ঢাকা ১২:২৯ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

‘হিন্দুরা বেশি সন্তান জন্ম দিন, লালন-পালন করব সন্ন্যাসীরা’

ধর্ম ও জীবন ডেস্কঃ

সব সময়ে বিতর্কিত বক্তব্যে আলোচনায় থাকেন ভারতের কট্টর হিন্দুত্ববাদী নরসিংহ সরস্বতী মহারাজ। এবার ফের বিতর্ক উসকে দেওয়ার মতো বক্তব্য দিলেন। তিনি স্বজাতির উদ্দেশে বলেছেন, প্রত্যেক হিন্দু যেন চারজন করে সন্তান জন্ম দেয়। এরপর ওই শিশুদের আমাদের সন্ন্যাসীদের কাছে দিয়ে দেবেন, আমরাই তাদের পালন-পোষণ করব।

তার বক্তব্য সংবলিত এক ভিডিওতে এ ধরনের কথা রয়েছে।

এতে বিতির্কিত এই সন্ন্যাসী নেতা আরো বলেন, কিছু লোক চাইছে গণতন্ত্রের সুবিধা কাজে লাগিয়ে নিজেদের সংখ্যা বাড়িয়ে দেশকে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নিতে। এমন হতে দেওয়া যাবে না। কারণ, হিন্দুদের শেষ আশ্রয়স্থল হচ্ছে ভারত। হিন্দুদের কাছ থেকে সমগ্র দুনিয়া কেড়ে নেওয়া হয়েছে।

নিজেকে তিনি অখিল ভারতীয় সন্ত পরিষদের রাষ্ট্রীয় সংযোজক দাবি করেন। তিনি ভারতে জনসংখ্যা বৃদ্ধির জন্য একটি বিশেষ সম্প্রদায়কে দায়ী করেন। একই সঙ্গে তিনি হিন্দুদের বলেন, দুই বাচ্চার স্থলে কমপক্ষে ৪-৫টি বাচ্চার জন্ম দিতে।
সম্প্রতি ভাইরাল হওয়া ওই ভিডিওতে নরসিংহকে বলতে শোনা যায়, হিন্দুদের বাঁচানোর জন্য আমি বলছি। যতক্ষণ পর্যন্ত ভারত সরকার ইসলামী জিহাদিদের জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে চীনের মতো জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের কঠোর আইন তৈরি না করছে, ততক্ষণ পর্যন্ত ভারতীয় হিন্দুদের নিজেদের জনসংখ্যা কম হতে দেওয়া যাবে না। এর জন্য প্রত্যেক হিন্দু ব্যক্তি কমপক্ষে ৪ থেকে ৫টি বাচ্চার জন্ম দিন।

নরসিংহ এরপর বলেন, আর যারা বলতে চান ৪-৫টি বাচ্চা জন্ম দিলে তাদের পালন-পোষণ করতে পারবে না তারা বাচ্চার জন্ম দিন আর আমাদের (সন্ন্যাসী) কাছে দিয়ে দিন। তাদের বাচ্চাদের আমাদের গুরুকূলে (আবাসিক শিক্ষাকেন্দ্র) প্রতিপালন করব। এমন গুরুকূল আমরা তৈরি করে রেখেছি। আরো তৈরি করা হবে। মুসলমানদের মাদরাসার মতো গুরুকূল বানাব আমরা।

তিনি আরো বলেন, দেশের সবচেয়ে বড় বিপদ হচ্ছে ইসলামী জিহাদিদের অনিয়ন্ত্রিত জনসংখ্যা।

প্রসঙ্গত, ভারতে সংখ্যাগুরু হিন্দুদের কিছু উগ্রস্বভাবের নেতার বিপরীতে প্রধান সংখ্যালঘু মুসলিমদের মাঝেও কিছু ব্যক্তি রয়েছেন যারা একই কায়দায় উসকানিমূলক বক্তব্য দিয়ে হরদম মাঠ গরম করে রাখেন। এমন একজন নেতা হচ্ছেন মজলিশ-ই-ইত্তেহাদুল মুসলেমিন (মিম) প্রধান ব্যারিস্টার আসাদ উদ্দিন ওয়াইসি, এমপি। কিছুদিন আগে শিবসেনা নেতারা একই কায়দায় যখন হিন্দুদের অধিক সন্তান জন্মদানের আহ্বান জানান তখন আসাদউদ্দিন তাদের পরামর্শ দেন- বেশি সন্তান জন্মদানের জন্য শরফু ভাইয়ের পান খেতে হবে যার প্রতি খিলির দাম ৫ হাজার টাকা।

