ঢাকা ১১:৪৮ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

রকেট উৎক্ষেপণ স্থগিত করা হয় কেন?

 তথ্যপ্রযুক্তি ডেস্কঃ
বাংলাদেশের ইতিহাসে মহাকাশ জয়ের কাহিনী লিখিত হওয়ার ৪২ সেকেন্ড আগে এসে আটকে গেলো তা। কারিগরি জটিলতায় ‘বঙ্গবন্ধু-১’ স্যাটেলাইটটি পাঠানো সম্ভব হচ্ছে না বলে জানিয়েছে উৎক্ষেপণকারী প্রতিষ্ঠান স্পেসএক্স। ২০১৭ সালে তারিখ ঠিক করেও একবার দুইবার নয়, ছয়বার বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণের তারিখ পিছিয়েছে। এবার নিয়ে আক্ষেপ বেড়ে দাঁড়ালো সপ্তমে।
স্পেসএক্সের ফ্যালকন-৯ রকেটে করে বৃহস্পতিবার ভোররাত ৩টা ৪৭ মিনিটে বাংলাদেশের প্রথম স্যাটেলাইট (কৃত্রিম উপগ্রহ) উৎক্ষেপণের কথা ছিলো। পরে সময় আরও ১৫ মিনিট বাড়িয়ে ৫টা ২ মিনিটে উৎক্ষেপণের কথা বলা হয়। তবে ৫টা ৭ মিনিটে উৎক্ষেপণের স্থগিতের কথা জানায় স্পেসএক্স। ঠিক কী কারণে স্যাটেলাইটটি উৎক্ষেপণ স্থগিত করা হলো তাৎক্ষণিকভাবে কোনো কারণ জানায়নি তারা।
এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় তার ফেসবুকে লিখেছেন, ‘শেষ মিনিটের উৎক্ষেপণ পুরোপুরিভাবে কম্পিউটার নিয়ন্ত্রণ করে। কম্পিউটার স্বাভাবিক হিসেব-নিকেশের বাইরে কিছু দেখলেই উৎক্ষেপণ বাতিল করে দেয়। আজকে উৎক্ষেপণের মাত্র ৪২ সেকেন্ড আগে তা বাতিল করা হয়। স্পেসএক্স সবকিছু পর্যবেক্ষণ করে আগামীকাল একই সময়ে উৎক্ষেপণের আয়োজন করবে। মহাকাশযান উৎক্ষেপণের জন্য এটা খুবই সাধারণ ঘটনা এবং এত বড় ঝুঁকি নেওয়াটা কাম্য নয়।’
মহাকাশযান উৎক্ষেপণের সময় সবচেয়ে বড় বাধা হলো পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ শক্তিকে এড়িয়ে উড্ডয়ন সম্পন্ন করা। এই মাধ্যাকর্ষণ শক্তিকে উপেক্ষা করে উড্ডয়নের জন্য মহাকাশযানকে প্রচণ্ড গতিতে নির্দিষ্ট দিকে ছুটে যেতে হয় প্রাথমিক আকর্ষণকে অগ্রাহ্য করার জন্য। কোন মহাশূন্যযানকে কক্ষপথে স্থাপনের জন্য প্রয়োজনীয় ন্যুনতম বেগমাত্রাকে বলে অরবিটাল ভ্যালুসিটি। মহাকাশে রকেট উৎক্ষেপণ করতে হলে প্রথমে মাধ্যাকর্ষণ শক্তির বিপরীত দিকে প্রচণ্ড গতিতে(মুক্তি বেগ ১১.২ কিলো/সে) ৪৬ কিলোমিটার উচ্চতা উঠতে পারলে রকেট মাধ্যাকর্ষণ শক্তির আওতাভুক্ত হয়ে যায়।
