ঢাকা ০৫:১৫ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৩ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বাঞ্ছারামপুর উপজেলার ছাত্রলীগ কমিটির বিরুদ্ধে অসংখ্য অভিযোগ, কী বললেন ক্যা.তাজ ও কেন্দ্রীয় সভাপতি সোহাগ

ফয়সল আহমেদ খান, বাঞ্ছারামপুর (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) থেকে:

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর উপজেলা ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গতকাল ১৬ মার্চ ঘোষনা করা হয়।পুর্বের ৭১ সদস্য কমিটি বৃদ্ধি করে ১০১ সদস্য বিশিষ্ট বিশাল কমিটি ঘোষনার পর ক্ষোভে ফেটে পড়েন উপজেলার ছাত্রলীগের সদস্যরা।

গত ৪৮ ঘন্টায় শতাধিক অভিযোগ আসে বিভিন্ন সংবাদকর্মীর কাছে।নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এসব অভিযোগকারীরা জানান,‘অবিলম্বে কমিটি স্থগিত, পরিবর্তন বা বাতিল না করলে এই কাউয়্যা মার্কা কমিটি আমরা মেনে নেবো না’।

তারা জানান, তাদের নেতা ক্যা.এবি তাজুল ইসলামের ভয়ে অনেকে অভিযোগগুলো বলতে পারছেন না। তাদের ধারনা, স্থানীয় এমপি ক্যা.তাজ ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি সিরাজুল ইসলামে সম্মতি ছাড়া নিশ্চয়ই ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা  কমিটি পূর্ণাঙ্গ কমিটি পাশ করেনি। অভিযোগকারীদের বক্তব্য ক্যা.তাজুল ইসলাম এমপি (অব.) কে ভুল-ভাল বুঝিয়ে বাঞ্ছারামপুর উপজেলার নবগঠিত ছাত্রলীগের সভাপতি জুয়েলে আহমেদ এমন মনগড়া কমিটি তৈরী করিয়েছেন। তারা অভিযোগের আঙ্গুল তোলেন উপজেলা সভাপতির দিকে। এই বিষয়ে এই প্রতিবেদকের সাথে আজ (রবিবার) দুপুরে মুঠোফোনে কথা হয় বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগের সাথে।

বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ বিভিন্ন অভিযোগ প্রসঙ্গে বলেন, ‘বাঞ্ছারামপুর উপজেলা বর্তমান ছাত্রলীগের কমিটির ৩টি শীর্ষপদ আমার গড়া।তারা কোন ভুল করতেই পারে না।আমাকে অসন্মানীত করতে পারে না।আমার বিশ্বাস হয় না যে,-‘পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে কোন বিবাহিত,অছাত্র,বয়স শেষ হয়ে যাওয়া কোন সদস্য কো-অপ্ট করতে পারে’।’’

৭১ থেকে ১০১ সদস্য বিশিষ্ট বড় পরিসরে কমিটির প্রসঙ্গে বলেন,-‘১০১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি কেন করলো-তা আমি জেলা কমিটির সভাপতির সাথে কথা বলে আপনাকে আমি নিজে জানাবো।ভুল হয়ে থাকতেই পারে,মানুষ তো আর ফেরেস্তা না।যদি অমার্জনীয় কোন ভুল থাকে,সেটি সংশোধন করা যেতে পারে’।

উল্লেখ্য,গত ৩০ ডিসেম্বর কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ নিজে উপস্থিত থেকে গভীর রাতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি,সাধারন সম্পাদক,সাংগঠনিক সম্পাদক পদগুলো সই স্বাক্ষর করে তিনি নিজে নাম ঘোষনা করেন।

ছাত্রলীগ সভাপতি সোহাগ তখন বলেছিলেন,-‘বিবাহিত,অছাত্র,বয়স শেষ হয়ে যাওয়াদের কমিটিতে কোন ক্রমেই রাখা যাবে না’।সেই কারনে ছাত্রলীগের সভাপতি পদে জোর দাবীদার আতাউর রহমান সনেটের বয়স শেষ হয়ে যাওয়ার কারনে পদ বঞ্চিত হন।অনেকের ধারনা,বয়সের কারনে দীর্ঘ আন্দোলন সংগ্রামের পরীক্ষিত নেতা সনেট-ই ছিলো ছাত্রলীগ সভাপতির যোগ্য।

