জাতীয় ডেস্কঃ
আগামী দিনের রাজনৈতিক কর্মকৌশল নির্ধারণে সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছেন লন্ডন সফররত বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। এ জন্য তিন গুরুত্বপূর্ণ নেতা লন্ডন ত্যাগের দু’দিন পর আবারও তাদের ডেকে পাঠিয়েছেন তিনি। আগামী মঙ্গলবার তাদের লন্ডন উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে।
নেতাদের মধ্যে রয়েছেন স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু ও কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য তাবিথ আউয়াল। নির্দেশনা পেয়ে তাদের মধ্যে দুই নেতা বাংলাদেশ থেকে এবং অন্যজন যুক্তরাষ্ট্র থেকে আবার লন্ডন ছুটে গেছেন।
সূত্র জানায়, দলের প্রভাবশালী নেতা আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী যুক্তরাষ্ট্রে চলে গিয়েছিলেন। আবদুল আউয়াল মিন্টু ও তাবিথ আউয়াল বাংলাদেশে চলে আসেন। কিন্তু লন্ডন ত্যাগের দু-তিন দিন পর আবার দ্রুত তাদের লন্ডন ডেকে পাঠান বিএনপি চেয়ারপারসন।
বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের কয়েকজন নেতা জানান, ১৪ বা ১৫ আগস্ট বিদেশি কারও সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক হতে পারে। বৈঠকে খালেদা জিয়া, দ্বিতীয় শীর্ষ নেতা তারেক রহমান ছাড়াও সংশ্লিষ্ট আরও দু-তিনজন নেতা থাকা প্রয়োজন। বিগত কয়েক বছর বিএনপির পক্ষে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি দেশের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নের জন্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী এবং আবদুল আউয়াল মিন্টুর উপস্থিত থাকা জরুরি।
সূত্র জানায়, নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের অধীনে আগামী সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে দেশে-বিদেশে প্রকাশ্যে এবং পর্দার আড়ালে বেশ তৎপর বিএনপি।
তবে খালেদা জিয়া বর্তমানে বিরোধীদলীয় নেতা না হওয়ায় প্রটোকলজনিত সমস্যার কারণে যুক্তরাজ্যসহ অন্যান্য দেশের মন্ত্রী-এমপি ও নেতাদের সঙ্গে প্রকাশ্যে বৈঠক করতে কিছুটা সমস্যা হচ্ছে। বিভিন্ন দেশের রাজনৈতিক নেতা বা প্রভাবশালী সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগে সমন্বয়কের দায়িত্ব পালনে বিএনপির পক্ষ থেকে কয়েক নেতাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
তাদের মধ্যে রয়েছেন স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু ও কেন্দ্রীয় সদস্য তাবিথ আউয়াল। এ ছাড়া দলের আন্তর্জাতিক সম্পাদক মুহিবুর রহমানসহ যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষস্থানীয় প্রবাসী নেতারাও দায়িত্ব পালন করছেন।
সূত্র জানায়, বিএনপির এই তিন নেতাকে ডাকা হয়েছে বাংলাদেশের নির্বাচনে ‘ফ্যাক্টর’ হিসেবে কাজ করে এমন কোনো গুরুত্বপূর্ণ দেশের প্রতিনিধির সঙ্গে গোপন বৈঠকে যোগ দিতে। জানা গেছে, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, চীন বা প্রভাবশালী প্রতিবেশী দেশের রাজনৈতিক নেতা বা গুরুত্বপূর্ণ কোনো সংস্থার প্রতিনিধিরা বৈঠকে উপস্থিত থাকতে পারেন ।
মূলত চিকিৎসার জন্য লন্ডন গেলেও খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক তৎপরতা বন্ধ থাকছে না। তার লন্ডন সফরকে নিছক সফর হিসেবে দেখছে না বিএনপি। দলটির কাছে এ সফর রাজনৈতিকভাবে তাৎপর্যপূর্ণ। বিশেষ করে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং সরকারবিরোধী আন্দোলন- এই দুই ইস্যুতে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে লন্ডনে তারেক রহমানের ঘনিষ্ঠ কয়েক নেতা নিশ্চিত করেছেন।
বিএনপির প্রভাবশালী নেতারা বলছেন, তারেক রহমানের সঙ্গে খালেদা জিয়া রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক নানা বিষয়ে পরামর্শ করে সিদ্ধান্ত নেবেন। এর মধ্যে সরকারবিরোধী আন্দোলন ও নির্বাচনে অংশ নেওয়া-না নেওয়ার বিষয়ও রয়েছে।
গত রোববার খালেদা জিয়ার চোখের অপারেশন করা হয়েছে। চিকিৎসার পাশাপাশি সেখানে অবস্থানরত পরিবারের অন্য সদস্যদের সঙ্গে ঈদুল আজহা উদযাপন করে খালেদা জিয়া দেশে ফিরবেন বলে জানানো হয়েছে। তবে তার দেশে ফেরার বিষয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা। তারা মনে করছেন, দুর্নীতির মামলায় সাজা হওয়ার ভয়ে খালেদা জিয়া দেশে ফিরবেন না।
বিএনপির সূত্রগুলো বলছে, আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগে এটাই হতে পারে খালেদা জিয়ার শেষ লন্ডন সফর। তাই নির্বাচনের প্রস্তুতিসহ সার্বিক বিষয়ে এই সফরেই তারেক রহমানের সঙ্গে আলোচনা চূড়ান্ত করতে চান বিএনপি প্রধান।
এর মধ্যে রয়েছে সহায়ক সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচন আদায়, নির্বাচনে দল ও জোটের প্রার্থী মনোনয়ন, দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির শূন্য পদ পূরণ, জাতীয় নির্বাহী কমিটির গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি পদে পদায়ন ও গুরুত্বপূর্ণ জেলা কমিটি গঠন। ২০১৫ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর চিকিৎসার জন্য খালেদা জিয়া লন্ডন গিয়েছিলেন। সূত্র: সমকাল।