৯ মিনিট আগে শুরু হয় চূড়ান্ত প্রক্রিয়া। গ্রাউন্ড লঞ্চ সিকোয়েন্সার স্টেশন থেকেই প্রক্রিয়াটি শুরু হয়। এই সফটওয়্যার নিয়ন্ত্রিত ব্যবস্থা লক্ষ রাখে কোনো ধরনের দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা আছে কি না। স্বয়ংক্রিয়ভাবে রকেটের বিভিন্ন অংশ চালু করা হতে থাকে। ১০ সেকেন্ড আগে ইঞ্জিনের চেম্বারে হাইড্রোজেন জ্বালানি প্রজ্বলিত করা হয়। প্রধান তিনটি ইঞ্জিন চালু করা হয় উৎক্ষেপণের ৬.৬ সেকেন্ড আগে। তিন সেকেন্ডের মধ্যে প্রয়োজনীয় চাপ সৃষ্টি হয়। যদি সব কিছু ঠিকঠাক থাকে, তাহলে রকেটটি যে হোল্ডার দিয়ে আটকে রাখা হয়েছিল, তা ছেড়ে দেয়া হয় এবং দ্রুতই আকাশে উঠে যায়।
উৎক্ষেপণে তড়িঘড়ি করার সুযোগ নেই। উৎক্ষেপণ পেছানোর সাধারণ কারণগুলোর মধ্যে প্রধান কারণ হচ্ছে প্রতিকূল আবহাওয়া। তাই আবহাওয়ার অবস্থা বুঝতে ওয়েদার বেলুন, ডপলার রাডারসহ নানা প্রযুক্তি ব্যবহার করে। বৃষ্টিপাত, তুষারপাত কিংবা এরকম কোন কিছুর বর্ষণের সময় রকেট বিশেষ করে স্পেসশাটল উৎক্ষেপণ করা হয় না। আকাশে জমাট বাধা মেঘ থাকলে রকেট উৎক্ষেপণে বজ্রপাতের ঝুঁকি দেখা দেয়। তাই আকাশে এরকম মেঘ থাকলে উৎক্ষেপণের আগে এই মেঘ রকেটের জন্য কতটা ঝুঁকিপূর্ণ তা খতিয়ে দেখেন বিশেষজ্ঞরা। যদি উৎক্ষেপণস্থলে উত্তরপূর্ব দিক থেকে ১৯ নট গতির বাতাস বা অন্যান্য দিক থেকে ৩৪ নটের বেশি গতির বাতাস আসে তাহলে রকেট উৎক্ষেপণ করা সম্ভব হয় না।
মহাকাশযান উৎক্ষেপণের পর আকাশসীমা দৃষ্টিগোচর হতে হয়। একে এভিয়েশনের ভাষায় ‘সিলিং’ বলা হয়। এই সীমা ৬ হাজার ফিটের কম হলে দৃষ্টি রাখা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে। আবহাওয়ার উষ্ণতা বা গরম আবহাওয়া উৎক্ষেপণের জন্য তেমন কোন সমস্যা নয়। তাপ মাত্রা কম হলেই সমস্যা। যদি তাপমাত্রা ৮ দশমিক ৮৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কম হয় তাহলে পরিণতি হিসেবে বরফ জমাট বাধার মতো বিপর্যয়ের মুখোমুখি হওয়ার ঝুঁকি দেখা দেয়। আর মহাকাশে রকেট পাঠানোর পুরো প্রক্রিয়াটির সঙ্গে মানুষ এবং যন্ত্রের সূক্ষ্মতম কাজ জড়িয়ে থাকায় কারিগরি কারণেও উৎক্ষেপণ পিছিয়ে যেতে পারে।
অনেকসময় উৎক্ষেপণের জন্য রকেট লঞ্চিং প্যাডে নিয়ে রাখার পর আবহাওয়ার কারণে উৎক্ষেপণ বাতিল করা হয়। রূঢ় আবহাওয়া থেকে রকেটের সুরক্ষার জন্য প্রয়োজনে রকেটকে পুনরায় ‘ভেহিকেল অ্যাসেম্বলি বিল্ডিং’ (ভিএবি) তে ফিরিয়ে আনার ঘটনাও ঘটেছে। এটি ‘রোলব্যাক’ নামে পরিচিত। ১৯৮৩ থেকে ২০০৬ পর্যন্ত মোট ১৭ টি রোলব্যাকের ঘটনা ঘটে।
ট্যাগস
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

সাবেক মন্ত্রী কায়কোবাদের সঙ্গে তুর্কী এমপির সাক্ষাৎ

রকেট উৎক্ষেপণ স্থগিত করা হয় কেন?

