ঢাকা ১০:০৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ৭ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

হাড় নরম হয়ে যাওয়া

 স্বাস্থ্য ডেস্কঃ

অস্টিওম্যালেসিয়ার অর্থ হলো নরম হাড়। এ ক্ষেত্রে মূল কারণ হলো ভিটামিন-ডি এর স্বল্পতা। ভিটামিন-ডি এর অভাবে খনিজ উপাদান ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস শরীরের হাড় ঠিকমতো গঠন করতে পারে না। আর হাড়ে ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস কম থাকলে হাড় নরম হয়। এর ফলে হাড় দুর্বল হয়ে যায়, বেঁকে যায় ও ভেঙে যায়।

এটি শুধু বড়দের হয়। শিশুদের ক্ষেত্রে এ রকম ঘটলে তাকে বলে রিকেট। অস্টিওম্যালেসিয়া মহিলাদের ক্ষেত্রে বেশি পরিলক্ষিত হয়। সচরাচর বেশি ঘটে গর্ভাবস্থাকালে। এটি অস্টিওপরোসিসের মতো একই রকম নয়। এ দুটো রোগেই হাড় ভেঙে যেতে পারে। কিন্তু অস্টিওম্যালেসিয়াতে হাড় শক্ত হয় না।

 

রোগের কারণ: আপনার হাড় শক্তিশালী হওয়ার জন্য কিছু খনিজ উপাদানের প্রয়োজন হয়। যদি আপনার শরীর সেগুলো পর্যাপ্ত পরিমাণে না পায় তাহলে আপনার অস্টিওম্যালেসিয়া হতে পারে। বিভিন্ন কারণে এটি ঘটতে পারে। প্রধান কারণগুলো হলো-

আপনি যদি পর্যাপ্ত পরিমাণ ভিটামিন ডি গ্রহণ না করেন। আপনার খাদ্য থেকে ক্যালসিয়াম শোষিত হওয়ার জন্য এই ভিটামিনটি প্রয়োজনীয়। এটি আপনি সূর্যালোক কিংবা কিছু নির্দিষ্ট খাদ্য অথবা সাপ্লিমেন্ট থেকে পেতে পারেন। ভিটামিন ডি-এর অভাবে আপনার হাড়ের স্বাস্থ্য টলে যেতে পারে।

আপনার শরীরে যদি ভিটামিন-ডি প্রবেশ না করে। গ্যাস্ট্রিক বাইপাস কিংবা আপনার পাকস্থলী বা অন্ত্রের অপারেশনে কিছু অংশ কেটে ফেলে দিলে, সিলিয়াক ডিজিজ এবং লিভার ও কিডনির কিছু অসুখে আপনার শরীরের ভিটামিন ডি গ্রহণের ক্ষমতার ওপর প্রভাব পড়তে পারে।

কিছু খিঁচুনির ওষুধেও এটি ঘটে। আপনার কিডনি ঠিকমতো এসিড নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে এটি হতে পারে। অতিরিক্ত সময়ে আপনার শরীরের ফ্লুইড ধীরে ধীরে হাড়কে নরম করে। অল্প কিছু ক্ষেত্রে, বংশগত কারণে অস্টিওম্যালেসিয়া হতে পারে।

রোগের উপসর্গ: যদি আপনার হাড় নরম হয়ে যায়, এই উপসর্গগুলো দেখা দিতে পারে। এসব উপসর্গের মধ্যে রয়েছে-

১. কোনো আঘাত ছাড়াই শরীরের হাড় ভেঙে যাওয়া, ক্লান্তি অনুভব করা, ব্যথা, অস্থিসন্ধি শক্ত হওয়া, বসা থেকে উঠে দাঁড়াতে কষ্ট হওয়া কিংবা সিঁড়ি বেয়ে উঠতে কষ্ট হওয়া।

১. বাহু ও উরুর মাংসপেশি দুর্বল হওয়া, অস্টিওম্যালেসিয়ার রোগী হাঁসের মতো হেলে দুলে থপ থপ করে হাঁটতে পারে।

