ঢাকা ০৩:২০ অপরাহ্ন, রবিবার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৭ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মুরাদনগরে পরকিয়ায় বাধাঁ দেয়ায় রনি হত্যা ২০ দিন পর স্ত্রীসহ ৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা

মো: হাবীবুর রহমান, বিশেষ প্রতিনিধিঃ

কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার বাঙ্গরা বাজার থানার খামার গ্রামের মৃত আবুল হাসেম সরকারের ছেলে ব্যবসায়ী চাঞ্চল্যকর সৈকত হোসেন রনি (৩১) হত্যার ২০ দিন পর অবশেষে স্ত্রীসহ ৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা রুজু করেছে পুলিশ। তবে আসামীরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ালেও রহস্যজনক কারণে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত পুলিশ কাউকে গ্রেফতার করছে না বলে অভিযোগ ওঠেছে।

একটি প্রভাবশালী মহল প্রশাসন ও রাজনৈতিক ব্যক্তিদের ভুল বুঝিয়ে পরিকল্পিত হত্যার ঘটনাটি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করে ধামাচাপা দেওয়ার অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বলে জানা গেছে।

মামলার অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, সৈকত হোসেন রনি বাঙ্গরা বাজারে রড-সিমেন্ট ও হার্ডওয়ারের ব্যবসা করতো। এ পর্যায়ে একই গ্রামের শহীদ মিয়ার ছেলে সিঙ্গাপুর প্রবাসী সোহেল মিয়া (২৮) রনির সাথে বন্ধুত্ব সম্পর্ক গড়ে ওঠে। ফলে রনির বাসায় প্রায়ই যাওয়া-আসার ফলে রনির স্ত্রী সাজিয়া আক্তারের সাথে সোহেল মিয়া পরকিয়া সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে। বিষয়টি জানতে পেরে সোহেল মিয়াকে বাড়িতে আসতে নিষেধ করলেই রনির কাল হয়ে দাঁড়ায়। এতে ক্ষীপ্ত হয়ে গত ১৭ আগষ্ট বৃহস্পতিবার গভীর রাতে স্ত্রী সাজিয়া আক্তারের (২০) পরামর্শে বাঙ্গরা বাজারের মৃত জাহের মিয়ার ছেলে রাশেদ মিয়া (২৭) রনিকে সোহেল মিয়ার বাড়িতে ডেকে নেয়। তখন ওই বাড়ির ছাদে থাকা বজলুর রহমানের ছেলে শহীদ মিয়া (৪৮), কফিল উদ্দিনের ছেলে মোজাম্মেল হক (২৮), আব্দুল জলিলের ছেলে এরশাদ মিয়া (২৭) ও মৃত বজলুর রহমানের ছেলে আবিদ মিয়া (৪০) পরস্পর যোগসাজসে সৈকত হোসেন রনিকে পরিকল্পিত ভাবে হত্যা করে। আসামীরা রাতেই রনির ভাই আলী হোসেনের বাড়ির সামনে দিয়েই দেবিদ্বার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিলে কর্তব্যরত ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করে। ১৮ আগষ্ট শুক্রবার ভোর রাত আনুমানিক সাড়ে ৪টায় রনিকে তার স্ত্রীর রুমে ফেলে রেখে আসামীরা চলে যায়। বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার জন্য স্ত্রী সাজিয়া বেগম তার স্বামী রনির মৃত্যু হয়েছে বলে শোর-চিৎকারের নাটক করতে থাকে। তখন রনির মা আয়শা খাতুন ছেলের মৃত্যুর খবর শুনে অজ্ঞান হয়ে পড়ে। এ সুযোগে আসামীরা রনি মৃত্যুর খবর প্রচার বা মাইকিং ছাড়াই তড়িঘড়ি করে তার লাশ দাফন করে ফেলে। উক্ত ঘটনার তিন দিন পর রনির স্ত্রী সাজিয়া আক্তার দোকানের চাবি সোহেল মিয়ার হাতে তুলে দেয়। সোহেল মিয়া দোকান খুলে বসলে রনি হত্যার ধার্য্যকৃত টাকা না দিলে তাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব দেখা দেয়। পরে মোজাম্মেল হক পরিকল্পিত ভাবে রনিকে হত্যার ঘটনাটি ছড়িয়ে দেয় বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়। ঘটনাটি জানাজানি হলে এলাকায় তোলপাড় শুরু হয়। রনির আত্মীয়-স্বজনরা অসহায় এবং আসামীরা প্রভাবশালী হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে কেউ প্রতিবাদ করাতো দুরের কথা ভয়েও মুখ খুলতে সাহস পায়নি।

