ঢাকা ০৭:০৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শাওয়ালের ছয়টি নফল রোজার সওয়াব

ধর্ম ও জীবন ডেস্কঃ
অল্পসংখ্যক নেকআমলের বিনিময়ে আল্লাহর অসীম দয়া ও অনুগ্রহের পাত্র হওয়ার জন্য নবী করিম (স)-এর মুখ নিঃসৃত অমিয় বাণীতে প্রদত্ত উত্তম পন্থাসমূহ থেকে একটি অতি সহজ পন্থা হলো শাওয়াল মাসের ছয়টি নফল বা ঐচ্ছিক সিয়াম পালন। বান্দা যখন আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য এই ছয়টি নফল রোজা রাখবে, তখন আল্লাহ তাকে পূর্ণ একটি বছর রোজা রাখার সওয়াব দিয়ে দেবেন। রাসূলুল্লাহ (স) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি রমজানের রোজা রাখল, অতঃপর তার সঙ্গে সঙ্গে শাওয়াল মাসের ছয়টি রোজা রাখল, সে যেন পূর্ণবছরই রোজা রাখল।’ (মুসলিম: ১১৬৪)
শাওয়াল মাসের ছয়টি নফল রোজা পালন সারাটি বছর রোজা রাখার সওয়াব প্রাপ্তির এমনি একটি পরম সুবর্ণ সুযোগ এনে দেয়। হাদিস শরিফে উল্লেখ আছে যে, ‘রমজানের রোজা ১০ মাসের রোজার সমতুল্য আর (শাওয়ালের) ছয় রোজা দুই মাসের রোজার সমান; এই হলো এক বছরের রোজা।’ অন্য এক বর্ণনায় আছে, ‘যে ব্যক্তি রমজানের  রোজা শেষ করে ছয় দিন রোজা রাখবে, সেটা তার জন্য পুরো বছর রোজা রাখার সমতুল্য।’ (আহমাদ: ৫/২৮০, দারেমি: ১৭৫৫)
জাগতিক কল্যাণকর কাজে মানুষের প্রতিযোগিতাস্বরূপ শাওয়ালের ছয়টি নফল সিয়াম পালনের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করা মুস্তাহাব বা পছন্দনীয়। মাহে রমজানের পরবর্তী মাস শাওয়ালের মধ্যে ছয়টি রোজা রাখার ফজিলত কতই না মহান! কোনো ঈমানদারের পক্ষে সহজেই সম্ভব নয় এক বছর লাগাতার রোজা রাখা। অথচ এই নেকআমলটা বিরাট ফজিলতসম্পন্ন হওয়া সত্ত্বেও তা সাধারণ মানুষের পক্ষে সম্ভব। একদিন রাসূলুল্লাহ (স)-কে সারা বছর সিয়াম পালন সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বললেন, ‘নিঃসন্দেহে তোমার ওপর তোমার পরিবার-পরিজনের হক বা অধিকার রয়েছে। অতঃপর তিনি বললেন, মাহে রমজানের এবং তার পরবর্তী দিনগুলোরও প্রতি সোমবার ও বৃহস্পতিবারে রোজা রাখবে। সুতরাং যখন তুমি এই রোজাগুলো রাখবে তখন যেন তুমি সারাটা বছরই রোজা রাখলে।’ নবী করিম (স) বলেছেন, ‘আল্লাহর কাছে সবচেয়ে প্রিয় হজরত দাউদ (আ)-এর রোজা। তিনি এক দিন রোজা রাখতেন এবং এক দিন বিনা রোজায় থাকতেন।’ (বুখারি ও মুসলিম)