‘বৃহস্পতিবার ঘোষিত পূর্নাঙ্গ কমিটিতে ১৬ জন রাখা হয়েছে সহসভাপতি পদে, ১৩ জন রাখা হয়েছে সাংগঠনিক সম্পাদক।সারা বাংলাদেশে এমন একটি উপজেলার উদহারন কি আছে,যেখানে এতোগুলো পদ সৃষ্টি করা হয়?’-প্রশ্ন করেন ছাত্রলীগের কলেজ শাখার নেতা নয়ন।
ছাত্রলীগের বাঞ্ছারামপুর উপজেলা শাখার সহসভাপতি পদে থাকা সৌরভ অভিযোগ করে বলেন,-‘সাইফুর রহমান সোহাগ আমাকে ১নং সহসভাপতি পদে আসীন করে গিয়েছিলেন,কিন্তু বৃহস্পতিবার ঘোষিত কমিটিতে আমাকে রাখা হয়েছে সহসভাপতির ১৬ নং ধাপে।আমাকে অসন্মান করা হয়েছে’।

যার বিরুদ্ধে এতো অভিযোগ বর্তমান কমিটির সভাপতি সেই প্রকৌশলী জুয়েলের সাথে কথা এই নিয়ে।বাঞ্ছারামপুর উপজেলা নবগঠিত ছাত্রলীগের সভাপতি জুয়েল আহমেদ বলেন,-‘ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা ছাত্রলীগ নানা বিশ্লেষন (সামনে নির্বাচন বিধায়)করে কমিটির পরিধি বাড়িয়েছে। তারপর, আমাদের নেতা ক্যা.তাজুল ইসলাম এমপির সাথে কথা বলে এবং বিভিন্ন নাম-ধাম সব তাজ ভাই ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম দিয়েছেন।এতে আমার বিন্দু মাত্র হাত নেই’।

এদিকে,গত শনিবার বিকেলে বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনে ক্যা.তাজ অডিটোরিয়ামে সভা চলাকালে সাবেক ছাত্রলীগ সভাপতি মো.সিরাজুল ইসলাম, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মাহমুদুল হাসান ভূইয়া হাসান ছাত্রলীগের নবগঠিত কমিটি নিয়ে সমালোচনা করতে গেলে ক্ষুদ্ধ হয়ে উঠেন ক্যা.তাজ এমপি এবং উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি মো.সিরাজুল ইসলাম।তারা একটা সময় তাকে বক্তব্য থেকে সরিয়ে নেন।বক্তব্য শেষ করতে পারেন নি তারা।

ক্যা.তাজুল ইসলাম এমপির বক্তব্য : বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনে ছাত্রলীগের পূর্নাঙ্গ কমিটি নিয়ে ক্যা.তাজ এমপি স্পষ্ট করে বলেন,‘আজ এখন থেকে যারা ছাত্রলীগের ১০১ সদস্যের বিরুদ্ধে কেউ সমালোচনা করবে,তারা দলের কাছে ‘কালো তালিকাভূক্ত’ হয়ে থাকবে।দল ভাঙ্গার জন্য দায়ী হবে তারা’।

আওয়ামীলীগের সভাপতি মো.সিরাজুল ইসলাম এই প্রতিবেদককে মুঠোফোনে বলেন,-‘যে কমিটি ঘোষনা করা হয়েছে সেটি ফাইনাল।এর কোন পরিবর্তন হবে না’।উপজেলার ১৩টি ইউনিয়ন থেকে পদের আশায় যারা এতোদিন প্রতীক্ষায় ছিলেন তাদের ভঙ্গ হলে করা কিছুই নেই-জানান উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি মো.সিরাজুল ইসলাম।

