ঢাকা ১২:২০ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৫, ৪ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সন্তানদের অবহেলায় পরিত্যক্ত অসহায় মা, পাশে দাড়ালেন মুরাদনগরের প্রশাসন

রায়হান চৌধুরী, বিশেষ প্রতিনিধিঃ

মানুষ মানুষের জন্য—এই কথার বাস্তব রূপ দেখা গেল কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলায়। সন্তানদের অবহেলায় পরিত্যক্ত এক অসহায় বৃদ্ধার পাশে দাঁড়িয়েছে মানবিক প্রশাসন ও এক উদার হৃদয়ের মানুষ।

শনিবার (১১ অক্টোবর) দিবাগত রাতে উপজেলার নবীপুর পশ্চিম ইউনিয়নের কোম্পানীগঞ্জ বাজারের ব্যস্ততার ভিড় ধীরে ধীরে মিলিয়ে যাচ্ছে, দোকানপাট বন্ধের প্রস্তুতি চলছে। ঠিক সেই সময়েই দেখা মেলে এক উদভ্রান্ত বৃদ্ধার—চোখে হতভম্বতা, কথায় জড়তা। কেউ জানে না কে তিনি, কোথা থেকে এসেছেন।

পরে জানা যায়, তার নাম মমতাজ বেগম (৬০)। এলোমেলো কথা বলছিলেন, নিজের ঠিকানা বলতে পারছিলেন না। তখনই এগিয়ে আসেন কোম্পানীগঞ্জ বাজারের বিশিষ্ট থাই গ্লাস ব্যবসায়ী মানবিক ফেরদৌস রহমান।

রাত প্রায় দশটার দিকে তিনি বৃদ্ধাটিকে নিয়ে উপস্থিত হন মুরাদনগর থানায়। থানার কর্মকর্তারা বিষয়টি নিয়ে যোগাযোগ করেন উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের সঙ্গে। কিন্তু অফিস বন্ধ থাকায় ফেরদৌস আহমেদ নিজেই ফোন করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আবদুর রহমান এর কাছে।

ইউএনও তাৎক্ষণিক নির্দেশ দেন, বৃদ্ধাকে হাসপাতালে ভর্তি করানোর ব্যবস্থা করতে। পরে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ও আবাসিক মেডিকেল অফিসারের তত্ত্বাবধানে মমতাজ বেগমকে ভর্তি করানো হয়।

একইসঙ্গে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাসপাতালে একটি মোবাইল টিম পাঠান পরিচয় নিশ্চিত করার জন্য। বারবার ভিন্ন কথা বললেও শেষমেশ চিকিৎসকের সহায়তায় জানা যায়, বৃদ্ধার নাম মমতাজ বেগম, স্বামী মৃত আয়াত আলী, বাড়ি বীরতলা গ্রাম, ইলিয়টগঞ্জ, দাউদকান্দি, কুমিল্লা।

এরপর ইউএনও সহকারী কমিশনার (ভূমি) সাকিব হাসান খান-কে হাসপাতালে পাঠান সার্বিক তদারকির জন্য। পাশাপাশি যোগাযোগ করা হয় দাউদকান্দির ইউএনও নাসরিন আক্তার-এর সঙ্গে। তার সহযোগিতায় স্থানীয় চেয়ারম্যান ও মেম্বারদের মাধ্যমে মমতাজ বেগমের পরিবারের সন্ধান পাওয়া যায়।

তবে সন্তানদের খবর দেওয়া হলেও তারা আসেননি সেদিন রাতে। বরং জানানো হয়, “সকালে আসবো।” রাত গভীর হয়, হাসপাতালের বিছানায় একা মমতাজ বেগম। পাশে এক নারী চৌকিদার তাঁর সেবায় নিয়োজিত। যে মায়ের মমতায় সন্তানেরা বড় হয়েছে, আজ সেই মায়েরই পাশে কেউ নেই, শুধু আছে প্রশাসনের মানবিক হাত আর কিছু দয়ালু মানুষ।

