জাতীয় ডেস্কঃ
জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান মুক্তিযোদ্ধাদের সুদমুক্ত ঋণ দেবে সরকার। ‘মুক্তিযোদ্ধা গৃহ নির্মাণ ঋণ’ প্রকল্পের আওতায় প্রতি মুক্তিযোদ্ধাকে সর্বোচ্চ ১০ লাখ টাকা করে ঋণ দেওয়া হবে। এই আলোকে নীতিমালা প্রণয়ন করছে সরকার। ৯ মাস গ্রেস পিরিয়ডসহ এই ঋণের মেয়াদ হবে ১২ বছর। ঋণ প্রদানের ক্ষেত্রে উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ কর্তৃক চিহ্নিতকরণ সাপেক্ষে ভূমিহীন ও অসচ্ছল জীবিত মুক্তিযোদ্ধাদের অগ্রাধিকার দিতে হবে। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
সূত্র জানায়, ২০১৬ সালে মুক্তিযোদ্ধাদের গৃহ নির্মাণের জন্য সুদমুক্ত ঋণ দেওয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করে সরকার। এরই ধারাবাহিকতায় ২০১৭ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি অর্থ মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে অতিরিক্ত সচিব মো. ফজলুল হকের সভাপতিত্বে একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় এ বিষয়ে একটি তথ্যভিত্তিক নীতিমালার খসড়া এবং সুনির্দিষ্ট প্রস্তাবসহ প্রতিবেদন প্রণয়নের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগের মহাব্যবস্থাপক আবু ফরাহ মো. নাছেরকে আহ্বায়ক করে সাত সদস্যদের একটি কমিটি গঠন করা হয়।
এরপর কমিটি তিন দফা বৈঠক করে এ সংক্রান্ত একটি নীতিমালার খসড়া এবং সুনির্দিষ্ট প্রস্তাবসহ প্রতিবেদন প্রণয়ন করে সম্প্রতি আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে প্রেরণ করেছে। আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ প্রতিবেদনটি সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের সচিব মোহাম্মদ মুসলিম চৌধুরীর কাছে পাঠায়। মুসলিম চৌধুরী মন্ত্রণালয়ের বাজেট শাখায় প্রতিবেদনটি পাঠিয়ে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন।
জানা যায়, এই প্রকল্পের নাম দেওয়া হয়েছে ‘মুক্তিযোদ্ধা গৃহ নির্মাণ ঋণ’। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে সোনালী, জনতা, অগ্রণী, বাংলাদেশ কৃষি ও রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক। তবে সরকার প্রয়োজন মনে করলে অন্যান্য বেসরকারি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানকেও তাদের সম্মতিগ্রহণ সাপেক্ষে এ প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত করতে পারবে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, এ ঋণের উদ্দেশ্য হচ্ছে মুক্তিযোদ্ধা এবং মৃত মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানীভাতা পাওয়ার যোগ্য ও অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত উত্তরাধিকারীদের জন্য আবাসিক গৃহ নির্মাণ। প্রকল্পের আওতায় ঋণ সুবিধার সর্বোচ্চ পরিমাণ ১০ লাখ টাকা। ৯ মাস গ্রেস পিরিয়ডসহ মেয়াদ হবে ১২ বছর। এজন্য মোট অর্থের প্রয়োজন হবে ১৬ হাজার ১২৪ কোটি টাকা। এ ঋণের সরল সুদহার হবে পাঁচ শতাংশ।
তবে এ সুদ ঋণগ্রহীতাদের পরিশোধ করতে হবে না। এটা পরিশোধ করবে সরকার। সুদ ব্যয় সরকার কর্তৃক ঋণপ্রদানকারী ব্যাংক বরাবর বার্ষিক ভিত্তিতে প্রদেয় হবে। ঋণের সদ্ব্যবহার নিশ্চিত হয়ে তিন ধাপে গ্রহীতাকে ঋণ দেওয়া হবে। ঋণ মঞ্জুর হওয়ার শুরুতে ঋণের ৪০ শতাংশ, তিন মাস পর ৩০ শতাংশ এবং আরো তিন মাস পর অবশিষ্ট ৩০ শতাংশ ঋণের অর্থ দেওয়া হবে।
প্রকল্পের আওতায় জীবিত মুক্তিযোদ্ধারা ঋণের আবেদন করতে পারবেন। এক্ষেত্রে কোনো বয়সসীমা থাকবে না। মৃত মুক্তিযোদ্ধার ক্ষেত্রে তার সম্মানীভাতা পাওয়ার যোগ্য অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত উত্তরাধিকারী সব উত্তরাধিকারীর লিখিত সম্মতিক্রমে (যথাযথ নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে) ঋণের জন্য আবেদন করতে পারবেন। সম্মানী ভাতাভোগী মুক্তিযোদ্ধারা তাদেও ওই ভাতা লিয়েন রেখে অন্য কোনো জামানত ব্যতিরেকেই ঋণের জন্য আবেদন করতে পারবেন।
ঋণের বিপরীতে নির্মিতব্য বাসস্থান ব্যাংকের কাছে মর্টগেজ (বন্ধক) করা আবশ্যক হবে না। সম্মানী ভাতাভোগী নন এমন মুক্তিযোদ্ধাদেও ক্ষেত্রে ঋণ প্রদানকারী ব্যাংক ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার অংশ হিসেবে তাদের প্রথা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় জামানত গ্রহণ করতে পারবে। ঋণ প্রদানের ক্ষেত্রে উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ কর্তৃক চিহ্নিতকরণ সাপেক্ষে ভূমিহীন ও অসচ্ছল জীবিত মুক্তিযোদ্ধাদের অগ্রাধিকার দিতে হবে।