ঢাকা ০৯:২৬ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৪ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বাঞ্ছারামপুরের নারী উদ্যোক্তারা ঋণ না পেয়ে সর্বস্বান্ত সুদের বেড়াজালে

ফয়সল আহমেদ খান,বাঞ্ছারামপুর (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) থেকেঃ

এনজিও ও দাদন ব্যবসায়ীদের ঋণের জালে জড়িয়ে শত-শত পরিবার সর্বস্বান্ত হয়েপড়েছে বাঞ্ছারামপুরের নারী উদ্যোক্তারা। সামাজিক অর্থনৈতিক উন্নয়নের নামে তারা হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা। জানা গেছে, বাঞ্ছারামপুর উপজেলায় এনজিওগুলোর হাতে সামাজিক উন্নয়ন কর্মকান্ড, বয়স্ক শিক্ষা, শিশু শিক্ষা, বনায়ন, গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগি পালন, নার্সারি, স্যানিটেশন, বিশুদ্ধ পানি সরবরাহসহ নানা কর্মসূচি থাকলেও মূলত সুদের ব্যবসাই তাদের প্রধান কাজ। প্রথম পর্যায়ে এনজিওর কর্মীরা সহজ শর্তে ঋণ দেয়ার আশ্বাস দিয়ে দরিদ্র পরিবারের নারীদের সমিতির সদস্য বানিয়ে প্রথমে ৩ থেকে ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত ঋণ দেয়। তারা সদস্যদের হাঁস-মুরগি পালন অথবা গরু-ছাগল পালনের জন্য ঋণ ফরমে স্বাক্ষর করালেও আদৌ তারা তা বাস্তবায়ন হচ্ছে কিনা তা তদারকি করে দেখেন না।

অপরদিকে, এনজিওর নিয়ম অনুযায়ী ঋণের টাকা খাটিয়ে তার আয় থেকে কিস্তির টাকা আদায়ের কথা থাকলেও ঋণ প্রদানের পরের সপ্তাহ থেকে কিস্তির টাকা আদায় করে থাকে। এ ঋণের সুদের হার ব্যাংকের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি। গ্রামের হতদরিদ্র নারীরা জানান, প্রতি সপ্তাহে কিস্তির টাকা শোধ করতে ব্যর্থ হলে এনজিও কর্মীদের অশালীন ভাষায় গালিগালাজসহ সংসারের আসবাবপত্র থেকে শুরু করে হাঁস-মুরগি এমন কী ঘরের টিন পর্যন্ত খুলে নেয়ার জন্য টানাটানি শুরু করে দেয়। এ অবস্থায় এক সংস্থার ঋণের টাকা পরিশোধ করতে একাধিক এনজিওর ঋণের জালে জড়িয়ে পড়ছে সহজ সরল মানুষ। অপরদিকে কিছু অসাধু ব্যক্তি শতকরা ২০ টাকা হারে প্রকাশ্যে সুদের ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। মহাজনরা ঋণের টাকা আদায় করতে না পারলে ভিটা বাড়ি পর্যন্ত নিয়ে নিচ্ছে।

এদিকে,নারী উদ্যোক্তাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে-তারা বিভিন্ন যেমন সোনালী, জনতা, কৃষি, অগ্রনী এবং বেসরকারি পর্যায়ে ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক (ইউসিবিএল),ব্র্যাক ব্যাংক, ব্যাংক এশিয়া,ন্যাশনাল ব্যাংক কোথাও দরিদ্রদের জন্য ক্ষুদ্র ঋণ দেয়া হয়না।বাঞ্ছারামপুর সদর উপজেলার নারী উদ্যোক্তা ছালমা বেগম বলেন,-‘আমি ব্র্যাক ব্যাংকে গিয়েছিলাম ৪ লাখ টাকা ঋণের জন্য।তারা আমাকেঅসমর্থবান,নানান কাগজাদি,গ্যারান্টার,লাখ টাকার লেনদেন থাকার নিয়মাদি দেখিয়ে শেষ পর্যন্ত ঋণ না দেয়ায় উচ্চ লাভে দাদন ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে নিতে বাধ্য হই।’

অভিযোগ নিয়ে কথা বললে আজ মঙ্গলবার বিকেলে ব্র্যাক ব্যাংকের বাঞ্ছারামপুর জোনাল শাখার ম্যানেজার ফারুক আহমেদ বলেন,‘আমরা নারী, শিক্ষক, সাংবাদিক, পুলিশ এবং উকিলদের কোন প্রকার ঋণ দেই না’।

এ বিষয়ে বাঞ্ছারামপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো.শরিফুল ইসলামকে জানালে তিনি ব্র্যাক ব্যাংকের কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে এই প্রতিনিধিকে জানান-‘বাঞ্ছারামপুর উপজেলা শাখা দেশের মধ্যে ব্যতিক্রম হয়তোবা।তাদের পলিসির মধ্যেই আছে নারী,সাংবাদিক,পুলিশদের ব্যবসা করার জন্য ঋণ না দিলে কি করার আছে!!”

অন্যদিকে,সোনালী,জনতা,ইসলামী,কৃষি ব্যাংক কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বললে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপকগন ভিন্নভিন্নভাবে জানান,-এখানে কোন শিল্প কারখানা নেই।কি খাতে সি.সি লোন দিবো? কাগজপত্র ঠিক নেই।একটা মিললে আরেকটা মিলে না।সে জন্য সুযোগ থাকা সত্বেও নারীরা ঋণ পাচ্ছেন না।

জানা গেছে,ইসলামী ব্যাংক সমস্ত বিনিয়োগ স্থগিত করেছে।একই অবস্থা সোনালী-অগ্রনী ব্যাংকেও।

ট্যাগস
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

মুরাদনগরে মাদ্রাসায় যান না পাঁচ বছর নিয়মিত বেতন তোলেন শিক্ষক

বাঞ্ছারামপুরের নারী উদ্যোক্তারা ঋণ না পেয়ে সর্বস্বান্ত সুদের বেড়াজালে

আপডেট সময় ০২:৩৩:২৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৪ এপ্রিল ২০১৮
ফয়সল আহমেদ খান,বাঞ্ছারামপুর (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) থেকেঃ

এনজিও ও দাদন ব্যবসায়ীদের ঋণের জালে জড়িয়ে শত-শত পরিবার সর্বস্বান্ত হয়েপড়েছে বাঞ্ছারামপুরের নারী উদ্যোক্তারা। সামাজিক অর্থনৈতিক উন্নয়নের নামে তারা হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা। জানা গেছে, বাঞ্ছারামপুর উপজেলায় এনজিওগুলোর হাতে সামাজিক উন্নয়ন কর্মকান্ড, বয়স্ক শিক্ষা, শিশু শিক্ষা, বনায়ন, গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগি পালন, নার্সারি, স্যানিটেশন, বিশুদ্ধ পানি সরবরাহসহ নানা কর্মসূচি থাকলেও মূলত সুদের ব্যবসাই তাদের প্রধান কাজ। প্রথম পর্যায়ে এনজিওর কর্মীরা সহজ শর্তে ঋণ দেয়ার আশ্বাস দিয়ে দরিদ্র পরিবারের নারীদের সমিতির সদস্য বানিয়ে প্রথমে ৩ থেকে ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত ঋণ দেয়। তারা সদস্যদের হাঁস-মুরগি পালন অথবা গরু-ছাগল পালনের জন্য ঋণ ফরমে স্বাক্ষর করালেও আদৌ তারা তা বাস্তবায়ন হচ্ছে কিনা তা তদারকি করে দেখেন না।

