ঢাকা ১০:৩০ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৯ নভেম্বর ২০২৪, ৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সীমান্তে সেনা, অস্ত্রের মহড়া মিয়ানমারের

জাতীয় ডেস্কঃ

আন্তর্জাতিক আইন অমান্য করে বাংলাদেশ সীমান্তের কাছে বিপুলসংখ্যক সেনা ও ভারী অস্ত্র মোতায়েন করেছে মিয়ানমার। তমব্রু সীমান্তে শূন্যরেখায় অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের শিবিরে গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর ওই সেনারা অনুপ্রবেশ করার চেষ্টা করে এবং গুলি ছোড়ে। মিয়ানমারের সেনা মোতায়েনের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবিও সীমান্তে জনবল বাড়িয়েছে। বাংলাদেশ পতাকা বৈঠকে বসার আহ্বান জানালেও গতকাল সন্ধ্যায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত মিয়ানমার তাতে সাড়া দেয়নি। এদিকে সীমান্তে উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গতকাল ঢাকায় মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূত লুউইন উকে তলব করে ‘নোট ভারবাল’ হস্তান্তর করেছে। সীমান্তে মিয়ানমারের সেনা উপস্থিতিকে বাংলাদেশ ভালোভাবে নেয়নি বলেও তাঁকে স্পষ্ট জানানো হয়েছে।

অন্যদিকে বান্দরবানের সাতকানিয়ায় এক অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান সাংবাদিকদের বলেন, ‘বাইরের কোনো শক্তি আমাদের সীমান্ত অতিক্রম করতে চাইলে বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর জোয়ানরা তা প্রতিহত করতে সক্ষম। কাজেই উত্তেজনা সৃষ্টি করে আমাদের ভয় দেখিয়ে লাভ নেই।’

বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুনধুম ইউনিয়নের তমব্রু সীমান্তে গতকাল সকাল থেকে ট্রাকে ট্রাকে ভারী অস্ত্র নিয়ে অবস্থান নিতে শুরু করে মিয়ানমারের সেনা ও সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড পুলিশ (বিজিপি)। এতে তমব্রু সীমান্তের গ্রামবাসী এবং কোনারপাড়া শূন্যরেখায় অবস্থানরত সাড়ে ছয় হাজার রোহিঙ্গার মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।

শূন্যরেখায় অবস্থানরত রোহিঙ্গা নেতা ফরিদ আলম রাতে জানান, গতকাল সন্ধ্যার পর মিয়ানমার বাহিনী কাঁটাতারের বেড়া পার হয়ে শূন্যরেখায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আসার চেষ্টা করলে রোহিঙ্গারা একসঙ্গে তাদের বাধা দেয়। ওই সময় মিয়ানমার বাহিনী দুই রাউন্ড ফাঁকা গুলি বর্ষণ করে পিছিয়ে যায়। ফরিদ আরো জানান, মিয়ানমার বাহিনীর এ রকম অনুপ্রবেশের চেষ্টায় ক্যাম্পে উত্তেজনা বেড়ে গেছে।

এর আগেও আন্তর্জাতিক আইনের তোয়াক্কা না করে বাংলাদেশ সীমান্তে সেনা সমাবেশ ঘটিয়েছিল মিয়ানমার। তবে আগের চেয়ে এবার বেশি সেনা সমাবেশ ঘটানো হচ্ছে। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মিয়ানমার কয়েক দিন ধরে সীমান্তে ধীরে ধীরে সেনা সমাবেশ ঘটাচ্ছে। গতকাল মিয়ানমারের বিপুলসংখ্যক সেনার উপস্থিতি সীমান্তের এপার থেকেও দেখা গেছে।

ঢাকার পিলখানায় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) সদর দপ্তরে গতকাল দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে বিজিবির অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মুজিবুর রহমান বলেন, বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি তমব্রু সীমান্তে কিছু রোহিঙ্গা শূন্যরেখা থেকে মিয়ানমারের দিকে অবস্থান করছে। মিয়ানমারের সেনা সদস্যরা বেশ কয়েক দিন ধরে ওই রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফেরত যেতে বাধা দিচ্ছে। এটি এক ধরনের ‘পুশিং’ (বাংলাদেশে চলে আসতে বাধ্য করা)। মিয়ানমার ওই সীমান্তে সেনা বৃদ্ধি করেছে, পাশাপাশি ভারী অস্ত্র ও গোলাবারুদ মজুদ করছে। তাই বাংলাদেশ সীমান্তে বিজিবির পক্ষ থেকে জনবল বৃদ্ধি করা হয়েছে। বিজিবি সতর্ক অবস্থানে থেকে বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করছে।