ট্যাগস

সন্তানদের অবহেলায় পরিত্যক্ত অসহায় মা, পাশে দাড়ালেন মুরাদনগরের প্রশাসন

আপডেট সময় ০১:৩৬:২৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ১২ অক্টোবর ২০২৫

রায়হান চৌধুরী, বিশেষ প্রতিনিধিঃ

মানুষ মানুষের জন্য—এই কথার বাস্তব রূপ দেখা গেল কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলায়। সন্তানদের অবহেলায় পরিত্যক্ত এক অসহায় বৃদ্ধার পাশে দাঁড়িয়েছে মানবিক প্রশাসন ও এক উদার হৃদয়ের মানুষ।

শনিবার (১১ অক্টোবর) দিবাগত রাতে উপজেলার নবীপুর পশ্চিম ইউনিয়নের কোম্পানীগঞ্জ বাজারের ব্যস্ততার ভিড় ধীরে ধীরে মিলিয়ে যাচ্ছে, দোকানপাট বন্ধের প্রস্তুতি চলছে। ঠিক সেই সময়েই দেখা মেলে এক উদভ্রান্ত বৃদ্ধার—চোখে হতভম্বতা, কথায় জড়তা। কেউ জানে না কে তিনি, কোথা থেকে এসেছেন।

পরে জানা যায়, তার নাম মমতাজ বেগম (৬০)। এলোমেলো কথা বলছিলেন, নিজের ঠিকানা বলতে পারছিলেন না। তখনই এগিয়ে আসেন কোম্পানীগঞ্জ বাজারের বিশিষ্ট থাই গ্লাস ব্যবসায়ী মানবিক ফেরদৌস রহমান।

রাত প্রায় দশটার দিকে তিনি বৃদ্ধাটিকে নিয়ে উপস্থিত হন মুরাদনগর থানায়। থানার কর্মকর্তারা বিষয়টি নিয়ে যোগাযোগ করেন উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের সঙ্গে। কিন্তু অফিস বন্ধ থাকায় ফেরদৌস আহমেদ নিজেই ফোন করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আবদুর রহমান এর কাছে।

ইউএনও তাৎক্ষণিক নির্দেশ দেন, বৃদ্ধাকে হাসপাতালে ভর্তি করানোর ব্যবস্থা করতে। পরে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ও আবাসিক মেডিকেল অফিসারের তত্ত্বাবধানে মমতাজ বেগমকে ভর্তি করানো হয়।

একইসঙ্গে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাসপাতালে একটি মোবাইল টিম পাঠান পরিচয় নিশ্চিত করার জন্য। বারবার ভিন্ন কথা বললেও শেষমেশ চিকিৎসকের সহায়তায় জানা যায়, বৃদ্ধার নাম মমতাজ বেগম, স্বামী মৃত আয়াত আলী, বাড়ি বীরতলা গ্রাম, ইলিয়টগঞ্জ, দাউদকান্দি, কুমিল্লা।

এরপর ইউএনও সহকারী কমিশনার (ভূমি) সাকিব হাসান খান-কে হাসপাতালে পাঠান সার্বিক তদারকির জন্য। পাশাপাশি যোগাযোগ করা হয় দাউদকান্দির ইউএনও নাসরিন আক্তার-এর সঙ্গে। তার সহযোগিতায় স্থানীয় চেয়ারম্যান ও মেম্বারদের মাধ্যমে মমতাজ বেগমের পরিবারের সন্ধান পাওয়া যায়।

তবে সন্তানদের খবর দেওয়া হলেও তারা আসেননি সেদিন রাতে। বরং জানানো হয়, “সকালে আসবো।” রাত গভীর হয়, হাসপাতালের বিছানায় একা মমতাজ বেগম। পাশে এক নারী চৌকিদার তাঁর সেবায় নিয়োজিত। যে মায়ের মমতায় সন্তানেরা বড় হয়েছে, আজ সেই মায়েরই পাশে কেউ নেই, শুধু আছে প্রশাসনের মানবিক হাত আর কিছু দয়ালু মানুষ।