ঢাকা ১১:৪০ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মুরাদনগরে শহীদ মিনার না থাকায় সাড়ে তিন শতাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের লক্ষাধিক শিক্ষার্থী শ্রদ্ধা জানাতে পারেনি

মো: মোশাররফ হোসেন মনিরঃ

কুমিল্লা মুরাদনগর উপজেলার ২২টি ইউনিয়ন এলাকায় ১১টি কলেজ, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে ২০২টি, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় আছে ৫৪টি ও মাদ্রাসা ৩৬টি। এছাড়া কিন্টারগাডেনসহ সবমিলিয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে অন্তত সাড়ে চার শতাধিক।

এসব প্রতিষ্ঠান গুলোতে রয়েছে প্রায় ১ লক্ষ ৮০ হাজার শিক্ষার্থী। এ উপজেলার বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠান গুলোতে শহীদ মিনার না থাকার ফলে লক্ষাধিক শিক্ষার্থীসহ আশপাশ এলাকার নানা শ্রেণী-পেশার নাগরিকরা জাতীয় দিবসগুলোতে শ্রদ্ধা জানাতে গিয়ে চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন ও তার পরবর্তী ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের পর প্রায় পাঁচ দশকেরও বেশি সময় অতিবাহিত হলেও এ উপজেলায় এখনো বেশিরভাগ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে স্থাপন করা হয়নি স্বাধীনতার অন্যতম স্মৃতির  নিদর্শন শহীদ মিনার। এ অবস্থার কারণে নতুন প্রজন্মের শিক্ষার্থীরা দেশ মাতৃকার টানে ভাষা দিবস, স্বাধীনতা যুদ্ধে শহীদ সকল বীর সেনানীদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনসহ জাতীয় দিবসগুলো পালনে যথাযথভাবে  সুযোগ পাচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে।

জানা গেছে, উপজেলা পরিষদ এলাকায় একটি স্মৃতিসৌধ ও ডিআর উচ্চ বিদ্যালয় স্কুলের মাঠের পাশে একটি শহীদ মিনার থাকলেও উপজেলার ১৫০ প্রাথমিক বিদ্যালয়, ৩৪টি মাধ্যমিক স্কুল, ৩৬টি মাদ্রাসা ও ১৫২টি কিন্ডারগাডেনে এখনো নির্মাণ করা হয়নি শহীদ মিনার। ফলে উপজেলার এইসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রায় লক্ষাধিক শিক্ষার্থীরা প্রতিবছর জাতীয় দিবস গুলোর গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠান পালনের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে উপজেলা সদরের এসব শহীদ মিনারের শ্রদ্ধা জানাতে এসে শিক্ষার্থীরা দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন।

স্থানীয়রা অভিযোগ করে জানান, শিক্ষার্থীদের অনেকেই জানে না এই স্মৃতি স্তম্ভ¢টি তৈরির পেছনের ইতিহাস। কচিমনে দেশাত্মবোধ জাগ্রত করণের মূর্তময় এ ধরনের জাতীয় প্রতীকগুলো এখানকার অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অনুপস্থিত। শিক্ষার্থীদের মননশীলতায় ভাষার প্রতি, স্বাধীনতার প্রতি এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনার প্রতি উত্তরোত্তর শ্রদ্ধাশীলতা বৃদ্ধি পাওয়ার জন্য প্রত্যেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার স্থাপন অত্যন্ত জরুরি। অবকাঠামো উন্নয়নের পাশাপাশি জাতির ইতিহাস ঐতিহ্য ধারণকারী শহীদ মিনার নামক এ স্মৃতিস্তম্ভটি সকল প্রতিষ্ঠানে স্থাপনের দাবি জানান মুক্তিযোদ্ধাসহ এলাকার সুধীজনেরা।

এ বিষয়ে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার হারুন আর রশিদ এর সাথে কথা হলে তিনি জানান, স্বাধীনতা, ভাষা শহীদদের স্মৃতি ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষার স্মৃতিফলক শহীদ মিনার সম্পর্কে এখানকার শিক্ষার্থীদের ধারণা নামমাত্র। উপজেলার প্রত্যেকটি স্কুলে শহীদ মিনার স্থাপনের পাশাপাশি এটি সম্পর্কে শিশুদের ভাষাগত জ্ঞান ও প্রকৃত ইতিহাস তুলে ধরার প্রয়োজনীয় উদ্যোগের কথা জানান তিনি।

এ বিষয়ে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা এএনএম মাহবুব আলম জানান, এখানকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গুলোতে অনেক আগে থেকে শহীদ মিনার নেই। তাছাড়া এর জন্য সরকারি কোনো বরাদ্দও নেই। তারপরও অন্য উপজেলা ও জেলায় নিজেরা যেভাবে করেছে আমরা সে মডেলকে অনুসরণ করার চেষ্টা করব।