মুজিবুর রহমান আরো বলেন, বেশ কিছুদিন ধরে ওই এলাকায় মিয়ানমার বর্ডার গার্ড পুলিশ এবং দেশটির সেনাবাহিনী কাঁটাতারের বেড়া দেওয়া, বিদ্যমান বেড়া আরো শক্তিশালী করা, ‘আয়রন অ্যাঙ্গেল’ ও উন্নত প্রযুক্তিসম্পন্ন যন্ত্রপাতি স্থাপন করছে। পাশাপাশি তারা শব্দযন্ত্রের মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের অন্য স্থানে চলে যেতে বলছে। এরই ধারাবাহিকতায় গতকাল সকাল সাড়ে ১০টার দিকে তুমব্রু সীমান্তে ৩৪ ও ৩৫ নম্বর পোস্টের মাঝামাঝি এলাকায় মিয়ানমার সীমান্তের দেড় শ গজ ভেতরে সেনা সমাবেশ ঘটিয়েছে। তারা সেখানে, ট্রাক ও লরিতে করে ভারী অস্ত্র মোতায়েন করেছে।

বিজিবির অতিরিক্ত মহাপরিচালক বলেন, ‘পারস্পরিক আলোচনা ও গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করে আমরা মিয়ানমারকে পতাকা বৈঠকের আহ্বান জানিয়েছি। অবশ্যই তারা পতাকা বৈঠকের জবাব দেবে এবং এ পরিস্থিতির সমাধান পতাকা বৈঠকের মাধ্যমেই হবে।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কিছুদিন আগে দুই দেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পর্যায়ে বৈঠকে সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে। তাই এমন কোনো পদক্ষেপ তাদের নেওয়ার কথা নয়। এটি কোনো উসকানির পর্যায়ে পড়ে না। তাদের নিশ্চয়ই কোনো পরিকল্পনা রয়েছে। তাদের ‘স্ট্র্যাটেজিক প্ল্যান’ জানার জন্যই পতাকা বৈঠকের আাাহ্বান জানানো হয়েছে।

সাংবাদিকদের অন্য এক প্রশ্নের জবাবে মুজিবুর রহমান বলেন, ‘এখনো এমন কোনো পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়নি যে অন্য কোনো বাহিনীকে জানাতে হবে। তবে মিয়ানমার স্বাভাবিকের চেয়ে অতিরিক্ত সেনা মোতায়েন করেছে বলে আমরাও বিজিবি সদস্য বৃদ্ধি করছি।’

আমাদের কূটনৈতিক প্রতিবেদক জানান, সীমান্তে উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূত লুউইন উকে তলব করে ব্যাখ্যা চেয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। গতকাল বিকেলে ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্রসচিব এম খোরশেদ আলম মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতকে তলব করেন। ওই সময় তাঁকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে একটি ‘নোট ভারবাল’ (আনুষ্ঠানিক পত্র) দেওয়া হয়েছে।

জানা গেছে, মিয়ানমার সীমান্তে কেন অতিরিক্ত সেনা মোতায়েন করছে সে বিষয়ে ঢাকায় ওই দেশটির রাষ্ট্রদূতের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ বিষয়টি ভালো চোখে দেখছে না বলে জানানো হয়েছে মিয়ানমারকে। এ ধরনের ঘটনা দুই দেশের সম্পর্কের জন্য ভালো নয় বলেও রাষ্ট্রদূতকে জানানো হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, মিয়ানমার তার শূন্য রেখায় অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশের দিকে ঠেলে দিতেই সীমান্তে সেনা উপস্থিতি জোরদার করছে। এ ছাড়া ক্রমবর্ধমান বৈশ্বিক চাপে মিয়ানমার রোহিঙ্গা সংকটকে অন্য রূপ দেওয়ার চেষ্টা করছে। মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ৯১ শতাংশই প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশে চলে আসছে। বাংলাদেশে বর্তমানে রোহিঙ্গার সংখ্যা ১১ লাখেরও বেশি। অন্যদিকে মিয়ানমারে আছে মাত্র কয়েক হাজার রোহিঙ্গা। তাদেরও দেশ ছাড়তে বাধ্য করতে মিয়ানমার সেখানে কৃত্রিম খাদ্য সংকটসহ নানা ধরনের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে।

