জাতীয় ডেস্কঃ
বিএনপি বলেছে, ভয়াবহ অস্থির হয়ে উঠেছে দেশের চালের বাজার। প্রতিদিনই লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়ে চলেছে চালের দাম। যা বর্তমানে সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে। চলতি সপ্তাহে এক লাফে প্রায় সব চালের দাম কেজি প্রতি বেড়েছে ১০ থেকে ১৫ টাকা। এ অবস্থায় দিশেহারা সাধারণ মানুষ। বর্তমানে চালের দাম বাংলাদেশের ইতিহাসের সকল রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। বর্তমানে মোটা চালের দাম ৫৫ টাকা, মিনিকেট চাল বিক্রি হচ্ছে ৬৫-৭০ টাকা পর্যন্ত। আজ কোথায় আপনাদের প্রাণের বন্ধু ভারত? এই খাদ্য সংকটের দিনে ভারত স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে এই মুহূর্তে চাল রফতানি করবে না। এই হলো বন্ধুত্বের পরিচয়। সরকারের দেশ পরিচালনায় লুটপাটের নীতির কারণে ৭৪ এর ন্যায় ভয়াল দুর্ভিক্ষ চারদিক থেকে ধেয়ে আসছে। দেশে ভয়াবহ দুর্ভিক্ষের প্রতিধ্বনি শোনা যাচ্ছে। এই দুর্ভিক্ষ প্রতিরোধ করবে কে?
মঙ্গলবার বিকালে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সাংবাদিক সম্মেলনে দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী একথা বলেন। লিখিত বক্তব্যে রিজভী বলেন, বিএনপি শাসনকালের শেষ দিনেও মোটা চালের দাম ছিল ১৬ টাকা। বর্তমানে চালের দাম বৃদ্ধি পেয়ে নিম্ন আয়ের সাধারণ মানুষ অনাহার-অর্ধাহার থেকে তাদের আসন্ন দিনগুলো নিয়ে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে। বর্তমানে চালের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির কারণে নিম্ন মধ্যবিত্ত, দিনমজুর, শ্রমিক তথা খেটে মানুষ এখন দিশেহারা হয়ে পড়েছে। সরকারের তরফে মজুতদারি ও সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার ঘোষণার পর গত দুদিনে আরো বেড়েছে চালের দাম। বাণিজ্যমন্ত্রীর ঘোষণার পর দেশের বিভিন্নস্থানে যে অভিযান চলছে তা নস্ফিল অভিযানে পরিণত হয়েছে। কোথাও তারা অবৈধ চালের সন্ধান পায়নি। গণমাধ্যমে খবর বেরিয়েছে-সরকারি গোডাউন খালি, বেসরকারিভাবেও চালের তেমন মজুদ নেই। তারপরও প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে সরকারের মন্ত্রীরা বলছেন কোটি কোটি টন চালের মজুদ আছে, তাহলে চালের বাজারের অস্থিরতা কমছে না, কারণ সরকার প্রধান রাজনৈতিক টুর্নামেন্টে সকল দিক থেকে হেরে যেতে শুরু করার ফলে মিথ্যাচার করে দেশবাসীর ক্ষুধা ও ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে শুরু করেছে। বর্তমানে দেশে যে খাদ্য সংকট চলছে, যেভাবে লাফিয়ে লাফিয়ে চালের দাম বাড়ছে, যেভাবে অভিযানের নামে ব্যবসায়ীদের মধ্যে আতংকের পরিবেশ সৃষ্টি করা হচ্ছে, খাদ্য নিয়ে প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে সরকারের মন্ত্রীরা যেভাবে মিথ্যাচার করছেন তাতে প্রকৃত ও প্রকট সংকট আড়াল করা যাবেনা।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে চালের দাম বেড়ে যাওয়া নিয়ে সতর্কবার্তা দিয়েছে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও)। সংস্থাটি বলেছে, গত তিন মাসে দেশে চালের দাম অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ার পরিস্থিতি উদ্বেগজনক। এই সময়ে দেশে খাদ্যের দাম, খাদ্যের সহজলভ্যতা ও খাদ্যের মান, এই তিন ক্ষেত্রেই পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। চালের অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধিতে দেশের মানুষসহ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো উদ্বিগ্ন ও আতঙ্কিত হলেও বর্তমান শাসকগোষ্ঠী এখনও নির্বিকার। তারা শুধুমাত্র বিরোধী দল নিধনেই সদাতত্পর। তাদের ভাবখানা এরকম যেন না খেয়ে মানুষ মারা গেলেও তাদের কিছু যায় আসেনা। বর্তমান ভোটারবিহীন সরকারের সীমাহীন দুর্নীতি, বেপরোয়া লুটপাট, দখল ও চাঁদাবাজীতে রাষ্ট্র ও সমাজে চরম নৈরাজ্য বিরাজ করছে। তাদের বিশৃঙ্খল অব্যবস্থাপনা ও অদক্ষতার কারণে মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা আজ চরম ঝুঁকিতে। চালের পর্যাপ্ত সরবরাহ নেই বলেই মূল্য নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ হচ্ছে সরকার। এদিকে বর্তমান সরকারের পরম বন্ধু ভারত বাংলাদেশে চাল রফতানী বন্ধ করে দিয়েছে। ভারত সরকার সুস্পষ্টভাবে বলেছে ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে ১৫ নভেম্বর দুই মাস তারা কোন চাল বাংলাদেশে রফতানী করবে না। এই সময়ে কৃষকদের কোন কাজ থাকেনা, একারণে আমাদের দেশে মরা কার্তিক বলে একটি কথা প্রচলিত আছে। এই সময়ে কৃষকদের অকৃষি কাজেরও কোন সুযোগ নেই। কারন প্রবল বৃষ্টিপাতে এবারে বন্যার ঢলে গ্রামীণ অবকাঠামো তছনছ হয়ে গেছে। ভ্যান-রিক্সা চালিয়ে জীবন ধারণেরও কোন সুযোগ নেই। ক্ষমতা ধরে রাখার গর্ব খর্ব হওয়ার ভয়ে বাংলাদেশ সরকার ভারতের চাল রফতানি বন্ধ করার প্রতিবাদ করতেও ভয় পাচ্ছে।