এ দিকে সৈকত হোসেন রনির লাশ কবর থেকে উত্তোলনপূর্বক ময়না তদন্তের আদেশ দিতে রনির মা বৃদ্ধ আয়শা খাতুন (৭৮) বাদী হয়ে সোহেল মিয়াসহ ৭ জনের বিরুদ্ধে গত ২৪ আগষ্ট কুমিল্লার ৮নং আমলী আদালতে একটি অভিযোগ করে (যার নং সি-আর ৩২১/১৭)। বিজ্ঞ জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট বিপ্লব দেবনাথের নির্দেশ মোতাবেক বাঙ্গরা বাজার থানা পুলিশ বুধবার রাতে অভিযোগটিকে এফআইআর হিসেবে গন্য করে (যার নং ০২)।

অপর দিকে মামলার বাদী-স্বাক্ষীসহ রনির আত্মীয়-স্বজনরা আসামীদের হুমকি-ধমকিতে আতংক ও উৎকন্ঠার মধ্য দিয়ে দিনাতিপাত করছে। মামলা করায় ক্ষীপ্ত হয়ে খামার গ্রামের আব্দুল মোতালিবের ছেলে সজিব মিয়া (২৪) সৈকত হোসেন রনির ভাই আলী হোসেনকে খুন-জখমের ভয়-ভীতি দেখাচ্ছে। এ ব্যাপারে আলী হোসেন জীবনের নিরাপত্ত্বা চেয়ে গত ২৭ আগষ্ট বাঙ্গরা বাজার থানায় একটি সাধারণ ডায়রি করে (যার নং ১০১০)।

মামলার বাদী ও পুত্রের শোকে কাতর রনির মা আয়শা খাতুন অভিযোগ করে বলেন, আমার ছেলে মরেনি। স্ত্রী সাজিয়া আক্তারের পরকিয়ায় বাধাঁ দেওয়ায় তার জীবন দিতে হয়েছে বলে তিনি বুক চাপড়ে আর্তনাদ করতে থাকে। তিনি পুত্র রনি হত্যাকারীদের গ্রেফতারপূর্বক ফাঁসির দাবি জানায়। তিনি পুলিশের উদ্দেশ্যে বলেন, আপনাদের ছেলের যদি এ অবস্থা হতো, তখন আপনারা কি করতেন? আমি আমার ছেলে রনি হত্যাকারীদের ফাঁসি দেখে মরতে চাই।

নিহত রনির বড় ভাই আলী হোসেন জানান, আমার বাড়ির সামনে দিয়ে আমার ভাইকে দেবিদ্বার হাসপাতালে নেয়া হলো, অথচ আমাদেরকে কিছুই জানানো হয়নি, এ কথা বলে তিনি কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। হত্যাকারীরা আমার ভাইয়ের জানাজা নামাজের সময়টুকুও মাইকে বলতে সুযোগ দেয়নি। তরিঘরি করে লাশ দাফন করে হত্যার ঘটনাটি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করে। তিনি তার ভাই রনি হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিসহ তাদের নিরাপত্ত্বার জন্য প্রশাসনের নিকট আকুতি জানায়।