গতকাল সকালে বান্দরবান জেলা সদরের অদূরে সাতকানিয়ার বাইতুল ইজ্জতে বিজিবির ৯১তম রিক্রুট ব্যাচের সমাপনী কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানের পর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, সরকারের সময়োপযোগী ও নানামুখী পদক্ষেপের কারণে ধাক্কা কাটিয়ে এই বাহিনীতে শৃঙ্খলা ফিরে এসেছে। প্রযুক্তিগত বিষয়াদি সংযোজন এবং প্রশিক্ষণের মাধ্যমে বিজিবি জওয়ানদের মধ্যে সক্ষমতা বেড়েছে। যেকোনো পরিস্থিতি মোকবেলা করার জন্য তারা প্রস্তুত রয়েছে। তিনি আরো বলেন, ‘আমরা আমাদের সীমান্ত রক্ষী বাহিনীতে নারীদের অন্তর্ভুক্ত করেছি। দেশ রক্ষায় তারাও প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।’

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘জোর করে আমরা রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠাতে চাই না। এ কারণে আমরা কূটনৈতিক চ্যানেলে কাজ করছি। কাজেই অস্ত্রের ভাষায় কথা বলা পরিহার করতে হবে।’

এর আগে সকাল সাড়ে ১১টায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী প্যারেড গ্রাউন্ডে উপস্থিত হলে বিজিবির মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আবুল হোসেন এবং বিজিবি ট্রেনিং সেন্টার অ্যান্ড কলেজের (বিজিটিসি) কমান্ড্যান্ট ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন তাঁকে স্বাগত জানান। পরে তিনি একটি সুসজ্জিত জিপে করে কুচকাওয়াজ পরিদর্শন করেন। ৯১তম ব্যাচে ৪৮ জন নারীসহ ৫৩৫ জন নবীন সৈনিক কৃতিত্বের সঙ্গে তাঁদের প্রশিক্ষণ শেষ করেন।

গতকাল বিকেলে তমব্রু সীমান্তে গিয়ে দেখা গেছে, তমব্রু খালের ওপারে মিয়ানমারের কাঁটাতারের বেড়ার কাছে মোতায়েন রয়েছে সশস্ত্র সেনা সদস্যরা। তাঁদের সঙ্গে রয়েছেন মিয়ানমারের বিজিপি সদস্যরাও। গতকাল বিকেল সোয়া ৫টার দিকে দেখা গেছে, রাখাইনের মংডু থানার ঢেকিবুনিয়া এলাকা থেকে সেনাবোঝাই তিনটি ট্রাক তমব্রু কোনারপাড়ার শূন্যরেখার কাছে থামে। এর আগে সকালেও একসঙ্গে ১০টি ট্রাকে করে সেনা সদস্যরা সীমান্তের ওই এলাকায় সমবেত হয়।

জানা গেছে, তমব্রু সীমান্তের ওপারে মিয়ানমার বাহিনী কয়েক শ বাংকার করেছে। ওই সব বাংকারে প্রচুর অস্ত্রশস্ত্র রাখা হয়েছে। এ ছাড়া মিয়ানমারের সীমান্ত সড়কের পূর্বদিকে অনেক সেনা মোতায়েন রয়েছে।

