ঢাকা ০৮:৪৬ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মৃত্যুর গুজবের পর সৌদি যুবরাজের নতুন ছবি, বিতর্ক

অন্তর্জাতিক ডেস্কঃ

ইরান ও রাশিয়ার গণমাধ্যমে সৌদি আরবের সিংহাসনের উত্তরাধিকারি যুবরাজ ও সম্প্রতি দেশটির সবচেয়ে ক্ষমতাধর ব্যক্তি হয়ে ওঠা যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের মৃত্যুর গুজবের পর তার একটি নতুন প্রকাশ করেছে সৌদি আরবের সংবাদমাধ্যম আর রিয়াদ।

প্রকাশিত ছবিটিতে মিসরের সেনা শাসক আব্দেল ফাত্তাহ আল সিসি ও বাহরাইনের বাদশাহ হামদ বিন ঈসা আল খলিফার কাঁধে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন সৌদি যুবরাজ। তাদের সঙ্গে আরব আমিরাতের যুবরাজ মুহাম্মদ বিন জায়েদও রয়েছেন।

কিন্তু প্রকাশিত ওই ছবিটি কবে, কোথায় তোলা হয়েছে সে বিষয় কোনো তথ্য আর রিয়াদের খবরে উল্লেখ করা হয়নি।

তবে গত মাসে সৌদি আরবের ওই ঘটনার পর থেকে এখনো পর্যন্ত আব্দেল ফাত্তাহ আল সিসি, বাদশাহ হামদ বিন ঈসা আল খলিফা, আমিরাত যুবরাজ ও সৌদি যুবরাজ কোথাও একত্র হয়েছেন এমন কোনো খবর পাওয়া যায়নি। ফলে ছবিটি পুরনো বলেই ধারণা করা হচ্ছে।

আসলে সৌদি ক্রাউন প্রিন্সকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও ইরানি গণমাধ্যমগুলোর উদ্বেগের মধ্যেই শুক্রবার মোহাম্মদের ব্যক্তিগত দপ্তরের পরিচালক বাদের আল-আসাকের টুইটারেই প্রথম সৌদি যুবরাজের সঙ্গে আবু ধাবির ক্রাউন প্রিন্স শেখ মোহাম্মদ বিন জায়েদ আল নাহিয়ান, বাহরাইনের বাদশা বিন ইসা ও মিশরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল সিসির ওই গ্রুপ ছবিটি পোস্ট করা হয়।

‘কয়েক দিন আহে দুই ভাইয়ের এক বন্ধুত্বপূর্ণ বৈঠক আয়োজন করেন মিশরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল সিসি,’ ছবির সঙ্গে এ মন্তব্য করলেও, ছবিটি কত তারিখের তা জানাননি তিনি।

প্রসঙ্গত, দীর্ঘদিন ধরে জনসম্মুখে না আসা সৌদি আরবের ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের জীবিত থাকা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছে ইরানের গণমাধ্যমগুলো। গত মাসের শেষ দিকে এক ‘অভ্যুত্থানচেষ্টায়’ গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর মোহাম্মদ মারা গেছেন বলেও ধারণা তাদের।

অবশ্য যে ঘটনার দিকে ইঙ্গিত করে সৌদি যুবরাজের ‘সম্ভাব্য মৃত্যু’ নিয়ে জল্পনা চলছে, তার সপ্তাহখানেক পরের এক অনুষ্ঠানেও মোহাম্মদকে দেখা গেছে বলে জানিয়েছে রাশিয়ার বার্তা সংস্থা স্পুটনিক।

‘এক আরব রাষ্ট্রের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তার কাছে পাঠানো গোয়েন্দা তথ্যের’ বরাত দিয়ে ইরানি খবরের কাগজ কায়হান বলছে, এপ্রিলের ২১ তারিখ রিয়াদের রাজপ্রাসাদে হওয়া অভ্যুত্থানচেষ্টার ঘটনায় সৌদি ক্রাউন প্রিন্সের গায়ে অন্তত দুটি গুলি লেগেছে।

এর পর থেকে মোহাম্মদকে আর জনসম্মুখে দেখা যায়নি জানিয়ে ওই গুলির ঘটনায় তার মৃত্যু হয়ে থাকতে পারে বলে ধারণা ইরানের শাসকগোষ্ঠীর ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত সংবাদমাধ্যমটির।

