ঢাকা ০১:৩৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৩ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সরকারি হচ্ছে ৫,৫০০ প্রাথমিক বিদ্যালয়

জাতীয় ডেস্কঃ
ক্ষমতার শেষ বছরে আরও সাড়ে পাঁচ হাজার প্রাথমিক বিদ্যালয় সরকারি করার চিন্তাভাবনা করছে সরকার। এরই মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে সরকারিকরণের বাইরে থাকা বিদ্যালয়ের তথ্য জানতে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছে। মন্ত্রণালয় অতি গোপনে একটি সার সংক্ষেপ তৈরি করে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠিয়েছে।
বিষয়টি স্বীকার করে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ড. এ এফ এম মনজুর কাদির গত রবিবার আজকালের খবরকে বলেন, ‘স্কুল জাতয়ীকরণ করতে মন্ত্রী ও এমপিরা অসংখ্য ডিও লেটার (বেসরকারি চাহিদাপত্র) দিচ্ছেন। তাদের চাপের কারণেই হয়তো প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে জাতীয়করণের বাইরে থাকা স্কুলের তথ্য জানতে চেয়েছে। আমরা সার সংক্ষেপ তৈরি করে পাঠিয়েছি। এখন সরকারের সিদ্ধান্তের ব্যাপার। নির্দেশনা পেলে জাতীয়করণের পরবর্তী কার্যক্রম শুরু করবো।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘জাতীয়করণের বাইরে থাকা স্কুলের সঠিক সংখ্যা মন্ত্রণালয়ে নেই।’
মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানায়, গত ২০ ফেব্রুয়ারি প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিবের কাছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে একটি চিঠি পাঠানো হয়। তাতে বলা হয়েছে, ইতোপূর্বে ঘোষিত ২৬ হাজার ১৯৩টি প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণে বিষয়ে হালনাগাদ তথ্য দেওয়ার জন্য অনুরোধ করা হলো। এছাড়া তালিকা বহিভর্‚ত বিদ্যালয়সমূহ জাতীয়করণের অনুরোধ সংবলিত ডিও/আবেদনসমূহের বিষয়ে গৃহীত কার্যক্রম সংক্রান্ত একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ সার-সংক্ষেপ অথবা পত্র প্রেরণের জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ২০১৩ সালের ৯ জানুয়ারি সরকার ২৬ হাজার ১৯৩টি রেজিস্টার্ড প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণ করে। এর মধ্যে মামলা জটিলতায় মাত্র ৩৪টি বিদ্যালয় জাতীয়করণ করা হয়নি। জাতীয়করণের ঘোষণায় বলা হয়েছিল- নতুন করে আর কোনো স্কুল জাতীয়করণ করা হবে না। স্কুলের প্রয়োজন হলে সরকারিভাবে স্থাপন করা হবে।
অভিযোগ রয়েছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রেজিস্টার্ড স্কুল জাতীয়করণের ঘোষণা দিলে রাতারাতি সারাদেশে অসংখ্য স্কুল গড়ে ওঠে। অনেক মন্ত্রী, এমপি ও প্রভাবশালী ব্যক্তি নিজের ও পরিবারের সদস্যদের নামে স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। তবে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী শর্ত পূরণের পরেও চার হাজার ১৫৯টি বিদ্যালয় জাতীয়করণ থেকে বাদ পড়ে। বাদ পড়া বিদ্যালয় জাতীয়করণ করতে প্রভাবশালী ব্যক্তিরা চাপ দিচ্ছেন সরকারকে। জাতীয়করণের সঙ্গে স্থানীয় ভোটের রাজনীতি জড়িত বলে সরকারের সর্বোচ্চ মহলকে তার বোঝাচ্ছেন। সফলও হয়েছেন। যার পরিপ্রেক্ষিতেই প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে নতুন করে বিদ্যালয় জাতীয়করণের উদ্যোগ নিয়েছে।
বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সহ-সভাপতি মো. দেলওয়ার হোসেন আজকালের খবরকে বলেন, ‘সরকারি করতে মন্ত্রণালয়ের যাছাই-বাছাই করা দুই হাজার ৯০০ স্কুল রয়েছে। এছাড়া ৪০০ স্কুলের শিক্ষার্থীরা ২০১৭ সালের প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে। আট শতাধিক স্কুলের আবেদন মন্ত্রণালয়ে জমা আছে। সব মিলিয়ে সাড়ে পাঁচ হাজার বেসরকারি স্কুল আছে। ২০১২ সালের আগে থেকেই এসব স্কুল প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী সব শর্ত পূরণ করা এসব স্কুল সরকারি করতে হবে।’
বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণের জন্য অনেকদিন থেকেই দাবি জানিয়ে আসছিলেন শিক্ষকরা। সর্বশেষ গত ২১ জানুয়ারি থেকে তারা জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে প্রথমে অবস্থান ধর্মঘট শুরু করেন। পরে ২৬ জানুয়ারি থেকে আমরণ অনশন কর্মসূচি পালন করেন তারা। ৭ ফেব্রুয়ারি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার দুর্নীতি মামলার রায় নিয়ে সৃষ্ট সংকটে নিরাপত্তা বিবেচনা এবং প্রধানমন্ত্রীর আশ্বাসেই শিক্ষকরা আন্দোলন স্থগিত করে বাড়ি ফিরে যান।
ট্যাগস
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