কোনারপাড়ায় শূন্যরেখার রোহিঙ্গা ক্যাম্পের পূর্ব পাশে উত্তর-দক্ষিণ বরাবর বিস্তৃত রয়েছে মিয়ানমারের সীমান্ত সড়ক। গত বছরের ২৫ আগস্ট রোহিঙ্গা নির্যাতন-পরবর্তী সময়ে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ সীমান্ত সড়কটির ব্যাপক উন্নয়ন করে। ২৫ আগস্টের আগেও সীমান্ত সড়কটি ছিল যানচলাচলের অযোগ্য। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে এ সড়কটি দিয়ে মিয়ানমারের শত শত সামরিক যান চলাচল করছে। গতকাল বিকেলে তমব্রু খালের এপারে দেড় ঘণ্টার অবস্থানকালে ১৫-২০টি যানবাহন দেখা যায়। এমনকি ট্রাকে ট্রাকে শ্রমিকদের পরিবহন করার দৃশ্যও চোখে পড়েছে। এসব শ্রমিক দিয়ে বিজিপি ও মিয়ানমারের সেনাদের অস্ত্রশস্ত্র বহন এবং কাঁটাতারের বেড়া দেওয়ার কাজ করানো হচ্ছে। ১০-১২ ফুট উঁচু করে কাঁটাতারের বেড়া দেওয়ার কাজ চলছে।

তমব্রু খালের ওপারে এবং শূন্যরেখার রোহিঙ্গা ক্যাম্প-সংলগ্ন দেড় শ ফুট উঁচু পাহাড়ের ওপর বিকেল সাড়ে ৫টায় দেখা গেছে, বেশ কয়েকজন সেনা সদস্য ভারী অস্ত্র তাক করে রয়েছেন। খালের এপারে কর্তব্যরত বিজিবির জওয়ান দেলোয়ার বলেন, ‘ওই যে দেখুন পাহাড়ে মিয়ানমারের সেনারা বসে রয়েছে।’

সীমান্ত সড়কে এবং কাঁটাতারের বেড়ার ১০-১৫ ফুট দূরে মিয়ানমারের সেনা ও বিজিপি সদস্যরা সশস্ত্র অবস্থায় মোতায়েন রয়েছেন। অন্যদিকে শূন্যরেখার পূর্ব পাশে পাহাড়ের ওপর সেনা ও বিজিপি অস্থায়ী ছাউনি স্থাপন করে মাইক লাগিয়েছে। সেই মাইকে কিছুক্ষণ পরপরই রোহিঙ্গা ও রাখাইন ভাষায় বলা হচ্ছে, ‘তোমরা রোহিঙ্গারা শূন্যরেখা থেকে সরে যাও। শূন্যরেখায় বসবাস করা যায় না। তোমরা সরে না গেলে তোমাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

শূন্যরেখায় অবস্থানকারী রোহিঙ্গা আলী আহমদ (৫০) কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আজ সকাল থেকে মিয়ানমারের সেনারা সীমান্তে টহল দিচ্ছে ভারী অস্ত্র নিয়ে। তারা এমনিতেই গত কিছুদিন ধরে আমাদের শূন্যরেখা থেকে সরে যেতে বলছে। ভারী অস্ত্র নিয়ে সেনা টহলের কারণে আমরা ভয়ে রয়েছি।’

শূন্যরেখার বাসিন্দা রোহিঙ্গা নেতা নুরুল আমিন বলেন, ‘গত ২০ ফেব্রুয়ারির বাংলাদেশ-মিয়ানমারের যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠকের পর থেকেই মিয়ানমার বাহিনী আমাদের হুমকি দিয়ে যাচ্ছে এখান থেকে সরে যাওয়ার জন্য। অথচ যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপের সরেজমিন পরিদর্শনের সময় মিয়ানমারের প্রতিনিধিরাই রোহিঙ্গাদের স্বদেশে ফিরে যাওয়ার জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুতি নিতে বলেছিলেন।’ তিনি আরো বলেন, তারা শূন্যরেখা থেকে কিছুতেই সরে যাবেন না।

মিয়ানমার বাহিনীর গতকালের মহড়ার পর থেকে বাংলাদেশের তমব্রু সীমান্তেও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। তুমব্রু গ্রামের বাসিন্দা আবু বকর সিদ্দিক বলেন, ‘আমরা আজ মিয়ানমার সীমান্তে সেনা ও বিজিপির সশস্ত্র উসকানিমূলক অবস্থান দেখে ভয় পাচ্ছি। কখন কী ঘটে যায়! গতকাল সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসার পরপরই সীমান্তজুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছিল।’