ট্যাগস
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

মুরাদনগরে মাদ্রাসায় যান না পাঁচ বছর নিয়মিত বেতন তোলেন শিক্ষক

বাঞ্ছারামপুর উপজেলার ছাত্রলীগ কমিটির বিরুদ্ধে অসংখ্য অভিযোগ, কী বললেন ক্যা.তাজ ও কেন্দ্রীয় সভাপতি সোহাগ

আপডেট সময় ০১:৫৭:৩০ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৮ মার্চ ২০১৮
ফয়সল আহমেদ খান, বাঞ্ছারামপুর (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) থেকে:

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর উপজেলা ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গতকাল ১৬ মার্চ ঘোষনা করা হয়।পুর্বের ৭১ সদস্য কমিটি বৃদ্ধি করে ১০১ সদস্য বিশিষ্ট বিশাল কমিটি ঘোষনার পর ক্ষোভে ফেটে পড়েন উপজেলার ছাত্রলীগের সদস্যরা।

গত ৪৮ ঘন্টায় শতাধিক অভিযোগ আসে বিভিন্ন সংবাদকর্মীর কাছে।নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এসব অভিযোগকারীরা জানান,‘অবিলম্বে কমিটি স্থগিত, পরিবর্তন বা বাতিল না করলে এই কাউয়্যা মার্কা কমিটি আমরা মেনে নেবো না’।

তারা জানান, তাদের নেতা ক্যা.এবি তাজুল ইসলামের ভয়ে অনেকে অভিযোগগুলো বলতে পারছেন না। তাদের ধারনা, স্থানীয় এমপি ক্যা.তাজ ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি সিরাজুল ইসলামে সম্মতি ছাড়া নিশ্চয়ই ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা  কমিটি পূর্ণাঙ্গ কমিটি পাশ করেনি। অভিযোগকারীদের বক্তব্য ক্যা.তাজুল ইসলাম এমপি (অব.) কে ভুল-ভাল বুঝিয়ে বাঞ্ছারামপুর উপজেলার নবগঠিত ছাত্রলীগের সভাপতি জুয়েলে আহমেদ এমন মনগড়া কমিটি তৈরী করিয়েছেন। তারা অভিযোগের আঙ্গুল তোলেন উপজেলা সভাপতির দিকে। এই বিষয়ে এই প্রতিবেদকের সাথে আজ (রবিবার) দুপুরে মুঠোফোনে কথা হয় বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগের সাথে।

বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ বিভিন্ন অভিযোগ প্রসঙ্গে বলেন, ‘বাঞ্ছারামপুর উপজেলা বর্তমান ছাত্রলীগের কমিটির ৩টি শীর্ষপদ আমার গড়া।তারা কোন ভুল করতেই পারে না।আমাকে অসন্মানীত করতে পারে না।আমার বিশ্বাস হয় না যে,-‘পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে কোন বিবাহিত,অছাত্র,বয়স শেষ হয়ে যাওয়া কোন সদস্য কো-অপ্ট করতে পারে’।’’

৭১ থেকে ১০১ সদস্য বিশিষ্ট বড় পরিসরে কমিটির প্রসঙ্গে বলেন,-‘১০১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি কেন করলো-তা আমি জেলা কমিটির সভাপতির সাথে কথা বলে আপনাকে আমি নিজে জানাবো।ভুল হয়ে থাকতেই পারে,মানুষ তো আর ফেরেস্তা না।যদি অমার্জনীয় কোন ভুল থাকে,সেটি সংশোধন করা যেতে পারে’।

উল্লেখ্য,গত ৩০ ডিসেম্বর কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ নিজে উপস্থিত থেকে গভীর রাতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি,সাধারন সম্পাদক,সাংগঠনিক সম্পাদক পদগুলো সই স্বাক্ষর করে তিনি নিজে নাম ঘোষনা করেন।