সপ্তাহ দুয়েক আগে ভারতে ক্ষমতাসীন বিজেপির সিনিয়র নেতা সংসদ সদস্য বিনয় কাটিয়ার বলেন, মুসলিমদের মধ্যে যারা বন্দে মাতরম ও দেশের পতাকাকে সম্মান করে না তাদের ভারত ছেড়ে পাকিস্তান বা বাংলাদেশে চলে যাওয়া উচিত। ভারতীয় সংবাদ সংস্থা এএনআইকে বিনয় কাটিয়ার বলেন, ‘মুসলিমদের এ দেশে থাকাই উচিত নয়। তারা জনসংখ্যার ভিত্তিতে দেশকে বিভক্ত করেছে, সে জন্য এ দেশে থাকার তাদের কী প্রয়োজন ছিল? তাদের এক আলাদা ভূখণ্ড দেওয়া হয়েছে, বাংলাদেশ বা পাকিস্তানে যান। এখানে তাদের কী কাজ?’

জবাবে আসাদউদ্দিন ওয়াইসি সরকারের কাছে দাবি জানিয়ে বলেন, ভারতীয় মুসলমানদের যারা ‘পাকিস্তানি’ বলবে তাদের জন্য তিন বছরের শাস্তির ব্যবস্থা করা হোক। তিনি বলেন, ভারতীয় মুসলিমরা যদি পাকিস্তানের দাবিকে সমর্থন করত তাহলে দেশভাগের পর সেখানেই চলে যেত। জিন্নাহর দুই জাতি তত্ত্বের ওপর দেশভাগ মেনে নেয়নি বলেই তারা ভারতে থেকে গেছে। সেই হিসেবে জিন্নাহর তত্ত্বকে তারা প্রত্যাখ্যান করেছে।

এদিকে পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, দুই পক্ষের নেতাদের এমন বেপরোয়া মন্তব্যে অসহিষ্ণুতা দিন দিন বেড়েই চলেছে যেন। যেকোনো সময় বড় ধরনের বিপর্যয় ঘটিয়ে দিতে পারে এসব নেতাদের কাণ্ডজ্ঞানহীন মন্তব্য।

ট্যাগস
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

সাবেক মন্ত্রী কায়কোবাদের সঙ্গে তুর্কী এমপির সাক্ষাৎ

‘হিন্দুরা বেশি সন্তান জন্ম দিন, লালন-পালন করব সন্ন্যাসীরা’

আপডেট সময় ০৭:১৮:৫৯ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৯ ফেব্রুয়ারী ২০১৮
ধর্ম ও জীবন ডেস্কঃ

সব সময়ে বিতর্কিত বক্তব্যে আলোচনায় থাকেন ভারতের কট্টর হিন্দুত্ববাদী নরসিংহ সরস্বতী মহারাজ। এবার ফের বিতর্ক উসকে দেওয়ার মতো বক্তব্য দিলেন। তিনি স্বজাতির উদ্দেশে বলেছেন, প্রত্যেক হিন্দু যেন চারজন করে সন্তান জন্ম দেয়। এরপর ওই শিশুদের আমাদের সন্ন্যাসীদের কাছে দিয়ে দেবেন, আমরাই তাদের পালন-পোষণ করব।

তার বক্তব্য সংবলিত এক ভিডিওতে এ ধরনের কথা রয়েছে।

এতে বিতির্কিত এই সন্ন্যাসী নেতা আরো বলেন, কিছু লোক চাইছে গণতন্ত্রের সুবিধা কাজে লাগিয়ে নিজেদের সংখ্যা বাড়িয়ে দেশকে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নিতে। এমন হতে দেওয়া যাবে না। কারণ, হিন্দুদের শেষ আশ্রয়স্থল হচ্ছে ভারত। হিন্দুদের কাছ থেকে সমগ্র দুনিয়া কেড়ে নেওয়া হয়েছে।

নিজেকে তিনি অখিল ভারতীয় সন্ত পরিষদের রাষ্ট্রীয় সংযোজক দাবি করেন। তিনি ভারতে জনসংখ্যা বৃদ্ধির জন্য একটি বিশেষ সম্প্রদায়কে দায়ী করেন। একই সঙ্গে তিনি হিন্দুদের বলেন, দুই বাচ্চার স্থলে কমপক্ষে ৪-৫টি বাচ্চার জন্ম দিতে।
সম্প্রতি ভাইরাল হওয়া ওই ভিডিওতে নরসিংহকে বলতে শোনা যায়, হিন্দুদের বাঁচানোর জন্য আমি বলছি। যতক্ষণ পর্যন্ত ভারত সরকার ইসলামী জিহাদিদের জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে চীনের মতো জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের কঠোর আইন তৈরি না করছে, ততক্ষণ পর্যন্ত ভারতীয় হিন্দুদের নিজেদের জনসংখ্যা কম হতে দেওয়া যাবে না। এর জন্য প্রত্যেক হিন্দু ব্যক্তি কমপক্ষে ৪ থেকে ৫টি বাচ্চার জন্ম দিন।