ট্যাগস
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

মুরাদনগরে পূর্ব শত্রুতার জেরে প্রবাসীর বাড়ি ঘরে হামলা, নারীসহ আহত ৩

সীমান্তে সেনা, অস্ত্রের মহড়া মিয়ানমারের

আপডেট সময় ০৭:২৫:০৪ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২ মার্চ ২০১৮
জাতীয় ডেস্কঃ

আন্তর্জাতিক আইন অমান্য করে বাংলাদেশ সীমান্তের কাছে বিপুলসংখ্যক সেনা ও ভারী অস্ত্র মোতায়েন করেছে মিয়ানমার। তমব্রু সীমান্তে শূন্যরেখায় অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের শিবিরে গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর ওই সেনারা অনুপ্রবেশ করার চেষ্টা করে এবং গুলি ছোড়ে। মিয়ানমারের সেনা মোতায়েনের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবিও সীমান্তে জনবল বাড়িয়েছে। বাংলাদেশ পতাকা বৈঠকে বসার আহ্বান জানালেও গতকাল সন্ধ্যায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত মিয়ানমার তাতে সাড়া দেয়নি। এদিকে সীমান্তে উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গতকাল ঢাকায় মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূত লুউইন উকে তলব করে ‘নোট ভারবাল’ হস্তান্তর করেছে। সীমান্তে মিয়ানমারের সেনা উপস্থিতিকে বাংলাদেশ ভালোভাবে নেয়নি বলেও তাঁকে স্পষ্ট জানানো হয়েছে।

অন্যদিকে বান্দরবানের সাতকানিয়ায় এক অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান সাংবাদিকদের বলেন, ‘বাইরের কোনো শক্তি আমাদের সীমান্ত অতিক্রম করতে চাইলে বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর জোয়ানরা তা প্রতিহত করতে সক্ষম। কাজেই উত্তেজনা সৃষ্টি করে আমাদের ভয় দেখিয়ে লাভ নেই।’

বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুনধুম ইউনিয়নের তমব্রু সীমান্তে গতকাল সকাল থেকে ট্রাকে ট্রাকে ভারী অস্ত্র নিয়ে অবস্থান নিতে শুরু করে মিয়ানমারের সেনা ও সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড পুলিশ (বিজিপি)। এতে তমব্রু সীমান্তের গ্রামবাসী এবং কোনারপাড়া শূন্যরেখায় অবস্থানরত সাড়ে ছয় হাজার রোহিঙ্গার মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।

শূন্যরেখায় অবস্থানরত রোহিঙ্গা নেতা ফরিদ আলম রাতে জানান, গতকাল সন্ধ্যার পর মিয়ানমার বাহিনী কাঁটাতারের বেড়া পার হয়ে শূন্যরেখায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আসার চেষ্টা করলে রোহিঙ্গারা একসঙ্গে তাদের বাধা দেয়। ওই সময় মিয়ানমার বাহিনী দুই রাউন্ড ফাঁকা গুলি বর্ষণ করে পিছিয়ে যায়। ফরিদ আরো জানান, মিয়ানমার বাহিনীর এ রকম অনুপ্রবেশের চেষ্টায় ক্যাম্পে উত্তেজনা বেড়ে গেছে।

এর আগেও আন্তর্জাতিক আইনের তোয়াক্কা না করে বাংলাদেশ সীমান্তে সেনা সমাবেশ ঘটিয়েছিল মিয়ানমার। তবে আগের চেয়ে এবার বেশি সেনা সমাবেশ ঘটানো হচ্ছে। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মিয়ানমার কয়েক দিন ধরে সীমান্তে ধীরে ধীরে সেনা সমাবেশ ঘটাচ্ছে। গতকাল মিয়ানমারের বিপুলসংখ্যক সেনার উপস্থিতি সীমান্তের এপার থেকেও দেখা গেছে।

