ঢাকা ০৫:২৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সাইক্লোন বোম্ব’র আঘাতে যুক্তরাষ্ট্র বিপর্যস্ত : নিহত ১৬

অন্তর্জাতিক ডেস্কঃ

এবার ‘বোম্ব’ নামক এক ভয়াবহ সাইক্লোনের ফলে সৃষ্ট তীব্র তুষার ঝড়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পূর্ব উপকূলীয় রাজ্যগুলোর জীবনযাত্রা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে; মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে অন্তত ১৬ জনের। বিরূপ আবহাওয়ায় বৃহস্পতিবার বিকাল পর্যন্ত নিউ ইয়র্ক এবং নিউজার্সিসহ বিভিন্ন রাজ্যের চার হাজারের বেশি ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে। নতুন বছরের প্রথম প্রহরে শুরু হাড় কাঁপানো শৈত্য প্রবাহের অবনতি ঘটে বৃহস্পতিবার ভোরে। হিমাঙ্কের নীচে তাপমাত্রার সঙ্গে যোগ হয় ৫০ থেকে ৬০ মাইল বেড়ে প্রবাহিত তুষার ঝড়, যাকে স্থানীয়ভাবে বোমা সাইক্লোন বলা হচ্ছে।

যুক্তরাষ্ট্রের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সাউথ ক্যারলিনা, নর্থ ক্যারলিনা, উইসকনসিন, মিজৌরি, মিশিগান, নর্থ ডেকটা, ভার্জিনিয়া, ম্যারিল্যান্ড, ডিসি, পেনসিলভেনিয়া, দেলওয়ার, নিউজার্সি, কানেকটিকাট, ম্যাসেচুসেটস, রোড আইল্যান্ড, নিউ হ্যামশায়ার, ভারমন্ট, নিউ ইয়র্ক অঙ্গরাজ্যের প্রায় দেড় কোটি বাসিন্দা বৃহস্পতিবার সকাল থেকে এক রকম গৃহবন্দি হয়ে পড়েছে, যার মধ্যে রয়েছে ৩ লাখের বেশি বাংলাদেশিও।

তীব্র ঠাণ্ডায় ১৬ জনের মৃত্যুর খবর দিয়ে ফেডারেল সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়, এর মধ্যে উইসকনসিনে ৬ জন, টেক্সাসে ৪ জন নর্থ ক্যারলিনায় ৩ জন এবং মিজৌরি, মিশিগান ও নর্থ ডেকটায় একজন করে মারা গেছেন। এসব এলাকায় ১২ ইঞ্চি থেকে ২৪ ইঞ্চি পর্যন্ত তুষারপাতের কথা জানিয়ে বৃহস্পতিবার রাতের জাতীয় আবহাওয়া বার্তায় বলা হয়, এছাড়া বস্টন ও লং আইল্যান্ডের উপকূলীয় এলাকায় ১২ থেকে ১৫ ফুট পর্যন্ত জলোচ্ছ্বাস হয়েছে। গলে যাওয়া বরফের পানিতে ডুবে যায় বস্টনের রাস্তা।

দুর্যোগের কারণে নিউ ইয়র্ক, বস্টন, ফিলাডেলফিয়া, বাল্টিমোর, প্রভিডেন্স, রোড আইল্যান্ডসহ ১১টি শহরের সব স্কুলে বৃহস্পতিবার ছুটি ঘোষণা করা হয়। সরকারি অফিসে উপস্থিতির ওপর ছিল না কোনো বাধ্যকতা। নিউ ইয়র্ক, নিউজার্সি, পেনসিলভেনিয়া, ম্যাসেচুসেটস ও কানেকটিকাট অঙ্গরাজ্যের বিস্তীর্ণ এলাকায় জরুরি অবস্থা জারি করা হয়। লোকজনকে জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে বের না হওয়ার পরামর্শ দেন রাজ্য গভর্নরেরা।

