বিনোদন ডেস্কঃ
ছোটপর্দার জনপ্রিয় অভিনেত্রী শার্লিন ফারজানা। ছোটপর্দার জনপ্রিয় এই মুখ এবার দেখা যাবে বড়পর্দায়। ঈদে পর মুক্তি পাচ্ছে ‘উনপঞ্চাশ বাতাস’ শিরোনামে তার সিনেমা। যেটি পরিচালনা করেছেন মাসুদ হাসান উজ্জ্বল। সিনেমার কারণে এবার ঈদে মাত্র একটি নাটকে দেখা যাবে তাকে। অভিনয় নিয়ে ব্যস্ত সময়ের মধ্যেই দৈনিক ইত্তেফাকের সঙ্গে কথা বলেছেন শার্লিন ফারজানা।
শার্লিন: নাটকে কাজ করা হয় না অনেকদিন। আমার মূল লক্ষ্য সিনেমা। সিনেমাকে টার্গেট করে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে চাই। এজন্য অনেকদিন নাটকে কাজ করিনি। আসছে ঈদের জন্য মাত্র একটি নাটকে কাজ করেছি।
কোন নাটকে অভিনয় করেছেন এবার?
শার্লিন: নাটকের নাম ‘ভালোবাসার নিলাম’। এহসান পরিচালিত নাটকে আমার বিপরীতে অভিনয় করেছেন জোভান। জোভানের সঙ্গে এটা আমার প্রথম কাজ। ঈদের জন্য এই একটি কাজই করেছি। যেহেতু ঈদের পরই আমার ছবি মুক্তি পাচ্ছে তাই আমি চাইছি না ঈদে আর কোনো কিছু করতে। আমার অল্প কিছু হলেও যারা দর্শক আছে তারা আমাকে হলে গিয়েই দেখুক।
আপানার ‘উনপঞ্চাশ বাতাস’ সিনেমাটির বেশ কয়েকবার মুক্তির ঘোষণা আসলেও এখনও পর্যন্ত কোনো সঠিক সিদ্ধান্তে আসতে দেখা যায়নি। এর কারণ কি?
শার্লিন: হ্যাঁ এটা ঠিক। বেশ কয়েকবার ছবিটি মুক্তির তারিখ পিছিয়েছে। আসলে এটা যেই ঘরানার ছবি সেই ধরনের দর্শক ও চাহিদা তৈরি করতে চেয়েছেন ছবিটির পরিচালক। যেই সময়টাতে অন্যান্য ছবির প্রতিযোগিতা থাকবে না, দর্শকরা ছবিটি হলে গিয়ে দেখবে। তাহলে একটা শ্রেণির দর্শক হয়তো আমরা পাবো। বাণিজ্যিক সিনেমার দর্শক আর আমাদের দর্শক তো এক না, তাই একটা সেইফ সময়ে আমরা এটা মুক্তি দিতে চাচ্ছি। এই ছবিতে আমি ও আমার সহশিল্পী দুজনেই নতুন তাই ঈদে মুক্তির ঘোষণা দিয়ে কোনো ঝুঁকি নিতে চাননি পরিচালক। ঈদের পর ফাঁকা সময়ে আগস্টেই ছবিটি মুক্তি দেয়া হবে আমি যতদূর জানি।
‘উনপঞ্চাশ বাতাস’ তো আপনার দ্বিতীয় চলচ্চিত্র। সিনেমাটি নিয়ে অভিজ্ঞতা নিয়ে জানতে চাই?
শার্লিন: ‘জাগো’ সিনেমাটি পুরোটাই ছিল মিসপ্ল্যানড ইভেন্ট। এটাকে কাজ হিসেবে দাঁড় করানো ঠিক না, তবে ওটা দিয়ে ক্যামেরার সামনে দাড়িয়েছি এটা বলতে পারি। পরিপূর্ণ আকারে আমার প্রথম চলচ্চিত্র ‘উনপঞ্চাশ বাতাস’। আর ছবিটাতে কাজের অভিজ্ঞতা যদি বলি, আমি তো কম কাজ করি তাই শেখার জায়গাটাও খুব কম। সেই হিসেবে ছবিটা আমার জন্য পরিপূর্ণ একটা ওয়ার্কশপ ছিল। ছবির নির্মাতা মাসুদ হাসান উজ্জ্বল হচ্ছে এমন নির্মাতা যার সাথে কাজ করতে পারার অভিজ্ঞতা মানেই হচ্ছে একটা শিক্ষা সফর। সেই হিসেবে আমি বলবো একটা ধাপ এগিয়েছি আমি। আমার লক্ষ্যই হচ্ছে সিনেমা, সিনেমাতেই নিজেকে প্রতিষ্ঠিত দেখতে চাই।
তাহলে কি ছোটপর্দায় আর দেখা যাবে না আপনাকে?