রোগ নির্ণয়: রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে শরীরে ভিটামিন-ডি এর মাত্রা পরিমাপ করা। হাড়ের কাঠামো দেখার জন্য এক্স-রে করা। হাড়ে ক্যালসিয়াম ও ফসফেটের পরিমাণ নিরূপণ করার জন্য বোন মিনারেল ডেনসিটি স্ক্যান করা। ক্ষেত্র বিশেষে বোন বায়োপসি করা।

চিকিৎসা: যদি পর্যাপ্ত পরিমাণ ভিটামিন-ডি এর অভাবে অস্টিওম্যালেসিয়া হয় তাহলে খাদ্যে পর্যাপ্ত ভিটামিন ডি গ্রহণ করার জন্য গুরুত্ব দিতে হবে। কিছু নির্দিষ্ট খাদ্য এবং সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করতে হবে। ভিটামিন-ডি সমৃদ্ধ খাবারের মধ্যে রয়েছে-

সম্পূর্ণ খাদ্য শস্য বা সিরিয়াল, পনির, ডিম, মাছ, যকৃত, দুধ, কমলার রস ও দই ইত্যাদি। আপনি সূর্যালোকে বেশি সময় কাটিয়ে অধিক পরিমাণ ভিটামিন ডি পেতে পারেন। তবে এ ব্যাপারে চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করে নিন, সঠিক সানস্ক্রিন মেখে নিন। অতিরিক্ত রোদে আপনার ত্বকের ক্যানসারের সম্ভাবনা থাকে।

যদি আপনার শরীরে ভিটামিন ডি পরিশোষণে সমস্যা থাকে, তাহলে তার চিকিৎসা করতে হবে। আপনাকে বেশি মাত্রায় ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি গ্রহণ করতে হবে। অস্টিওম্যালেসিয়ার কারণে আপনার হাড় ভেঙে গেলে বা বিকলাঙ্গ হলে ব্রেস পরতে হবে। সমস্যা বেশি হলে অপারেশনের প্রয়োজন হতে পারে।

লেখক: অর্থোপেডিকস ও ট্রমা বিশেষজ্ঞ।

ট্যাগস
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

মুরাদনগর উপজেলা বিএনপির ১৭ বছর পর বিজয় দিবস উদযাপন

হাড় নরম হয়ে যাওয়া

আপডেট সময় ০২:০২:১১ অপরাহ্ন, শনিবার, ১২ জানুয়ারী ২০১৯
 স্বাস্থ্য ডেস্কঃ

অস্টিওম্যালেসিয়ার অর্থ হলো নরম হাড়। এ ক্ষেত্রে মূল কারণ হলো ভিটামিন-ডি এর স্বল্পতা। ভিটামিন-ডি এর অভাবে খনিজ উপাদান ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস শরীরের হাড় ঠিকমতো গঠন করতে পারে না। আর হাড়ে ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস কম থাকলে হাড় নরম হয়। এর ফলে হাড় দুর্বল হয়ে যায়, বেঁকে যায় ও ভেঙে যায়।

এটি শুধু বড়দের হয়। শিশুদের ক্ষেত্রে এ রকম ঘটলে তাকে বলে রিকেট। অস্টিওম্যালেসিয়া মহিলাদের ক্ষেত্রে বেশি পরিলক্ষিত হয়। সচরাচর বেশি ঘটে গর্ভাবস্থাকালে। এটি অস্টিওপরোসিসের মতো একই রকম নয়। এ দুটো রোগেই হাড় ভেঙে যেতে পারে। কিন্তু অস্টিওম্যালেসিয়াতে হাড় শক্ত হয় না।

 

রোগের কারণ: আপনার হাড় শক্তিশালী হওয়ার জন্য কিছু খনিজ উপাদানের প্রয়োজন হয়। যদি আপনার শরীর সেগুলো পর্যাপ্ত পরিমাণে না পায় তাহলে আপনার অস্টিওম্যালেসিয়া হতে পারে। বিভিন্ন কারণে এটি ঘটতে পারে। প্রধান কারণগুলো হলো-