রনির ছোট ভাই ফরহাদ হোসেন জানান, রনিকে দাফনের পর পরই তার স্ত্রী সাজিয়া আক্তার আমাদের সহায়-সম্পত্ত্বি ভাগ করার জন্য ওঠে পড়ে লেগেছে। জমি বিক্রি করার জন্য পাগল হয়ে গেছে। ভাই মৃত্যুর পূর্বে শুনি নাই কেউ এক টাকা পাবে। অথচ এখন শুনি আমার ভাইয়ের অনেক ঋণ ছিল। ব্যবসা-বানিজ্যেও অনেকে শেয়ার রয়েছে। আমরা নাকি ভাইয়ের সম্পত্ত্বি আত্মসাৎ করার পাঁয়তারা করছি। তিনি বিষয়গুলো খতিয়ে দেখার জন্য প্রশাসনের প্রতি দাবি জানায়।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সৈকত হোসেন রনির দুই বছরের একটি ছেলে সন্তান ও এক বছরের একটি মেয়ে সন্তান রয়েছে। এর পূর্বেও রনি আছমা বেগম নামে একটি মেয়েকে বিয়ে করেছিল। সে বিষপানে আত্বহত্যা করে মারা যায়। ওই স্ত্রীর নিঝুম নামে নয় বছরের একটি মেয়ে ও নিরব নামে সাত বছরের একটি ছেলে রয়েছে। আগের ছেলে-মেয়েদের একটু আদর-যতœ-সোহাগ করলেই স্ত্রীর রোষানলের শিকার হতো রনি। আগের স্ত্রীর সন্তানের নামে একখন্ড জমি লিখে দেওয়ায় তাদেরকে দেখতে পারতো না এবং তাদেরকে প্রায়ই মারধর করতো সাজিয়া আক্তার।
বাঙ্গরা বাজারের কয়েকজন ব্যবসায়ীরা জানায়, সৈকত হোসেন রনি একজন ভাল মানুষ ছিলেন। আমাদের সাথে চলাফেরাসহ একসাথে ব্যবসা-বানিজ্য করতো। এ ভাবে তার জীবন দিতে হবে কেউ ভাবতেও পারিনি। তার মৃত্যুর খবর শুনে আমরা হতভাগ। সহায়-সম্পদ থাকলেও সুখ কি জিনিস দেখে যেতে পারেনি। আগের ছেলে-মেয়েকে নিয়ে রনি প্রায় দিনই হোটেলে খাওয়া-দাওয়া করতে দেখেছি। সংসারে প্রায় সময়ই অশান্তি লেগেছিল বলে শোনা যেতো।

এ বিষয়ে কথা বলার জন্য নিহত সৈকত হোসেন রনির স্ত্রী সাজিয়া আক্তারের সাথে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও কথা বলা সম্ভব হয়নি। সাংবাদিক পরিচয় পাওয়ার পরই তিনি কথা না বলে বার বার এড়িয়ে যাচ্ছেন।

বাঙ্গরা বাজার থানার ওসি মনোয়ার হোসেন চৌধুরী জানান, আদালতের নির্দেশ মোতাবেক বুধবার রাতে সৈকত হোসেন রনি হত্যার অভিযোগটি এফআইআর হিসেবে গন্য করা হয়েছে। পুলিশ চাইলেই ইচ্ছাকৃত ভাবে কিছু করতে পারে না। সব কিছুরই একটা সীমাবদ্ধতা রয়েছে। যেহেতু মামলাটি স্পর্শকাতর, সেহেতু প্রকাশ্যে ও গোপনে অধিকতর তদন্ত চলছে। উক্ত ঘটনায় জড়িত কাউকে সন্দেহ হলে গ্রেফতারপুর্বক আইনের আওতায় আনা হবে। তবে যে কোন মূল্যে রনি হত্যার প্রকৃত রহস্য উদ্ঘাটিত হবে বলে তিনি সাংবাদিকদের নিশ্চিত করেছেন।

