ঢাকা ১১:৪২ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

৭০ বছর পর মাকে ফিরে পেলো সন্তান

ফয়সল আহমেদ খান,বাঞ্ছারামপুর (বি-বাড়িয়া) প্রতিনিধিঃ

১০ বছর বয়সে একমাত্র ছেলে হারিয়ে যাওয়ার ৭০ বছর পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের কল্যাণে ফিরে পেয়েছেন শতবর্ষী মা মঙ্গলের নেছা,১০ বছর বয়সে হারিয়ে যায় একমাত্র ছেলে কুদ্দুছ মিয়া।

বিধবা মা দুই মেয়ে ঝরনা বেগম ও রওশনআরাকে নিয়ে ছেলেকে ফিরে পাওয়ার স্বপ্ন দেখেছেন বরাবর। তার সে স্বপ্ন আজ পূরণ হলো। ১ ভাই ২ বোনের মধ্যে কুদ্দুছ মিয়া বড় ছেলে। হারিয়ে যাওয়া ১০ বছরের শিশু আজ দীর্ঘ ৭০ বছর পর ৮০ বছর বয়সী একমাত্র ছেলে কুদ্দুছ মিয়াকে ফিরে পেয়েছেন। আজ সকাল সাড়ে ১১টায় বাঞ্ছারামপুর উপজেলার আশ্রাফবাদ গ্রামের বোন ঝরনা বেগমের বাড়িতে মা ছেলের এই দেখা হয়। ছেলেকে ফিরে পেয়ে ১০২ বছর বয়সী মা আবেগে আপ্লুত হয়ে ছেলেকে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। ছেলে ও মাকে ফিরে পেয়ে মাকে জড়িয়ে কাঁদতে থাকেন। এই দৃশ্য দেখে উপস্থিত শতাধিক নারী পুরুষের চোখের পানি চলে আসে। 

 দশ বছরের কিশোর কুদ্দুছ মুন্সি এখন ৮০ বছর বয়স প্রবীণ। তার তিন ছেলে ও ৫ মেয়ে রয়েছেন। তার গ্রামের বাড়ি পাশ্ববর্তী নবীনগর উপজেলার বাড্ডা গ্রামে। তবে গ্রামে কেই বাস করেননা। মা মেয়ের সাথে থাকেন। ৭ বছর বয়সে কুদ্দুছ মুন্সি বাবা কালু মুন্সি মারা গেলে মা মঙ্গলের নেছা ছেলেকে লেখাপড়া করাতে ১০ বছর বয়সী ছেলেকে পাশের বাড়ি জামাই নবীনগর উপজেলার দীর্ঘশাইল গ্রামের পুলিশ সদস্য আব্দুল আউয়ালের সাথে ছেলেকে রাজশাহী জেলার আত্রাই উপজেলায় পাঠায়, সেখানে গিয়ে সে হারিয়ে যান। অনেক খোজাখুজি করেও তাকে আর খোজে পায়নি আউয়াল মিয়া। একই উপজেলার নিঃসন্তান সিংশাইর গ্রামের সাদেক মিয়ার স্ত্রী তাকে লালন পালন করেন। ৩০ বছরে বয়সে বাগমারা উপজেলার সবেদ মিয়ার মেয়ে শুরুজ্জাহানকে বিয়ে করে শশুর বাড়িতেই বসবাস করতে থাকেন। তার ৩ ছেলে ও ৫ মেয়ে। বড় ছেলে রাজ্জাক মুন্সি ইরাকে ও দ্বিতীয় ছেলে জান্নান মুন্সি সৌদি আরব থাকেন। ছোট ছেলে হাফেজ সোহেল মুন্সি বাড়িতেই থাকেন। ৫ মেয়ের সকলেরই বিয়ে হয়ে গেছেন। আত্রাই উপজেলার সিংশাইর গ্রামে এমকে আইয়ূব এক ব্যক্তির তার ফেসবুক আইডিতে কুদ্দুছ মিয়ার হারিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে একটি ভিডিও আপলোড করেন গত ১২ এপ্রিল। দেশে বিদেশে ভাইরাল হয় ভিডিওটি। এই ভিডি সূত্রধরে কুদ্দুছ মিয়ার নিজ গ্রাম নবীনগর উপজেলার কয়েকজন যোগাযোগ করে আইয়ূবের সাথে গত ৫ সেপ্টেম্বর, তারা সেখানে যান এবং মায়ের সাথে কথা বলিয়ে দেন ভিডিও কলে। ছেলের হাতে কাটা চিহ্ন দেখে মা সনাক্ত করে তার ছেলেকে। আজ শনিবার সকাল সাড়ে ১১ টার দিকে কুদ্দুছ মিয়া, ছেলে এবং ছেলের বউরা মায়ের সাথে দেখা করতে বোনের বাড়ি বাঞ্ছারামপুর উপজেলার আশ্রাফবাদ গ্রামে আসেন।

