ঢাকা ০৫:২২ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৪ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

খালেদার মুক্তি :সরকারের দিকে তাকিয়ে বিএনপি

জাতীয় ডেস্কঃ

কারাবন্দি দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার জামিন এবং মুক্তি নিয়ে সরকারের দিকে তাকিয়ে আছেন বিএনপি নেতারা। তারা বলছেন, ‘খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়টি সরকারের হাতে চলে গেছে। আমরা চাইলেও তার মুক্তি নিতে পারবো না, যদি সরকার আন্তরিক না হয়। আমরা সরকারের আচরণে শংকিত। তবে আমরা পুরোপুরি আশাহত নই। আইনি লড়াই চালিয়ে যাবো।’ জিয়া এতিমখানা ট্রাস্ট দুর্নীতির ৫ বছরের সাজার মামলায় খালেদা জিয়াকে হাইকোর্টের দেওয়া জামিন গত বুধবার আপিল বিভাগ বহাল রাখার পর আরো ৬টি মামলায় জামিন না হওয়ার প্রেক্ষাপটে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে বিএনপি। তারা তার সহসা মুক্তির আশা ছেড়ে দিয়েছেন। দলের নীতি নির্ধারক পর্যায়ের নেতারা গত দুই দিন বলছেন, আগামী নির্বাচনে অযোগ্য করা এবং নির্বাচনের আগে মুক্তি না দেওয়ার জন্য বেগম জিয়ার মামলা নিয়ে ষড়যন্ত্র করছে সরকার। ৬ টি মামলায় জামিন নিয়ে নিয়ে আদালত গড়িমসি করছে। একটির পর একটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হচ্ছে। গত বৃহস্পতিবার মানহানির দুই মামলায় খালেদা জিয়াকে জামিন না দিয়ে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা কার্যকরের আদেশ দেন ঢাকা মহানগর হাকিম আদালত। আগামী ৫ই জুলাইয়ের মধ্যে এ আদেশ কার্যকর করে আদালতকে অবহিত করতে বলা হয়েছে আদেশে। নড়াইলের মামলায় জামিন দেওয়া হয়নি। কুমিল্লার দুই মামলার শুনানির তারিখ ধার্য করা হয়েছে জুনে।

এই অবস্থায় গতকাল শুক্রবার দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন প্রমুখ বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি নিয়ে শংকা প্রকাশ করেছেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, সর্বোচ্চ আদালত মুক্তি দিলেও সরকারের অনিচ্ছায় বেগম জিয়া মুক্তি পাচ্ছেন না। খালেদা জিয়াকে সরকার ভয় পায়। তারা জানে যদি খালেদা জিয়া বাইরে থাকেন তা হলে জনগণের জোয়ার সৃষ্টি হবে। তিনি বলেন, আমরা বারবার চেষ্টা করছি, কথা বলছি, আন্দোলন করছি। আমাদের হাজার হাজার নেতাকর্মী জেলে গেছে। তারপরও আমরা তাকে বাইরে নিয়ে আসতে পারিনি। এটা একদিকে যেমন আমাদের ব্যর্থতা, অন্যদিকে এর মাধ্যমে সরকারের ভয়ঙ্কর চেহারাও প্রকাশিত হয়েছে।

মওদুদ আহমদ বলেন, খালেদা জিয়ার মুক্তি সরকারের নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে। তার মুক্তি হবে কি হবে না, এটা এখন সরাসরি নিয়ন্ত্রণ করছে সরকার। কারণ বিচারকদের সরকার যা বলবে, তারা তাই করবেন। কেবল আইনি লড়াইয়ে বেগম জিয়াকে মুক্ত করে আনা সহজ হবে না। সেজন্য রাজপথের আন্দোলনের বিকল্প নেই। আর আমাদের ধীরে-ধীরে কঠোর কর্মসূচির কথা চিন্তা করতে হবে। ঈদের পরে আমাদের নতুন করে চিন্তা-ভাবনা করতে হবে।

তিনি বলেন, ‘উচ্চতর আদালত খালেদা জিয়াকে জামিন দিয়েছে, তাকে আমরা মুক্ত করতে পারছি না। কেনো? কারণ সরকারের অপকৌশল, ষড়যন্ত্র ও দুরভিসন্ধিমূলক পরিকল্পনা রয়েছে—বেগম জিয়াকে কারাগারে রেখে নির্বাচন করা, তাকে নির্মূল করা এবং যত পারো মামলা দাও। আগে ছিল ৬টি মামলা, গতকাল আরো ২টি মামলা দেওয়া হয়েছে। এসব মামলায় জামিন বহাল রেখে তাকে আমরা মুক্ত করতে পারবো না। কারণ তারা (সরকার) চেষ্টা করবে, এ মামলাগুলোতে আরো লম্বা-লম্বা তারিখ দিতে।

