মো. তপন সরকার, হোমনা (কুমিল্লা) প্রতিনিধি:
কুমিল্লার হোমনায় জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে যথাযোগ্য মর্যাদায় হোমনা মুক্ত দিবস পালিত হয়েছে।
বৃহস্পতিবার সকালে এই উপলক্ষে ২৩ ডিসেম্বর উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে বিজয় মিছিল পরে ঘাগুটিয়া নির্মিত স্মৃতিস্তম্ভে পুস্পস্তবক অর্পণ শেষে বড় ঘাগুটিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে আলোচনা সভা ও জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান মুক্তিযোদ্ধাদের ফুলেল সংবর্ধনা দেয়া হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন কুমিল্লা-২ (হোমনা-তিতাস) আসনের স্থানীয় সংসদ সদস্য সেলিমা আহমাদ।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) রুমন দে‘র সভাপতিত্বে ও বীর মুক্তিযোদ্ধা খন্দকার হুমায়ুন কবির এর উপস্থাপনায় বক্তব্য রাখেন উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান রেহানা বেগম, উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও পৌর মেয়র অ্যাডভোকেট মো. নজরুল ইসলাম, ভাইস চেয়ারম্যান মো. মহাসিন সরকার, এসিল্যান্ড মিজানুর রহমান, থানার অফিসার ইনচার্জ আবুল কায়েস আকন্দ।
আরোও বক্তব্য রাখেন উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্মসাধারণ সম্পাদক গাজী মো. ইলিয়াছ, উপজেলা ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি মাহবুব খন্দকার, বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. মোশারফ হোসেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা এরশাদ হোসেন মাষ্ঠার, বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আব্দুর রশিদ, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. মফিজুল ইসলাম (গনি), মুক্তিযোদ্ধা সন্তান সংসদের কেন্দ্রীয় ত্রাণ ও সমাজ কল্যাণ সম্পাদক আব্দুস সালাম ভূঁইয়াসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ এসভায় উপস্থিত ছিলেন।
ইতিহাস সূত্রে জানা যায়, ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর সারাদেশে বিজয়ের আনন্দে মেতে উঠলেও বিজয়ের এ আনন্দ লাগেনী কুমিল্লার হোমনাবাসীর। ১৯৭১ সালের ২২ ডিসেম্বর পর্যন্ত হোমনার ঘাগুটিয়া গ্রাম ছিল পাকবাহিনীর দখলে।
৭১’র ১৪ ডিসেম্বর পাশ্বর্বতী বাঞ্ছারামপুর থেকে পাক সেনারা লঞ্চযোগে পালিয়ে যাওয়ার সময় ঘাগুটিয়া লঞ্চ ঘাটে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমনের শিকার হন। পরে তারা ঘাগুটিয়া প্রাথমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন বড় মসজিদে অবস্থান গ্রহন করে। গ্রামের ৪০/৫০টি ঘরে আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেয়। এভাবে ২২ ডিসেম্বর পর্যন্ত পাকসেনাদের সাথে মুক্তিযোদ্ধাদের ব্যাপক গুলাগুলি হয়। পরবর্তীতে ২৩ ডিসেম্বর কুমিল্লা ময়নামতি ক্যান্টেনমেন্ট থেকে যৌথবাহিনী এসে মুক্তিবাহিনীর সাথে যোগদিয়ে যৌথবাহিনীর ট্যাংকের আক্রমন করেন।
এতে ১৩১জন পাকসেনা আত্মসমর্পন করতে বাধ্য হয়। এটাই ছিল স্বাধীনতা সংগ্রামের সর্বশেষ যুদ্ধ ও ইতিহাস। এরপর থেকে ২৩ ডিসেম্বর দিনটি হোমনা মুক্ত দিবস হিসেবে পালন করে আসছে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, প্রশাসনসহ বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন।