আজিজুর রহমান রনি, বিশেষ প্রতিনিধিঃ
কুমিল্লা মুরাদনগর উপজেলার বিভিন্ন সড়কের যাত্রীরা জিম্মি হয়ে পরছে এক শ্রেনীর যানবাহ শ্রমীকদের কাছে। গেল কয়েক মাস আগে রাস্তার দূরবস্থার কারণে এক দফা ভাড়া বাড়ানো হয়। রাস্তা সংস্কারের পরও ভাড়া কমেনি। এখন ঈদ বোনাস ও গ্যাসের দাম বাড়ার অজুহাতে উপজেলায় সিএনজি চালিত অটোরিকশার ভাড়া বেড়েই চলছে। চালক সমিতির আগাম কোন ঘোষণা ছাড়াই এ ভাড়া বৃদ্ধিতে দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন যাত্রীরা সাধারন। আসন্ন্য ঈদুল ফিতরের কারনেও আরেক দফা যাতায়ত ভাড়া বেড়ে যাওয়ার দুশ্চিন্তায় রয়েছেন যাত্রীরা।
এদিকে উপজেলার বিভিন্ন সড়কে দফায় দফায় একটি চক্র ভাড়া বাড়িয়ে গেলে এ বিষয়ে বিভিন্ন সময়ে উপজেলা আইন-শৃঙ্খলা সভায় প্রয়োজনিয় ব্যবস্থাসহ মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করার কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত রহস্যজনক কারণে বিষয়টি দেখেও না দেখার ভান করছে এমন অভিযোগ উঠেছে স্থানী প্রশাসনের বিরোদ্ধে। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ায় স্থানীয়দের মাঝেও তৈরী হয়েছে ক্ষোভ।
জানা যায়, গত তিন মাস আগে উপজেলার বিভিন্ন এলাকার সড়কের ছিল বেহালদশা। বেহাল সড়কের অজুহাতে ১০ টাকার ভাড়া বাড়িয়ে চালকরা নিয়েছে ২০ টাকা। রাস্তা যখন সংস্কার হলো, তখন আর ভাড়া কমানো হয়নি। দ্বিতীয় দফায় পবিত্র ঈদুল ফিতরের দু’দিন আগে থেকে (২৪ জুন) মুরাদনগরের বিভিন্ন সড়কে সিএনজিচালিত অটোরিকশার চালকেরা ঈদ বোনাস হিসাবে ঈদের পরের তিনদিন যাত্রীদের কাছ থেকে জপ্রতি ৫ থেকে ১০ টাকা অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করেছে। ঈদের এক সপ্তাহ পরও ভাড়া না কমায় যাত্রীরা প্রতিবাদ জানালে গ্যাসের দাম বাড়ার অজুহাত দেখিয়ে বাড়তি ভাড়া দাবি করেন সিএনজি চালিত অটোরিকশার চালকরা।
যাত্রীরা জানায়, ভাড়া বাড়ানোয় এখন মুরাদনগর থেকে করিমপুর ৫টাকার জায়গায় ১০, মুরাদনগর থেকে রামচন্দ্রপুর ২০ টাকার জায়গায় ৫০, মুরাদনগর থেকে তিতাস ১৫ টাকার জায়গায় ৩০, মুরাদনগর থেকে ইলিয়টগঞ্জ ৪০টাকার জায়গায় ৮০, নবীপুর থেকে শ্রীকাইল ৬০ টাকার জায়গায় ৯০ টাকা ভাড়া দিতে হচ্ছে যাত্রীদের। এক কথায় প্রতিটি সড়কে জনপ্রতি ১০ থেকে ২০ টাকা ভাড়া বাড়ানো হয়েছে এবং কোথাও হয়েছে ডবল।
ভুক্তভোগী যাত্রী সুমন আহমেদ, কলেজ ছাত্র রাকিব, শিক্ষক শারমিন আক্তার বলেন, এভাবে হঠাৎ করে সিএনজি চালিত অটোরিকশার ভাড়া বাড়ানোয় তারা রীতিমতো দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন।
মুরাদনগরের ভিন্ন সড়কে যাত্রীবাহী বাস না থাকায় সুযোগ বুঝে চালকরা দফায় দফায় ইচ্ছেমতো ভাড়া বাড়াচ্ছেন। অযৌক্তিকভাবে ভাড়া বাড়ানোর প্রতিবাদ করলে প্রায়ই চালকদের হাতে নাজেহাল হতে হয়। এখন আবার ভাড়া বাড়ানোয় চাকরিজীবী, ছাত্র ও স্বল্প আয়ের মানুষেরা চাপের মুখে পড়েছে।
কলেজ শিক্ষক মিজানুর রহমান বলেন, সিএনজিচালিত অটোরিকশার চালকেরা নানা অজুহাতে কয়েক দিন পারপরই ভাড়া বাড়ানোর পাঁয়তারা করেন। কখনো রাস্তা খারাপের জন্য বেড়েছে, কখনো গ্যাসের দাম বেড়েছে, কখনো ঈদ-পূজার অজুহাত দিয়ে ভাড়া বাড়ানো হয়।
মুরাদনগর উপজেলা আ’লীগের সহ-সাবেক সভাপতি অশীনি কুমার দেবনাথ বলেন, যৌক্তিক কোন কারণ ছাড়াই মুরাদনগরের প্রায় সব জায়গায় যাত্রী পরিবহনে ভাড়া বাড়ানো হয়েছে। কোন পূর্বালোচনা ছাড়াই হঠাৎ এ রকম ভাড়া বাড়নোয় সাধারণ যাত্রীরা বিরাট অসুবিধায় পড়েছেন। এ সমস্যা মেটাতে প্রশাসনকে দ্রুত এগিয়ে আসতে হবে।
এদিকে উপজেলা সিএনজিচালিত অটোরিকশা শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মোহাম্মদ মোবারক বলেন, ‘আমাদের সমিতির কোন সিদ্ধান্ত ছাড়াই বিভিন্ন রুটে ৫ থেকে ১০ টাকা ভাড়া বাড়ানো হয়েছে বলে আমরা খবর পেয়েছি। বিষয়টি আমরা দেখছি।’
মুরাদনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ রাসেলুল কাদের বলেন, বিষটি অবশ্যই গুরুত্ব সহকারে খতিয়ে দেখা হবে।