তথ্রপ্রযুক্তি ডেস্কঃ
সোমবার পূর্ণগ্রাস সূর্যগ্রহণ। তবে বাংলাদেশ থেকে এ বিরল দৃশ্য দেখা যাবে না। কারণ বাংলাদেশে যখন রাত তখন এই গ্রহণ হবে। বাংলাদেশ সময় রাত নয়টা ৪৭ মিনিটে গ্রহণ শুরু হয়ে রাত তিনটা ৪ মিনিট ১৮ সেকেন্ডে এটি শেষ হবে। প্রায় এক শতাব্দী পর এই পূর্ণ বলয় গ্রাস সুর্যগ্রহণ দেখা যাবে যুক্তরাষ্ট্রের কেনটাকি,মিডওয়ে হ্যাটল দ্বীপ, হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জ ও ব্রাজিল থেকে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কোটি কোটি মানুষ অপেক্ষা করছেন এই অপরূপ মহাজাগতিক দৃশ্যের জন্য। রোদ তাতানো দুপুরে সেখানে নামবে ঘোর সন্ধ্যা। আকাশে দেখা যাবে তারা। আর পাখিরা কিচির মিচির করে ঘরে ফিরতে শুরু করবে রাত হচ্ছে ভেবে। ভয়ার্ত প্রানীরা ছুটাছুটি করতে থাকবে। ১৯১৮ সালের পর এই প্রথম যুক্তরাষ্ট্রের পূর্ব উপকূল থেকে পশ্চিম উপকূল পর্যন্ত বিস্তৃত হবে পূর্ণ সূর্য গ্রহণ। পশ্চিম ইউরোপ, আফ্রিকার কয়েকটি এলাকা এবং এশিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চল থেকেও আংশিক সূর্য গ্রহণের দেখা মিলবে। সর্বশেষ ২০০৯ সালের ২২ আগস্ট বাংলাদেশের পঞ্চগড় থেকে পূর্ণ গ্রাস সূর্য গ্রহণ দেখা গিয়েছিলো। পূর্ণগ্রাস গ্রহণ দেখতে বাংলাদেশকে অপেক্ষা করতে হবে ১০৫ বছর।
এ গ্রহণ বিষয়ে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদফতর (আইএসপিআর) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, বাংলাদেশ থেকে এ পূর্ণগ্রাস সূর্য গ্রহণ দেখা যাবে না। যুক্তরাষ্ট্রের হাওয়াইয়ে স্থানীয় সময় ভোর ৫টা ৩৪ মিনিটে গ্রহণ শুরু হবে (বাংলাদেশ সময় রাত ৯টা ৪৭ মিনিট)। বাংলাদেশ গ্রহণ শেষ হবে রাত ৩টা ৪ মিনিটে। আইএসপিআর থেকে গ্রহণের একটি গতিপথও নির্দেশ করে দেওয়া হয়েছে।১৯১৮ সালের ৮ জুন শেষবার পূর্ণগ্রাস সূর্য গ্রহণ দেখে যুক্তরাষ্ট্রবাসী।
কাল দিনের শুরুতেই ধীরে ধীরে চাঁদ অবস্থান নিবে পৃথিবী ও সূর্যের মাঝামাঝি। চাঁদের আড়ালে সূর্য পুরোপুরি ঢাকা পড়ে যাওয়ার পূর্বমুহূর্তে চাঁদের পূর্ব প্রান্ত ঘিরে একটি সরু আলোর রেখা আর তার মাঝে মাঝে আলোকবিন্দু দেখা যাবে,মুক্তমালার আবার চাঁদের পাহাড়, পর্বত, উপত্যকার ফাঁক গলিয়ে আলো এসে হীরার আংটির মতোই দেখা যাবে সূর্য গ্রহণের দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্পর্শের সময়।সূর্য পুরো ঢাকা পড়ে গেলে সেটাকে সৌরমুকুট দেখা যাবে। যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চিম উপকূলীয় রাজ্য অরিগনের ভূমি থেকে গ্রহণের শুরুর দৃশ্য দেখা যাবে স্থানীয় সময় সকাল সোয়া ১০টার দিকে। মাঝে ১২টি রাজ্য পেরিয়ে গ্রহণের শেষ অংশটি দেখা যাবে দেশটির পূর্ব উপকূলীয় রাজ্য সাউথ ক্যারোলিনায়।প্রায় তিন মিনিট সূর্যকে ঢেকে রাখবে চাঁদ। পূর্ণ গ্রহণের এলাকায় দেখা দেবে সন্ধ্যার আবহ। দিনের বেলাতেই দেখা যাবে বৃহস্পতি ও শুক্রসহ বিভিন্ন গ্রহ। রাতের তারারাও উঁকি দিবে সে সময়। দিনের বেলা হঠাত্ রাতের মতো অন্ধকার নেমে আসার প্রভাব পড়বে প্রাণীকুলে। পাখি, পোকামাকড় ও জন্তু-জানোয়ার হঠাত্ দিনের বেলা সূর্যের আলো কমতে থাকায় বিহ্বল হয়ে পড়ে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, অন্ধকার আকাশ পশু-পাখিদের বিভ্রান্ত করতে পারে। নিশাচর প্রাণীরা, বিশেষত পেঁচা দিনের বেলায়ই রাত ভেবে জেগে যেতে পারে, ভেড়ার পাল খুঁজতে পারে ঘুমানোর জন্য জায়গা। দিনের পাখিরা কলরব বন্ধ করে দিবে। পূর্ণগ্রাস সূর্য গ্রহণ রাতে চলা পতঙ্গ ও প্রজাপতিদের চলাফেরাতেও বিঘ্ন সৃষ্টি করতে পারে। পোষা বিড়াল ও কুকুরও বিরক্ত বোধ করতে পারে। ভারতে পরিচালিত একটি গবেষণায় দেখা যায়, পেঁচা, বাদুড়, সকালের পাখি, দাঁড় কাক, গঙ্গা ফড়িং এবং মৌমাছির ওপর এর প্রভাব পড়বে। এর আগে ১৯৫৫ সালের জুন মাসে ভারতে জুয়োলোজিক্যাল জরিপে দেখা গেছে, ভোমরও তাদের চাকে পালিয়েছিল। পূর্ণ সূর্যগ্রহণের খবরে যুক্তরাষ্ট্রের ১৪টি রাজ্যের অধিবাসীদের মধ্যে শুরু হয়েছে সাজ সাজ রব। শুরু হয়েছে “এক্লিপস পার্টি”-র প্রস্তুতিও।
এদিকে আগ্রহীরা এ পূর্ণ সূর্য গ্রহণটি দেখতে পাবেন নাসা টেলিভিশন এবং নাসার ওয়েবসাইটে লাইভ ভিডিও স্ট্রিমের মাধ্যমে। নাসার ওয়েবসাইটে জানানো হয়েছে ১১টি বিমান থেকে ধারণ করা হবে সূর্য গ্রহণের দৃশ্য। এছাড়াও, আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে থাকা নভোচারীরা পাঠাবেন গ্রহণকালে গ্রকৃতির রহস্যময় রূপের ছবি।