ঢাকা ০২:১৫ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সেনা তৎপরতায় বদলেছে রোহিঙ্গাদের জীবনমান

জাতীয় ডেস্ক:
সড়কের আশেপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের এলোমেলো ভাবে ত্রাণ বিতরণের দৃশ্য চোখে পড়ে না। সকাল থেকে সন্ধা পর্যন্ত নিবন্ধনের জন্য রোহিঙ্গাদের অপেক্ষা করতে হচ্ছে না। সড়কে যানবাহনের দীর্ঘ লাইন এখন নেই। চিকিৎসা ও খাবার পানির জন্য রোহিঙ্গাদের কষ্ট পেতে হচ্ছে না। সুবিধাদীচক্রের সদস্যরা গাঢাকা দেওয়ায় ক্যাম্পের সার্বিক পরিস্থিতি উন্নয়ন হয়েছে বলে মনে করছেন রোহিঙ্গা, এনজিও সংস্থা সংশ্লিষ্ট ও স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শীরা।
শুক্রবার থেকে সেনা সদস্যরা উখিয়ার বিভিন্ন রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অবস্থান নিলেও মুলত তারা কার্যক্রম শুরু করেছে শনিবার থেকে। সোমবার কুতুপালং, টিএনটি, টিভি রিলে কেন্দ্র, বালুখালী, থাইংখালীর ঢালা ও আনজুমানপাড়া আশ্রয় কেন্দ্র ঘুরে দেখা যায়, সেনা সদস্যরা ট্রাফিকের আদলে যানবাহন নিয়ন্ত্রণ করছে। ফলে উখিয়া থেকে পালংখালী পর্যন্ত দীর্ঘ ১৮ কিলোমিটার সড়ক পথ ফাঁকা হয়ে গেছে। যে সড়কে ৪দিন আগেও রোহিঙ্গার জন্য যানবাহন চলাচল করতে পারেনি। মাইক্রো চালক শফি আলম জানান, সেনাবাহিনী আরো আসলে তাদের যানজটের দুর্ভোগ পোহাতে হতো না।
রোহিঙ্গাদের জন্য নিয়ে আসা ত্রাণসামগ্রী সেনা সদস্যরা বুঝে নিয়ে সমপরিমাণ সংখ্যক টোকেন ধরিয়ে দিচ্ছে ত্রাণদাতা সংশ্লিষ্টদের। বলা হচ্ছে, আপনারা ইচ্ছেমতো রোহিঙ্গাদের টুকেন বিতরণ করুণ। টুকেন প্রাপ্ত রোহিঙ্গাদের ত্রাণ নিশ্চিত করা হবে।
প্রত্যক্ষদর্শী ইউপি সদস্য মোজাফফর আহমদ সওদাগর জানান, সেনাবাহিনীর উপস্থিতির ফলে দালালচক্র উধাও হয়ে গেছে। রোহিঙ্গারা যথাযথভাবে ত্রাণসামগ্রী পাচ্ছে। বালুখালী ক্যাম্পে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গা নেতা আবু শামা, ছব্বির আলম জানান, সেনা সদস্যরা তড়িঘড়ি নিবন্ধন সম্পন্ন করছে। তাছাড়া নিবন্ধনের বাইরে থাকা রোহিঙ্গাদের সরকারি বেসরকারি ত্রাণ সুবিধাদি দেওয়া হচ্ছে না এমন খবরের ভিত্তিতে রোহিঙ্গারা নিবন্ধন করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে।
সোমবার সকালে নিবন্ধন অফিসে গিয়ে দেখা যায়, নিবন্ধন করার জন্য শতশত রোহিঙ্গা সুশৃংখলভাবে অধির আগ্রহ নিয়ে অডেক্ষা করছে। কুতুপালং ক্যাম্পে সেনা কর্মকর্তা লে. কর্নেল মাহাবুব বলেন, ২/৩ মিনিটে একজনের নিবন্ধন হচ্ছে। রবিবার পর্যন্ত ১৬ হাজার ২শ ৬৪ জন রোহিঙ্গাকে নিবন্ধনের আওতায় আনা হয়েছে। নিবন্ধন কার্যক্রম আরো তরান্বিত করতে প্রয়োজনের বুথ সংখ্যা আরো সম্প্রসারণ করা যেতে পারে।
কুতুপালং থেকে পালংখালী পর্যন্ত ঘুরে সড়কের আশেপাশে ত্রাণের জন্য অপেক্ষমান রোহিঙ্গা নারীকে দেখা মেলেনি। স্থানীয়রা বলছেন, আগের মতো যত্রতত্র টাকা ও ত্রাণ দেওয়া বন্ধ করায় রোহিঙ্গা নারীরা আর রাস্তায় আসে না। থাইংখালী হাইস্কুল মাঠে আশ্রয় নেওয়া আয়েশা বিবি (৩৫) ও দিল ফরাজ খাতুন (৩৮) জানায়, সেনাবাহিনী আসাতে তারা দুবেলা দুমুটো খেতে পারছে। নিরাপদে রাতযাপন করতে পারছে।
বালুখালী ক্যাম্পে দায়িত্বরত সেনা কর্মকর্তা মোসাদ্দেক আবু সায়িদ বলেন, রোহিঙ্গা ও স্থানীয়রা যার যার অবস্থানে স্বাচ্ছন্দে জীবন যাপন করতে পারে সেজন্য তারা সার্বিক বিষয়ের উপর নজরদারি রাখছে।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আলী হোসেন বলেন, প্রতিদিন গড়ে শতাধিক ত্রাণবাহী ট্রাক রোহিঙ্গা শিবিরে পাঠানো হচ্ছে। সেনাবাহিনী এসব ত্রাণ টোকেনের মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের বিতরণ করছে। আইনশৃংখলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
ট্যাগস
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

সাবেক মন্ত্রী কায়কোবাদের মামলা প্রত্যাহারের দাবি ছাত্রদলের

সেনা তৎপরতায় বদলেছে রোহিঙ্গাদের জীবনমান

আপডেট সময় ১১:১৬:০৬ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৭
জাতীয় ডেস্ক:
সড়কের আশেপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের এলোমেলো ভাবে ত্রাণ বিতরণের দৃশ্য চোখে পড়ে না। সকাল থেকে সন্ধা পর্যন্ত নিবন্ধনের জন্য রোহিঙ্গাদের অপেক্ষা করতে হচ্ছে না। সড়কে যানবাহনের দীর্ঘ লাইন এখন নেই। চিকিৎসা ও খাবার পানির জন্য রোহিঙ্গাদের কষ্ট পেতে হচ্ছে না। সুবিধাদীচক্রের সদস্যরা গাঢাকা দেওয়ায় ক্যাম্পের সার্বিক পরিস্থিতি উন্নয়ন হয়েছে বলে মনে করছেন রোহিঙ্গা, এনজিও সংস্থা সংশ্লিষ্ট ও স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শীরা।
শুক্রবার থেকে সেনা সদস্যরা উখিয়ার বিভিন্ন রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অবস্থান নিলেও মুলত তারা কার্যক্রম শুরু করেছে শনিবার থেকে। সোমবার কুতুপালং, টিএনটি, টিভি রিলে কেন্দ্র, বালুখালী, থাইংখালীর ঢালা ও আনজুমানপাড়া আশ্রয় কেন্দ্র ঘুরে দেখা যায়, সেনা সদস্যরা ট্রাফিকের আদলে যানবাহন নিয়ন্ত্রণ করছে। ফলে উখিয়া থেকে পালংখালী পর্যন্ত দীর্ঘ ১৮ কিলোমিটার সড়ক পথ ফাঁকা হয়ে গেছে। যে সড়কে ৪দিন আগেও রোহিঙ্গার জন্য যানবাহন চলাচল করতে পারেনি। মাইক্রো চালক শফি আলম জানান, সেনাবাহিনী আরো আসলে তাদের যানজটের দুর্ভোগ পোহাতে হতো না।