নরসিংহ এরপর বলেন, আর যারা বলতে চান ৪-৫টি বাচ্চা জন্ম দিলে তাদের পালন-পোষণ করতে পারবে না তারা বাচ্চার জন্ম দিন আর আমাদের (সন্ন্যাসী) কাছে দিয়ে দিন। তাদের বাচ্চাদের আমাদের গুরুকূলে (আবাসিক শিক্ষাকেন্দ্র) প্রতিপালন করব। এমন গুরুকূল আমরা তৈরি করে রেখেছি। আরো তৈরি করা হবে। মুসলমানদের মাদরাসার মতো গুরুকূল বানাব আমরা।

তিনি আরো বলেন, দেশের সবচেয়ে বড় বিপদ হচ্ছে ইসলামী জিহাদিদের অনিয়ন্ত্রিত জনসংখ্যা।

প্রসঙ্গত, ভারতে সংখ্যাগুরু হিন্দুদের কিছু উগ্রস্বভাবের নেতার বিপরীতে প্রধান সংখ্যালঘু মুসলিমদের মাঝেও কিছু ব্যক্তি রয়েছেন যারা একই কায়দায় উসকানিমূলক বক্তব্য দিয়ে হরদম মাঠ গরম করে রাখেন। এমন একজন নেতা হচ্ছেন মজলিশ-ই-ইত্তেহাদুল মুসলেমিন (মিম) প্রধান ব্যারিস্টার আসাদ উদ্দিন ওয়াইসি, এমপি। কিছুদিন আগে শিবসেনা নেতারা একই কায়দায় যখন হিন্দুদের অধিক সন্তান জন্মদানের আহ্বান জানান তখন আসাদউদ্দিন তাদের পরামর্শ দেন- বেশি সন্তান জন্মদানের জন্য শরফু ভাইয়ের পান খেতে হবে যার প্রতি খিলির দাম ৫ হাজার টাকা।

সপ্তাহ দুয়েক আগে ভারতে ক্ষমতাসীন বিজেপির সিনিয়র নেতা সংসদ সদস্য বিনয় কাটিয়ার বলেন, মুসলিমদের মধ্যে যারা বন্দে মাতরম ও দেশের পতাকাকে সম্মান করে না তাদের ভারত ছেড়ে পাকিস্তান বা বাংলাদেশে চলে যাওয়া উচিত। ভারতীয় সংবাদ সংস্থা এএনআইকে বিনয় কাটিয়ার বলেন, ‘মুসলিমদের এ দেশে থাকাই উচিত নয়। তারা জনসংখ্যার ভিত্তিতে দেশকে বিভক্ত করেছে, সে জন্য এ দেশে থাকার তাদের কী প্রয়োজন ছিল? তাদের এক আলাদা ভূখণ্ড দেওয়া হয়েছে, বাংলাদেশ বা পাকিস্তানে যান। এখানে তাদের কী কাজ?’

জবাবে আসাদউদ্দিন ওয়াইসি সরকারের কাছে দাবি জানিয়ে বলেন, ভারতীয় মুসলমানদের যারা ‘পাকিস্তানি’ বলবে তাদের জন্য তিন বছরের শাস্তির ব্যবস্থা করা হোক। তিনি বলেন, ভারতীয় মুসলিমরা যদি পাকিস্তানের দাবিকে সমর্থন করত তাহলে দেশভাগের পর সেখানেই চলে যেত। জিন্নাহর দুই জাতি তত্ত্বের ওপর দেশভাগ মেনে নেয়নি বলেই তারা ভারতে থেকে গেছে। সেই হিসেবে জিন্নাহর তত্ত্বকে তারা প্রত্যাখ্যান করেছে।

এদিকে পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, দুই পক্ষের নেতাদের এমন বেপরোয়া মন্তব্যে অসহিষ্ণুতা দিন দিন বেড়েই চলেছে যেন। যেকোনো সময় বড় ধরনের বিপর্যয় ঘটিয়ে দিতে পারে এসব নেতাদের কাণ্ডজ্ঞানহীন মন্তব্য।