মোঃ রায়হান চৌধুরী, হোমনা (কুমিল্লা) থেকেঃ
কুমিল্লার হোমনায় উপজেলা আওয়ামীলীগ নেতার বিরুদ্ধে বিএনপির নেতাকর্মী নিয়ে ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সভাপতি কে ‘রাজাকার’ বলে গালি দেওয়া ওয়ার্ড আওয়ামীলীগ কার্যালয়, বঙ্গবন্ধুর ছবি, প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনা ও স্থানীয় সংসদ সদস্যের ছবি ভাংচুর করাসহ বেশ কয়েক জনকে পিটিয়ে আহত করার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এ ঘটনায় একজনকে গুরুত্বর আহত অবস্থায় ঢাকায় রেফার করা হয়েছে। ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার শ্রীমদ্দি গ্রামে বুধবার রাত্র আনুমানিক ৯ টার দিকে। এ ঘটনায় হোমনা পৌর ছাত্রলীগ সভাপতি মেহেদি হাসান মিরাজ ও কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক কামরুল হাসানসহ ৬ জন আহত হয়। এবং থানায় মামলা হলে ৩ জনকে আটক করে পুলিশ। তাদের আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
জানা গেছে, বুধবার সন্ধ্যায় হোমনা পৌরসভার ৬নং ওয়ার্ড আওয়ামীলীগ সভাপতি আবদুল কাদির প্রধানকে রাজাকার বলায় পরবর্তীতে তার ছেলে পৌর কাউন্সিলর কামাল হোসেন তাদের ডেকে নিয়ে জানতে চাইলে উভয়ের মধ্যে কথা কাটাকাটির সৃষ্টি হয়। কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে তারা সংঘর্ষে লিপ্ত হয়ে পড়েন।
এসময় আহত হন- পৌর ছাত্রলীগ সভাপতি মেহেদি হাসান মিরাজ, আবদুল কাদির প্রধান, পৌর কমিশনার কামাল হোসেন, আজিজুল, নয়ন ও মোন্নাফ। এদের মধ্যে পৌর ছাত্রলীগ সভাপতি মেহেদি হাসান মিরাজকে গুরুত্বর আহত অবস্থায় ঢাকায় রেফার করা হয়েছে। অন্যরা প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন।
এই ঘটনায় আহত কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক কামরুল হাসান বাদী হয়ে উপজেলা আওয়ামীলীগ নেতা মেছবাহ উদ্দিনসহ ১৯ জনের নাম উল্লেখ করে বুধবার রাতে হোমনা থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।
ছাত্রলীগ নেতা কামরুল হাসান এর অভিযোগ সূত্রে ও প্রত্যক্ষদশর্ীদের কাছ থেকে জানা যায়, ঘটনার দিন বিকেলে হোমনা পৌরসভার ৬নং ওয়ার্ড আওয়ামীলীগ সভাপতি আব্দুল কাদির প্রধানকে উপজেলা আওয়ামীলীগ নেতা মেজবাহ উদ্দিন এর নেতৃত্বে উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ন-সম্পাদক মোন্নাফ ও মাসুম মিয়াসহ অভিযুক্ত ব্যক্তিরা ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের কার্যালয়ের সামনে রাজাকার বলে গালি দেন এবং অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকে। এর প্রতিবাদ করতে গেলে তাদের উভয় পক্ষের মধ্যে কথা কাটাকাটির সৃষ্টি হয়। একপর্যায়ে আওয়ামীলীগ নেতা মেজবাহ উদ্দিন এর নেতৃত্বে উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ন-সম্পাদক মোন্নাফ মিয়াসহ অভিযুক্তরা জোরপূর্বক আওয়ামীলীগ অফিসে ডুকে তাদেরকে এলোপাথারি ভাবে পিটি আহত করেন। এসময় বঙ্গবন্ধুর ছবি, প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনা ও স্থানীয় সংসদ সদস্যের ছবি ভাংচুর করা হয়। এবং আহতদের সাথে থাকা ১০ হাজার টাকা ছিনিয়ে নিয়ে যায় ও অফিসের ৮০ হাজার টাকা মূল্যের আসবাব পত্র ভাংচুর করেন।