রোহিঙ্গাদের জন্য নিয়ে আসা ত্রাণসামগ্রী সেনা সদস্যরা বুঝে নিয়ে সমপরিমাণ সংখ্যক টোকেন ধরিয়ে দিচ্ছে ত্রাণদাতা সংশ্লিষ্টদের। বলা হচ্ছে, আপনারা ইচ্ছেমতো রোহিঙ্গাদের টুকেন বিতরণ করুণ। টুকেন প্রাপ্ত রোহিঙ্গাদের ত্রাণ নিশ্চিত করা হবে।
প্রত্যক্ষদর্শী ইউপি সদস্য মোজাফফর আহমদ সওদাগর জানান, সেনাবাহিনীর উপস্থিতির ফলে দালালচক্র উধাও হয়ে গেছে। রোহিঙ্গারা যথাযথভাবে ত্রাণসামগ্রী পাচ্ছে। বালুখালী ক্যাম্পে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গা নেতা আবু শামা, ছব্বির আলম জানান, সেনা সদস্যরা তড়িঘড়ি নিবন্ধন সম্পন্ন করছে। তাছাড়া নিবন্ধনের বাইরে থাকা রোহিঙ্গাদের সরকারি বেসরকারি ত্রাণ সুবিধাদি দেওয়া হচ্ছে না এমন খবরের ভিত্তিতে রোহিঙ্গারা নিবন্ধন করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে।
সোমবার সকালে নিবন্ধন অফিসে গিয়ে দেখা যায়, নিবন্ধন করার জন্য শতশত রোহিঙ্গা সুশৃংখলভাবে অধির আগ্রহ নিয়ে অডেক্ষা করছে। কুতুপালং ক্যাম্পে সেনা কর্মকর্তা লে. কর্নেল মাহাবুব বলেন, ২/৩ মিনিটে একজনের নিবন্ধন হচ্ছে। রবিবার পর্যন্ত ১৬ হাজার ২শ ৬৪ জন রোহিঙ্গাকে নিবন্ধনের আওতায় আনা হয়েছে। নিবন্ধন কার্যক্রম আরো তরান্বিত করতে প্রয়োজনের বুথ সংখ্যা আরো সম্প্রসারণ করা যেতে পারে।
কুতুপালং থেকে পালংখালী পর্যন্ত ঘুরে সড়কের আশেপাশে ত্রাণের জন্য অপেক্ষমান রোহিঙ্গা নারীকে দেখা মেলেনি। স্থানীয়রা বলছেন, আগের মতো যত্রতত্র টাকা ও ত্রাণ দেওয়া বন্ধ করায় রোহিঙ্গা নারীরা আর রাস্তায় আসে না। থাইংখালী হাইস্কুল মাঠে আশ্রয় নেওয়া আয়েশা বিবি (৩৫) ও দিল ফরাজ খাতুন (৩৮) জানায়, সেনাবাহিনী আসাতে তারা দুবেলা দুমুটো খেতে পারছে। নিরাপদে রাতযাপন করতে পারছে।
বালুখালী ক্যাম্পে দায়িত্বরত সেনা কর্মকর্তা মোসাদ্দেক আবু সায়িদ বলেন, রোহিঙ্গা ও স্থানীয়রা যার যার অবস্থানে স্বাচ্ছন্দে জীবন যাপন করতে পারে সেজন্য তারা সার্বিক বিষয়ের উপর নজরদারি রাখছে।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আলী হোসেন বলেন, প্রতিদিন গড়ে শতাধিক ত্রাণবাহী ট্রাক রোহিঙ্গা শিবিরে পাঠানো হচ্ছে। সেনাবাহিনী এসব ত্রাণ টোকেনের মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের বিতরণ করছে। আইনশৃংখলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।