শার্লিন: বাংলাদেশের যারা অভিনয়শিল্পী রয়েছেন আমি তাদেরকে স্যালুট জানাই। কারণ তারা কিভাবে মাসের ৩০ দিন কাজ করে আমি জানি না। দুই দিনে কিংবা একদিনে একটা নাটক হয় যেটা আসলে চলচ্চিত্রের গল্প হতে পারে। আমি ওই লোডটা নিতে পারি না। অনেক কষ্ট হয়। বলা যায় এটা আমার একটা সমস্যা। চলচ্চিত্রে যেটা হয়, অনেকদিন একসাথে থাকা হয়, ক্যারেকটারটা ডেভেলপমেন্ট হয়! ওটাতে অনেক স্বাচ্ছন্দবোধ করি। কেন জানি আমার মনে হয় যে আমি চলচ্চিত্রেই ঠিক আছি। আর শিল্প হচ্ছে চর্চার বিষয়। এরমধ্যে যদি একেবারেই অভিনয় না করি তাহলে তো চর্চাটাই থাকবে না। মাঝেমধ্যে হয়তো ছোটপর্দায় দেখা যাবে।
অনেক সংকটের মধ্য দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে নাটক। মূল সংকট কি বা এর প্রতিকার কী বলে মনে করছেন?
শার্লিন: মূল সংকট হচ্ছে বাজেট। কাজের ক্ষেত্রে বাজেট আরও বাড়ানো দরকার বলে আমি মনে করছি। কারণ যে পরিমাণ পরিশ্রম, সময় ও কন্টেন্ট বেইজ আমরা এগোতে চাই সেই পরিমাণ অর্থ ব্যয় হচ্ছে না। এই জায়গাটার একটা ব্যালেন্স দরকার।
টেলিভিশনের পাশাপাশি এখন অনলাইন প্লাটফর্মেও খুব সহজেই নাটক দেখা যাচ্ছে। এতে করে টেলিভিশনের জনপ্রিয়তা কমছে মনে করেন?
শার্লিন: না, এমন দিন কখনওই আসবে না যে টেলিভিশন মানুষ দেখবে না। কারণ অনলাইনে ইউটিউব বা অন্যান্য যে প্লাটফর্ম বা সংস্থা তৈরি হয়েছে তা খুব দ্রুতই ক্র্যাশ করবে। কারণ খুবই অপরিকল্পিতভাবে এগুলোকে ডেভেলপড করা হচ্ছে। কোনো বিষয় যখন আনপ্ল্যানড ওয়েতে গ্রো করে তখন সেটা বেশিদিন সাসটেইন করে না। টেলিভিশন হচ্ছে এমন একটা মাধ্যম যেটা বাড়িতে আমরা যখন ইচ্ছা হাতের নাগালেই পাচ্ছি। তবে ইউটিউব বলেন আর যা-ই বলি ফ্রিতে তো পাচ্ছি না। টেলিভিশনের জয়জয়কার সারাজীবনই থাকবে।
টেলিভিশনের মত অনলাইন প্ল্যাটফর্মেও এখন ঘুরে ফিরে একই ধরণের গল্প লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এটা নিয়ে কী বলবেন?
শার্লিন: হ্যাঁ, অফ ট্র্যাকের গল্প বলতে তারা হয়তো একই ধরনের কন্টেন্ট ধরে নিয়েছে যার কারণে একই গল্প দেখা যায়।
নাটকে গল্পের মান অনেকক্ষেত্রেই প্রশ্নবিদ্ধ। একজন অভিনয়শিল্পী হিসেবে নিজেদের দায়বদ্ধতা কতটুকু?
শার্লিন: এটা আসলে শিল্পীদের না হয়ে দর্শকদের দায়বদ্ধতা হওয়া উচিত। দর্শকদের যদি গল্পের চাহিদা পরিবর্তন হয় তাহলে হয়তো নির্মাতারাও গল্পের ভিন্নতা তৈরি করতে পারবে। যেমন কলকাতায় বিভিন্ন ধরনের গল্পে কাজ হচ্ছে দর্শকরা সেটা দেখছেও। সেখানে বিভিন্ন বয়সে বিভিন্ন গল্পে ও চরিত্রে কাজ করছে কিন্তু আমাদের এখানে শুধু রোমান্টিক গল্পেরই কাজ বেশি দেখা যায়।
এখনকার নাটকের গল্পে আগের মত পারিবারিক আবহ দেখা যাচ্ছে না। নায়ক-নায়িকা কেন্দ্রিক গল্প নিয়ে কাজ হচ্ছে বেশি।