ট্যাগস
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

মুরাদনগরে সাংবাদিকদের সাথে নবাগত ওসি’র মত বিনিময়

মুরাদনগরে পরকিয়ায় বাধাঁ দেয়ায় রনি হত্যা ২০ দিন পর স্ত্রীসহ ৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা

আপডেট সময় ০৩:১৪:৫৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ৯ সেপ্টেম্বর ২০১৭
মো: হাবীবুর রহমান, বিশেষ প্রতিনিধিঃ

কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার বাঙ্গরা বাজার থানার খামার গ্রামের মৃত আবুল হাসেম সরকারের ছেলে ব্যবসায়ী চাঞ্চল্যকর সৈকত হোসেন রনি (৩১) হত্যার ২০ দিন পর অবশেষে স্ত্রীসহ ৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা রুজু করেছে পুলিশ। তবে আসামীরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ালেও রহস্যজনক কারণে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত পুলিশ কাউকে গ্রেফতার করছে না বলে অভিযোগ ওঠেছে।

একটি প্রভাবশালী মহল প্রশাসন ও রাজনৈতিক ব্যক্তিদের ভুল বুঝিয়ে পরিকল্পিত হত্যার ঘটনাটি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করে ধামাচাপা দেওয়ার অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বলে জানা গেছে।

মামলার অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, সৈকত হোসেন রনি বাঙ্গরা বাজারে রড-সিমেন্ট ও হার্ডওয়ারের ব্যবসা করতো। এ পর্যায়ে একই গ্রামের শহীদ মিয়ার ছেলে সিঙ্গাপুর প্রবাসী সোহেল মিয়া (২৮) রনির সাথে বন্ধুত্ব সম্পর্ক গড়ে ওঠে। ফলে রনির বাসায় প্রায়ই যাওয়া-আসার ফলে রনির স্ত্রী সাজিয়া আক্তারের সাথে সোহেল মিয়া পরকিয়া সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে। বিষয়টি জানতে পেরে সোহেল মিয়াকে বাড়িতে আসতে নিষেধ করলেই রনির কাল হয়ে দাঁড়ায়। এতে ক্ষীপ্ত হয়ে গত ১৭ আগষ্ট বৃহস্পতিবার গভীর রাতে স্ত্রী সাজিয়া আক্তারের (২০) পরামর্শে বাঙ্গরা বাজারের মৃত জাহের মিয়ার ছেলে রাশেদ মিয়া (২৭) রনিকে সোহেল মিয়ার বাড়িতে ডেকে নেয়। তখন ওই বাড়ির ছাদে থাকা বজলুর রহমানের ছেলে শহীদ মিয়া (৪৮), কফিল উদ্দিনের ছেলে মোজাম্মেল হক (২৮), আব্দুল জলিলের ছেলে এরশাদ মিয়া (২৭) ও মৃত বজলুর রহমানের ছেলে আবিদ মিয়া (৪০) পরস্পর যোগসাজসে সৈকত হোসেন রনিকে পরিকল্পিত ভাবে হত্যা করে। আসামীরা রাতেই রনির ভাই আলী হোসেনের বাড়ির সামনে দিয়েই দেবিদ্বার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিলে কর্তব্যরত ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করে। ১৮ আগষ্ট শুক্রবার ভোর রাত আনুমানিক সাড়ে ৪টায় রনিকে তার স্ত্রীর রুমে ফেলে রেখে আসামীরা চলে যায়। বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার জন্য স্ত্রী সাজিয়া বেগম তার স্বামী রনির মৃত্যু হয়েছে বলে শোর-চিৎকারের নাটক করতে থাকে। তখন রনির মা আয়শা খাতুন ছেলের মৃত্যুর খবর শুনে অজ্ঞান হয়ে পড়ে। এ সুযোগে আসামীরা রনি মৃত্যুর খবর প্রচার বা মাইকিং ছাড়াই তড়িঘড়ি করে তার লাশ দাফন করে ফেলে। উক্ত ঘটনার তিন দিন পর রনির স্ত্রী সাজিয়া আক্তার দোকানের চাবি সোহেল মিয়ার হাতে তুলে দেয়। সোহেল মিয়া দোকান খুলে বসলে রনি হত্যার ধার্য্যকৃত টাকা না দিলে তাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব দেখা দেয়। পরে মোজাম্মেল হক পরিকল্পিত ভাবে রনিকে হত্যার ঘটনাটি ছড়িয়ে দেয় বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়। ঘটনাটি জানাজানি হলে এলাকায় তোলপাড় শুরু হয়। রনির আত্মীয়-স্বজনরা অসহায় এবং আসামীরা প্রভাবশালী হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে কেউ প্রতিবাদ করাতো দুরের কথা ভয়েও মুখ খুলতে সাহস পায়নি।