ঢাকার পিলখানায় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) সদর দপ্তরে গতকাল দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে বিজিবির অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মুজিবুর রহমান বলেন, বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি তমব্রু সীমান্তে কিছু রোহিঙ্গা শূন্যরেখা থেকে মিয়ানমারের দিকে অবস্থান করছে। মিয়ানমারের সেনা সদস্যরা বেশ কয়েক দিন ধরে ওই রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফেরত যেতে বাধা দিচ্ছে। এটি এক ধরনের ‘পুশিং’ (বাংলাদেশে চলে আসতে বাধ্য করা)। মিয়ানমার ওই সীমান্তে সেনা বৃদ্ধি করেছে, পাশাপাশি ভারী অস্ত্র ও গোলাবারুদ মজুদ করছে। তাই বাংলাদেশ সীমান্তে বিজিবির পক্ষ থেকে জনবল বৃদ্ধি করা হয়েছে। বিজিবি সতর্ক অবস্থানে থেকে বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করছে।

মুজিবুর রহমান আরো বলেন, বেশ কিছুদিন ধরে ওই এলাকায় মিয়ানমার বর্ডার গার্ড পুলিশ এবং দেশটির সেনাবাহিনী কাঁটাতারের বেড়া দেওয়া, বিদ্যমান বেড়া আরো শক্তিশালী করা, ‘আয়রন অ্যাঙ্গেল’ ও উন্নত প্রযুক্তিসম্পন্ন যন্ত্রপাতি স্থাপন করছে। পাশাপাশি তারা শব্দযন্ত্রের মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের অন্য স্থানে চলে যেতে বলছে। এরই ধারাবাহিকতায় গতকাল সকাল সাড়ে ১০টার দিকে তুমব্রু সীমান্তে ৩৪ ও ৩৫ নম্বর পোস্টের মাঝামাঝি এলাকায় মিয়ানমার সীমান্তের দেড় শ গজ ভেতরে সেনা সমাবেশ ঘটিয়েছে। তারা সেখানে, ট্রাক ও লরিতে করে ভারী অস্ত্র মোতায়েন করেছে।

বিজিবির অতিরিক্ত মহাপরিচালক বলেন, ‘পারস্পরিক আলোচনা ও গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করে আমরা মিয়ানমারকে পতাকা বৈঠকের আহ্বান জানিয়েছি। অবশ্যই তারা পতাকা বৈঠকের জবাব দেবে এবং এ পরিস্থিতির সমাধান পতাকা বৈঠকের মাধ্যমেই হবে।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কিছুদিন আগে দুই দেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পর্যায়ে বৈঠকে সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে। তাই এমন কোনো পদক্ষেপ তাদের নেওয়ার কথা নয়। এটি কোনো উসকানির পর্যায়ে পড়ে না। তাদের নিশ্চয়ই কোনো পরিকল্পনা রয়েছে। তাদের ‘স্ট্র্যাটেজিক প্ল্যান’ জানার জন্যই পতাকা বৈঠকের আাাহ্বান জানানো হয়েছে।

সাংবাদিকদের অন্য এক প্রশ্নের জবাবে মুজিবুর রহমান বলেন, ‘এখনো এমন কোনো পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়নি যে অন্য কোনো বাহিনীকে জানাতে হবে। তবে মিয়ানমার স্বাভাবিকের চেয়ে অতিরিক্ত সেনা মোতায়েন করেছে বলে আমরাও বিজিবি সদস্য বৃদ্ধি করছি।’

আমাদের কূটনৈতিক প্রতিবেদক জানান, সীমান্তে উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূত লুউইন উকে তলব করে ব্যাখ্যা চেয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। গতকাল বিকেলে ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্রসচিব এম খোরশেদ আলম মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতকে তলব করেন। ওই সময় তাঁকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে একটি ‘নোট ভারবাল’ (আনুষ্ঠানিক পত্র) দেওয়া হয়েছে।

জানা গেছে, মিয়ানমার সীমান্তে কেন অতিরিক্ত সেনা মোতায়েন করছে সে বিষয়ে ঢাকায় ওই দেশটির রাষ্ট্রদূতের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ বিষয়টি ভালো চোখে দেখছে না বলে জানানো হয়েছে মিয়ানমারকে। এ ধরনের ঘটনা দুই দেশের সম্পর্কের জন্য ভালো নয় বলেও রাষ্ট্রদূতকে জানানো হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, মিয়ানমার তার শূন্য রেখায় অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশের দিকে ঠেলে দিতেই সীমান্তে সেনা উপস্থিতি জোরদার করছে। এ ছাড়া ক্রমবর্ধমান বৈশ্বিক চাপে মিয়ানমার রোহিঙ্গা সংকটকে অন্য রূপ দেওয়ার চেষ্টা করছে। মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ৯১ শতাংশই প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশে চলে আসছে। বাংলাদেশে বর্তমানে রোহিঙ্গার সংখ্যা ১১ লাখেরও বেশি। অন্যদিকে মিয়ানমারে আছে মাত্র কয়েক হাজার রোহিঙ্গা। তাদেরও দেশ ছাড়তে বাধ্য করতে মিয়ানমার সেখানে কৃত্রিম খাদ্য সংকটসহ নানা ধরনের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে।