এপ্রিলের শেষ ভাগ থেকে সৌদি যুবরাজের নতুন কোনো আলোকচিত্র কিংবা ভিডিও প্রকাশিত হয়নি জানিয়ে একই শঙ্কা প্রকাশ করেছে প্রেস টিভিও। নতুন মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রী মাইক পম্পেওর এপ্রিলের শেষ সপ্তাহে রিয়াদ সফরের সময়ও মোহাম্মদকে দেখা না যাওয়ায় সন্দেহের মাত্রা তীব্রতর হচ্ছে বলেও দাবি তাদের।

ইরানি বার্তা সংস্থা ফারস বলছে, সালমান এমন একজন ব্যক্তি যাকে প্রায়ই গণমাধ্যমে দেখা যেত, কিন্তু রিয়াদের ওই গোলাগুলির পর ২৭ দিন ধরে অনুপস্থিতি তার স্বাস্থ্য নিয়ে উদ্বেগ বাড়িয়েছে।

এপ্রিলের ২১ তারিখ রিয়াদের রাজপ্রাসাদ থেকে তুমুল গোলাগুলির শব্দ শুনতে পাওয়ার কথা জানিয়েছিল আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো। সম্ভাব্য কোনো অভ্যুত্থানচেষ্টার ফল ওই গোলাগুলি, এমনটাও ধারণা করেছিলেন অনেকেই।

কিন্তু রিয়াদের দাবি, প্রাসাদের খুব কাছ দিয়ে উড়ে যাওয়া একটি ড্রোন ভূপাতিত করতেই রক্ষীরা গুলি ছুড়েছিল।

ঘটনার সময় সৌদি বাদশা সালমান প্রাসাদ ছেড়ে কাছাকাছি একটি সামরিক ঘাঁটিতে আশ্রয় নিয়েছিলেন বলে দাবি করেছিল স্থানীয় বেশকয়েকটি গণমাধ্যম।

বাদশা সেসময় কিং খালিদ ঘাঁটিতে আশ্রয় নেন বলে সৌদি বিশেষজ্ঞ আলি আল-আহাদের বরাত দিয়ে জানিয়েছে স্পুটনিক।

ইরানি গণমাধ্যমগুলোর সন্দেহ, সেদিনের গোলাগুলিতেই বিপদে পড়েন ক্রাউন প্রিন্স। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও এ নিয়ে তুমুল আলোচনা চলছে।

গোলাগুলির সময় সৌদি যুবরাজ মুহাম্মদ বিন সালমান কোথায় ছিলেন তা নিয়েও দুই রকম তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে। মিররের খবরে বলা হয়েছে, গোলাগুলির সময় যুবরাজকে নিরাপদে পার্শ্ববর্তী সেনা বাঙ্কারে সরিয়ে নেয়া হয়। অন্যদিকে স্থানীয় পুলিশ প্রধানের বরাত দিয়ে নিউজ উইকের খবরে বলা হয়, ওই সময় সৌদি ক্রাউন প্রিন্স মুহাম্মদ বিন সালমান ওই প্যালেসে ছিলেন না। তিনি দিরিয়ায় তার একটি ফার্মে অবস্থান করছিলেন।

কিন্তু সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে রাজপ্রাসাদের বাইরে ভয়াবহ গোলাগুলির চিত্র দেখা গেছে। এমনকি প্রাসাদের আশেপাশে ট্যাঙ্ক এবং অস্ত্রসহ বিভিন্ন ধরনের যানও দেখা যায় । এসব থেকেই অনেকের ধারণা, সেখানে হয় অভ্যুত্থানের চেষ্টা হয়েছে বা ভবনের ভেতর থেকেই প্রতিশোধমূলক কোনো আচরণের চেষ্টা করা হয়েছে।

গোলাগুলির ঘটনার পরেও মোহাম্মদ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়েছেন বলে দাবি অনেকের। প্রমাণ হিসেবে নানান ছবিও হাজির করছেন কেউ কেউ।

অভ্যুত্থানচেষ্টার সপ্তাহখানেক পরে কয়েকশ কোটি ডলারের একটি এন্টারটেইনমেন্ট রিসোর্ট কিদিয়ার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানেও সালমানের পাশে মোহাম্মদকে দেখা গেছে বলে জানিয়েছে স্পুটনিকও।

