বিনোদন ডেস্ক:
বলিউডের একসময়ের তুমুল জনপ্রিয় অভিনেত্রী ভানুরেখা গণেশন। ভক্তরা ও ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি যাকে রেখা নামে চেনে। কী বলা যায় তাকে? ‘এপিটোম অব বিউটি? তার সৌন্দর্যের ছটায় মাতোয়ারা আট থেকে আশি। তার ঠোঁটের কোণে আলগা হাসি আজও হিল্লোল তোলে ভক্ত হৃদয়ে। দীর্ঘ ফিল্মি গ্রাফে নানা চরাই-উতরাই পেরিয়ে আজ তিনি কিংবদন্তি।
একরত্তি মেয়েটার মনের জোর ছিল প্রচুর। হার না মানার সহজপাঠ শিখে গিয়েছিলেন খুব ছোট বয়সে। সংসারে অভাব চরমে, বাধ্য হয়েই অভিনয়কে পেশা হিসেবে বেছে নেন চেন্নাইয়ে জন্ম নেয়া রেখা। তবে প্রথম জীবনে তিনি মোটেও অভিনেত্রী হতে চাননি। তার ইচ্ছা ছিল বিমানসেবিকা হওয়ার। কিন্তু সেই ইচ্ছা পূরণ হয়নি। সন্ন্যাসিনী হতেও চেয়েছিলেন। পরে সেই ইচ্ছা থেকেও সরে আসেন।
চোখে হাজার স্বপ্ন মেয়েটার। কিন্তু স্বপ্ন পূরণের উপায় জানা নেই। পরিবারে চরম দারিদ্র। ক্রমাগত আসতে থাকে ‘বি গ্রেড’ তেলেগু ছবির অফার। বলিউডের পাড়ায় পাড়ায় তিনি তখন ক্রমাগত অডিশন দিয়ে চলেছেন। কিন্তু গায়ের রং কালো। তখন সুন্দরী মানেই প্রথম শর্ত ফরসা হতে হবে। হিন্দিও জানতেন না তেমন। তাই প্রযোজক-পরিচালকরাও একে একে ফিরিয়ে দিতে থাকেন রেখাকে।
কিন্তু তিনি তো দমে যাওয়ার মেয়ে নন। ১৯৬৯ সালে প্রথম কন্নড় ছবিতে অফার মেলে তার। ওই বছরই হিন্দি ছবি ‘আনজানা সফর’-এ প্রথম সুযোগ মেলে তার। কিন্তু ভাগ্য সেখানেও সঙ্গ দেয় না। ছবির মুক্তি আটকে যায়। বেশ কয়েক বছর পর যদিও সেই ছবি মুক্তি পেয়েছিল। ততদিনে ভানুরেখা ‘রেখা’ হয়ে গেছেন।
‘আনজানা সফর’-এ রেখার সহ-অভিনেতা ছিলেন বিশ্বজিৎ চট্টোপাধ্যায়। বিশ্বজিতের সঙ্গে তার পাঁচ মিনিটের দীর্ঘ চুম্বনের দৃশ্যের জন্যই সে সময় সেন্সরশিপের রোষের মুখে পড়ে ছবিটি। রেখার বয়স তখন মাত্র ১৫ বছর। তার প্রথম মুক্তিপ্রাপ্ত হিন্দি ছবি ‘সাওয়ন ভাদো’। বক্স অফিসে ব্যাপক হিট হয় সেই ছবি। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। একের পর এক হিট আসতে থাকে রেখার ঝুলিতে। যিার সঠিক সংখ্যা না গুণে বলা মুশকিল।
এরই মধ্যে বিতর্ক এসে ঘিরে ধরে রেখাকে। দিনটা ১৯৮০ সালের ২২ জানুয়ারি। আরকে স্টুডিওতে ধূমধাম করে ঋষি কাপুর ও নিতু কাপুরের বিয়ে হচ্ছে। এমন সময় রেখা পৌঁছান সেখানে। মাথায় সিঁদুর। গলায় মঙ্গলসূত্র। কিন্তু তার তো বিয়ে হয়নি। তবে? সে সময় আবার বলিউড পাড়ায় অমিতাভ বচ্চন ও রেখার সম্পর্ক নিয়ে নানা গুঞ্জন। ওই অনুষ্ঠানে আবার সস্ত্রীক অমিতাভও এসে হাজির। অতিথিদের মনে তখন হাজারো প্রশ্ন।
যদিও পরবর্তী কালে রেখা বলেছিলেন তিনি নাকি একটি ছবির শুটিংয়ে ছিলেন। সেখান থেকেই চলে গিয়েছিলেন বিয়েবাড়িতে। তাই মেকআপ তোলার কথা তাড়াহুড়োতে তার নাকি একেবারেই খেয়াল ছিল না। সে সময় এই ঘটনা নিয়ে চূড়ান্ত জলঘোলা হয়েছিল ইন্ডাস্ট্রিতে। পরবর্তীতে জয়া আর অমিতাভের সম্পর্কের মধ্যেও এর প্রভাব পড়েছিল বিস্তর।
এরপর মাস খানেকের মধ্যে বিখ্যাত শিল্পপতি মুকেশ আগরওয়ালকে বিয়ে করেন রেখা। কিন্তু বিয়ের এক বছর পরই আত্মহত্যা করেন মুকেশ। কেন মুকেশ আত্মহত্যা করেন, তা এখনও রহস্য হয়ে আছে। এরপর রেখার নাম জড়ায় অভিনেতা বিনোদ মেহরার সঙ্গে। তাদের বিয়ের খবর সে সময় ছিল বলিউডের হটেস্ট টপিক। কলকাতায় নাকি বিয়ে করেছিলেন তারা। কিন্তু বিনোদের মা নাকি তাকে পুত্রবধু হিসেবে মেনে নিতে অস্বীকার করেন। যদিও এ ব্যাপারে কোনোদিন মুখ খোলেননি রেখা।
শুধু বিনোদ মেহরা বা অমিতাভ বচ্চন নন, শত্রুঘ্ন সিন্হা, রাজ বব্বর, কমল হাসান এমনকি সঞ্জয় দত্তের সঙ্গেও রেখাকে নিয়ে রটেছিল নানা রকমের গুঞ্জন। তবে সে সবে থোড়াই কেয়ার অভিনেত্রীর। চিরকালই নিজের স্টাইল, গ্ল্যামার এবং ড্রেসিং সেন্সে নজর কেড়ে এসেছেন তিনি।
দীর্ঘ কেরিয়ারে রেখা পেয়েছেন পদ্মশ্রী, জাতীয় পুরস্কার এবং বেশ কয়েকটি ফিল্ম ফেয়ার অ্যাওয়ার্ড। জীবনের এতগুলো বসন্ত পেরিয়েও আজও রেখা মানেই অন্য এক মাদকতা, অন্য এক আবেদন। তিনি যে চিরসবুজ। ইংরাজিতে যাকে বলে ‘এভারগ্রিন’।