ঢাকা ১১:২৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৩ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

খালেদার অসুস্থতা নিয়ে সরকারকে সন্দেহ করছে বিএনপি

জাতীয় ডেস্কঃ

কারাগারে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার অসুস্থতার বিষয়টিকে বিএনপি ‘স্বাভাবিকভাবে’ নিতে পারছেন না বলে জানিয়েছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

সরাসরি সরকারের দিকে সন্দেহের আঙুল তুলে তিনি বলেছেন, ‘অন্যান্য স্বৈরাচাররা যেভাবে প্রতিপক্ষকে অপসারণ করার চেষ্টা করেন, সেই ধরনের অপসারণ করার চেষ্টা এখানে হতে পারে বলে আমি আশঙ্কা করি।’

দুর্নীতির দায়ে কারাবন্দি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ‘অসুস্থতার কারণে’ তার সঙ্গে সাক্ষাৎ স্থগিত হয়ে যাওয়ার পরদিন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুলের এমন বক্তব্য এল।

শুক্রবার ঢাকার নয়া পল্টনে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে ফখরুল বলেন, ‘আমরা তার (খালেদা জিয়া) স্বাস্থ্য নিয়ে উদ্বিগ্ন-উৎকণ্ঠিত। সেজন্য অতি দ্রুত তার ব্যক্তিগত চিকিৎসকদের দিয়ে স্বাস্থ্য পরীক্ষা এবং উন্নত চিকিৎসার জন্য মুক্তি দিয়ে সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করতে সরকারের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি।’

মির্জা ফখরুলের ভাষায়, ‘কারাগারে যে পরিবেশে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে রাখা হয়েছে, তা তার ‘প্রাপ্য নয়’। তাতে তার স্বাস্থ্যের অবস্থা অবনতির দিতে যাচ্ছে বলেই আমরা আশঙ্কা করছি। তার যে খাবারটা দেওয়া হয় সেটা সঠিকভাবে পরীক্ষা করা হয় কিনা আমরা বলতে পারি না। সরকারের উচিৎ বিষয়টা খোলাসা করা।’

তিনি বলেন, ‘এই সরকারের অধীনে দেশনেত্রী নিরাপদ নন। তার কারারুদ্ধ অবস্থায় অসুস্থ হওয়াটাকে কোনো মতেই আমরা স্বাভাবিকভাবে মেনে নিতে পারি না।’

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতারা তাদের নেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টার জন্য বিএনপি নেতৃত্বকে দায়ী করে থাকে।

২০০৪ সালের ২১ অগাস্ট বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে গ্রেনেড হামলার ঘটনায় দায়ের করা মামলায় তখনকার প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার বড় ছেলে তারেক রহমানও অন্যতম অভিযুক্ত আসামি।

গত ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া এতিমখানা ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় ৫ বছরে সাজায় রায়ের পর থেকে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে রাখা হয়েছে ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডের পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারে।

হাই কোর্ট তাকে এ মামলায় চার মাসের জামিন দিলেও দুদক ও রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনে ওই আদেশ আপিল বিভাগে আটকে গেছে।

এই পরিস্থিতিতে বৃহস্পতিবার কারাগারে গিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসনের সঙ্গে মির্জা ফখরুলের দেখা করার কথা থাকলেও পরে তা স্থগিত করা হয়।

বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়, খালেদা জিয়া হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েছেন বলে কারা কর্তৃপক্ষ তাদের জানিয়েছে। তবে ফখরুলের সাক্ষাৎ স্থগিত বা খালেদার অসুস্থতার বিষয়ে কারা কর্তৃপক্ষের আনুষ্ঠানিক কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

আইনজীবীরা এর আগে বিভিন্ন সময়ে আদালতকে বলেছেন, ৭৩ বছর বয়সী খালেদা জিয়ার হৃদযন্ত্র, চোখ ও হাঁটুর সমস্যা রয়েছে। চিকিৎসকদের পরামর্শে তাকে নানা রকম ওষুধ খেতে হয় নিয়মিত। খাবারও বেছে খেতে হয় তাকে।

খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করতে তার ব্যক্তিগত চিকিৎসকরা কয়েকবার কারাগারে গেলেও কারাফটক থেকে তাদের ফেরত আসতে হয়। কারা কর্মকর্তারা তাদের বলেন, প্রয়োজন হলে তারাই খবর দেবেন।

সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমাদের সুস্পষ্ট প্রস্তাব হচ্ছে- অবিলম্বে তার ব্যক্তিগত চিকিৎসকদের তার স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য ব্যবস্থা করতে হবে এবং তাদের সুপারিশ অনুযায়ী পবরর্তী চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে।’

তিনি আবারও অভিযোগ করেন, খালেদা জিয়াকে রাজনীতি থেকে ‘দূরে সরিয়ে দেয়ার জন্য’ সরকার ‘মিথ্যা মামলায়’ সাজা দিয়ে তাকে কারাগারে রেখেছে;  ‘জামিন ঠেকাতে’ চেষ্টা করছে।

তার ভাষায়, ‘সরকারের উদ্দেশ্য একটাই, বিরোধী দলকে স্তব্ধ করে দেয়া এবং দেশের জনপ্রিয় নেত্রীকে রাজনীতি থেকে দূরে রাখা। নীল নকশার একদলীয় শাসনব্যবস্থা তারা নিরঙ্কুশ করতে চায়। আজকে বিশ্বে স্বীকৃত হয়েছে, বাংলাদেশে একটা স্বৈরাচার সরকার রয়েছে।’

মুক্তি পেলে উন্নত চিকিৎসার জন্য খালেদা জিয়াকে বিদেশে পাঠানো হবে কিনা- এমন প্রশ্নে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আমরা সুনির্দিষ্টভাবে বলেছি আমরা এখন তার নিঃশর্ত মুক্তি চাই, যাতে তার উন্নত চিকিৎসার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা দেশে হোক বিদেশে হোক আমরা করতে পারি।’

যেহেতু খালেদা জিয়া এর আগে দেশের বাইরেও চিকিৎসা করিয়েছেন, সেহেতু মুক্তি পেলে তিনিই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন বলে জানান ফখরুল।

বিএনপি প্যারোলে খালেদা জিয়ার মুক্তি চাইছে কি-না এ প্রশ্নে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আমরা প্যারোলে মুক্তির কথা বলিনি। আমরা বলেছি তাকে মুক্তি দিতে হবে। মুক্তি তো তার প্রাপ্য। উনার জামিন হয়ে গেছে ইতোমধ্যে। এখন তাকে মুক্তি দেয়া যেতে পারে। মুক্তি পেয়ে তিনি দেশে হোক, বিদেশে হোক চিকিৎসা নেবেন।’

খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ স্থগিত হওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমরা আবার সাক্ষাৎ চাইব। কিন্তু তারা এখন কাউকে সাক্ষাৎ করতে দিচ্ছেন না।’

নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলনে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মওদুদ আহমদ, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য মামুন আহমেদ ও জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী উপস্থিত ছিলেন।

ট্যাগস
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

মুরাদনগরে মাদ্রাসায় যান না পাঁচ বছর নিয়মিত বেতন তোলেন শিক্ষক

খালেদার অসুস্থতা নিয়ে সরকারকে সন্দেহ করছে বিএনপি

আপডেট সময় ০২:৪৪:১৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৩০ মার্চ ২০১৮
জাতীয় ডেস্কঃ

কারাগারে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার অসুস্থতার বিষয়টিকে বিএনপি ‘স্বাভাবিকভাবে’ নিতে পারছেন না বলে জানিয়েছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

সরাসরি সরকারের দিকে সন্দেহের আঙুল তুলে তিনি বলেছেন, ‘অন্যান্য স্বৈরাচাররা যেভাবে প্রতিপক্ষকে অপসারণ করার চেষ্টা করেন, সেই ধরনের অপসারণ করার চেষ্টা এখানে হতে পারে বলে আমি আশঙ্কা করি।’

দুর্নীতির দায়ে কারাবন্দি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ‘অসুস্থতার কারণে’ তার সঙ্গে সাক্ষাৎ স্থগিত হয়ে যাওয়ার পরদিন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুলের এমন বক্তব্য এল।

শুক্রবার ঢাকার নয়া পল্টনে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে ফখরুল বলেন, ‘আমরা তার (খালেদা জিয়া) স্বাস্থ্য নিয়ে উদ্বিগ্ন-উৎকণ্ঠিত। সেজন্য অতি দ্রুত তার ব্যক্তিগত চিকিৎসকদের দিয়ে স্বাস্থ্য পরীক্ষা এবং উন্নত চিকিৎসার জন্য মুক্তি দিয়ে সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করতে সরকারের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি।’

মির্জা ফখরুলের ভাষায়, ‘কারাগারে যে পরিবেশে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে রাখা হয়েছে, তা তার ‘প্রাপ্য নয়’। তাতে তার স্বাস্থ্যের অবস্থা অবনতির দিতে যাচ্ছে বলেই আমরা আশঙ্কা করছি। তার যে খাবারটা দেওয়া হয় সেটা সঠিকভাবে পরীক্ষা করা হয় কিনা আমরা বলতে পারি না। সরকারের উচিৎ বিষয়টা খোলাসা করা।’

তিনি বলেন, ‘এই সরকারের অধীনে দেশনেত্রী নিরাপদ নন। তার কারারুদ্ধ অবস্থায় অসুস্থ হওয়াটাকে কোনো মতেই আমরা স্বাভাবিকভাবে মেনে নিতে পারি না।’