গতকাল সকালে বান্দরবান জেলা সদরের অদূরে সাতকানিয়ার বাইতুল ইজ্জতে বিজিবির ৯১তম রিক্রুট ব্যাচের সমাপনী কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানের পর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, সরকারের সময়োপযোগী ও নানামুখী পদক্ষেপের কারণে ধাক্কা কাটিয়ে এই বাহিনীতে শৃঙ্খলা ফিরে এসেছে। প্রযুক্তিগত বিষয়াদি সংযোজন এবং প্রশিক্ষণের মাধ্যমে বিজিবি জওয়ানদের মধ্যে সক্ষমতা বেড়েছে। যেকোনো পরিস্থিতি মোকবেলা করার জন্য তারা প্রস্তুত রয়েছে। তিনি আরো বলেন, ‘আমরা আমাদের সীমান্ত রক্ষী বাহিনীতে নারীদের অন্তর্ভুক্ত করেছি। দেশ রক্ষায় তারাও প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।’

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘জোর করে আমরা রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠাতে চাই না। এ কারণে আমরা কূটনৈতিক চ্যানেলে কাজ করছি। কাজেই অস্ত্রের ভাষায় কথা বলা পরিহার করতে হবে।’

এর আগে সকাল সাড়ে ১১টায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী প্যারেড গ্রাউন্ডে উপস্থিত হলে বিজিবির মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আবুল হোসেন এবং বিজিবি ট্রেনিং সেন্টার অ্যান্ড কলেজের (বিজিটিসি) কমান্ড্যান্ট ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন তাঁকে স্বাগত জানান। পরে তিনি একটি সুসজ্জিত জিপে করে কুচকাওয়াজ পরিদর্শন করেন। ৯১তম ব্যাচে ৪৮ জন নারীসহ ৫৩৫ জন নবীন সৈনিক কৃতিত্বের সঙ্গে তাঁদের প্রশিক্ষণ শেষ করেন।

গতকাল বিকেলে তমব্রু সীমান্তে গিয়ে দেখা গেছে, তমব্রু খালের ওপারে মিয়ানমারের কাঁটাতারের বেড়ার কাছে মোতায়েন রয়েছে সশস্ত্র সেনা সদস্যরা। তাঁদের সঙ্গে রয়েছেন মিয়ানমারের বিজিপি সদস্যরাও। গতকাল বিকেল সোয়া ৫টার দিকে দেখা গেছে, রাখাইনের মংডু থানার ঢেকিবুনিয়া এলাকা থেকে সেনাবোঝাই তিনটি ট্রাক তমব্রু কোনারপাড়ার শূন্যরেখার কাছে থামে। এর আগে সকালেও একসঙ্গে ১০টি ট্রাকে করে সেনা সদস্যরা সীমান্তের ওই এলাকায় সমবেত হয়।

জানা গেছে, তমব্রু সীমান্তের ওপারে মিয়ানমার বাহিনী কয়েক শ বাংকার করেছে। ওই সব বাংকারে প্রচুর অস্ত্রশস্ত্র রাখা হয়েছে। এ ছাড়া মিয়ানমারের সীমান্ত সড়কের পূর্বদিকে অনেক সেনা মোতায়েন রয়েছে।

