ফয়সল আহমেদ খান,বাঞ্ছারামপুর(ব্রাহ্মণবাড়িয়া) থেকেঃ
‘ঘোড়ার যুগ বহু আগেই অবসিত, ঘোড়াকে সরিয়ে এসে গেছে যন্ত্রে টানা গাড়ি। তার গতি অতীতের ঘোড়াদের লজ্জিত করতো। কিন্তু আমাদের অবস্থার কোন পরিবর্তন হয়নি, এখন গাড়িতে চড়েও আমাদের হেঁটেই যেতে হয়।
বাঞ্ছারামপুরের চারদিকের রাস্তাতেই অতিরিক্ত সময় ধরে নিতে হয়,কেবল ভাঙ্গা রাস্তার জন্য। এই অতিরিক্ত সময় মূলযাত্রার দ্বিগুণ, কখনোবা তিনগুণ। প্রায়শঃই দেখি আমার ছাত্ররা ক্লাসে, এমনকি পরীক্ষাহলে দেরি করে প্রবেশ করে। জিজ্ঞেস করলে তাদের মুখস্ত উত্তর ঐ একটিই রাস্তা ভালো না,গাড়ি পাই নাই স্যার। আর তাদের অবিশ্বাসইবা করি কীভাবে? আমি নিজেই তো বিলম্বে কলেজে আসি’’-কথাগুলো ক্ষোভ নিয়ে বলছিলেন বাঞ্ছারামপুর উপজেলার ফরদাবাদের ড.রওশন আলম কলেজের অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম।
একে উপজেলার ১৩টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভার সব রাস্তাই ভাঙ্গা তারউপর, সম্প্রতি বাঞ্ছারামপুর হতে হোমনা ১১ কি:মি: পুরো রাস্তাই ড্রেনেজে ব্যবস্থা না থাকায় সাম্প্রতিক বৃষ্টিতে পানির নীচে।ফলে গাড়ি বিকল হয়ে যাচ্ছে মিনিটে মিনটে।সৃষ্টি হচ্ছে যানজট।তার উপরে পরিবহণের অপ্রতুলতা এলাকাবাসীকে ফেলেছে প্রতিদিনের অসহনীয় দুর্ভোগে। এর সুযোগ নিচ্ছে লঞ্চ আর ট্রলার অলারা। তারা দ্বিগুন, তিনগুণ ভাড়া তুলে নিচ্ছে অসহায় যাত্রীদের কাছে।সড়ক পথ প্রায় বন্ধের পথে হওয়ায় ব্যবসায়ীরা রমজানকে সামনে রেখে পণ্য সামগ্রী আনছেন লঞ্চে,ট্রলারে।ব্যয় বাড়ছে দ্বিগুন-তিনগুন।এর প্রভাব পড়বে সাধারন মানুষের উপর।বেড়ে গেছে সব নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রীর দাম।
খোজ নিয়ে জানা গেছে,বাঞ্ছারামপুর উপজেলা হতে ৩ দিক থেকে রাজধানীসহ কুমিল্লা-সিলেট-চট্রগ্রামমুখী হতে পারে বাঞ্ছারামপুর টু কড়িকান্দি ফেরীঘাট, হোমনা উপজেলা উপর দিয়ে এবং মরিচাকান্দি হয়ে লঞ্চ/ট্রলার হয়ে নরসিংদীর রাস্তা দিয়ে।
উপজেলার প্রায় সাড়ে ৪ লাখ মানুষ এখন সবগুলো পথই বন্ধ দেখতে পাচ্ছেন।
ফলে,অতি জরুরী কোন দরকার না হলে মানুষজন রাজধানীমুখী হচ্ছেন না। ঢাকা যেতে হলে ১১ কি:মি: পথের হোমনা-গৌরিপুর সিএনজি চালকরা আজ শুক্রবার আল্টিমেটাম দিয়ে বলেছেন উপজেলার রাধারনগর সড়কের পরিবর্তে যে নৌপথ সৃষ্টি হয়েছে তা আগামী ৭২ ঘন্টার মধ্যে মেরামত না করলে আমরা গাড়ি চলাচল বন্ধ করে দিতে বাধ্য হবো।কারন,এই পানি পথ ও ভাঙ্গা রাস্তা দিয়ে যেয়ে প্রতিদিনই ৫/৬ শত টাকা গাড়ি ঠিক করতে চলে যায়।যাত্রীরাও কষ্ট পায়।একই কথা বলেন মরিচাকন্দি সড়কের পরিবহন চালকেরা।বাঞ্ছারামপুর টু সোনরামপুর ভায়া পাহাড়িয়াকান্দি,ফরদবাদ সড়কের রাস্তার এতোটাই বেহাল দশা যে,কোন গাড়ি চলবে দূরে,স্কুল কলেজের শিক্ষার্থী,ধান মাথায় করে শ্রমীক-কৃষক বা যে কোন পথচারী পায়ে হেটে গেলেও চিৎপটাং হচ্ছেন।
শুক্রবার দুপুরে মাইক্রোবাসে করে বরযাত্রি যাচ্ছিলেন বাঞ্ছারামপুর হতে উপজেলার কালিকাকাপুরে।বিশাল বিয়ের গাড়ির বহর।রাধারনগর যেয়ে একে একে ৪টি গাড়ি তাদের রাস্তার খানাখন্দে ভরা গর্তে ঢেবে যায়।
অবশেষে প্রকৌশলী ও বিশিষ্ট লেখক দীন মোহাম্মদ গাড়ি হতে নেমে হাতে জুতা নিয়ে আন্ত:উপজেলা সড়কে পানির উপর দিয়ে হেটে যেতে বাধ্য হন বলে জানা গেছে।
এ বিষয়ে সড়ক ও জনপথ বিভাগের প্রকৌশলী মজিবুর রহমান বলেন,-‘আমরা চেষ্টা করছি টেন্ডার করার।কিন্তু ফান্ড পর্যাপ্ত নেই।দু-তিনটা টেন্ডার করেছি। কিন্তু,ঠিকাদার বৃষ্টিতে লোকসানের ভয়ে কাজে নামাতে পারছি না।’
এলজিইডি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নির্বাহী প্রকৌশলী ফজলে রাব্বি বলেন,-‘বাঞ্ছারামপুরে অতি জরুরী ভিত্তিতে ১৮টি সড়কের টেন্ডার আহবান করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে,ইনশাল্লাহ ঈদের আগে মানুষ সুফল পেতে শূরু করবেন’।
বাঞ্ছারামপুর পৌরসভার মেয়র খলিলুর রহমান টিপু মোল্লা বলেন,-‘আমি আপাতত সদর পৌর এলাকার ২টি ওয়ার্ডের রাস্তাগুলো মেরামতের উদ্যোগ নিয়েছি।অন্যান্য ওয়ার্ডে পরে ঠিক করা হবে’’।