অপরদিকে, এনজিওর নিয়ম অনুযায়ী ঋণের টাকা খাটিয়ে তার আয় থেকে কিস্তির টাকা আদায়ের কথা থাকলেও ঋণ প্রদানের পরের সপ্তাহ থেকে কিস্তির টাকা আদায় করে থাকে। এ ঋণের সুদের হার ব্যাংকের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি। গ্রামের হতদরিদ্র নারীরা জানান, প্রতি সপ্তাহে কিস্তির টাকা শোধ করতে ব্যর্থ হলে এনজিও কর্মীদের অশালীন ভাষায় গালিগালাজসহ সংসারের আসবাবপত্র থেকে শুরু করে হাঁস-মুরগি এমন কী ঘরের টিন পর্যন্ত খুলে নেয়ার জন্য টানাটানি শুরু করে দেয়। এ অবস্থায় এক সংস্থার ঋণের টাকা পরিশোধ করতে একাধিক এনজিওর ঋণের জালে জড়িয়ে পড়ছে সহজ সরল মানুষ। অপরদিকে কিছু অসাধু ব্যক্তি শতকরা ২০ টাকা হারে প্রকাশ্যে সুদের ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। মহাজনরা ঋণের টাকা আদায় করতে না পারলে ভিটা বাড়ি পর্যন্ত নিয়ে নিচ্ছে।

এদিকে,নারী উদ্যোক্তাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে-তারা বিভিন্ন যেমন সোনালী, জনতা, কৃষি, অগ্রনী এবং বেসরকারি পর্যায়ে ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক (ইউসিবিএল),ব্র্যাক ব্যাংক, ব্যাংক এশিয়া,ন্যাশনাল ব্যাংক কোথাও দরিদ্রদের জন্য ক্ষুদ্র ঋণ দেয়া হয়না।বাঞ্ছারামপুর সদর উপজেলার নারী উদ্যোক্তা ছালমা বেগম বলেন,-‘আমি ব্র্যাক ব্যাংকে গিয়েছিলাম ৪ লাখ টাকা ঋণের জন্য।তারা আমাকেঅসমর্থবান,নানান কাগজাদি,গ্যারান্টার,লাখ টাকার লেনদেন থাকার নিয়মাদি দেখিয়ে শেষ পর্যন্ত ঋণ না দেয়ায় উচ্চ লাভে দাদন ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে নিতে বাধ্য হই।’

অভিযোগ নিয়ে কথা বললে আজ মঙ্গলবার বিকেলে ব্র্যাক ব্যাংকের বাঞ্ছারামপুর জোনাল শাখার ম্যানেজার ফারুক আহমেদ বলেন,‘আমরা নারী, শিক্ষক, সাংবাদিক, পুলিশ এবং উকিলদের কোন প্রকার ঋণ দেই না’।

এ বিষয়ে বাঞ্ছারামপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো.শরিফুল ইসলামকে জানালে তিনি ব্র্যাক ব্যাংকের কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে এই প্রতিনিধিকে জানান-‘বাঞ্ছারামপুর উপজেলা শাখা দেশের মধ্যে ব্যতিক্রম হয়তোবা।তাদের পলিসির মধ্যেই আছে নারী,সাংবাদিক,পুলিশদের ব্যবসা করার জন্য ঋণ না দিলে কি করার আছে!!”

অন্যদিকে,সোনালী,জনতা,ইসলামী,কৃষি ব্যাংক কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বললে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপকগন ভিন্নভিন্নভাবে জানান,-এখানে কোন শিল্প কারখানা নেই।কি খাতে সি.সি লোন দিবো? কাগজপত্র ঠিক নেই।একটা মিললে আরেকটা মিলে না।সে জন্য সুযোগ থাকা সত্বেও নারীরা ঋণ পাচ্ছেন না।

জানা গেছে,ইসলামী ব্যাংক সমস্ত বিনিয়োগ স্থগিত করেছে।একই অবস্থা সোনালী-অগ্রনী ব্যাংকেও।