মো.আবু রায়হান চৌধুরীঃ
কুমিল্লার হোমনায় পূর্ব শত্রুতার জের ধরে হাসান (২২) নামের এক যুবক কে সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে মারাত্মকভাবে কুপিয়ে ও পিটিয়ে আহত করেছে তার আপন চাচা। ঘটনাটি ঘটেছে গত শনিবার হোমনা উপজেলার চান্দেরচর ইউনিয়নের চান্দেরচর গ্রামে।
এলাকাবাসী ও অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, মো.হাসান মিয়া (হাসান) একজন ছাত্রলীগ নেতা, তার বাবা মো. আব্দুল মোতালেব মিয়ার কাছ থেকে তার চাচা মো.শামছু মিয়া গত ইউপি নির্বাচনের সময় টাকা ধার নেয়। সেই টাকা চাইতে গেলে শুরু হয়ে যায় তাদের মধ্যে ভাগবিতন্ডা। এরই জের ধরে গত ২০১৬ সালের ২ অক্টোবর হাসানের বাবা মোতালেব মিয়ার উপর তার চাচা শামছু মিয়া ও শামছু মিয়ার সন্ত্রাসী বাহিনী চড়াও হয়ে হত্যার উদ্দেশ্যে মারধর কিল ঘুষি লাথি মেরে ও লাঠিসোঠা দিয়ে পিটিয়ে হত্যার চেষ্ঠা করে। এসময় তাদের লাঠির আঘাতে মোতালেব মিয়ার সামনের পাটির তিনটি দাঁত পড়ে যায়। ঐ ঘটনায় হাসান মিয়া বাদী হয়ে গত ৭ ডিসেম্বর হোমনা থানায় একটি মামলা দায়ের করেন মামলা নং-৩। মামলা দায়েরের পর থেকে আসামীপক্ষগন জামিনে এসে কৌশলে ও জোর পূর্বক মামলা তুলে নেওয়ার জন্য বাদীকে বিভিন্ন প্রকার হুমকি ধমকিসহ একাধীকবার হামলা চালায়। সেই হামলায় ব্যর্থ হয়ে।
সর্বশেষ গত ৩ সেপ্টেম্বর রবিবার উপজেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি অধ্যক্ষ আব্দুল মজিদ’র ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময়,শোভা যাত্রায় যোগদানের উদ্দেশ্যে যাবার সময় কথিত (ভূয়া) মুক্তিযোদ্ধা চান্দেরচর গ্রামের মৃত আব্দু বেপারীর ছেলে (চাচা) শামছু মিয়ার নেতৃত্বে তার পরিবারের লোকজনসহ একদল সন্ত্রাসী বাহিনী পূর্বপরিকল্পিতভাবে অটোরিক্সার গতিরোধ করে ছাত্রলীগ নেতা মো. হাসানকে এলোপাথারিভাবে কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যার চেষ্ঠা করে। এতে অটোরিক্সা চালকও সন্ত্রাসীদের হামলায় গুরুত্বর আহত হয়। পরে সন্ত্রাসীরা হাসানকে মৃত ভেবে তার নিথর দেহ রাস্তার ধারে ফেলে রেখে চলে যায়।
খবর পেয়ে প্রতিবেশী ও পরিবারের লোকজন হাসানকে মুমূর্ষ অবস্থায় উদ্ধার করে হোমনা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে। পরে সেখানে থাকা কর্তব্যরত ডাক্তার তার অবস্থা আশংঙ্কাজনক দেখে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করেন। এই ঘটনায় ছাত্রলীগ নেতা হাসানের বাবা আব্দুল মোতালেব বাদী হয়ে হোমনা থানায় শামছু মিয়াসহ ৭ জনকে আসামী করে পুনরায় গত ৫ সেপ্টেম্বর একটি মামলা দায়ের করেন মামলা নং-১।
এব্যাপারে মামলার বাদী মোতালেব মিয়া জানান, শামছু আমার আপন ছোট ভাই সেই সুবাধে সে আমার কাছ থেকে গত ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করার জন্য আমার কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকা ধার (হাওলাদ) নেয়। এর মধ্যে ১০ হাজার টাকা ফেরত দেয়। বাকি টাকা চাইতে গেলে সে আমাকে খুন করার চেষ্টা করে। তার মাইরের আঘাতে আমার তিনটি দাঁতও পড়ে যায়। এতে আমার ছেলে বাদী হয়ে মামলা করায় তার পরিবারের লোকজন (শামছু)’র ছেলে আনিসুর রহমান, হাবিবুর রহমান,হারুন অর রশিদ, তার স্ত্রী রাশিদা বেগম,তার মেয়ে তাছলিমা বেগম ও আকলিমা আক্তারসহ সবাই মিলে আমার ছেলেকে কয়েকবার হত্যার চেষ্ঠা করে। আমি সুষ্ঠ বিচারের মাধ্যমে এর দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তির দাবী জানাই।
শামছু মিয়ার বড় ছেলে তার বাবার লোমহর্ষক ঘটনার বর্ণনা দিয়ে বলেন, সে আমার বাবা তার পরিচয় দিতেও আমার লজ্জা করে। সে এতই নিকৃষ্ট যে ভাষায় প্রকাশ করতে পারবো না। তার অত্যাচারের হাত থেকে আমার অসহায় স্ত্রী ও দু’টি সন্তানও রেহায় পায় নি।
ছাত্রলীগ নেতা হাসানের বড় ভাই প্রবাসী সাদ্দাম হোসেন বলেন,শামছু আসলে সে মুক্তিযোদ্ধা কি না এলাকাবাসীর সন্দেহ রয়েছে। তার বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে অভিযোগও রয়েছে। সে আমাদের পাওনা টাকা না দিয়ে উল্টো আমার বাবাকে হত্যার চেষ্ঠা করে। এবার আমার ভাইকেও হত্যার উদ্দেশ্যে কুপিয়ে আহত করেছে। সে নিজেকে বড় মুক্তিযোদ্ধা মনে করে যা খুশি, তাই করে বেড়ায়। এরপরও গ্রামের পঞ্চায়েতকে নিয়ে ঈদের পর মিমাংসার লক্ষে বসার জন্য আমি দেশে এসেছি। আর এরই মধ্যে সে আমার ভাইকে খুন করার জন্য সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে হামলা করেছে। সে মনে করেছে আমার ভাই মরে গেছে। কিন্তু আল্লাহ্ আমার ভাইকে বাঁচিয়ে রেখেছে।
তবে মোবাইল ফোনে শামছু মিয়ার পরিবারের লোকজনের সাথে কথা হলে তারা শামছু মিয়া ও তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, হাসান কোথায় কিভাবে মার খেয়ে এসেছে আমরা জানিনা। এখন শুনছি আমাদের পরিবারের লোকজনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে। ওরা আমাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। আমরা কিছুই জানিনা।
এব্যাপারে হোমনা থানার অফিসার ইনচার্জ রসুল আহমদ নিজামী বলেন, আমরা ঘটনার পরই অভিযোগের আলোকে মামলা নিয়েছি। আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। মামলাটির প্রধান আসামী আদালত থেকে জামিন নিতে গেলে তা নামঞ্জুর করে তাকে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে বলে শুনেছি। তার পরও যদি কেউ কাউকে জামিনে এসে খুন করার হুমকি প্রদর্শন করে থাকে তাহলে। সে বিষয়ে কেউ থানায় এসে অভিযোগ করলে অবশ্যই তা তদন্ত পূর্বক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।