বান্দার ওপর আল্লাহ কতই না পরম দয়ালু ও অশেষ মেহেরবান যে তিনি অল্প আমলের বিনিময়ে অধিক সওয়াব দেবেন। বান্দা যখন আল্লাহর প্রেমে বিভোর হয়ে তাঁর সন্তুষ্টির লক্ষ্যে সামান্যতম আমল তাঁর দরবারে পেশ করে, আল্লাহ তখন বান্দার এই আমলকে ১০ গুণ পর্যন্ত বাড়িয়ে দেন। আল্লাহর পরম দয়া ও অনুগ্রহ বান্দারা তখনই লাভ করবেন যখন তারা নেকআমল করবেন। তাই মুসলমানরা যেন আল্লাহর খাস রহমতকে হাতছাড়া না করেন, বরং অল্প নেকআমলের বিনিময়েই যেন আল্লাহর অফুরন্ত দয়া ও অশেষ অনুগ্রহের অধিকারী হয়ে যান। সৎকর্ম সম্পাদনের প্রতিফল সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করেছেন, ‘কেউ কোনো সৎকর্ম করলে সে তার ১০ গুণ পাবে এবং কেউ কোনো অসৎকাজ করলে তাকে শুধু তারই প্রতিদান দেওয়া হবে।’ (সূরা আল-আনআম, আয়াত: ১৬) অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে, ‘অনন্তর কেউ অণু পরিমাণ সৎকর্ম করলে তা দেখতে পাবে এবং কেউ অণু পরিমাণ অসৎকর্ম করলে তাও দেখতে পাবে।’ (সূরা আয-যিলজাল, আয়াত: ৭-৮)
শাওয়ালের ঐচ্ছিক রোজা মাসের শুরু থেকে শেষ সময় পর্যন্ত পালন করা যাবে। ধারাবাহিক ও অধারাবাহিক যেভাবেই হোক না কেন, রোজাদার অবশ্যই এর সওয়াবের অধিকারী হবেন যদি আল্লাহর দরবারে রোজা কবুল হয়। তবে যার ওপর মাহে রমজানের রোজা কাজা আছে, সেই ব্যক্তি আগে কাজা আদায় করবেন, তারপর শাওয়ালের ঐচ্ছিক সিয়াম পালনে ব্রতী হবেন। কারণ, ওয়াজিব আদায়ের দায়িত্ব পালন নফল আদায়ের চেয়ে অধিক গুরুত্ব রাখে। রাসূলুল্লাহ (স) বলেছেন, ‘যে মাহে রমজানের পূর্ণ রোজা রাখবে, আর যার ওপর কাজা রয়ে গেছে সে তো রোজা পুরো করেছে বলে গণ্য হবে না যতক্ষণ ওই রোজাগুলোর কাজা আদায় না করে।’ (মুগনি: ৪/৪৪০)
রাসূলুল্লাহ (স) ফরজের আগে-পরে সুন্নত ও নফল প্রবর্তন করেছেন। যেমন- ফরজ নামাজের পূর্বাপর সুন্নতগুলো এবং মাহে রমজানের আগে ফজিলতময় শাবানের ঐচ্ছিক রোজা আর পরে বরকতময় শাওয়ালের নফল সিয়াম। এই নফল ইবাদতগুলো ফরজের ত্রুটি-বিচ্যুতিগুলোর ক্ষতিপূরণ করে দেয়। কারণ রোজাদার কখনো অনর্থক বাক্যালাপ, কুদৃষ্টি প্রভৃতি খারাপ ও পাপকাজ থেকে সম্পূর্ণরূপে বাঁচতে পারে না, যা তার রোজার সওয়াব কমিয়ে দেয়। একজন মুমিন বান্দা যেন রমজান-পরবর্তী দৈনন্দিন জীবনে ইসলামের শিক্ষা অনুসারে সর্বাবস্থায় মিথ্যাচার, পরচর্চা-পরনিন্দা, লোভ-লালসা, হিংসা-বিদ্বেষ, প্রতারণা-প্রবঞ্চনা, কপটতা-অসাধুতা, সুদ-ঘুষ, দুর্নীতিপরায়ণতা, আত্মকলহ, ঝগড়া-বিবাদ, সন্ত্রাস-সহিংসতা ইত্যাদি সামাজিক অনাচার জাতীয় শরিয়ত-গর্হিত ও অবৈধ কর্মকাণ্ড পরিহার করে আত্মসংযমী হন। কেউ যদি পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায়, সহিহ-শুদ্ধভাবে ফরজ ও নফল সিয়াম পালন এবং পবিত্র কোরআন তিলাওয়াত, জিকির-আজকার, দোয়া-দরুদ, তওবা-ইস্তিগফার— এসব ইবাদতের মধ্য দিয়ে প্রাত্যহিক দিন অতিবাহিত করেন, তাহলে নিঃসন্দেহে তিনি পরম করুণাময় আল্লাহর একজন খাঁটি আবেদ বা প্রিয় মকবুল বান্দা হিসেবে ইহকাল ও পরকালে সফলকাম হবেন!