ট্যাগস
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

মুরাদনগর উপজেলা বিএনপির ১৭ বছর পর বিজয় দিবস উদযাপন

মুরাদনগরে শহীদ মিনার না থাকায় সাড়ে তিন শতাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের লক্ষাধিক শিক্ষার্থী শ্রদ্ধা জানাতে পারেনি

আপডেট সময় ০১:১২:৫০ অপরাহ্ন, বুধবার, ২১ ফেব্রুয়ারী ২০১৮
মো: মোশাররফ হোসেন মনিরঃ

কুমিল্লা মুরাদনগর উপজেলার ২২টি ইউনিয়ন এলাকায় ১১টি কলেজ, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে ২০২টি, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় আছে ৫৪টি ও মাদ্রাসা ৩৬টি। এছাড়া কিন্টারগাডেনসহ সবমিলিয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে অন্তত সাড়ে চার শতাধিক।

এসব প্রতিষ্ঠান গুলোতে রয়েছে প্রায় ১ লক্ষ ৮০ হাজার শিক্ষার্থী। এ উপজেলার বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠান গুলোতে শহীদ মিনার না থাকার ফলে লক্ষাধিক শিক্ষার্থীসহ আশপাশ এলাকার নানা শ্রেণী-পেশার নাগরিকরা জাতীয় দিবসগুলোতে শ্রদ্ধা জানাতে গিয়ে চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন ও তার পরবর্তী ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের পর প্রায় পাঁচ দশকেরও বেশি সময় অতিবাহিত হলেও এ উপজেলায় এখনো বেশিরভাগ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে স্থাপন করা হয়নি স্বাধীনতার অন্যতম স্মৃতির  নিদর্শন শহীদ মিনার। এ অবস্থার কারণে নতুন প্রজন্মের শিক্ষার্থীরা দেশ মাতৃকার টানে ভাষা দিবস, স্বাধীনতা যুদ্ধে শহীদ সকল বীর সেনানীদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনসহ জাতীয় দিবসগুলো পালনে যথাযথভাবে  সুযোগ পাচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে।

জানা গেছে, উপজেলা পরিষদ এলাকায় একটি স্মৃতিসৌধ ও ডিআর উচ্চ বিদ্যালয় স্কুলের মাঠের পাশে একটি শহীদ মিনার থাকলেও উপজেলার ১৫০ প্রাথমিক বিদ্যালয়, ৩৪টি মাধ্যমিক স্কুল, ৩৬টি মাদ্রাসা ও ১৫২টি কিন্ডারগাডেনে এখনো নির্মাণ করা হয়নি শহীদ মিনার। ফলে উপজেলার এইসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রায় লক্ষাধিক শিক্ষার্থীরা প্রতিবছর জাতীয় দিবস গুলোর গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠান পালনের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে উপজেলা সদরের এসব শহীদ মিনারের শ্রদ্ধা জানাতে এসে শিক্ষার্থীরা দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন।

স্থানীয়রা অভিযোগ করে জানান, শিক্ষার্থীদের অনেকেই জানে না এই স্মৃতি স্তম্ভ¢টি তৈরির পেছনের ইতিহাস। কচিমনে দেশাত্মবোধ জাগ্রত করণের মূর্তময় এ ধরনের জাতীয় প্রতীকগুলো এখানকার অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অনুপস্থিত। শিক্ষার্থীদের মননশীলতায় ভাষার প্রতি, স্বাধীনতার প্রতি এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনার প্রতি উত্তরোত্তর শ্রদ্ধাশীলতা বৃদ্ধি পাওয়ার জন্য প্রত্যেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার স্থাপন অত্যন্ত জরুরি। অবকাঠামো উন্নয়নের পাশাপাশি জাতির ইতিহাস ঐতিহ্য ধারণকারী শহীদ মিনার নামক এ স্মৃতিস্তম্ভটি সকল প্রতিষ্ঠানে স্থাপনের দাবি জানান মুক্তিযোদ্ধাসহ এলাকার সুধীজনেরা।

এ বিষয়ে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার হারুন আর রশিদ এর সাথে কথা হলে তিনি জানান, স্বাধীনতা, ভাষা শহীদদের স্মৃতি ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষার স্মৃতিফলক শহীদ মিনার সম্পর্কে এখানকার শিক্ষার্থীদের ধারণা নামমাত্র। উপজেলার প্রত্যেকটি স্কুলে শহীদ মিনার স্থাপনের পাশাপাশি এটি সম্পর্কে শিশুদের ভাষাগত জ্ঞান ও প্রকৃত ইতিহাস তুলে ধরার প্রয়োজনীয় উদ্যোগের কথা জানান তিনি।

এ বিষয়ে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা এএনএম মাহবুব আলম জানান, এখানকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গুলোতে অনেক আগে থেকে শহীদ মিনার নেই। তাছাড়া এর জন্য সরকারি কোনো বরাদ্দও নেই। তারপরও অন্য উপজেলা ও জেলায় নিজেরা যেভাবে করেছে আমরা সে মডেলকে অনুসরণ করার চেষ্টা করব।