জাতীয় ডেস্কঃ
অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ খানের মৃত্যুজনিত ঘটনা তদন্তে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের গঠিত কমিটি সোমবার (৭ সেপ্টেম্বর) নির্ধারিত দিনে মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন জমা দেবে। ১৩টি সুপারিশসহ ৮০ পৃষ্ঠার প্রতিবেদন ইতোমধ্যে তৈরি হয়েছে। ৫৮৬ পৃষ্ঠার সংযুক্তিও দেওয়া হবে তদন্ত প্রতিবেদন।
শনিবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে কক্সবাজার হিল ডাউন সার্কিট হাউসে এক সংক্ষিপ্ত ব্রিফিংয়ে কমিটির প্রধান চট্টগ্রাম বিভাগের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (উন্নয়ন) সরকারের যুগ্ম সচিব মোহাম্মদ মিজানুর রহমান এ তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, কমিটি অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ খানের মৃত্যুজনিত ঘটনা তদন্ত করতে গিয়ে এ ঘটনায় সংশ্লিষ্ট ৬৮ জনের সঙ্গে কথা বলার পর তাদের বক্তব্য গ্রহণ করেছে। এই সব কথা-বক্তব্য এবং প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্ত যাচাই-বাছাই ও বিশ্লেষণ করে কমিটির সকল সদস্য সর্বসম্মতভাবে প্রতিবেদনটি চূড়ান্ত করছে। যা আগামী ৭ সেপ্টেম্বর মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়া হবে। সিনহার মৃত্যুর ঘটনাটি কেন ঘটেছে এবং এ ঘটনায় কারা দায়ী তা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। দায়িত্ব পাওয়ার ৩৫ দিনের মাথায় রিপোর্ট জমা হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, ভবিষ্যতে এ ধরণের ঘটনা যাতে না ঘটে সে লক্ষ্যে ১৩টি সুপারিশ করেছে কমিটি। আমাদের কমিটির তদন্ত কার্যক্রমের পাশাপাশি এই ঘটনায় আদালতে হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। এই মামলা বর্তমানে বিচারাধীন। আইনি প্রক্রিয়ায় ঘটনার তদন্ত কার্যক্রম চালাচ্ছেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা। এ হত্যার ঘটনার জন্য কারা দোষী তা আদালতই নির্ধারণ করবেন। দায়ী ব্যক্তিদের শাস্তি দেয়ার এখতিয়ারও আদালতের। আমাদের কমিটির তদন্ত প্রতিবেদন প্রয়োজন মনে করলে বিচার কাজে ব্যবহার করার এখতিয়ার আদালতের আছে। তিনি বলেন, তদন্ত প্রতিবেদন সম্পূর্ণ লেখা হয়ে গেছে। তদন্তে পাওয়া তথ্য-উপাত্তে সম্বলিত এই প্রতিবেদনটি প্রায় ৮০ পৃষ্ঠা হয়েছে। এই প্রতিবেদনের সঙ্গে ভবিষ্যতে এই ধরণের ঘটনা আর ঘটে সে জন্য করণীয় সম্পর্কে ১৩টি সুপারিশমালাও প্রণয় করা হয়েছে। এরসাথে ৫৮৬ পৃষ্ঠা সংযুক্তিসহ সবগুলোই স্বরাষ্টমন্ত্রণালয়ের কাছে জমা দেয়া হবে।
সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে, প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে মেজর সিনহাকে হত্যার ঘটনায় অনাকাঙ্খিতভাবে অস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে। অথচ, গুলি করার মতো পরিবেশ বা পরিস্থিতি সেখানে তৈরি হয়নি। ঘটনার সময় কয়েকজন পুলিশ সদস্যের আচরণ ও ব্যবহার ছিল অমানবিক।
মোহাম্মদ মিজানুর রহমানের নেতৃত্বে গঠিত চার সদস্যের কমিটির অন্যরা হলেন, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রতিনিধি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর লে. কর্নেল এসএম সাজ্জাদ হোসেন, বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর প্রতিনিধি অতিরিক্ত উপমহাপরিদর্শক জাকির হোসেন খান ও কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের প্রতিনিধি অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ শাজাহান আলী।
২ আগস্ট এ কমিটি গঠন করা হয় এবং কার্যক্রম শুরু করে ৩ আগস্ট। সাত কর্মদিবস অর্থাৎ ১০ আগস্ট কমিটিকে প্রতিবেদন জমাদানের সময় বেধে দেয় মন্ত্রণালয়। এরপর প্রথমবার কমিটির সময় বাড়ানো হয় ২৩ আগস্ট পর্যন্ত। পরে কমিটির আবেদনের প্রেক্ষিতে আবারও সময় বাড়িয়ে দেওয়া হয় ৩১ আগস্ট।
এ সময়ের মধ্যে ঘটনার অন্যতম অভিযুক্ত টেকনাফ থানার বহিষ্কৃত ওসি প্রদীপ কুমার দাশের বক্তব্য গ্রহণ করতে না পারায় কমিটির মেয়াদ সর্বশেষ ৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়। ২ সেপ্টেম্বর কমিটি কক্সবাজার জেলা কারাগার ফটকে প্রদীপ কুমার দাশের বক্তব্য গ্রহণ করে। এরপরই কমিটি তদন্ত প্রতিবেদন তৈরি সমাপ্ত করেন এবং নির্ধারিত সময়ে তা জমা দেয়ার প্রক্রিয়া চলছে। উল্লেখ, ৩১ জুলাই রাত সাড়ে ১০টার দিকে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর চেকপোস্টে পুলিশ পরিদর্শক লিয়াকত আলীর গুলিতে নিহত হন অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ খান। ঘটনার পর পুলিশ বাদী হয়ে টেকনাফ থানায় দুটি ও রামু থানায় একটি মামলা করে। এ মামলায় সিনহার সফরসঙ্গী শিপ্রা ও সিফাত কারান্তরিণ হন। পরে ৫ আগস্ট সিনহার বড় বোন শারমিন ওসি প্রদীপ, পরিদর্শক লিয়াকতসহ ৯ পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা করেন।
এ মামলায় এ পর্যন্ত সাত পুলিশ সদস্য, এপিবিএনের তিন সদস্য ও টেকনাফ পুলিশের করা মামলার তিন সাক্ষীসহ ১৩ জনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। এরমধ্যে এপিবিএনের তিন পুলিশ সদস্য, পুলিশের তিন সাক্ষী, প্রধান অভিযুক্ত পরিদর্শক লিয়াকত ও এসআই নন্দ দুলাল রক্ষিতও ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন। এ ঘটনায় সরকারের তরফ থেকে একটি উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন হয়।