কোনারপাড়ায় শূন্যরেখার রোহিঙ্গা ক্যাম্পের পূর্ব পাশে উত্তর-দক্ষিণ বরাবর বিস্তৃত রয়েছে মিয়ানমারের সীমান্ত সড়ক। গত বছরের ২৫ আগস্ট রোহিঙ্গা নির্যাতন-পরবর্তী সময়ে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ সীমান্ত সড়কটির ব্যাপক উন্নয়ন করে। ২৫ আগস্টের আগেও সীমান্ত সড়কটি ছিল যানচলাচলের অযোগ্য। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে এ সড়কটি দিয়ে মিয়ানমারের শত শত সামরিক যান চলাচল করছে। গতকাল বিকেলে তমব্রু খালের এপারে দেড় ঘণ্টার অবস্থানকালে ১৫-২০টি যানবাহন দেখা যায়। এমনকি ট্রাকে ট্রাকে শ্রমিকদের পরিবহন করার দৃশ্যও চোখে পড়েছে। এসব শ্রমিক দিয়ে বিজিপি ও মিয়ানমারের সেনাদের অস্ত্রশস্ত্র বহন এবং কাঁটাতারের বেড়া দেওয়ার কাজ করানো হচ্ছে। ১০-১২ ফুট উঁচু করে কাঁটাতারের বেড়া দেওয়ার কাজ চলছে।

তমব্রু খালের ওপারে এবং শূন্যরেখার রোহিঙ্গা ক্যাম্প-সংলগ্ন দেড় শ ফুট উঁচু পাহাড়ের ওপর বিকেল সাড়ে ৫টায় দেখা গেছে, বেশ কয়েকজন সেনা সদস্য ভারী অস্ত্র তাক করে রয়েছেন। খালের এপারে কর্তব্যরত বিজিবির জওয়ান দেলোয়ার বলেন, ‘ওই যে দেখুন পাহাড়ে মিয়ানমারের সেনারা বসে রয়েছে।’

সীমান্ত সড়কে এবং কাঁটাতারের বেড়ার ১০-১৫ ফুট দূরে মিয়ানমারের সেনা ও বিজিপি সদস্যরা সশস্ত্র অবস্থায় মোতায়েন রয়েছেন। অন্যদিকে শূন্যরেখার পূর্ব পাশে পাহাড়ের ওপর সেনা ও বিজিপি অস্থায়ী ছাউনি স্থাপন করে মাইক লাগিয়েছে। সেই মাইকে কিছুক্ষণ পরপরই রোহিঙ্গা ও রাখাইন ভাষায় বলা হচ্ছে, ‘তোমরা রোহিঙ্গারা শূন্যরেখা থেকে সরে যাও। শূন্যরেখায় বসবাস করা যায় না। তোমরা সরে না গেলে তোমাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

শূন্যরেখায় অবস্থানকারী রোহিঙ্গা আলী আহমদ (৫০) কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আজ সকাল থেকে মিয়ানমারের সেনারা সীমান্তে টহল দিচ্ছে ভারী অস্ত্র নিয়ে। তারা এমনিতেই গত কিছুদিন ধরে আমাদের শূন্যরেখা থেকে সরে যেতে বলছে। ভারী অস্ত্র নিয়ে সেনা টহলের কারণে আমরা ভয়ে রয়েছি।’

শূন্যরেখার বাসিন্দা রোহিঙ্গা নেতা নুরুল আমিন বলেন, ‘গত ২০ ফেব্রুয়ারির বাংলাদেশ-মিয়ানমারের যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠকের পর থেকেই মিয়ানমার বাহিনী আমাদের হুমকি দিয়ে যাচ্ছে এখান থেকে সরে যাওয়ার জন্য। অথচ যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপের সরেজমিন পরিদর্শনের সময় মিয়ানমারের প্রতিনিধিরাই রোহিঙ্গাদের স্বদেশে ফিরে যাওয়ার জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুতি নিতে বলেছিলেন।’ তিনি আরো বলেন, তারা শূন্যরেখা থেকে কিছুতেই সরে যাবেন না।

মিয়ানমার বাহিনীর গতকালের মহড়ার পর থেকে বাংলাদেশের তমব্রু সীমান্তেও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। তুমব্রু গ্রামের বাসিন্দা আবু বকর সিদ্দিক বলেন, ‘আমরা আজ মিয়ানমার সীমান্তে সেনা ও বিজিপির সশস্ত্র উসকানিমূলক অবস্থান দেখে ভয় পাচ্ছি। কখন কী ঘটে যায়! গতকাল সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসার পরপরই সীমান্তজুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছিল।’