ট্যাগস
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

মুরাদনগর উপজেলা বিএনপির ১৭ বছর পর বিজয় দিবস উদযাপন

শাওয়ালের ছয়টি নফল রোজার সওয়াব

আপডেট সময় ০৩:৪৪:০৬ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৩০ জুন ২০১৭
ধর্ম ও জীবন ডেস্কঃ
অল্পসংখ্যক নেকআমলের বিনিময়ে আল্লাহর অসীম দয়া ও অনুগ্রহের পাত্র হওয়ার জন্য নবী করিম (স)-এর মুখ নিঃসৃত অমিয় বাণীতে প্রদত্ত উত্তম পন্থাসমূহ থেকে একটি অতি সহজ পন্থা হলো শাওয়াল মাসের ছয়টি নফল বা ঐচ্ছিক সিয়াম পালন। বান্দা যখন আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য এই ছয়টি নফল রোজা রাখবে, তখন আল্লাহ তাকে পূর্ণ একটি বছর রোজা রাখার সওয়াব দিয়ে দেবেন। রাসূলুল্লাহ (স) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি রমজানের রোজা রাখল, অতঃপর তার সঙ্গে সঙ্গে শাওয়াল মাসের ছয়টি রোজা রাখল, সে যেন পূর্ণবছরই রোজা রাখল।’ (মুসলিম: ১১৬৪)
শাওয়াল মাসের ছয়টি নফল রোজা পালন সারাটি বছর রোজা রাখার সওয়াব প্রাপ্তির এমনি একটি পরম সুবর্ণ সুযোগ এনে দেয়। হাদিস শরিফে উল্লেখ আছে যে, ‘রমজানের রোজা ১০ মাসের রোজার সমতুল্য আর (শাওয়ালের) ছয় রোজা দুই মাসের রোজার সমান; এই হলো এক বছরের রোজা।’ অন্য এক বর্ণনায় আছে, ‘যে ব্যক্তি রমজানের  রোজা শেষ করে ছয় দিন রোজা রাখবে, সেটা তার জন্য পুরো বছর রোজা রাখার সমতুল্য।’ (আহমাদ: ৫/২৮০, দারেমি: ১৭৫৫)
জাগতিক কল্যাণকর কাজে মানুষের প্রতিযোগিতাস্বরূপ শাওয়ালের ছয়টি নফল সিয়াম পালনের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করা মুস্তাহাব বা পছন্দনীয়। মাহে রমজানের পরবর্তী মাস শাওয়ালের মধ্যে ছয়টি রোজা রাখার ফজিলত কতই না মহান! কোনো ঈমানদারের পক্ষে সহজেই সম্ভব নয় এক বছর লাগাতার রোজা রাখা। অথচ এই নেকআমলটা বিরাট ফজিলতসম্পন্ন হওয়া সত্ত্বেও তা সাধারণ মানুষের পক্ষে সম্ভব। একদিন রাসূলুল্লাহ (স)-কে সারা বছর সিয়াম পালন সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বললেন, ‘নিঃসন্দেহে তোমার ওপর তোমার পরিবার-পরিজনের হক বা অধিকার রয়েছে। অতঃপর তিনি বললেন, মাহে রমজানের এবং তার পরবর্তী দিনগুলোরও প্রতি সোমবার ও বৃহস্পতিবারে রোজা রাখবে। সুতরাং যখন তুমি এই রোজাগুলো রাখবে তখন যেন তুমি সারাটা বছরই রোজা রাখলে।’ নবী করিম (স) বলেছেন, ‘আল্লাহর কাছে সবচেয়ে প্রিয় হজরত দাউদ (আ)-এর রোজা। তিনি এক দিন রোজা রাখতেন এবং এক দিন বিনা রোজায় থাকতেন।’ (বুখারি ও মুসলিম)