পৌর কাউন্সিলর কামাল মিয়া বলেন, স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা মোন্নাফ এবং মাসুম বুধবার বিকেলে আমার বাবা ৬ নং পৌর ওয়ার্ড আওয়ামীলীগ সভাপতি আবদুল কাদির প্রধানকে রাজাকার বলেছে। কেন তারা এমনটি বলল তা জানার জন্য তার বাবার কাছে বললে তার বাবা বিচার করবেন বলে আশ্বস্ত করেন। তারপর আমি ওয়ার্ড আওয়ামীলীগ কার্যালয়ে গিয়ে বসলে। এর ১০-১৫ মিনিট পর পৌর মেয়র প্রার্থী মেজবাহ ও স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা মোন্নাফ এর নেতৃত্বে একটি মিছিল এসে কিছু বুঝার আগেই তারা আমাকে এবং আমার ছেলের উপর হামলা চালায় এবং অফিস, বঙ্গবন্ধুর ছবি, প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনা ও স্থানীয় সংসদ সদস্যের ছবি ভাঙচুর করেছে। তাদের হামলায় আমার বাবা, ছেলে, পৌর ছাত্রলীগ সভাপতি মেহেদি হাসান মিরাজসহ অন্যান্যরা আহত হয়েছে।
আওয়ামীলীগ নেতা মেছবাহ উদ্দিন অভিযোগটি মিথ্যা ও বানোয়াট দাবী করে বলেন, আমি একজন আওয়ামীলীগ কর্মী ও বঙ্গবন্ধুর সৈনিক। আমি কি ভাবে আওয়ামীলীগ অফিস, জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর ছবি, প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনা ও স্থানীয় সংসদ সদস্যের ছবি বিএনপির নেতাকর্মীদের সাথে নিয়ে ভাংচুর করি। আমার বিরুদ্ধে করা অভিযোগটি সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট। বরংচ আমার এক সমর্থককে পৌর কাউন্সিলর কামাল মিয়ার ছেলেরা মারধর করেছে। এলাকায় তারা (কাউন্সিলর) এক অরাজকতা সৃষ্টি করে রেখেছে। আমি কাউকে মারধর করিনি।
ওয়ার্ড আওয়ামীলীগ সভাপতি আব্দুল কাদির বলেন, আমার অফিসের সামনে মেজবাহ উদ্দিন এর নেতৃত্বে উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা মোন্নাফসহ বেশ কয়েক জন এসে আমাকে রাজাকার বলে গালি দেয়। আমার ছেলে, নাতি ও উপস্থিত থাকা লোকজন এর প্রতিবাদ করলে। মেজবাহ উদ্দিন ও মোন্নাফের নেতৃত্বে তাদের লোকজন অফিসে ডুকে হামলা চালায় এবং আমাদেরকে পিটিয়ে আহত করে।
আহত মেহেদি হাসান মিরাজ এর কাছ থেকে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি মুঠোফোনে বলেন, আমি হোমনা হতে বাড়িতে যাওয়ার সময় পথিমধ্যে মারামারি হতে দেখে রাস্তার পাশে দাড়ালে মেজবাহ’র নির্দেশে তার ছোট ভাই রেহান ও চাচাতো ভাই শাহিন ও উপজেলা বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি নুরু সরকার এর নাতী তানবিরসহ আরও ৮/১০ জন আমার উপর অর্তকিত ভাবে আক্রমণ চালায়। এতে আমি মাথায় প্রচুর আঘাত পাই এবং আমার কানের পর্দা ছিদ্র হয়ে গেছে। ফলে এখন আমি কানে কম শুনতে পাই। আমি বর্তমানে ঢাকায় বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হসপিটালে চিকিৎসাধীন।
এ ব্যাপারে হোমনা থানার ওসি আবুল কায়েস আকন্দ বলেন, ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ সভাপতিকে রাজাকার বলায় দুইপক্ষের মধ্যে মারামারির ঘটনা ঘটেছে। এবিষয়ে থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শ করেছে। ৩ জনকে আটক করা হয়েছে।