মুরাদনগরে মাদ্রাসায় যান না পাঁচ বছর নিয়মিত বেতন তোলেন শিক্ষক

সরকারি হচ্ছে ৫,৫০০ প্রাথমিক বিদ্যালয়

আপডেট সময় ০২:০২:১৭ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৫ মার্চ ২০১৮
জাতীয় ডেস্কঃ
ক্ষমতার শেষ বছরে আরও সাড়ে পাঁচ হাজার প্রাথমিক বিদ্যালয় সরকারি করার চিন্তাভাবনা করছে সরকার। এরই মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে সরকারিকরণের বাইরে থাকা বিদ্যালয়ের তথ্য জানতে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছে। মন্ত্রণালয় অতি গোপনে একটি সার সংক্ষেপ তৈরি করে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠিয়েছে।
বিষয়টি স্বীকার করে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ড. এ এফ এম মনজুর কাদির গত রবিবার আজকালের খবরকে বলেন, ‘স্কুল জাতয়ীকরণ করতে মন্ত্রী ও এমপিরা অসংখ্য ডিও লেটার (বেসরকারি চাহিদাপত্র) দিচ্ছেন। তাদের চাপের কারণেই হয়তো প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে জাতীয়করণের বাইরে থাকা স্কুলের তথ্য জানতে চেয়েছে। আমরা সার সংক্ষেপ তৈরি করে পাঠিয়েছি। এখন সরকারের সিদ্ধান্তের ব্যাপার। নির্দেশনা পেলে জাতীয়করণের পরবর্তী কার্যক্রম শুরু করবো।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘জাতীয়করণের বাইরে থাকা স্কুলের সঠিক সংখ্যা মন্ত্রণালয়ে নেই।’
মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানায়, গত ২০ ফেব্রুয়ারি প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিবের কাছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে একটি চিঠি পাঠানো হয়। তাতে বলা হয়েছে, ইতোপূর্বে ঘোষিত ২৬ হাজার ১৯৩টি প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণে বিষয়ে হালনাগাদ তথ্য দেওয়ার জন্য অনুরোধ করা হলো। এছাড়া তালিকা বহিভর্‚ত বিদ্যালয়সমূহ জাতীয়করণের অনুরোধ সংবলিত ডিও/আবেদনসমূহের বিষয়ে গৃহীত কার্যক্রম সংক্রান্ত একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ সার-সংক্ষেপ অথবা পত্র প্রেরণের জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ২০১৩ সালের ৯ জানুয়ারি সরকার ২৬ হাজার ১৯৩টি রেজিস্টার্ড প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণ করে। এর মধ্যে মামলা জটিলতায় মাত্র ৩৪টি বিদ্যালয় জাতীয়করণ করা হয়নি। জাতীয়করণের ঘোষণায় বলা হয়েছিল- নতুন করে আর কোনো স্কুল জাতীয়করণ করা হবে না। স্কুলের প্রয়োজন হলে সরকারিভাবে স্থাপন করা হবে।
অভিযোগ রয়েছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রেজিস্টার্ড স্কুল জাতীয়করণের ঘোষণা দিলে রাতারাতি সারাদেশে অসংখ্য স্কুল গড়ে ওঠে। অনেক মন্ত্রী, এমপি ও প্রভাবশালী ব্যক্তি নিজের ও পরিবারের সদস্যদের নামে স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। তবে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী শর্ত পূরণের পরেও চার হাজার ১৫৯টি বিদ্যালয় জাতীয়করণ থেকে বাদ পড়ে। বাদ পড়া বিদ্যালয় জাতীয়করণ করতে প্রভাবশালী ব্যক্তিরা চাপ দিচ্ছেন সরকারকে। জাতীয়করণের সঙ্গে স্থানীয় ভোটের রাজনীতি জড়িত বলে সরকারের সর্বোচ্চ মহলকে তার বোঝাচ্ছেন। সফলও হয়েছেন। যার পরিপ্রেক্ষিতেই প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে নতুন করে বিদ্যালয় জাতীয়করণের উদ্যোগ নিয়েছে।
বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সহ-সভাপতি মো. দেলওয়ার হোসেন আজকালের খবরকে বলেন, ‘সরকারি করতে মন্ত্রণালয়ের যাছাই-বাছাই করা দুই হাজার ৯০০ স্কুল রয়েছে। এছাড়া ৪০০ স্কুলের শিক্ষার্থীরা ২০১৭ সালের প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে। আট শতাধিক স্কুলের আবেদন মন্ত্রণালয়ে জমা আছে। সব মিলিয়ে সাড়ে পাঁচ হাজার বেসরকারি স্কুল আছে। ২০১২ সালের আগে থেকেই এসব স্কুল প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী সব শর্ত পূরণ করা এসব স্কুল সরকারি করতে হবে।’
বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণের জন্য অনেকদিন থেকেই দাবি জানিয়ে আসছিলেন শিক্ষকরা। সর্বশেষ গত ২১ জানুয়ারি থেকে তারা জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে প্রথমে অবস্থান ধর্মঘট শুরু করেন। পরে ২৬ জানুয়ারি থেকে আমরণ অনশন কর্মসূচি পালন করেন তারা। ৭ ফেব্রুয়ারি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার দুর্নীতি মামলার রায় নিয়ে সৃষ্ট সংকটে নিরাপত্তা বিবেচনা এবং প্রধানমন্ত্রীর আশ্বাসেই শিক্ষকরা আন্দোলন স্থগিত করে বাড়ি ফিরে যান।