তথ্যপ্রযুক্তি ডেস্কঃ
প্রযুক্তি আমাদের জন্য আশীর্বাদ স্বরূপ। আমরা খুব সহজেই এবং খুব কম সময়েই প্রযুক্তির কল্যাণে হাতের নাগালে পাচ্ছি সব তথ্য। আর শিশুদের ক্ষেত্রেও এখন তথ্য নির্ভরশীলতার জন্য প্রযুক্তি শেষ সম্বল। ক্লাসের পড়া থেকে শুরু করে নানা ধরনের প্রজেক্টের কাজের জন্য তারা তথ্য জোগাড় করে প্রযুক্তির মাধ্যমে। এমনকি শিশুর একাকিত্বেরও সঙ্গী এখন প্রযুক্তি। বাইরে যখন খেলার জন্য পর্যাপ্ত মাঠ নেই, তখন কম্পিউটারই তাদের সম্বল। তাছাড়া শিশুর বেড়ে ওঠার ক্ষেত্রে এটি নানাভাবে সাহায্য করে। সে তার পড়ার ক্ষেত্রে ট্যাবের সাহায্য পড়তে পারে। অক্ষর একা একা চিনতে পারে। খেলার ছলে বাসায় বসে নিজের পড়া শেষ করতে পারে। সাধারণ জ্ঞানের ক্ষেত্রে ইন্টারনেট শিশুকে সাহায্য করে নানাভাবে। বাইরের দেশগুলোয় কী হচ্ছে তা সে জানতে পারে। শিশুকে সামাজিক হয়ে উঠতে সাহায্য করে এই প্রযুক্তি। বর্তমান সময়টা যেহেতু প্রযুক্তিনির্ভর। তাই এর বাইরে থাকা সম্ভব নয়। তাই বলে প্রযুক্তি আমাদের গিলে খাবে, তাও কাম্য নয়।
বিশেষজ্ঞদের মতে, আমরা প্রযুক্তিকে ব্যবহার করতে চাই। তবে লক্ষ রাখতে হবে, প্রযুক্তি যেন আমাদের ব্যবহার না করে। বিশেষ করে শিশুদের প্রযুক্তি ব্যবহারে অভিভাবককে সচেতন হতে হবে। ব্যবহারের শুরু থেকে সময় নির্ধারণ করে দিতে হবে। তাকে বোঝাতে হবে এটি শুধু খেলার মাধ্যম নয়। কিংবা জানার মাধ্যম। এজন্য অভিভাবকদেরও শিশুদের সামনে প্রযুক্তি ব্যবহারে সতর্ক থাকতে হবে। বিশেষজ্ঞদের মতে, দুই বছরের কম বয়সী শিশুদের কোনোভাবেই প্রযুক্তির সঙ্গে সম্পর্ক গড়তে দেওয়া উচিত নয়। তাদের সামনে প্রযুক্তি পণ্য উন্মোচন করাও উচিত নয়। শিশুর বয়স তিন থেকে পাঁচ বছর হলে দৈনিক বড়জোর এক ঘণ্টা প্রযুক্তি পণ্য ব্যবহার করতে দেওয়া যেতে পারে।
এক গবেষণায় দেখা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রের ১২ থেকে ১৭ বছর বয়সী শিশু-কিশোরদের চার ভাগের তিন ভাগ মোবাইল ফোন ব্যবহার করে। তাদের প্রায় অর্ধেকের মোবাইল ফোনে ইন্টারনেট, ই-মেইল ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে। তবে ইন্টারনেটে তাদের গতিবিধির ওপর নজর রাখতে অভিভাবকরা ব্যয়বহুল এবং বিনামূল্যের বেশ কিছু প্রযুক্তি বা অ্যাপও ব্যবহার করছেন। অ্যাপেলের জনক স্টিভ জবস আইপ্যাড এবং আইফোনের যিনি স্বপ্নদ্রষ্টা তিনি তার সন্তানদের আইপ্যাড ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিলেন।
এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, আমাকে এবং আমার স্ত্রীকে আমাদের সন্তানরা ফ্যাসিস্ট বলে থাকে। তারা বলে, আমরা প্রযুক্তি নিয়ে একটু বেশি উদ্বিগ্ন। প্রযুক্তির বিপজ্জনক দিকগুলো আমরা সরাসরি অবলোকন করেছি। আমি নিজের মধ্যেও এটি দেখেছি। আমি চাই না আমার সন্তানদের ক্ষেত্রে সেটি ঘটুক।
তিনি বলেন, আমরা আমাদের সন্তানদের অসম্পূর্ণ এবং বিকলাঙ্গ হিসেবে গড়ে তুলছি, যাদের মধ্যে থাকবে না চিন্তাশক্তি কিংবা সৃজনশীলতা। কিন্তু আমরা প্রযুক্তিকে আত্মীকরণ করেছি বই পড়ে, সামাজিকীকরণের মাধ্যমে, অন্যান্য মানুষের সঙ্গে মিলেমিশে, কোনো গুগল সার্চ ছাড়াই। আজকাল ক্লাস ফোর বা ফাইভের বাচ্চাদের হাতেও মোবাইল ফোন দেখা যায়। স্কুলে এমন সব দামি মোবাইল ফোন নিয়ে আসে কোনো কোনো ছেলেমেয়ে, যা আমরাও ব্যবহার করার সাহস পাই না বলে জানিয়েছেন বিভিন্ন স্বনামধন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা।
তারা বলেন, আমরা চিন্তা করি, অভিভাবকরা এত দামি সেট কেমন করে শিশুদের হাতে দেন! আসুন, সতর্ক হই নিজের সন্তানদের প্রযুক্তি ব্যবহারের প্রতি। প্রযুক্তি ব্যবহারের বিষয়ে ১৮ বছর বয়স পর্যন্ত ফ্যাসিস্ট হয়ে উঠি তাদের স্বার্থে। তাই বলে মারধর করে নয়; অপকারিতার দিকটা তাদেরকে অবশ্যই বুঝিয়ে দিতে হবে।