এ দিকে সৈকত হোসেন রনির লাশ কবর থেকে উত্তোলনপূর্বক ময়না তদন্তের আদেশ দিতে রনির মা বৃদ্ধ আয়শা খাতুন (৭৮) বাদী হয়ে সোহেল মিয়াসহ ৭ জনের বিরুদ্ধে গত ২৪ আগষ্ট কুমিল্লার ৮নং আমলী আদালতে একটি অভিযোগ করে (যার নং সি-আর ৩২১/১৭)। বিজ্ঞ জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট বিপ্লব দেবনাথের নির্দেশ মোতাবেক বাঙ্গরা বাজার থানা পুলিশ বুধবার রাতে অভিযোগটিকে এফআইআর হিসেবে গন্য করে (যার নং ০২)।

অপর দিকে মামলার বাদী-স্বাক্ষীসহ রনির আত্মীয়-স্বজনরা আসামীদের হুমকি-ধমকিতে আতংক ও উৎকন্ঠার মধ্য দিয়ে দিনাতিপাত করছে। মামলা করায় ক্ষীপ্ত হয়ে খামার গ্রামের আব্দুল মোতালিবের ছেলে সজিব মিয়া (২৪) সৈকত হোসেন রনির ভাই আলী হোসেনকে খুন-জখমের ভয়-ভীতি দেখাচ্ছে। এ ব্যাপারে আলী হোসেন জীবনের নিরাপত্ত্বা চেয়ে গত ২৭ আগষ্ট বাঙ্গরা বাজার থানায় একটি সাধারণ ডায়রি করে (যার নং ১০১০)।

মামলার বাদী ও পুত্রের শোকে কাতর রনির মা আয়শা খাতুন অভিযোগ করে বলেন, আমার ছেলে মরেনি। স্ত্রী সাজিয়া আক্তারের পরকিয়ায় বাধাঁ দেওয়ায় তার জীবন দিতে হয়েছে বলে তিনি বুক চাপড়ে আর্তনাদ করতে থাকে। তিনি পুত্র রনি হত্যাকারীদের গ্রেফতারপূর্বক ফাঁসির দাবি জানায়। তিনি পুলিশের উদ্দেশ্যে বলেন, আপনাদের ছেলের যদি এ অবস্থা হতো, তখন আপনারা কি করতেন? আমি আমার ছেলে রনি হত্যাকারীদের ফাঁসি দেখে মরতে চাই।

নিহত রনির বড় ভাই আলী হোসেন জানান, আমার বাড়ির সামনে দিয়ে আমার ভাইকে দেবিদ্বার হাসপাতালে নেয়া হলো, অথচ আমাদেরকে কিছুই জানানো হয়নি, এ কথা বলে তিনি কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। হত্যাকারীরা আমার ভাইয়ের জানাজা নামাজের সময়টুকুও মাইকে বলতে সুযোগ দেয়নি। তরিঘরি করে লাশ দাফন করে হত্যার ঘটনাটি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করে। তিনি তার ভাই রনি হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিসহ তাদের নিরাপত্ত্বার জন্য প্রশাসনের নিকট আকুতি জানায়।

