স্বাস্থ্য ;
স্বাস্থ্যকর ডায়েটে ফল, শাকসব্জী, বাদাম, শিম, আস্ত শস্য এবং কম ফ্যাটযুক্ত দুগ্ধজাতীয় খাবার এবং কম লবণ, চিনিযুক্ত পানীয়, সাদা ময়দা এবং লাল মাংস রয়েছে। কিন্তু এত এত স্বাস্থ্যকর খাবারের মধ্যে আপনি কোথা থেকে শুরু করবেন বা কোনটি বেছে নেবেন তা নিয়ে সমস্যার সৃষ্টি হয়। এখানে এমন দশটি খাবারের তালিকা দেয়া হলো। যেগুলো অত্যন্ত স্বাস্থ্যকর এবং খেতেও সুস্বাদু।
মিষ্টি আলু
সুস্বাদু মিষ্টি আলু নিয়মিত খেলে দূরে থাকতে পারবেন বিভিন্ন রোগ থেকে। এটি পুষ্টির জন্য সুপারস্টার। বেটা-ক্যারোটিন সমৃদ্ধ মিষ্টি আলুতে রয়েছে ভিটামিন সি। এটি পটাশিয়াম ও ফাইবারের উৎস। কিছুটা অলিভ ওয়েল দিয়ে হালকা বাদামী রঙয়ের করে ভেজে নিন। মশলা বা দারুচিনি গুড়া ও মরিচের গুড়া ছিটিয়ে উপভোগ করুন।
আম
এক কাপ আমের রসে প্রতিদিনের ভিটামিন সি এর শতভাগ, ভিটামিন ‘এ’ এর এক তৃতীয়াংশ, রক্তচাপ কমানো পটাশিয়ামের একটি ভালো ডোজ এবং ৩ গ্রাম ফাইবার সরবরাহ করে। এর পাশাপাশি অন্যান্য উপকারিতা তো রয়েছেই। মার্চ থেকে জুন পর্যন্ত আমের মৌসুমে এটি নিয়মিত খেতে পারেন।
মিষ্টি ছাড়া দই
দই শুধু মজাদার খাবারই নয়, এটি স্বাস্থ্যকরও বটে। খাদ্যতালিকায় দুগ্ধজাত এ উপাদানটি নিয়মিত রাখলে আপনি বেশ কিছু স্বাস্থ্যগত সুবিধা পাবেন। দইয়ে রয়েছে প্রচুর ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ‘ডি’। দুটি উপাদানই হাড়ের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। দইয়ে রয়েছে অসংখ্য উপকারী ব্যাকটেরিয়া। এ ব্যাকটেরিয়াগুলো দেহের ক্ষতি করে না বরং হজমে সহায়তা করে। এ ছাড়া দেহের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতেও কাজ করে দইয়ের ব্যাকটেরিয়া। দইয়ের পটাসিয়াম রক্তচাপ কমাতে সহায়তা করে। দইয়ের উপাদান ত্বককে মসৃণ করে। দইয়ের ল্যাকটিক এসিড ত্বককে পরিষ্কার করে এবং মৃত কোষ দূর করে। দইয়ে অন্যান্য উপাদানের পাশাপাশি রয়েছে প্রচুর ভিটামিন। বিশেষ করে উল্লেখযোগ্য মাত্রায় ভিটামিন ‘বি৫’, জিংক, পটাশিয়াম, ফসফরাস, আয়োডিন ও রিবোফ্লাভিন।
ব্রোকলি
এটি এমন একটি সবজি যাতে ক্যালোরির পরিমাণ খুবই কম কিন্তু ব্রোকলি ভিটামিন, মিনারেল আর ফাইবার এ পরিপূর্ণ। প্রত্যেকদিন খাবারে ব্রোকলি রাখলে তা আপনার সুস্বাস্থ্যের কারণ হতে পারে। এর ডাট এবং ফুল সাধারণত সিদ্ধ করে এবং বিভিন্ন ভাবে রান্না করে খাওয়া যায়। অনেকে কাঁচাও খেয়ে থাকেন।
ব্রোকলিতে রয়েছে প্রচুর পরিমানে ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন কে যা হাড়ের ক্ষয়রোধে সহায়তা করে। ফাইবার আমাদের পরিপাকে কল্যাণকর ভূমিকা পালন করে। কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। ব্রোকলিতে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন এ আছে যা রাতকানা রোগ প্রতিরোধ করে এবং দৃষ্টি শক্তি বৃদ্ধি করে।
প্রাকৃতিক স্যামন মাছ
ওমেগা-থ্রি ফ্যাট সমৃদ্ধ প্রাকৃতিক (চাষ করা ছাড়া) স্যামন জাতীয় মাছ হার্ট অ্যাটাক এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে সহায়তা করে। শরীরকে একশ শতাংশ সক্রিয় রাখতে এ ফ্যাটি অ্যাসিড অত্যন্ত জরুরি। অনেক রোগ প্রতিরোধেও কার্যকরী এটি। হার্টের রোগ, ডিমেনশিয়া, মানসিক অবসাদ কমাতে কাজে আসে এ মাছ। এতে অনেক ভিটামিন, মিনারেল এবং প্রোটিন থাকে। খুব সহজেই স্যামন ভাজি করা যায়, এতে তেমন বেশি কিছু উপকরণেরও প্রয়োজন হয় না৷ হালকাভাবে লেবুর রস, লবন আর গোলমরিচের গুঁড়ো দিয়ে ভাজি করলেও অনেক স্বাদ৷ তবে কেউ চাইলে নিজের ইচ্ছেমতোও করতে পারেন৷
ওটমিল