মওদুদ আহমদ জানান, খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে নিম্ন আদালতে বেশকিছু মামলা আছে। সেইসব মামলায় জামিন পেলেই তিনি মুক্তি পাবেন। এ জন্য তারা আইনি প্রক্রিয়া চালিয়ে যাবেন। তবে এই ক্ষেত্রে সরকারের আচরণ উদ্বেগজনক বলে তারা উল্লেখ করেন।

তিনি বলেন, সরকার খালেদা জিয়ার কারামুক্তি বিলম্বিত করতে নানা কৌশলে চেষ্টা করছে। আর নিম্ন আদালত প্রশাসনের অধীনে কাজ করে। অর্থাত্ সরকারের অধীনে কাজ করে। সুতরাং নিম্ন আদালত স্বাধীন না।

খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, সরকারের সদিচ্ছা ছাড়া বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করা সম্ভব নয়। একের পর এক বিভিন্ন মামলায় জড়ানো হচ্ছে খালেদা জিয়াকে।

অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেছেন, খালেদা জিয়াকে মুক্তি পেতে হলে সবকটি মামলায় জামিন পেতে হবে। তবে সব মামলায় তাড়াতাড়ি জামিন পাওয়া কঠিন। কারণ মামলাগুলো একেকটা একক ধরনের। তিনি আরো বলেন, আপিল শুনানির ব্যাপারে আমরা প্রস্তুতি নেব এবং আশা করছি আগামী ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে তার নিষ্পত্তি হবে।

নৌ পরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান গতকাল বলেন, খালেদা জিয়া অনেক অপরাধ করেছেন বলেই বিভিন্ন মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখাচ্ছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। তার মুক্তি পাওয়া সহজ না।

ট্যাগস
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

মুরাদনগরে মাদ্রাসায় যান না পাঁচ বছর নিয়মিত বেতন তোলেন শিক্ষক

খালেদার মুক্তি :সরকারের দিকে তাকিয়ে বিএনপি

আপডেট সময় ০৯:৪৯:২৮ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৮ মে ২০১৮
জাতীয় ডেস্কঃ

কারাবন্দি দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার জামিন এবং মুক্তি নিয়ে সরকারের দিকে তাকিয়ে আছেন বিএনপি নেতারা। তারা বলছেন, ‘খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়টি সরকারের হাতে চলে গেছে। আমরা চাইলেও তার মুক্তি নিতে পারবো না, যদি সরকার আন্তরিক না হয়। আমরা সরকারের আচরণে শংকিত। তবে আমরা পুরোপুরি আশাহত নই। আইনি লড়াই চালিয়ে যাবো।’ জিয়া এতিমখানা ট্রাস্ট দুর্নীতির ৫ বছরের সাজার মামলায় খালেদা জিয়াকে হাইকোর্টের দেওয়া জামিন গত বুধবার আপিল বিভাগ বহাল রাখার পর আরো ৬টি মামলায় জামিন না হওয়ার প্রেক্ষাপটে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে বিএনপি। তারা তার সহসা মুক্তির আশা ছেড়ে দিয়েছেন। দলের নীতি নির্ধারক পর্যায়ের নেতারা গত দুই দিন বলছেন, আগামী নির্বাচনে অযোগ্য করা এবং নির্বাচনের আগে মুক্তি না দেওয়ার জন্য বেগম জিয়ার মামলা নিয়ে ষড়যন্ত্র করছে সরকার। ৬ টি মামলায় জামিন নিয়ে নিয়ে আদালত গড়িমসি করছে। একটির পর একটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হচ্ছে। গত বৃহস্পতিবার মানহানির দুই মামলায় খালেদা জিয়াকে জামিন না দিয়ে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা কার্যকরের আদেশ দেন ঢাকা মহানগর হাকিম আদালত। আগামী ৫ই জুলাইয়ের মধ্যে এ আদেশ কার্যকর করে আদালতকে অবহিত করতে বলা হয়েছে আদেশে। নড়াইলের মামলায় জামিন দেওয়া হয়নি। কুমিল্লার দুই মামলার শুনানির তারিখ ধার্য করা হয়েছে জুনে।