বাড্ডা গ্রামের সফিকুল ইসলাম জানান, ফেসবুকে একটি পোস্ট দেখে আমরা কয়েকজন রাজশাহীতে যোগাযোগ করি ও সেখানে যাই। মা ছেলের মধ্যে ভিডিও কলে কথা বলাই। ছেলের হাতের কাটা দাগ আছে এমন কথা কলার পর আমরা মিলিয়ে দেখি এবং তাকে আজ মায়ের কাছে নিয়ে এসেছি।

কুদ্দুছ মিয়ার বোন ঝরনা বেগম জানান, আমার মা সব সময় বলতেন একদিন আমার ছেলে ফিরে আসবে। আল্লাহ আমার মায়ের ডাক কবুল করেছেন। আমরা আমার ভাইকে ফিরে পেয়েছি।

কুদ্দুছ মিয়ার জানান, হারিয়ে যাওয়ার পর রাজশাহী জেলার আত্রাই উপজেলার সিংশারা গ্রামের সাদিক মিয়ার স্ত্রী আমাকে ছেলের মত লালন পালন করে। পরবর্তীতে বিয়ের পর আমার শশুর বাড়িতে বসবাস করে আসছি। কিন্তু মনে মনে আমার মা ও বোনদের খোজার চেষ্টা করেছি। আমার বিশ্বাস ছিল একদিন আমার মার সন্ধান আমি পাবো। মায়ের বুকে ফিরতে পেরে পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী মানুষ আমার আমাকে মনে হচ্ছে। বাকী জীবনটা মার সাথেই থাকবো।

ট্যাগস
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

মুরাদনগরে পূর্ব শত্রুতার জেরে প্রবাসীর বাড়ি ঘরে হামলা, নারীসহ আহত ৩

৭০ বছর পর মাকে ফিরে পেলো সন্তান

আপডেট সময় ০৩:৫৯:১৬ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২১

ফয়সল আহমেদ খান,বাঞ্ছারামপুর (বি-বাড়িয়া) প্রতিনিধিঃ

১০ বছর বয়সে একমাত্র ছেলে হারিয়ে যাওয়ার ৭০ বছর পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের কল্যাণে ফিরে পেয়েছেন শতবর্ষী মা মঙ্গলের নেছা,১০ বছর বয়সে হারিয়ে যায় একমাত্র ছেলে কুদ্দুছ মিয়া।

বিধবা মা দুই মেয়ে ঝরনা বেগম ও রওশনআরাকে নিয়ে ছেলেকে ফিরে পাওয়ার স্বপ্ন দেখেছেন বরাবর। তার সে স্বপ্ন আজ পূরণ হলো। ১ ভাই ২ বোনের মধ্যে কুদ্দুছ মিয়া বড় ছেলে। হারিয়ে যাওয়া ১০ বছরের শিশু আজ দীর্ঘ ৭০ বছর পর ৮০ বছর বয়সী একমাত্র ছেলে কুদ্দুছ মিয়াকে ফিরে পেয়েছেন। আজ সকাল সাড়ে ১১টায় বাঞ্ছারামপুর উপজেলার আশ্রাফবাদ গ্রামের বোন ঝরনা বেগমের বাড়িতে মা ছেলের এই দেখা হয়। ছেলেকে ফিরে পেয়ে ১০২ বছর বয়সী মা আবেগে আপ্লুত হয়ে ছেলেকে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। ছেলে ও মাকে ফিরে পেয়ে মাকে জড়িয়ে কাঁদতে থাকেন। এই দৃশ্য দেখে উপস্থিত শতাধিক নারী পুরুষের চোখের পানি চলে আসে। 

 দশ বছরের কিশোর কুদ্দুছ মুন্সি এখন ৮০ বছর বয়স প্রবীণ। তার তিন ছেলে ও ৫ মেয়ে রয়েছেন। তার গ্রামের বাড়ি পাশ্ববর্তী নবীনগর উপজেলার বাড্ডা গ্রামে। তবে গ্রামে কেই বাস করেননা। মা মেয়ের সাথে থাকেন। ৭ বছর বয়সে কুদ্দুছ মুন্সি বাবা কালু মুন্সি মারা গেলে মা মঙ্গলের নেছা ছেলেকে লেখাপড়া করাতে ১০ বছর বয়সী ছেলেকে পাশের বাড়ি জামাই নবীনগর উপজেলার দীর্ঘশাইল গ্রামের পুলিশ সদস্য আব্দুল আউয়ালের সাথে ছেলেকে রাজশাহী জেলার আত্রাই উপজেলায় পাঠায়, সেখানে গিয়ে সে হারিয়ে যান। অনেক খোজাখুজি করেও তাকে আর খোজে পায়নি আউয়াল মিয়া। একই উপজেলার নিঃসন্তান সিংশাইর গ্রামের সাদেক মিয়ার স্ত্রী তাকে লালন পালন করেন। ৩০ বছরে বয়সে বাগমারা উপজেলার সবেদ মিয়ার মেয়ে শুরুজ্জাহানকে বিয়ে করে শশুর বাড়িতেই বসবাস করতে থাকেন। তার ৩ ছেলে ও ৫ মেয়ে। বড় ছেলে রাজ্জাক মুন্সি ইরাকে ও দ্বিতীয় ছেলে জান্নান মুন্সি সৌদি আরব থাকেন। ছোট ছেলে হাফেজ সোহেল মুন্সি বাড়িতেই থাকেন। ৫ মেয়ের সকলেরই বিয়ে হয়ে গেছেন। আত্রাই উপজেলার সিংশাইর গ্রামে এমকে আইয়ূব এক ব্যক্তির তার ফেসবুক আইডিতে কুদ্দুছ মিয়ার হারিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে একটি ভিডিও আপলোড করেন গত ১২ এপ্রিল। দেশে বিদেশে ভাইরাল হয় ভিডিওটি। এই ভিডি সূত্রধরে কুদ্দুছ মিয়ার নিজ গ্রাম নবীনগর উপজেলার কয়েকজন যোগাযোগ করে আইয়ূবের সাথে গত ৫ সেপ্টেম্বর, তারা সেখানে যান এবং মায়ের সাথে কথা বলিয়ে দেন ভিডিও কলে। ছেলের হাতে কাটা চিহ্ন দেখে মা সনাক্ত করে তার ছেলেকে। আজ শনিবার সকাল সাড়ে ১১ টার দিকে কুদ্দুছ মিয়া, ছেলে এবং ছেলের বউরা মায়ের সাথে দেখা করতে বোনের বাড়ি বাঞ্ছারামপুর উপজেলার আশ্রাফবাদ গ্রামে আসেন।

বাড্ডা গ্রামের সফিকুল ইসলাম জানান, ফেসবুকে একটি পোস্ট দেখে আমরা কয়েকজন রাজশাহীতে যোগাযোগ করি ও সেখানে যাই। মা ছেলের মধ্যে ভিডিও কলে কথা বলাই। ছেলের হাতের কাটা দাগ আছে এমন কথা কলার পর আমরা মিলিয়ে দেখি এবং তাকে আজ মায়ের কাছে নিয়ে এসেছি।

কুদ্দুছ মিয়ার বোন ঝরনা বেগম জানান, আমার মা সব সময় বলতেন একদিন আমার ছেলে ফিরে আসবে। আল্লাহ আমার মায়ের ডাক কবুল করেছেন। আমরা আমার ভাইকে ফিরে পেয়েছি।

কুদ্দুছ মিয়ার জানান, হারিয়ে যাওয়ার পর রাজশাহী জেলার আত্রাই উপজেলার সিংশারা গ্রামের সাদিক মিয়ার স্ত্রী আমাকে ছেলের মত লালন পালন করে। পরবর্তীতে বিয়ের পর আমার শশুর বাড়িতে বসবাস করে আসছি। কিন্তু মনে মনে আমার মা ও বোনদের খোজার চেষ্টা করেছি। আমার বিশ্বাস ছিল একদিন আমার মার সন্ধান আমি পাবো। মায়ের বুকে ফিরতে পেরে পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী মানুষ আমার আমাকে মনে হচ্ছে। বাকী জীবনটা মার সাথেই থাকবো।