বান্দার ওপর আল্লাহ কতই না পরম দয়ালু ও অশেষ মেহেরবান যে তিনি অল্প আমলের বিনিময়ে অধিক সওয়াব দেবেন। বান্দা যখন আল্লাহর প্রেমে বিভোর হয়ে তাঁর সন্তুষ্টির লক্ষ্যে সামান্যতম আমল তাঁর দরবারে পেশ করে, আল্লাহ তখন বান্দার এই আমলকে ১০ গুণ পর্যন্ত বাড়িয়ে দেন। আল্লাহর পরম দয়া ও অনুগ্রহ বান্দারা তখনই লাভ করবেন যখন তারা নেকআমল করবেন। তাই মুসলমানরা যেন আল্লাহর খাস রহমতকে হাতছাড়া না করেন, বরং অল্প নেকআমলের বিনিময়েই যেন আল্লাহর অফুরন্ত দয়া ও অশেষ অনুগ্রহের অধিকারী হয়ে যান। সৎকর্ম সম্পাদনের প্রতিফল সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করেছেন, ‘কেউ কোনো সৎকর্ম করলে সে তার ১০ গুণ পাবে এবং কেউ কোনো অসৎকাজ করলে তাকে শুধু তারই প্রতিদান দেওয়া হবে।’ (সূরা আল-আনআম, আয়াত: ১৬) অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে, ‘অনন্তর কেউ অণু পরিমাণ সৎকর্ম করলে তা দেখতে পাবে এবং কেউ অণু পরিমাণ অসৎকর্ম করলে তাও দেখতে পাবে।’ (সূরা আয-যিলজাল, আয়াত: ৭-৮)
শাওয়ালের ঐচ্ছিক রোজা মাসের শুরু থেকে শেষ সময় পর্যন্ত পালন করা যাবে। ধারাবাহিক ও অধারাবাহিক যেভাবেই হোক না কেন, রোজাদার অবশ্যই এর সওয়াবের অধিকারী হবেন যদি আল্লাহর দরবারে রোজা কবুল হয়। তবে যার ওপর মাহে রমজানের রোজা কাজা আছে, সেই ব্যক্তি আগে কাজা আদায় করবেন, তারপর শাওয়ালের ঐচ্ছিক সিয়াম পালনে ব্রতী হবেন। কারণ, ওয়াজিব আদায়ের দায়িত্ব পালন নফল আদায়ের চেয়ে অধিক গুরুত্ব রাখে। রাসূলুল্লাহ (স) বলেছেন, ‘যে মাহে রমজানের পূর্ণ রোজা রাখবে, আর যার ওপর কাজা রয়ে গেছে সে তো রোজা পুরো করেছে বলে গণ্য হবে না যতক্ষণ ওই রোজাগুলোর কাজা আদায় না করে।’ (মুগনি: ৪/৪৪০)
রাসূলুল্লাহ (স) ফরজের আগে-পরে সুন্নত ও নফল প্রবর্তন করেছেন। যেমন- ফরজ নামাজের পূর্বাপর সুন্নতগুলো এবং মাহে রমজানের আগে ফজিলতময় শাবানের ঐচ্ছিক রোজা আর পরে বরকতময় শাওয়ালের নফল সিয়াম। এই নফল ইবাদতগুলো ফরজের ত্রুটি-বিচ্যুতিগুলোর ক্ষতিপূরণ করে দেয়। কারণ রোজাদার কখনো অনর্থক বাক্যালাপ, কুদৃষ্টি প্রভৃতি খারাপ ও পাপকাজ থেকে সম্পূর্ণরূপে বাঁচতে পারে না, যা তার রোজার সওয়াব কমিয়ে দেয়। একজন মুমিন বান্দা যেন রমজান-পরবর্তী দৈনন্দিন জীবনে ইসলামের শিক্ষা অনুসারে সর্বাবস্থায় মিথ্যাচার, পরচর্চা-পরনিন্দা, লোভ-লালসা, হিংসা-বিদ্বেষ, প্রতারণা-প্রবঞ্চনা, কপটতা-অসাধুতা, সুদ-ঘুষ, দুর্নীতিপরায়ণতা, আত্মকলহ, ঝগড়া-বিবাদ, সন্ত্রাস-সহিংসতা ইত্যাদি সামাজিক অনাচার জাতীয় শরিয়ত-গর্হিত ও অবৈধ কর্মকাণ্ড পরিহার করে আত্মসংযমী হন। কেউ যদি পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায়, সহিহ-শুদ্ধভাবে ফরজ ও নফল সিয়াম পালন এবং পবিত্র কোরআন তিলাওয়াত, জিকির-আজকার, দোয়া-দরুদ, তওবা-ইস্তিগফার— এসব ইবাদতের মধ্য দিয়ে প্রাত্যহিক দিন অতিবাহিত করেন, তাহলে নিঃসন্দেহে তিনি পরম করুণাময় আল্লাহর একজন খাঁটি আবেদ বা প্রিয় মকবুল বান্দা হিসেবে ইহকাল ও পরকালে সফলকাম হবেন!