ছাত্রলীগ সভাপতি সোহাগ তখন বলেছিলেন,-‘বিবাহিত,অছাত্র,বয়স শেষ হয়ে যাওয়াদের কমিটিতে কোন ক্রমেই রাখা যাবে না’।সেই কারনে ছাত্রলীগের সভাপতি পদে জোর দাবীদার আতাউর রহমান সনেটের বয়স শেষ হয়ে যাওয়ার কারনে পদ বঞ্চিত হন।অনেকের ধারনা,বয়সের কারনে দীর্ঘ আন্দোলন সংগ্রামের পরীক্ষিত নেতা সনেট-ই ছিলো ছাত্রলীগ সভাপতির যোগ্য।

‘বৃহস্পতিবার ঘোষিত পূর্নাঙ্গ কমিটিতে ১৬ জন রাখা হয়েছে সহসভাপতি পদে, ১৩ জন রাখা হয়েছে সাংগঠনিক সম্পাদক।সারা বাংলাদেশে এমন একটি উপজেলার উদহারন কি আছে,যেখানে এতোগুলো পদ সৃষ্টি করা হয়?’-প্রশ্ন করেন ছাত্রলীগের কলেজ শাখার নেতা নয়ন।
ছাত্রলীগের বাঞ্ছারামপুর উপজেলা শাখার সহসভাপতি পদে থাকা সৌরভ অভিযোগ করে বলেন,-‘সাইফুর রহমান সোহাগ আমাকে ১নং সহসভাপতি পদে আসীন করে গিয়েছিলেন,কিন্তু বৃহস্পতিবার ঘোষিত কমিটিতে আমাকে রাখা হয়েছে সহসভাপতির ১৬ নং ধাপে।আমাকে অসন্মান করা হয়েছে’।

যার বিরুদ্ধে এতো অভিযোগ বর্তমান কমিটির সভাপতি সেই প্রকৌশলী জুয়েলের সাথে কথা এই নিয়ে।বাঞ্ছারামপুর উপজেলা নবগঠিত ছাত্রলীগের সভাপতি জুয়েল আহমেদ বলেন,-‘ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা ছাত্রলীগ নানা বিশ্লেষন (সামনে নির্বাচন বিধায়)করে কমিটির পরিধি বাড়িয়েছে। তারপর, আমাদের নেতা ক্যা.তাজুল ইসলাম এমপির সাথে কথা বলে এবং বিভিন্ন নাম-ধাম সব তাজ ভাই ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম দিয়েছেন।এতে আমার বিন্দু মাত্র হাত নেই’।

এদিকে,গত শনিবার বিকেলে বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনে ক্যা.তাজ অডিটোরিয়ামে সভা চলাকালে সাবেক ছাত্রলীগ সভাপতি মো.সিরাজুল ইসলাম, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মাহমুদুল হাসান ভূইয়া হাসান ছাত্রলীগের নবগঠিত কমিটি নিয়ে সমালোচনা করতে গেলে ক্ষুদ্ধ হয়ে উঠেন ক্যা.তাজ এমপি এবং উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি মো.সিরাজুল ইসলাম।তারা একটা সময় তাকে বক্তব্য থেকে সরিয়ে নেন।বক্তব্য শেষ করতে পারেন নি তারা।

ক্যা.তাজুল ইসলাম এমপির বক্তব্য : বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনে ছাত্রলীগের পূর্নাঙ্গ কমিটি নিয়ে ক্যা.তাজ এমপি স্পষ্ট করে বলেন,‘আজ এখন থেকে যারা ছাত্রলীগের ১০১ সদস্যের বিরুদ্ধে কেউ সমালোচনা করবে,তারা দলের কাছে ‘কালো তালিকাভূক্ত’ হয়ে থাকবে।দল ভাঙ্গার জন্য দায়ী হবে তারা’।

আওয়ামীলীগের সভাপতি মো.সিরাজুল ইসলাম এই প্রতিবেদককে মুঠোফোনে বলেন,-‘যে কমিটি ঘোষনা করা হয়েছে সেটি ফাইনাল।এর কোন পরিবর্তন হবে না’।উপজেলার ১৩টি ইউনিয়ন থেকে পদের আশায় যারা এতোদিন প্রতীক্ষায় ছিলেন তাদের ভঙ্গ হলে করা কিছুই নেই-জানান উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি মো.সিরাজুল ইসলাম।