তথ্যপ্রযুক্তি :
মোবাইল ফোন ছাড়া আজকাল আমাদের একদম চলে না। এটি আমাদের জীবনের খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ হয়ে উঠেছে। বহু মানুষ গড়ে দিনে পাঁচ ঘণ্টা পর্যন্ত স্মার্টফোন ব্যবহার করেন। কেউ আইফোন ব্যবহার করেন, কেউবা আবার অ্যান্ডয়েড। কারোর জন্য এসব ফোনের গতি গুরুত্বপূর্ণ। কেউ হয়তো ভালো ছবি তোলে এমন ফোন পছন্দ করেন। অনেকে আবার দেখতে সুন্দর এমন ফোন বেছে নেন। স্মার্টফোন কেনার ক্ষেত্রে সবারই নানা ধরনের পছন্দ রয়েছে। বিশ্বে যত স্মার্টফোন বিক্রি হয় তার মধ্যে ৯০ শতাংশই অ্যান্ড্রয়েড ও আইফোন। সম্প্রতির হিসেবে গুগলের অ্যান্ড্রয়েড ছিল বিশ্বের সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় অপারেটিং সিস্টেম। যা বাজারের ৮৮ শতাংশই দখল করে রেখেছিল। অন্যদিকে অ্যাপলের আইওএস ১২ শতাংশ নিয়ে ছিল দ্বিতীয় অবস্থানে।
স্মার্টফোন আপনার সম্পর্কে কি বলে?
যুক্তরাজ্যের লিংকন বিশ্ববিদ্যালয় এবং ল্যাংক্যাস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক স্মার্টফোন ব্যবহারকারীদের মনোভাব বোঝার জন্য একটি গবেষণা চালিয়েছেন। ঐ গবেষকরা বলছেন একজন মানুষ কি ধরনের স্মার্টফোন ব্যবহার করছেন সেটি দিয়ে তার চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য ও স্বভাব বোঝা সম্ভব। যেমন ধরুন, আইফোন ব্যবহারকারীদের তুলনায় অ্যান্ড্রয়েড ব্যবহারকারীরা বেশি ন্যায়বান হয়ে থাকে। অন্তত তারা যাদের মধ্যে গবেষণা চালিয়েছেন তাদের মধ্যে এরকম দেখা গেছে। আইফোন ব্যবহারকারীরা সাধারণত কম বয়সি হয়ে থাকেন। অ্যান্ড্রয়েড ব্যবহারকারীদের তুলনায় তারা বেশি খোলামেলা হয়ে থাকেন। বয়স্ক পুরুষদের অ্যান্ড্রয়েড পছন্দ বেশি। নারীরা আইফোন বেশি পছন্দ করেন। পুরুষদের তুলনায় নারীদের মধ্যে আইফোন ব্যবহারকারী কেন বেশি তা বোঝা যায়নি।
চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের সঙ্গে স্মার্টফোনের কি সম্পর্ক?
গবেষকরা বলছেন, স্মার্টফোনের মাধ্যমে ব্যক্তি তার ইচ্ছে পছন্দের বিষয়টি প্রকাশ পায়। এর মাধ্যমে সে নিজেকে প্রকাশ করে। গবেষণার প্রধান লেখক হেদার শ বলছেন, ‘দিনকে দিন এটি পরিষ্কার হচ্ছে—একটি স্মার্টফোন সেটি ব্যবহারকারী ব্যক্তির ডিজিটাল সংস্করণ হয়ে উঠছে।’ তিনি বলছেন, ‘আমাদের ফোন যখন কেউ ব্যবহার করার চেষ্টা করে আমরা অনেকেই সেটি পছন্দ করি না কারণ আমাদের ফোন আমাদের সম্পর্কে অনেক কিছু প্রকাশ করতে পারে।’
গবেষণায় আরো দেখা গেছে যাদের হাতে আইফোন আঠার মতো লেগে থাকে তারা যে অ্যান্ড্রয়েড ব্যবহারকারীদের থেকে বেশি বিত্তবান তা কিন্তু নয়। তবে আইফোন ব্যবহারকারীরা এই ফোনকে সামাজিক উচ্চ মর্যাদার নিদর্শন মনে করেন বলে গবেষণায় উঠে এসেছে। আইফোন ব্যবহারকারীদের বেশি আবেগপ্রবণ মনে হয়েছে। এই গবেষকদের দল একটি কম্পিউটার প্রোগ্রাম তৈরি করেছেন। কয়েকটি প্রশ্ন করে ঐ কম্পিউটার প্রোগ্রাম ৭০ শতাংশ ক্ষেত্রেই বলে দিতে পারে একজন ব্যক্তি কি স্মার্টফোন ব্যবহার করছেন। একজন ব্যক্তি স্মার্টফোনে কোনো অপারেটিং সিস্টেম ব্যবহার করছেন সেটিও তার সম্পর্কে অনেক কিছু বলে দেয়।
মোবাইল ফোন কি গোয়েন্দাগিরি করছে?
যখন আমরা বিনামূল্যের কোনো অ্যাপ ডাউনলোড করি আর সেটিতে নানা শর্তে সম্মতি দেই, তখন কি আমরা একবারও ভেবে দেখেছি যে, এসব অ্যাপ আমাদের সম্পর্কে কতটা তথ্য জানতে পারছে? কোনো অ্যাপ ডাউনলোড করার সময় অনেকগুলো শর্ত আসে বা সম্মতি চাওয়া হয়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এগুলো না পড়ে সবাই ‘ওকে’ করে দেন। তার মানে সেই অ্যাপটিকে ফোনের অনেক তথ্যে প্রবেশাধিকার দেওয়া হলো। এসব তথ্যের মধ্যে রয়েছে বন্ধুদের সঙ্গে আমরা কি কথা বলি বা কি বার্তা পাঠাই, পরিবারের সদস্যদের ফোন নম্বর, মোবাইলের ছবি বা ভিডিও এমনকি আমাদের আর্থিক তথ্যও।
তাহলে কি করা উচিত?
ভারতে এখন এ ধরনের কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে আইন করার দাবি উঠছে। অনেকে বলছেন, যেহেতু এসব কোম্পানি সাধারণ নাগরিকদের তথ্য বিক্রি করে কোটি কোটি টাকা আয় করে, এসব টাকার ভাগ এই নাগরিকদেরও পাওয়া উচিত। তবে এর সবচেয়ে বড়ো সমাধান হলো—যখনি কোনো অ্যাপ ব্যবহার করা হবে, তখনি খুব ভালো করে দেখে নেওয়া যে, সেটি ব্যক্তিগত তথ্যের মধ্যে কতটা নাক গলাতে চায়। আপনি এসব অ্যাপকে আপনার বিষয়ে তথ্য সংগ্রহে কতটা অনুমতি দিতে চান, সেটাও আপনার ওপরই নির্ভর করছে।
সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ প্রীতরাজ সিং বলছেন, ‘মোবাইল, অ্যাপ বা ইন্টারনেটে আপনি আপনার নিজের সম্পর্কে যত কম তথ্য দেবেন, তত নিরাপদ থাকবেন। কারণ আমাদের কারো জানা নেই, আজ থেকে ১০/২০ বছর পরে এসব তথ্যের কি হবে।’-বিবিসি