মধ্যপ্রাচ্যে প্রভাব বাড়ানোকে কেন্দ্র করে সুন্নিপ্রধান সৌদি আরবের সঙ্গে শিয়া সংখ্যাগরিষ্ঠ ইরানের দ্বৈততা কয়েক দশকের। ইয়েমেন ও সিরিয়া যুদ্ধেও তাদের অবস্থান প্রতিপক্ষ শিবিরে।

সাম্প্রতিক সময়ে রিয়াদে হুতিদের ধারাবাহিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলাও দুই দেশের টানাপোড়েন আরও বাড়াচ্ছে। তেহরান হুতি বিদ্রোহীদের অস্ত্র দিচ্ছে বলেও অভিযোগ সৌদি আরবের, ইরান যদিও এ অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে।

সন্ত্রাসবাদের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে আরও ৪২ জনের সঙ্গে মধ্যপ্রাচ্যে খুবই জনপ্রিয় শিয়া নেতা নিমর আল নিমরের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার পর ২০১৬-র জানুয়ারিতে তেহরান ও মাশহাদের সৌদি দূতাবাসে হওয়া হামলার প্রতিক্রিয়ায় ইরানের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করে রিয়াদ।

গত বছরের ডিসেম্বরে ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি বলেন, দুই শর্তে তার দেশ সৌদি আরবের সঙ্গে সম্পর্ক ‘ভালো’ করতে পারে- ইসরায়েলের সঙ্গে বন্ধুত্ব নিয়ে বিভ্রান্তিকর অবস্থান ত্যাগ ও ইয়েমেনে অমানবিক বোমা বর্ষণ বন্ধ করতে হবে রিয়াদকে।

এ বছরের মার্চে ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে সৌদি ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদও ১০ থেকে ১৫ বছরের মধ্যে ইরানের সঙ্গে যুদ্ধ বেধে যেতে পারে বলে সতর্ক করেছিলেন। সংঘর্ষ এড়াতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে তেহরানের ওপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপেরও আহ্বান জানিয়েছিলেন তিনি।

ট্যাগস
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

সাবেক মন্ত্রী কায়কোবাদের সঙ্গে তুর্কী এমপির সাক্ষাৎ

মৃত্যুর গুজবের পর সৌদি যুবরাজের নতুন ছবি, বিতর্ক

আপডেট সময় ০৮:৩৭:৩২ অপরাহ্ন, রবিবার, ২০ মে ২০১৮
অন্তর্জাতিক ডেস্কঃ

ইরান ও রাশিয়ার গণমাধ্যমে সৌদি আরবের সিংহাসনের উত্তরাধিকারি যুবরাজ ও সম্প্রতি দেশটির সবচেয়ে ক্ষমতাধর ব্যক্তি হয়ে ওঠা যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের মৃত্যুর গুজবের পর তার একটি নতুন প্রকাশ করেছে সৌদি আরবের সংবাদমাধ্যম আর রিয়াদ।

প্রকাশিত ছবিটিতে মিসরের সেনা শাসক আব্দেল ফাত্তাহ আল সিসি ও বাহরাইনের বাদশাহ হামদ বিন ঈসা আল খলিফার কাঁধে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন সৌদি যুবরাজ। তাদের সঙ্গে আরব আমিরাতের যুবরাজ মুহাম্মদ বিন জায়েদও রয়েছেন।

কিন্তু প্রকাশিত ওই ছবিটি কবে, কোথায় তোলা হয়েছে সে বিষয় কোনো তথ্য আর রিয়াদের খবরে উল্লেখ করা হয়নি।

তবে গত মাসে সৌদি আরবের ওই ঘটনার পর থেকে এখনো পর্যন্ত আব্দেল ফাত্তাহ আল সিসি, বাদশাহ হামদ বিন ঈসা আল খলিফা, আমিরাত যুবরাজ ও সৌদি যুবরাজ কোথাও একত্র হয়েছেন এমন কোনো খবর পাওয়া যায়নি। ফলে ছবিটি পুরনো বলেই ধারণা করা হচ্ছে।