আপডেট সময় ০৪:৫৪:২৮ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১১ মে ২০১৮
 তথ্যপ্রযুক্তি ডেস্কঃ
বাংলাদেশের ইতিহাসে মহাকাশ জয়ের কাহিনী লিখিত হওয়ার ৪২ সেকেন্ড আগে এসে আটকে গেলো তা। কারিগরি জটিলতায় ‘বঙ্গবন্ধু-১’ স্যাটেলাইটটি পাঠানো সম্ভব হচ্ছে না বলে জানিয়েছে উৎক্ষেপণকারী প্রতিষ্ঠান স্পেসএক্স। ২০১৭ সালে তারিখ ঠিক করেও একবার দুইবার নয়, ছয়বার বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণের তারিখ পিছিয়েছে। এবার নিয়ে আক্ষেপ বেড়ে দাঁড়ালো সপ্তমে।
স্পেসএক্সের ফ্যালকন-৯ রকেটে করে বৃহস্পতিবার ভোররাত ৩টা ৪৭ মিনিটে বাংলাদেশের প্রথম স্যাটেলাইট (কৃত্রিম উপগ্রহ) উৎক্ষেপণের কথা ছিলো। পরে সময় আরও ১৫ মিনিট বাড়িয়ে ৫টা ২ মিনিটে উৎক্ষেপণের কথা বলা হয়। তবে ৫টা ৭ মিনিটে উৎক্ষেপণের স্থগিতের কথা জানায় স্পেসএক্স। ঠিক কী কারণে স্যাটেলাইটটি উৎক্ষেপণ স্থগিত করা হলো তাৎক্ষণিকভাবে কোনো কারণ জানায়নি তারা।
এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় তার ফেসবুকে লিখেছেন, ‘শেষ মিনিটের উৎক্ষেপণ পুরোপুরিভাবে কম্পিউটার নিয়ন্ত্রণ করে। কম্পিউটার স্বাভাবিক হিসেব-নিকেশের বাইরে কিছু দেখলেই উৎক্ষেপণ বাতিল করে দেয়। আজকে উৎক্ষেপণের মাত্র ৪২ সেকেন্ড আগে তা বাতিল করা হয়। স্পেসএক্স সবকিছু পর্যবেক্ষণ করে আগামীকাল একই সময়ে উৎক্ষেপণের আয়োজন করবে। মহাকাশযান উৎক্ষেপণের জন্য এটা খুবই সাধারণ ঘটনা এবং এত বড় ঝুঁকি নেওয়াটা কাম্য নয়।’
মহাকাশযান উৎক্ষেপণের সময় সবচেয়ে বড় বাধা হলো পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ শক্তিকে এড়িয়ে উড্ডয়ন সম্পন্ন করা। এই মাধ্যাকর্ষণ শক্তিকে উপেক্ষা করে উড্ডয়নের জন্য মহাকাশযানকে প্রচণ্ড গতিতে নির্দিষ্ট দিকে ছুটে যেতে হয় প্রাথমিক আকর্ষণকে অগ্রাহ্য করার জন্য। কোন মহাশূন্যযানকে কক্ষপথে স্থাপনের জন্য প্রয়োজনীয় ন্যুনতম বেগমাত্রাকে বলে অরবিটাল ভ্যালুসিটি। মহাকাশে রকেট উৎক্ষেপণ করতে হলে প্রথমে মাধ্যাকর্ষণ শক্তির বিপরীত দিকে প্রচণ্ড গতিতে(মুক্তি বেগ ১১.২ কিলো/সে) ৪৬ কিলোমিটার উচ্চতা উঠতে পারলে রকেট মাধ্যাকর্ষণ শক্তির আওতাভুক্ত হয়ে যায়।