এই অবস্থায় গতকাল শুক্রবার দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন প্রমুখ বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি নিয়ে শংকা প্রকাশ করেছেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, সর্বোচ্চ আদালত মুক্তি দিলেও সরকারের অনিচ্ছায় বেগম জিয়া মুক্তি পাচ্ছেন না। খালেদা জিয়াকে সরকার ভয় পায়। তারা জানে যদি খালেদা জিয়া বাইরে থাকেন তা হলে জনগণের জোয়ার সৃষ্টি হবে। তিনি বলেন, আমরা বারবার চেষ্টা করছি, কথা বলছি, আন্দোলন করছি। আমাদের হাজার হাজার নেতাকর্মী জেলে গেছে। তারপরও আমরা তাকে বাইরে নিয়ে আসতে পারিনি। এটা একদিকে যেমন আমাদের ব্যর্থতা, অন্যদিকে এর মাধ্যমে সরকারের ভয়ঙ্কর চেহারাও প্রকাশিত হয়েছে।

মওদুদ আহমদ বলেন, খালেদা জিয়ার মুক্তি সরকারের নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে। তার মুক্তি হবে কি হবে না, এটা এখন সরাসরি নিয়ন্ত্রণ করছে সরকার। কারণ বিচারকদের সরকার যা বলবে, তারা তাই করবেন। কেবল আইনি লড়াইয়ে বেগম জিয়াকে মুক্ত করে আনা সহজ হবে না। সেজন্য রাজপথের আন্দোলনের বিকল্প নেই। আর আমাদের ধীরে-ধীরে কঠোর কর্মসূচির কথা চিন্তা করতে হবে। ঈদের পরে আমাদের নতুন করে চিন্তা-ভাবনা করতে হবে।

তিনি বলেন, ‘উচ্চতর আদালত খালেদা জিয়াকে জামিন দিয়েছে, তাকে আমরা মুক্ত করতে পারছি না। কেনো? কারণ সরকারের অপকৌশল, ষড়যন্ত্র ও দুরভিসন্ধিমূলক পরিকল্পনা রয়েছে—বেগম জিয়াকে কারাগারে রেখে নির্বাচন করা, তাকে নির্মূল করা এবং যত পারো মামলা দাও। আগে ছিল ৬টি মামলা, গতকাল আরো ২টি মামলা দেওয়া হয়েছে। এসব মামলায় জামিন বহাল রেখে তাকে আমরা মুক্ত করতে পারবো না। কারণ তারা (সরকার) চেষ্টা করবে, এ মামলাগুলোতে আরো লম্বা-লম্বা তারিখ দিতে।

মওদুদ আহমদ জানান, খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে নিম্ন আদালতে বেশকিছু মামলা আছে। সেইসব মামলায় জামিন পেলেই তিনি মুক্তি পাবেন। এ জন্য তারা আইনি প্রক্রিয়া চালিয়ে যাবেন। তবে এই ক্ষেত্রে সরকারের আচরণ উদ্বেগজনক বলে তারা উল্লেখ করেন।

তিনি বলেন, সরকার খালেদা জিয়ার কারামুক্তি বিলম্বিত করতে নানা কৌশলে চেষ্টা করছে। আর নিম্ন আদালত প্রশাসনের অধীনে কাজ করে। অর্থাত্ সরকারের অধীনে কাজ করে। সুতরাং নিম্ন আদালত স্বাধীন না।

খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, সরকারের সদিচ্ছা ছাড়া বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করা সম্ভব নয়। একের পর এক বিভিন্ন মামলায় জড়ানো হচ্ছে খালেদা জিয়াকে।

অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেছেন, খালেদা জিয়াকে মুক্তি পেতে হলে সবকটি মামলায় জামিন পেতে হবে। তবে সব মামলায় তাড়াতাড়ি জামিন পাওয়া কঠিন। কারণ মামলাগুলো একেকটা একক ধরনের। তিনি আরো বলেন, আপিল শুনানির ব্যাপারে আমরা প্রস্তুতি নেব এবং আশা করছি আগামী ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে তার নিষ্পত্তি হবে।

নৌ পরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান গতকাল বলেন, খালেদা জিয়া অনেক অপরাধ করেছেন বলেই বিভিন্ন মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখাচ্ছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। তার মুক্তি পাওয়া সহজ না।