আসলে সৌদি ক্রাউন প্রিন্সকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও ইরানি গণমাধ্যমগুলোর উদ্বেগের মধ্যেই শুক্রবার মোহাম্মদের ব্যক্তিগত দপ্তরের পরিচালক বাদের আল-আসাকের টুইটারেই প্রথম সৌদি যুবরাজের সঙ্গে আবু ধাবির ক্রাউন প্রিন্স শেখ মোহাম্মদ বিন জায়েদ আল নাহিয়ান, বাহরাইনের বাদশা বিন ইসা ও মিশরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল সিসির ওই গ্রুপ ছবিটি পোস্ট করা হয়।

‘কয়েক দিন আহে দুই ভাইয়ের এক বন্ধুত্বপূর্ণ বৈঠক আয়োজন করেন মিশরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল সিসি,’ ছবির সঙ্গে এ মন্তব্য করলেও, ছবিটি কত তারিখের তা জানাননি তিনি।

প্রসঙ্গত, দীর্ঘদিন ধরে জনসম্মুখে না আসা সৌদি আরবের ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের জীবিত থাকা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছে ইরানের গণমাধ্যমগুলো। গত মাসের শেষ দিকে এক ‘অভ্যুত্থানচেষ্টায়’ গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর মোহাম্মদ মারা গেছেন বলেও ধারণা তাদের।

অবশ্য যে ঘটনার দিকে ইঙ্গিত করে সৌদি যুবরাজের ‘সম্ভাব্য মৃত্যু’ নিয়ে জল্পনা চলছে, তার সপ্তাহখানেক পরের এক অনুষ্ঠানেও মোহাম্মদকে দেখা গেছে বলে জানিয়েছে রাশিয়ার বার্তা সংস্থা স্পুটনিক।

‘এক আরব রাষ্ট্রের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তার কাছে পাঠানো গোয়েন্দা তথ্যের’ বরাত দিয়ে ইরানি খবরের কাগজ কায়হান বলছে, এপ্রিলের ২১ তারিখ রিয়াদের রাজপ্রাসাদে হওয়া অভ্যুত্থানচেষ্টার ঘটনায় সৌদি ক্রাউন প্রিন্সের গায়ে অন্তত দুটি গুলি লেগেছে।

এর পর থেকে মোহাম্মদকে আর জনসম্মুখে দেখা যায়নি জানিয়ে ওই গুলির ঘটনায় তার মৃত্যু হয়ে থাকতে পারে বলে ধারণা ইরানের শাসকগোষ্ঠীর ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত সংবাদমাধ্যমটির।

এপ্রিলের শেষ ভাগ থেকে সৌদি যুবরাজের নতুন কোনো আলোকচিত্র কিংবা ভিডিও প্রকাশিত হয়নি জানিয়ে একই শঙ্কা প্রকাশ করেছে প্রেস টিভিও। নতুন মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রী মাইক পম্পেওর এপ্রিলের শেষ সপ্তাহে রিয়াদ সফরের সময়ও মোহাম্মদকে দেখা না যাওয়ায় সন্দেহের মাত্রা তীব্রতর হচ্ছে বলেও দাবি তাদের।

ইরানি বার্তা সংস্থা ফারস বলছে, সালমান এমন একজন ব্যক্তি যাকে প্রায়ই গণমাধ্যমে দেখা যেত, কিন্তু রিয়াদের ওই গোলাগুলির পর ২৭ দিন ধরে অনুপস্থিতি তার স্বাস্থ্য নিয়ে উদ্বেগ বাড়িয়েছে।

এপ্রিলের ২১ তারিখ রিয়াদের রাজপ্রাসাদ থেকে তুমুল গোলাগুলির শব্দ শুনতে পাওয়ার কথা জানিয়েছিল আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো। সম্ভাব্য কোনো অভ্যুত্থানচেষ্টার ফল ওই গোলাগুলি, এমনটাও ধারণা করেছিলেন অনেকেই।

কিন্তু রিয়াদের দাবি, প্রাসাদের খুব কাছ দিয়ে উড়ে যাওয়া একটি ড্রোন ভূপাতিত করতেই রক্ষীরা গুলি ছুড়েছিল।

ঘটনার সময় সৌদি বাদশা সালমান প্রাসাদ ছেড়ে কাছাকাছি একটি সামরিক ঘাঁটিতে আশ্রয় নিয়েছিলেন বলে দাবি করেছিল স্থানীয় বেশকয়েকটি গণমাধ্যম।

বাদশা সেসময় কিং খালিদ ঘাঁটিতে আশ্রয় নেন বলে সৌদি বিশেষজ্ঞ আলি আল-আহাদের বরাত দিয়ে জানিয়েছে স্পুটনিক।

ইরানি গণমাধ্যমগুলোর সন্দেহ, সেদিনের গোলাগুলিতেই বিপদে পড়েন ক্রাউন প্রিন্স। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও এ নিয়ে তুমুল আলোচনা চলছে।

গোলাগুলির সময় সৌদি যুবরাজ মুহাম্মদ বিন সালমান কোথায় ছিলেন তা নিয়েও দুই রকম তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে। মিররের খবরে বলা হয়েছে, গোলাগুলির সময় যুবরাজকে নিরাপদে পার্শ্ববর্তী সেনা বাঙ্কারে সরিয়ে নেয়া হয়। অন্যদিকে স্থানীয় পুলিশ প্রধানের বরাত দিয়ে নিউজ উইকের খবরে বলা হয়, ওই সময় সৌদি ক্রাউন প্রিন্স মুহাম্মদ বিন সালমান ওই প্যালেসে ছিলেন না। তিনি দিরিয়ায় তার একটি ফার্মে অবস্থান করছিলেন।

কিন্তু সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে রাজপ্রাসাদের বাইরে ভয়াবহ গোলাগুলির চিত্র দেখা গেছে। এমনকি প্রাসাদের আশেপাশে ট্যাঙ্ক এবং অস্ত্রসহ বিভিন্ন ধরনের যানও দেখা যায় । এসব থেকেই অনেকের ধারণা, সেখানে হয় অভ্যুত্থানের চেষ্টা হয়েছে বা ভবনের ভেতর থেকেই প্রতিশোধমূলক কোনো আচরণের চেষ্টা করা হয়েছে।

গোলাগুলির ঘটনার পরেও মোহাম্মদ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়েছেন বলে দাবি অনেকের। প্রমাণ হিসেবে নানান ছবিও হাজির করছেন কেউ কেউ।

অভ্যুত্থানচেষ্টার সপ্তাহখানেক পরে কয়েকশ কোটি ডলারের একটি এন্টারটেইনমেন্ট রিসোর্ট কিদিয়ার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানেও সালমানের পাশে মোহাম্মদকে দেখা গেছে বলে জানিয়েছে স্পুটনিকও।

মধ্যপ্রাচ্যে প্রভাব বাড়ানোকে কেন্দ্র করে সুন্নিপ্রধান সৌদি আরবের সঙ্গে শিয়া সংখ্যাগরিষ্ঠ ইরানের দ্বৈততা কয়েক দশকের। ইয়েমেন ও সিরিয়া যুদ্ধেও তাদের অবস্থান প্রতিপক্ষ শিবিরে।

সাম্প্রতিক সময়ে রিয়াদে হুতিদের ধারাবাহিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলাও দুই দেশের টানাপোড়েন আরও বাড়াচ্ছে। তেহরান হুতি বিদ্রোহীদের অস্ত্র দিচ্ছে বলেও অভিযোগ সৌদি আরবের, ইরান যদিও এ অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে।

সন্ত্রাসবাদের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে আরও ৪২ জনের সঙ্গে মধ্যপ্রাচ্যে খুবই জনপ্রিয় শিয়া নেতা নিমর আল নিমরের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার পর ২০১৬-র জানুয়ারিতে তেহরান ও মাশহাদের সৌদি দূতাবাসে হওয়া হামলার প্রতিক্রিয়ায় ইরানের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করে রিয়াদ।

গত বছরের ডিসেম্বরে ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি বলেন, দুই শর্তে তার দেশ সৌদি আরবের সঙ্গে সম্পর্ক ‘ভালো’ করতে পারে- ইসরায়েলের সঙ্গে বন্ধুত্ব নিয়ে বিভ্রান্তিকর অবস্থান ত্যাগ ও ইয়েমেনে অমানবিক বোমা বর্ষণ বন্ধ করতে হবে রিয়াদকে।

এ বছরের মার্চে ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে সৌদি ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদও ১০ থেকে ১৫ বছরের মধ্যে ইরানের সঙ্গে যুদ্ধ বেধে যেতে পারে বলে সতর্ক করেছিলেন। সংঘর্ষ এড়াতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে তেহরানের ওপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপেরও আহ্বান জানিয়েছিলেন তিনি।