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতারা তাদের নেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টার জন্য বিএনপি নেতৃত্বকে দায়ী করে থাকে।

২০০৪ সালের ২১ অগাস্ট বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে গ্রেনেড হামলার ঘটনায় দায়ের করা মামলায় তখনকার প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার বড় ছেলে তারেক রহমানও অন্যতম অভিযুক্ত আসামি।

গত ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া এতিমখানা ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় ৫ বছরে সাজায় রায়ের পর থেকে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে রাখা হয়েছে ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডের পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারে।

হাই কোর্ট তাকে এ মামলায় চার মাসের জামিন দিলেও দুদক ও রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনে ওই আদেশ আপিল বিভাগে আটকে গেছে।

এই পরিস্থিতিতে বৃহস্পতিবার কারাগারে গিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসনের সঙ্গে মির্জা ফখরুলের দেখা করার কথা থাকলেও পরে তা স্থগিত করা হয়।

বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়, খালেদা জিয়া হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েছেন বলে কারা কর্তৃপক্ষ তাদের জানিয়েছে। তবে ফখরুলের সাক্ষাৎ স্থগিত বা খালেদার অসুস্থতার বিষয়ে কারা কর্তৃপক্ষের আনুষ্ঠানিক কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

আইনজীবীরা এর আগে বিভিন্ন সময়ে আদালতকে বলেছেন, ৭৩ বছর বয়সী খালেদা জিয়ার হৃদযন্ত্র, চোখ ও হাঁটুর সমস্যা রয়েছে। চিকিৎসকদের পরামর্শে তাকে নানা রকম ওষুধ খেতে হয় নিয়মিত। খাবারও বেছে খেতে হয় তাকে।

খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করতে তার ব্যক্তিগত চিকিৎসকরা কয়েকবার কারাগারে গেলেও কারাফটক থেকে তাদের ফেরত আসতে হয়। কারা কর্মকর্তারা তাদের বলেন, প্রয়োজন হলে তারাই খবর দেবেন।

সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমাদের সুস্পষ্ট প্রস্তাব হচ্ছে- অবিলম্বে তার ব্যক্তিগত চিকিৎসকদের তার স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য ব্যবস্থা করতে হবে এবং তাদের সুপারিশ অনুযায়ী পবরর্তী চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে।’

তিনি আবারও অভিযোগ করেন, খালেদা জিয়াকে রাজনীতি থেকে ‘দূরে সরিয়ে দেয়ার জন্য’ সরকার ‘মিথ্যা মামলায়’ সাজা দিয়ে তাকে কারাগারে রেখেছে;  ‘জামিন ঠেকাতে’ চেষ্টা করছে।

তার ভাষায়, ‘সরকারের উদ্দেশ্য একটাই, বিরোধী দলকে স্তব্ধ করে দেয়া এবং দেশের জনপ্রিয় নেত্রীকে রাজনীতি থেকে দূরে রাখা। নীল নকশার একদলীয় শাসনব্যবস্থা তারা নিরঙ্কুশ করতে চায়। আজকে বিশ্বে স্বীকৃত হয়েছে, বাংলাদেশে একটা স্বৈরাচার সরকার রয়েছে।’

মুক্তি পেলে উন্নত চিকিৎসার জন্য খালেদা জিয়াকে বিদেশে পাঠানো হবে কিনা- এমন প্রশ্নে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আমরা সুনির্দিষ্টভাবে বলেছি আমরা এখন তার নিঃশর্ত মুক্তি চাই, যাতে তার উন্নত চিকিৎসার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা দেশে হোক বিদেশে হোক আমরা করতে পারি।’

যেহেতু খালেদা জিয়া এর আগে দেশের বাইরেও চিকিৎসা করিয়েছেন, সেহেতু মুক্তি পেলে তিনিই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন বলে জানান ফখরুল।

বিএনপি প্যারোলে খালেদা জিয়ার মুক্তি চাইছে কি-না এ প্রশ্নে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আমরা প্যারোলে মুক্তির কথা বলিনি। আমরা বলেছি তাকে মুক্তি দিতে হবে। মুক্তি তো তার প্রাপ্য। উনার জামিন হয়ে গেছে ইতোমধ্যে। এখন তাকে মুক্তি দেয়া যেতে পারে। মুক্তি পেয়ে তিনি দেশে হোক, বিদেশে হোক চিকিৎসা নেবেন।’

খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ স্থগিত হওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমরা আবার সাক্ষাৎ চাইব। কিন্তু তারা এখন কাউকে সাক্ষাৎ করতে দিচ্ছেন না।’

নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলনে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মওদুদ আহমদ, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য মামুন আহমেদ ও জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী উপস্থিত ছিলেন।