নিউ ইয়র্ক এবং নিউজার্সির বিভিন্ন এয়ারপোর্টের দুই হাজার ফ্লাইটসহ বস্টন, ফিলাডেলফিয়া, ভার্জিনিয়া এলাকার চার হাজার ফ্লাইট বাতিল করতে হয় বলে জানান পোর্ট অথরিটির নির্বাহী পরিচালক রিক কটন। নিউ ইয়র্ক সিটির জ্যামাইকা, জ্যাকসন হাইটস, চার্চ-ম্যাকডোনাল্ড, ওজনপার্ক, পার্কচেস্টার, হাডসন, নিউজার্সির প্যাটারসন, আটলান্টিক সিটি, পেনাসিলভেনিয়ার ফিলাডেলফিয়া, আপারডারবি, মিল বোর্ন সিটির বাংলাদেশি অধ্যুষিত এলাকার সব দোকানপাট ছিল জনমানব শূন্য।

নিউ ইয়র্ক সিটিতে ২৫ হাজারের বেশি বাংলাদেশি ট্যাক্সি চালকের ৯০ শতাংশ দুর্যোগের কারণে কাজে যেতে পারেনি। নিজেদের বসবাসের এলাকায় তুষার ঝড়ে সবকিছু ল-ভ- হয়ে যেতে দেখেছেন পেনসিলভেনিয়ার মিল বোর্ন সিটিতে বসবাস করা বাংলাদেশি মোহাম্মদ নূরল হাসান। নিউ ইয়র্কের হাডসন সিটির কাউন্সিলম্যান শেরশাহ মিজান এবং লং আইল্যান্ডের লিন্সব্রুক সিটির ব্যবসায়ী আকতার হোসেন বাদলও তাদের এলাকায় তুষার ঝড়ের ভয়াল রূপ দেখেছেন।

স্থানীয়রা জানান, তাপমাত্রা নেমে হিমাঙ্কের নীচে আসায় লোকজন ঘরের বাইরে আসেনি। সড়ক-মহাসড়কে পুলিশ আর অ্যাম্বুলেন্স ছাড়া যান চলাচল ছিল একেবারেই কম। নিউ ইয়র্ক সিটির বাস ও সাবওয়ে চলাচল করলেও যাত্রীর সংখ্যা ছিল হাতে গোণা। আবহাওয়ার বুলেটিনে জানানো হয়েছে, আগামী রোববার পর্যন্ত আক্রান্ত এলাকার তাপমাত্র হিমাঙ্কের নীচেই থাকবে।

ট্যাগস
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

মুরাদনগরে পূর্ব শত্রুতার জেরে প্রবাসীর বাড়ি ঘরে হামলা, নারীসহ আহত ৩

সাইক্লোন বোম্ব’র আঘাতে যুক্তরাষ্ট্র বিপর্যস্ত : নিহত ১৬

আপডেট সময় ১২:৫৯:০৯ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৫ জানুয়ারী ২০১৮
অন্তর্জাতিক ডেস্কঃ

এবার ‘বোম্ব’ নামক এক ভয়াবহ সাইক্লোনের ফলে সৃষ্ট তীব্র তুষার ঝড়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পূর্ব উপকূলীয় রাজ্যগুলোর জীবনযাত্রা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে; মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে অন্তত ১৬ জনের। বিরূপ আবহাওয়ায় বৃহস্পতিবার বিকাল পর্যন্ত নিউ ইয়র্ক এবং নিউজার্সিসহ বিভিন্ন রাজ্যের চার হাজারের বেশি ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে। নতুন বছরের প্রথম প্রহরে শুরু হাড় কাঁপানো শৈত্য প্রবাহের অবনতি ঘটে বৃহস্পতিবার ভোরে। হিমাঙ্কের নীচে তাপমাত্রার সঙ্গে যোগ হয় ৫০ থেকে ৬০ মাইল বেড়ে প্রবাহিত তুষার ঝড়, যাকে স্থানীয়ভাবে বোমা সাইক্লোন বলা হচ্ছে।

যুক্তরাষ্ট্রের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সাউথ ক্যারলিনা, নর্থ ক্যারলিনা, উইসকনসিন, মিজৌরি, মিশিগান, নর্থ ডেকটা, ভার্জিনিয়া, ম্যারিল্যান্ড, ডিসি, পেনসিলভেনিয়া, দেলওয়ার, নিউজার্সি, কানেকটিকাট, ম্যাসেচুসেটস, রোড আইল্যান্ড, নিউ হ্যামশায়ার, ভারমন্ট, নিউ ইয়র্ক অঙ্গরাজ্যের প্রায় দেড় কোটি বাসিন্দা বৃহস্পতিবার সকাল থেকে এক রকম গৃহবন্দি হয়ে পড়েছে, যার মধ্যে রয়েছে ৩ লাখের বেশি বাংলাদেশিও।