আপনি যদি পর্যাপ্ত পরিমাণ ভিটামিন ডি গ্রহণ না করেন। আপনার খাদ্য থেকে ক্যালসিয়াম শোষিত হওয়ার জন্য এই ভিটামিনটি প্রয়োজনীয়। এটি আপনি সূর্যালোক কিংবা কিছু নির্দিষ্ট খাদ্য অথবা সাপ্লিমেন্ট থেকে পেতে পারেন। ভিটামিন ডি-এর অভাবে আপনার হাড়ের স্বাস্থ্য টলে যেতে পারে।

আপনার শরীরে যদি ভিটামিন-ডি প্রবেশ না করে। গ্যাস্ট্রিক বাইপাস কিংবা আপনার পাকস্থলী বা অন্ত্রের অপারেশনে কিছু অংশ কেটে ফেলে দিলে, সিলিয়াক ডিজিজ এবং লিভার ও কিডনির কিছু অসুখে আপনার শরীরের ভিটামিন ডি গ্রহণের ক্ষমতার ওপর প্রভাব পড়তে পারে।

কিছু খিঁচুনির ওষুধেও এটি ঘটে। আপনার কিডনি ঠিকমতো এসিড নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে এটি হতে পারে। অতিরিক্ত সময়ে আপনার শরীরের ফ্লুইড ধীরে ধীরে হাড়কে নরম করে। অল্প কিছু ক্ষেত্রে, বংশগত কারণে অস্টিওম্যালেসিয়া হতে পারে।

রোগের উপসর্গ: যদি আপনার হাড় নরম হয়ে যায়, এই উপসর্গগুলো দেখা দিতে পারে। এসব উপসর্গের মধ্যে রয়েছে-

১. কোনো আঘাত ছাড়াই শরীরের হাড় ভেঙে যাওয়া, ক্লান্তি অনুভব করা, ব্যথা, অস্থিসন্ধি শক্ত হওয়া, বসা থেকে উঠে দাঁড়াতে কষ্ট হওয়া কিংবা সিঁড়ি বেয়ে উঠতে কষ্ট হওয়া।

১. বাহু ও উরুর মাংসপেশি দুর্বল হওয়া, অস্টিওম্যালেসিয়ার রোগী হাঁসের মতো হেলে দুলে থপ থপ করে হাঁটতে পারে।

রোগ নির্ণয়: রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে শরীরে ভিটামিন-ডি এর মাত্রা পরিমাপ করা। হাড়ের কাঠামো দেখার জন্য এক্স-রে করা। হাড়ে ক্যালসিয়াম ও ফসফেটের পরিমাণ নিরূপণ করার জন্য বোন মিনারেল ডেনসিটি স্ক্যান করা। ক্ষেত্র বিশেষে বোন বায়োপসি করা।

চিকিৎসা: যদি পর্যাপ্ত পরিমাণ ভিটামিন-ডি এর অভাবে অস্টিওম্যালেসিয়া হয় তাহলে খাদ্যে পর্যাপ্ত ভিটামিন ডি গ্রহণ করার জন্য গুরুত্ব দিতে হবে। কিছু নির্দিষ্ট খাদ্য এবং সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করতে হবে। ভিটামিন-ডি সমৃদ্ধ খাবারের মধ্যে রয়েছে-

সম্পূর্ণ খাদ্য শস্য বা সিরিয়াল, পনির, ডিম, মাছ, যকৃত, দুধ, কমলার রস ও দই ইত্যাদি। আপনি সূর্যালোকে বেশি সময় কাটিয়ে অধিক পরিমাণ ভিটামিন ডি পেতে পারেন। তবে এ ব্যাপারে চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করে নিন, সঠিক সানস্ক্রিন মেখে নিন। অতিরিক্ত রোদে আপনার ত্বকের ক্যানসারের সম্ভাবনা থাকে।

যদি আপনার শরীরে ভিটামিন ডি পরিশোষণে সমস্যা থাকে, তাহলে তার চিকিৎসা করতে হবে। আপনাকে বেশি মাত্রায় ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি গ্রহণ করতে হবে। অস্টিওম্যালেসিয়ার কারণে আপনার হাড় ভেঙে গেলে বা বিকলাঙ্গ হলে ব্রেস পরতে হবে। সমস্যা বেশি হলে অপারেশনের প্রয়োজন হতে পারে।

লেখক: অর্থোপেডিকস ও ট্রমা বিশেষজ্ঞ।