খেলাধূলা ডেস্কঃ
শ্রীলংকায় নিদাহাস ট্রফি ত্রিদেশীয় টি-২০ সিরিজের তীব্র উত্তেজনাকর ফাইনালে জয়ের স্বপ্ন দেখিয়েও ক্রিকেট সুপার পাওয়ার ভারতের কাছে ৪ উইকেটে হেরে গেছে বাংলাদেশ। শিরোপা জয়ের এতো কাছে এসেও স্বপ্নভঙ্গের বেদনায় ডুবলো টাইগাররা। কলম্বোতে টানটান উত্তেজনাপূর্ণ শ্বাসরুদ্ধকর ফাইনালের শেষ বলে ছক্কা হাঁকিয়ে ভারতকে ত্রিদেশীয় টি-২০ সিরিজের শিরোপা এনে দেয়ার নায়ক দিনেশ কার্তিক। শেষদিকের নাটকীয়তায় অবিশ্বাস্য ব্যাটিংয়ে ১৬৭ রানের টার্গেট অতিক্রম করান অভিজ্ঞ কার্তিক। ২টি ৪ ও ৩টি ছক্কায় খেলেন ৮ বলে ২৯ রানের অপরাজিত ইনিংস। ১৮তম ওভারে মাত্র ১ রান দিয়ে মানিশ পান্ডের (২৮) উইকেট তুলে নেন মোস্তাফিজুর রহমান। জয় থেকে তখন ৩৪ রান দূরে টিম ইন্ডিয়া। হাতে ১২ বল। ক্রিজে আসেন কার্তিক। আগের ৩ ওভারে ১৩ রান দিয়ে ২ উইকেট নেয়া রুবেল হোসেনের করা ১৯তম ওভারে ২২ রান নিয়ে ম্যাচের গতিপথ বদলে দেন তিনি।
শেষ ওভারে প্রয়োজন ছিল ১২। সৌম্য সরকারের করা পঞ্চম বলে লংঅনে সতীর্থের মুখোমুখি হয়ে বিজয় শংকরের (১৭) ক্যাচ ছাড়ার উপক্রম হলেও শেষপর্যন্ত তালুবন্দি করেন মিরাজ। দিক বদল করে স্ট্রাইকে চলে আসেন কার্তিক। জয়ের জন্য চাই ১ বলে ৫ রান। কাভারের উপর দিয়ে চোখ ধাঁধানো শটে বাউন্ডারি পার করে সতীর্থদের বাঁধভাঙা উল্লাসের মধ্যমণি বনে যান কার্তিক। হতাশার সাগরে ডুব দেয় বাংলাদেশ। টাইগারদের ত্রিদেশীয় সিরিজ জয়ের অধরা স্বপ্নপূরণের অপেক্ষাটাও বাড়লো।
এই সিরিজ থেকে বাংলাদেশের প্রাপ্তি-অর্জন কম নয়। স্বাগতিক শ্রীলঙ্কাকে রাউন্ড রবিন পর্বের দুই ম্যাচেই হারিয়ে ফাইনালের টিকিট কাটে লাল-সবুজের জার্সিধারীরা। ভারতের জিততে জিততেও জেতা হলো না চ্যাম্পিয়নের মুকুট। টিম ইন্ডিয়ার বিপক্ষে আটটি টি-টোয়েন্টি ম্যাচেই সঙ্গী হলো হারের হতাশা আর আক্ষেপ। বিরাট কোহলি, মহেন্দ্র সিং ধোনি, হার্দিক পান্ডে, ভুববেশ্বর কুমার ও জাসপ্রিত বুমরাহকে ছাড়াই শ্রীলঙ্কার মাটি জয় করলো রোহিত শর্মার দল। ফাইনালের মঞ্চে ৫৬ রান করে আউট হন রোহিত। শিখর ধাওয়ান ১০, সুরেশ রায়না (০), লোকেশ রাহুল ২৪ রানে সাজঘরের পথ ধরেন। ৬ উইকেট হারিয়ে নাটকীয় জয়।