৯ মিনিট আগে শুরু হয় চূড়ান্ত প্রক্রিয়া। গ্রাউন্ড লঞ্চ সিকোয়েন্সার স্টেশন থেকেই প্রক্রিয়াটি শুরু হয়। এই সফটওয়্যার নিয়ন্ত্রিত ব্যবস্থা লক্ষ রাখে কোনো ধরনের দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা আছে কি না। স্বয়ংক্রিয়ভাবে রকেটের বিভিন্ন অংশ চালু করা হতে থাকে। ১০ সেকেন্ড আগে ইঞ্জিনের চেম্বারে হাইড্রোজেন জ্বালানি প্রজ্বলিত করা হয়। প্রধান তিনটি ইঞ্জিন চালু করা হয় উৎক্ষেপণের ৬.৬ সেকেন্ড আগে। তিন সেকেন্ডের মধ্যে প্রয়োজনীয় চাপ সৃষ্টি হয়। যদি সব কিছু ঠিকঠাক থাকে, তাহলে রকেটটি যে হোল্ডার দিয়ে আটকে রাখা হয়েছিল, তা ছেড়ে দেয়া হয় এবং দ্রুতই আকাশে উঠে যায়।
উৎক্ষেপণে তড়িঘড়ি করার সুযোগ নেই। উৎক্ষেপণ পেছানোর সাধারণ কারণগুলোর মধ্যে প্রধান কারণ হচ্ছে প্রতিকূল আবহাওয়া। তাই আবহাওয়ার অবস্থা বুঝতে ওয়েদার বেলুন, ডপলার রাডারসহ নানা প্রযুক্তি ব্যবহার করে। বৃষ্টিপাত, তুষারপাত কিংবা এরকম কোন কিছুর বর্ষণের সময় রকেট বিশেষ করে স্পেসশাটল উৎক্ষেপণ করা হয় না। আকাশে জমাট বাধা মেঘ থাকলে রকেট উৎক্ষেপণে বজ্রপাতের ঝুঁকি দেখা দেয়। তাই আকাশে এরকম মেঘ থাকলে উৎক্ষেপণের আগে এই মেঘ রকেটের জন্য কতটা ঝুঁকিপূর্ণ তা খতিয়ে দেখেন বিশেষজ্ঞরা। যদি উৎক্ষেপণস্থলে উত্তরপূর্ব দিক থেকে ১৯ নট গতির বাতাস বা অন্যান্য দিক থেকে ৩৪ নটের বেশি গতির বাতাস আসে তাহলে রকেট উৎক্ষেপণ করা সম্ভব হয় না।
মহাকাশযান উৎক্ষেপণের পর আকাশসীমা দৃষ্টিগোচর হতে হয়। একে এভিয়েশনের ভাষায় ‘সিলিং’ বলা হয়। এই সীমা ৬ হাজার ফিটের কম হলে দৃষ্টি রাখা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে। আবহাওয়ার উষ্ণতা বা গরম আবহাওয়া উৎক্ষেপণের জন্য তেমন কোন সমস্যা নয়। তাপ মাত্রা কম হলেই সমস্যা। যদি তাপমাত্রা ৮ দশমিক ৮৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কম হয় তাহলে পরিণতি হিসেবে বরফ জমাট বাধার মতো বিপর্যয়ের মুখোমুখি হওয়ার ঝুঁকি দেখা দেয়। আর মহাকাশে রকেট পাঠানোর পুরো প্রক্রিয়াটির সঙ্গে মানুষ এবং যন্ত্রের সূক্ষ্মতম কাজ জড়িয়ে থাকায় কারিগরি কারণেও উৎক্ষেপণ পিছিয়ে যেতে পারে।
অনেকসময় উৎক্ষেপণের জন্য রকেট লঞ্চিং প্যাডে নিয়ে রাখার পর আবহাওয়ার কারণে উৎক্ষেপণ বাতিল করা হয়। রূঢ় আবহাওয়া থেকে রকেটের সুরক্ষার জন্য প্রয়োজনে রকেটকে পুনরায় ‘ভেহিকেল অ্যাসেম্বলি বিল্ডিং’ (ভিএবি) তে ফিরিয়ে আনার ঘটনাও ঘটেছে। এটি ‘রোলব্যাক’ নামে পরিচিত। ১৯৮৩ থেকে ২০০৬ পর্যন্ত মোট ১৭ টি রোলব্যাকের ঘটনা ঘটে।