তীব্র ঠাণ্ডায় ১৬ জনের মৃত্যুর খবর দিয়ে ফেডারেল সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়, এর মধ্যে উইসকনসিনে ৬ জন, টেক্সাসে ৪ জন নর্থ ক্যারলিনায় ৩ জন এবং মিজৌরি, মিশিগান ও নর্থ ডেকটায় একজন করে মারা গেছেন। এসব এলাকায় ১২ ইঞ্চি থেকে ২৪ ইঞ্চি পর্যন্ত তুষারপাতের কথা জানিয়ে বৃহস্পতিবার রাতের জাতীয় আবহাওয়া বার্তায় বলা হয়, এছাড়া বস্টন ও লং আইল্যান্ডের উপকূলীয় এলাকায় ১২ থেকে ১৫ ফুট পর্যন্ত জলোচ্ছ্বাস হয়েছে। গলে যাওয়া বরফের পানিতে ডুবে যায় বস্টনের রাস্তা।

দুর্যোগের কারণে নিউ ইয়র্ক, বস্টন, ফিলাডেলফিয়া, বাল্টিমোর, প্রভিডেন্স, রোড আইল্যান্ডসহ ১১টি শহরের সব স্কুলে বৃহস্পতিবার ছুটি ঘোষণা করা হয়। সরকারি অফিসে উপস্থিতির ওপর ছিল না কোনো বাধ্যকতা। নিউ ইয়র্ক, নিউজার্সি, পেনসিলভেনিয়া, ম্যাসেচুসেটস ও কানেকটিকাট অঙ্গরাজ্যের বিস্তীর্ণ এলাকায় জরুরি অবস্থা জারি করা হয়। লোকজনকে জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে বের না হওয়ার পরামর্শ দেন রাজ্য গভর্নরেরা।

নিউ ইয়র্ক এবং নিউজার্সির বিভিন্ন এয়ারপোর্টের দুই হাজার ফ্লাইটসহ বস্টন, ফিলাডেলফিয়া, ভার্জিনিয়া এলাকার চার হাজার ফ্লাইট বাতিল করতে হয় বলে জানান পোর্ট অথরিটির নির্বাহী পরিচালক রিক কটন। নিউ ইয়র্ক সিটির জ্যামাইকা, জ্যাকসন হাইটস, চার্চ-ম্যাকডোনাল্ড, ওজনপার্ক, পার্কচেস্টার, হাডসন, নিউজার্সির প্যাটারসন, আটলান্টিক সিটি, পেনাসিলভেনিয়ার ফিলাডেলফিয়া, আপারডারবি, মিল বোর্ন সিটির বাংলাদেশি অধ্যুষিত এলাকার সব দোকানপাট ছিল জনমানব শূন্য।

নিউ ইয়র্ক সিটিতে ২৫ হাজারের বেশি বাংলাদেশি ট্যাক্সি চালকের ৯০ শতাংশ দুর্যোগের কারণে কাজে যেতে পারেনি। নিজেদের বসবাসের এলাকায় তুষার ঝড়ে সবকিছু ল-ভ- হয়ে যেতে দেখেছেন পেনসিলভেনিয়ার মিল বোর্ন সিটিতে বসবাস করা বাংলাদেশি মোহাম্মদ নূরল হাসান। নিউ ইয়র্কের হাডসন সিটির কাউন্সিলম্যান শেরশাহ মিজান এবং লং আইল্যান্ডের লিন্সব্রুক সিটির ব্যবসায়ী আকতার হোসেন বাদলও তাদের এলাকায় তুষার ঝড়ের ভয়াল রূপ দেখেছেন।

স্থানীয়রা জানান, তাপমাত্রা নেমে হিমাঙ্কের নীচে আসায় লোকজন ঘরের বাইরে আসেনি। সড়ক-মহাসড়কে পুলিশ আর অ্যাম্বুলেন্স ছাড়া যান চলাচল ছিল একেবারেই কম। নিউ ইয়র্ক সিটির বাস ও সাবওয়ে চলাচল করলেও যাত্রীর সংখ্যা ছিল হাতে গোণা। আবহাওয়ার বুলেটিনে জানানো হয়েছে, আগামী রোববার পর্যন্ত আক্রান্ত এলাকার তাপমাত্র হিমাঙ্কের নীচেই থাকবে।