ্রাম।
১৯৬৬ সালের ২৮ অক্টোবর জহির রায়হান পরিচালিত পৌরাণিক ছবি ‘বেহুলা’ মুক্তি পায়। ওই ছবি মুক্তির পর দর্শকরা পরিচিত হলেন নতুন নায়ক রাজ্জাকের সঙ্গে। দেখতে অনেকটা উত্তম কুমার ও বিশ্বজিতের মতো, হাসিখুশি, বয়সে তরুণ এ নবাগত নায়ককে দর্শকরা লুফে নেন বেহুলারূপী সুচন্দার বিপরীতে। এরপর আর পিছে ফিরে তাকাতে হয়নি নায়করাজকে।
ট্যাগস
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

সাবেক মন্ত্রী কায়কোবাদের মামলা প্রত্যাহারের দাবি ছাত্রদলের

শরণার্থী থেকে নায়করাজ হওয়ার গল্প

আপডেট সময় ০৪:৩৭:৩০ অপরাহ্ন, সোমবার, ২১ অগাস্ট ২০১৭
বিনোদন ডেস্কঃ
‘আমি আমার জীবনের অতীত ভুলি না। আমি এই শহরে রিফিউজি হয়ে এসেছি। স্ট্রাগল করেছি। না খেয়ে থেকেছি। যার জন্য পয়সার প্রতি আমার লোভ কোনোদিন আসেনি। ওটা আসেনি বলেই আজকে আমি এতদূর শান্তিতে এসেছি।’ এক বিশেষ সাক্ষাত্কারে কথাগুলো বলেছিলেন নায়করাজ রাজ্জাক।
আজ তিনি চলে গেলেন না ফেরার দেশে। কিন্তু তার এই দীর্ঘপথ চলা কি এতো সহজ ছিলো? ভক্তদের কাছে রাজ্জাক হিসেবে পরিচিত হলেও উনার নাম আব্দুর রাজ্জাক। জন্ম ১৯৪২ সালে কলকাতায়। ১৯৬৪ সালে শরণার্থী হয়ে ঢাকায় আসেন এই মহান নায়ক। এর পর জড়িয়ে পড়েন চলচ্চিত্রে। দু’একটা সিনেমায় ছোটখাটো চরিত্রে অভিনয় করার পর ৬৭ সালে মুক্তি পায় নায়ক হিসেবে তার প্রথম ছায়াছবি বেহুলা। সেই থেকে শুরু।
প্রায় ৫০ বছরের অভিনেতা হিসেবে রাজ্জাকের ঝুলিতে রয়েছে ৩০০’র মতো বাংলা ও উর্দু ভাষার চলচ্চিত্র। এর মধ্যে বেশ কয়েকটিই পেয়েছে ক্লাসিকের খ্যাতি।
১৯৬৪ সালের ২৬ এপ্রিল শূন্য হাতে ঢাকায় পৌঁছেন রাজ্জাক। সঙ্গে নিয়ে এসেছিলেন পীযূষ বসুর চিঠি এবং পরিচালক আবদুল জব্বার খান ও শব্দযন্ত্রী মনিবোসের ঠিকানা। স্ত্রী ও শিশুপুত্রকে স্টেডিয়ামে শত-শত উদ্ধাস্তুদের ভিড়ে রেখে রাজ্জাক গিয়ে দেখা করেন পরিচালক আবদুল জব্বার খানের সঙ্গে। তিনি রাজ্জাককে আশ্বাস দেন। রাজ্জাক পরে কমলাপুর এলাকায় মাসিক আশি টাকা ভাড়ায় বাসা ঠিক করে স্ত্রী-পুত্র নিয়ে ওঠেন। উদ্বাস্তু রাজ্জাকের আশ্রয় মিলল ঠিকই কিন্তু জীবিকা অর্জনের কোনো পথ নেই। তিনি দেখা করেন শব্দযন্ত্রী মনিবোসের সঙ্গে। ঘুরে বেড়ান চিত্রপুরীর অফিসে-অফিসে কাজের তাগিদে। দেখা করেন এহতেশাম, মোস্তাফিজ, সুভাষ দত্ত, সৈয়দ আওয়াল প্রমুখের সঙ্গে। কিন্তু ততটা পাত্তা পান না। কিন্তু জীবন থেমে থাকে না। পরিচালক আবদুল জব্বার খান তাকে কাজের সুযোগ করে দেন ‘ইকবাল ফিল্মস’ প্রতিষ্ঠানে। এ প্রতিষ্ঠানের ছবি ‘উজালা’য় তিনি হন পরিচালক কামাল আহমেদের সহকারী। সহকারী হিসেবে দ্বিতীয় ছবি ‘পরওয়ানায়’ কাজ শুরু করেন। কিন্তু ছবির কাজ শতকরা আশি ভাগ হওয়ার পরই তিনি সহকারীর কাজ ছেড়ে দেন। কাজ ছেড়ে দেয়ার কারণ, তিনি ছবিতে অভিনয় করবেন। এ জন্য শুরু হয় রাজ্জাকের আবার নতুন সংগ্রাম।
১৯৬৬ সালের ২৮ অক্টোবর জহির রায়হান পরিচালিত পৌরাণিক ছবি ‘বেহুলা’ মুক্তি পায়। ওই ছবি মুক্তির পর দর্শকরা পরিচিত হলেন নতুন নায়ক রাজ্জাকের সঙ্গে। দেখতে অনেকটা উত্তম কুমার ও বিশ্বজিতের মতো, হাসিখুশি, বয়সে তরুণ এ নবাগত নায়ককে দর্শকরা লুফে নেন বেহুলারূপী সুচন্দার বিপরীতে। এরপর আর পিছে ফিরে তাকাতে হয়নি নায়করাজকে।