এর আগে সাব্বির রহমানের ৫০ বলে ৭৭ রানের সুবাদে নিদাহাস ট্রফি ত্রিদেশীয় টি-২০ সিরিজে ফাইনালে ভারতের বিপক্ষে টস হেরে প্রথমে ব্যাটিং করে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৮ উইকেটে ১৬৬ রান করেছে বাংলাদেশ। জবাবে ব্যাট করতে নেমে শেষ বলে নাটকীয়ভাবে ছক্কা মেরে দলকে জয় এনে দেন দিনেশ কার্তিক। ফলে ৬ উইকেট হারিয়ে লক্ষ্যে পৌঁছে যায় ভারত। তার আগে রোববার শ্রীলংকার কলম্বোর আর প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামের ফাইনালে টস জিতে প্রথমে ফিল্ডিং করার সিদ্বান্ত নেয় ভারত। ব্যাটিংয়ে নেমে ভালো শুরুর ইঙ্গিত দিয়েছিলেন বাংলাদেশের ২ ওপেনার তামিম ইকবাল ও লিটন দাস। উদ্বোধনী জুটিতে ২৭ রান যোগ করেন তারা। এরপরই বিচ্ছিন্ন হন তারা। ১১ রানে থাকা লিটনকে ফিরিয়ে ভারতকে প্রথম ব্রেক-থ্রু এনে দেন অফ-স্পিনার ওয়াশিংটন সুন্দর।
লিটন ফিরে যাবার ৬ বল পর বিদায় ঘটে আরেক ওপেনার তামিমেরও। ১৩ বলে ১৫ রান করে আউট হন তামিম। ২৭ রানেই পরপর দু’উইকেট হারিয়ে চিন্তায় পড়ে যায় বাংলাদেশ। সেই চিন্তা আরও বাড়িয়ে দেন চার নম্বরে নামা সৌম্য সরকার। ২ বল মোকাবেলা করে ১ রান করে সৌম্য ফিরে গেলে বাংলাদেশের সংগ্রহ দাঁড়ায় ৩ উইকেটে ৩৩।
এমন অবস্থায় বাংলাদেশকে খেলায় ফেরানোর চেষ্টা করেন তিন নম্বরে নামা সাব্বির রহমান ও মুশিফকুর রহিম। দেখেশুনে খেলতে থাকেন তারা। তবে দলের স্কোরটা বেশি দূর নিতে পারেননি সাব্বির ও মুশফিক। ৩১ বলে ৩৫ রানের জুটি গড়েন তারা। এর মধ্যে ৯ রান অবদান রেখে থেমে যান মুশফিকুর।
দলীয় ৬৮ রানে চতুর্থ উইকেট হারানোর পর আবারো বড় জুটি গড়ার চেষ্টা করে বাংলাদেশ। সাব্বির ও মাহমুদুল্লাহ জুটিতে শতরানের কোটা পেরিয়ে যায় টাইগাররা। কিন্তু বাংলাদেশের স্কোর তিন অংকে পৌঁছানোর পরই থামতে হয় মাহমুদুল্লাহকে। সাব্বিরের সাথে ভুল বুঝাবুঝিতে রান আউট হন মাহমুদুল্লাহ। ১৬ বলে ২১ রান করেন তিনি। সাব্বিরের সাথে ৩৬ রান যোগ করেন মাহমুদুল্লাহ।
মাহমুদুল্লাহর মতো রান আউট হয়েছেন সাকিবও। ৭ বলে ৭ রান করেন টাইগার দলপতি। জুটিতে ২৯ রান আসার পর বিচ্ছিন্ন হন তারা। এরমধ্যে ২২ রানই ছিলো সাব্বিরের। এর মধ্যেই টি-২০ ক্যারিয়ারের চতুর্থ হাফ-সেঞ্চুরির স্বাদ নেন সাব্বির। শেষ পর্যন্ত ৫০ বলে ৭৭ রান করেন তিনি। তার ইনিংসে ৭টি চার ও ৪টি ছক্কা ছিলো। শেষের দিকে মেহেদি হাসান মিরাজের ৭ বলে অপরাজিত ১৯ রানে ২০ ওভারে ৮ উইকেটে ১৬৬ রান করে বাংলাদেশ। ভারতের পক্ষে চাহাল ৩টি উইকেট নেন।