ব্রেকফাস্ট হিসেবে পাশ্চাত্যের দেশগুলোতে ওটমিল একটি পরিচিত নাম। স্বাস্থ্য সুরক্ষায় ওটমিলের অবদানের কারণে এটি আমাদের দেশেও জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। ওটমিলে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার, যা শরীরের ক্ষতিকর কোলেস্টেরল এর পরিমাণ কমাতে সাহায্য করে। পাশাপাশি উপকারী কোলেস্টেরল এর পরিমাণ বৃদ্ধি করে। ফলে এটি উচ্চ রক্তচাপ ও হৃদরোগ নিয়ন্ত্রণে খুবই উপযোগী। কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে। ওটমিল রক্তের চিনির পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখে। সপ্তাহে ৫-৬ বার ওটমিল গ্রহণ টাইপ-২ ডায়াবেটিস ৩৯% নিয়ন্ত্রণ করে থাকে।
চুলায় ফুটানো গরম পানিতে পরিমাণ মতো ওটমিল দিয়ে ৫-১০ মিনিট নাড়ুন। ঘন হয়ে এলে নামিয়ে নিন। স্বাদের জন্য এতে সামান্য লবণ যোগ করতে পারেন। চাইলে নানা রকম মশলা যোগ করে তৈরি করতে পারেন ওটসের খিঁচুড়ি। অথবা ওটমিলে ননিবিহীন দুধ ও তাজা ফল যোগ করেও খেতে পারেন।
ছোলা
ছোলা একটি উচ্চমাত্রার প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার। প্রতি ১০০ গ্রাম ছোলায় আমিষ থাকে প্রায় ১৮ গ্রাম, কার্বোহাইড্রেট থাকে ৬৫ গ্রাম, ফ্যাট থাকে ৫ গ্রাম, ক্যালসিয়াম থাকে ২০০ মিলিগ্রাম, ভিটামিন ‘এ’ থাকে ১৯২ মাইক্রোগ্রাম এবং এছাড়া প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন বি-১ ও বি-২ থাকে। ছোলা কাঁচা ভিজিয়ে খোসা ছাড়িয়ে কাঁচা আদার সঙ্গে খেলে শরীরে আমিষ ও অ্যান্টিবায়োটিকের চাহিদা পূরণ করে। আমিষ মানুষকে শক্তিশালী আর অ্যান্টিবায়োটিক শরীরের রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে। এছাড়া ছোলা সেদ্ধ বা তরকারি হিসেবে রান্না করেও খাওয়া যায়।
তরমুজ
গ্রীষ্মের প্রচন্ড দাবদাহে একটু স্বস্তি মিলতে এক ফালি তরমুজের জুড়ি নেই। তরমুজে ৯২ শতাংশই পানি, যা শরীরে পানির চাহিদা পূরণ করে। এক কাপ তরমুজের রসে প্রায় ৪৫ ক্যালরি শক্তি পাবেন। এতে চর্বি বা ফ্যাট নেই, চিনির পরিমাণও খুব কম। প্রতিদিন এক কাপ তরমুজের রস খেলেই আপনি ভিটামিন সি ২১ শতাংশ ও ভিটামিন এ এর চাহিদা ২১ শতাংশ পূরণ করতে পারেন। শুধু তাই নয়, এই ফলে আছে বেটা-ক্যারোটিন। এছাড়া লাইকোপিন নামে যে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট থাকে তরমুজে, তা উচ্চ রক্তচাপ ও হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়। গবেষণায় দেখা গেছে, তরমুজ কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখে। তরমুজে ভিটামিন এ, ভিটামিন বি ৬, ভিটামিন সি, ম্যাগনেশিয়াম ও পটাসিয়াম থাকে। এই উপাদানগুলো হৃদযন্ত্র ভালো রাখতে সাহায্য করে।
বাটারনাট স্কোয়াশ
বাটারনাট স্কোয়াশের স্যুপ অত্যন্ত সুস্বাদু। এতে প্রচুর ভিটামিন এ এবং সি এবং ফাইবার রয়েছে। বহু পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ স্কোয়াশ ত্বক ও স্বাস্থ্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ডায়বেটিস বা ক্যান্সার রোগ প্রতিরোধেও বড় ভূমিকা পালন করে স্কোয়াশ। এছাড়াও এটি হার্টকে ভালো রাখে ও ইনসোমনিয়া থেকে রক্ষা করে। এমনকি আর্থ্রাইটিস, আলসার ও বিভিন্ন রকম ইনফেকশন থেকে রক্ষা করতে পারে স্কোয়াশ।
বিভিন্ন সবুজ শাক
সবুজ পাতার যেকোনো শাক শরীরের পক্ষে অনেক উপকারী, কারণ শাকের মধ্যে যেসব খনিজ থাকে তা শরীরের উপকারে কাজে লাগে। বলা যেতে পারে খনিজ গুলি আমাদের শরীরের চাহিদা পূরণ করে। একমাত্র শাক যা চোট জলদি রান্না করা যায় আর তা সহজে হজম করা যায়। এসব শাক ভিটামিন এ, সি এবং কে, ফোলেট, পটাসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ক্যালসিয়াম, আয়রন এবং ফাইবার দিয়ে পরিপূর্ণ।