রনির ছোট ভাই ফরহাদ হোসেন জানান, রনিকে দাফনের পর পরই তার স্ত্রী সাজিয়া আক্তার আমাদের সহায়-সম্পত্ত্বি ভাগ করার জন্য ওঠে পড়ে লেগেছে। জমি বিক্রি করার জন্য পাগল হয়ে গেছে। ভাই মৃত্যুর পূর্বে শুনি নাই কেউ এক টাকা পাবে। অথচ এখন শুনি আমার ভাইয়ের অনেক ঋণ ছিল। ব্যবসা-বানিজ্যেও অনেকে শেয়ার রয়েছে। আমরা নাকি ভাইয়ের সম্পত্ত্বি আত্মসাৎ করার পাঁয়তারা করছি। তিনি বিষয়গুলো খতিয়ে দেখার জন্য প্রশাসনের প্রতি দাবি জানায়।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সৈকত হোসেন রনির দুই বছরের একটি ছেলে সন্তান ও এক বছরের একটি মেয়ে সন্তান রয়েছে। এর পূর্বেও রনি আছমা বেগম নামে একটি মেয়েকে বিয়ে করেছিল। সে বিষপানে আত্বহত্যা করে মারা যায়। ওই স্ত্রীর নিঝুম নামে নয় বছরের একটি মেয়ে ও নিরব নামে সাত বছরের একটি ছেলে রয়েছে। আগের ছেলে-মেয়েদের একটু আদর-যতœ-সোহাগ করলেই স্ত্রীর রোষানলের শিকার হতো রনি। আগের স্ত্রীর সন্তানের নামে একখন্ড জমি লিখে দেওয়ায় তাদেরকে দেখতে পারতো না এবং তাদেরকে প্রায়ই মারধর করতো সাজিয়া আক্তার।
বাঙ্গরা বাজারের কয়েকজন ব্যবসায়ীরা জানায়, সৈকত হোসেন রনি একজন ভাল মানুষ ছিলেন। আমাদের সাথে চলাফেরাসহ একসাথে ব্যবসা-বানিজ্য করতো। এ ভাবে তার জীবন দিতে হবে কেউ ভাবতেও পারিনি। তার মৃত্যুর খবর শুনে আমরা হতভাগ। সহায়-সম্পদ থাকলেও সুখ কি জিনিস দেখে যেতে পারেনি। আগের ছেলে-মেয়েকে নিয়ে রনি প্রায় দিনই হোটেলে খাওয়া-দাওয়া করতে দেখেছি। সংসারে প্রায় সময়ই অশান্তি লেগেছিল বলে শোনা যেতো।

এ বিষয়ে কথা বলার জন্য নিহত সৈকত হোসেন রনির স্ত্রী সাজিয়া আক্তারের সাথে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও কথা বলা সম্ভব হয়নি। সাংবাদিক পরিচয় পাওয়ার পরই তিনি কথা না বলে বার বার এড়িয়ে যাচ্ছেন।

বাঙ্গরা বাজার থানার ওসি মনোয়ার হোসেন চৌধুরী জানান, আদালতের নির্দেশ মোতাবেক বুধবার রাতে সৈকত হোসেন রনি হত্যার অভিযোগটি এফআইআর হিসেবে গন্য করা হয়েছে। পুলিশ চাইলেই ইচ্ছাকৃত ভাবে কিছু করতে পারে না। সব কিছুরই একটা সীমাবদ্ধতা রয়েছে। যেহেতু মামলাটি স্পর্শকাতর, সেহেতু প্রকাশ্যে ও গোপনে অধিকতর তদন্ত চলছে। উক্ত ঘটনায় জড়িত কাউকে সন্দেহ হলে গ্রেফতারপুর্বক আইনের আওতায় আনা হবে। তবে যে কোন মূল্যে রনি হত্যার প্রকৃত রহস্য উদ্ঘাটিত হবে বলে তিনি সাংবাদিকদের নিশ্চিত করেছেন।