জাতীয় ডেস্কঃ
সরকার দেশের বিভিন্ন জায়গার ৮০ হাজার হেক্টর পতিত জমি চাষাবাদের আওতায় এনেছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, বহু জমি এখনও পতিত পড়ে আছে। সেই জমিতে কীভাবে ফসল ফলানো যায় তার জন্য মাটির উপরে গবেষণা চলছে। আর সে গবেষণায় সাফল্য অর্জন করেছি।
রবিবার রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে ‘বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পুরস্কার ১৪২৪’ প্রদান অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি এ কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে যুক্ত হন।
শেখ হাসিনা বলেন, বিভিন্ন চরাঞ্চল-বিশেষ করে শীতের সময় চরাঞ্চলের মাটি গবেষণা করে আমাদের গবেষকরা সেটা আবিষ্কার করেছেন। সেখানে নানা ধরনের ফসল উৎপাদন হচ্ছে। যে সমস্ত এলাকায় এক সময় কোনো ফসলে হতো না এখন সেই সমস্ত এলাকায় নানা ধরনের ফসল উৎপাদন হচ্ছে। ইতিমধ্যে প্রায় ৮০ হাজার হেক্টর পতিত জমি আমরা চাষাবাদের আওতায় নিয়ে আসতে সক্ষম হয়েছি।
তিনি বলেন, আমাদের যে উন্নয়ন তাতে আমরা যথেষ্ট এগিয়ে যাচ্ছিলাম। কিন্তু দুর্ভাগ্য হলো এই করোনা আসার পর বাংলাদেশ শুধু নয় বিশ্বব্যাপী একটা স্থবিরতা এসে গেছে। যেটা সব থেকে দুঃখজনক। আমাদের মতো ঘনবসতিপূর্ণ দেশের জন্য সব থেকে কষ্টকর। আমরা ইতোমধ্যেই করোনাকালীন সময়ে সাধারণ মানুষ যেন কষ্ট না পায় তার জন্য বিভিন্ন ব্যবস্থা নিচ্ছি।
করোনার সংক্রমণ আবার বেড়ে যাওয়া সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা সাবধানে থাকার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নিজেকে নিরাপদে রাখবেন, নিজের পরিবারকে নিরাপদে রাখবেন। স্বাস্থ্যবিধিগুলো মেনে চলবেন। নিজেকে সুরক্ষিত রাখবেন। সেটা আমার বিশেষভাবে অনুরোধ।
তিনি বলেন, এই অবস্থা আমরা মোকাবেলা করতে পারব। সে বিশ্বাস আমাদের আছে কিন্তু এক্ষেত্রে আপনাদের সকলের সহযোগিতা আমরা চাই।
বক্তব্যে করোনাকালীন অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড সচল রাখতে সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন সরকার প্রধান। বলেন, জাতির পিতা সাধারণ মানুষের জন্য যতগুলো পদক্ষেপ নিয়েছিলেন, পঁচাত্তরের পর যারা ক্ষমতায় আসে তারা একে একে সবই বন্ধ করে দেয়। কিন্তু আমাদের দুর্ভাগ্য এই বাংলাদেশে আমরা দেখেছি ৯১ সালে বিএনপি যখন ক্ষমতায় আসে, কৃষকরা সারের জন্য আন্দোলন করেছিল। ১৮ জন কৃষককে গুলি করে হত্যা করেছিল। কৃষক সার পায়নি, পেয়েছিল গুলি।
শেখ হাসিনা বলেন, তখন আমরা বলেছিলাম, আমরা আওয়ামী লীগ যদি সরকারে আসি সারের জন্য কৃষকদের গুলি খাওয়া তো দূরের কথা দৌড়াদৌড়িও করতে হবে না। কৃষকের ঘরে পৌঁছে দেব। সেই সময় আমরা স্লোগান তুলেছিলেন ‘কৃষক বাঁচাও, দেশ বাঁচাও’। কৃষকদের পাখির মতো গুলি করে হত্যা করেছিল খালেদা জিয়া সরকার।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের লক্ষ্য ছিল বাংলার মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরিয়ে দেয়া, ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দেয়া এবং তাদের খাদ্য নিরাপত্তা দেয়া। সেজন্য ভোট ও ভাতের অধিকারের আন্দোলন আমরা শুরু করি।
তিনি বলেন, আমরা সরকার গঠন করার পরপরই কৃষিকে সবচেয়ে গুরুত্ব দিয়েছি। জাতির পিতার নির্দেশিত পথেই আমরা আমাদের যাত্রা শুরু করি। সেই ৯৮ সালে বাংলাদেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করে। পার্লামেন্টে আমরা যখন ঘোষণা দেই যে বাংলাদেশ আজ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ, বিএনপি তখন প্রতিবাদ করে।
এ সময় ২০০৮ সালে ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে কৃষির উন্নয়নে সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপির কথাই ছিল খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়া ভালো না। কেন? বিদেশ থেকে সাহায্য পাওয়া যাবে না। অর্থাৎ সারাজীবন বাংলাদেশ অন্যের কাছে হাত পেতে চলবে, ভিক্ষা করে চলবে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একটা কথা বলতেন, ভিক্ষুক জাতির ইজ্জত থাকে না। আমরা ভিক্ষুক হব না। আমাদের মাটি আছে, মানুষ আছে। আমরা ফসল ফলাব। নিজের পায়ে দাঁড়াব, নিজের খাবার নিজে জোগাড় করব। আমাদেরও সেই নীতি। ওদের নীতি ছিল কিছুটা ভিন্ন।
তিনি বলেন, দুর্ভাগ্য যে ২০০১ এ আমরা সরকারে আসতে পারিনি। সে সময় দেশের অবস্থাটা কি ছিল আপনারা জানেন। সে সময় আবার বাংলাদেশ খাদ্য ঘাটতির দেশ হয়। সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ, দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, তোষামোদি সেগুলো হয়ে যায় দেশের নীতি। বাংলাদেশের যে স্বাধীনতার চেতনা, সেটা ভূলুণ্ঠিত হয় ঠিক পঁচাত্তরের পনেরোই আগস্টের পরে যে রকম হয়েছিল, একই ধরনের ঘটনা ঘটে।
‘আমরা কৃষি ও পল্লী উন্নয়ন খাতে ব্যাপক বরাদ্দ দিচ্ছি। এখন তো করোনাভাইরাসের যুগ। মাত্র ১০ টাকায় একজন কৃষক ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলতে পারে। সেই সঙ্গে কৃষি উপকরণের যে টাকাগুলো, সেটা তাদের কাছে যাতে সরাসরি ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে চলে যায় সেই ব্যবস্থাটাও আমরা করেছি।’
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারই কৃষকদের সবচেয়ে বেশি মর্যাদা দেয়। শুধু তাই না, আমরা বর্গাচাষীদের বঞ্চিত করিনি। বিনা জামানতে বর্গাচাষিদের আমরা ঋণ দেওয়া শুরু করি। তার উদ্দেশ্য ছিল, তারা যেন সর্বশক্তি নিয়োগ করতে পারে উৎপাদনে। আমাদের মাটি এত উর্বর যে একটু গবেষণা করলে যেকোনো ফসল উৎপাদন করা যায়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা একশোটা অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তুলছি। এই একশোটা অঞ্চলে আমরা গুরুত্ব দিতে চাই কৃষিপণ্য ও খাদ্য পণ্য প্রক্রিয়াজাতকরণে জন্য। বাংলাদেশ পিছিয়ে যাবে না, বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক। আরও বক্তব্য দেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম।