ঢাকা ০৫:০৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ০৮ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

রোজাদারের খাদ্যাভ্যাস কেমন হওয়া উচিত

 লাইফস্টাইল ডেস্কঃ
রমযান মাস রোজাদারের জন্য স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস গড়ে তোলার একটি দারুণ সুযোগ। রোজার উল্লেখিত উপকার পেতে হলেও স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস গড়ে তোলা জরুরি।
রোজার সময় মুসলিমরা সারাদিন পানাহার থেকে বিরত থাকার পর আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব, অফিসের সহকমী সবাই মিলে একসাথে বসে ইফতার করেন। ফলে, এর মধ্যে এক ধরণের উত্সব মুখরতাও কাজ করে। ইফতারকে কেন্দ্র করে পৃথিবীর প্রান্তে বিভিন্ন ধরণের আয়োজন চলে। ইফতারের আয়োজনে সাধারণত প্রাধান্য পায় শরবত, ফলমূল, ভাজাপোড়া, মুড়ি ও অন্যান্য ভারি খাবার। এছাড়া অধিকাংশ স্থানেই ইফতারের পর তারাবীর নামায শেষে মধ্যরাতের খাবার গ্রহণ করা হয়।
মধ্যরাতের খাবারের মেন্যুতে সাধারণত ভাত ও রুটির সাথে বিভিন্ন ধরণের ভর্তা, শাক, সবজি, মাছ, মাংস, দুধ আম ইত্যাদির আয়োজন থাকে এবং মাঝে ভারি খাবার যেমন: তেহারী, বিরিয়ানী ও পোলাউর আয়োজন করতে দেখা যায়। সাহরীর সময় ও মধ্যরাতের মতই আয়োজন থাকে।
বিভিন্ন রকম খাবারের ভিড়ে একজন রোজাদারের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো বুদ্ধিমত্তার সাথে স্বাস্থ্যকর খাদ্যের অভ্যাস গড়ে তোলা। যেহেতু রোজার সময় সারাদিন না খেয়ে থাকার পরে বেশ ক্ষুধা লাগতে থাকে, ফলে ইফতারে যে কোন ধরণের খাবার খাওয়ার প্রতি আলাদা আকর্ষণ কাজ করতে থাকে। বিশেষ করে তেলে ভাজা খাবার এবং ভারী খাবারের প্রতি আকর্ষণ বেশী অনুভূত হয়। অতএব, রমযান মাসকে কাজে লাগিয়ে যদি আমরা শারীরিক উপকার অর্জন করে নিতে চাই তাহলে আমাদের ইফতার ও সাহরীর খাবার চয়নে কিছু বিষয় লক্ষ্য রাখা দরকার।
১. রাস্তার পাশে ও ফুটপাতে যে খাবার বিক্রয় করা হয় তা একই তেলে পুনঃপুনঃ ব্যবহার করা হয়। সয়াবিন ও পাম অয়েল বার বার গরম করা হলে বিভিন্ন ধরণের ক্ষতিকর হাইড্রোকার্বণ তৈরী হয়, যা খাদ্যের মধ্যে প্রবেশ করতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে, বার বার ব্যবহূত তেলে ভাজা খাবার খেলে হার্টের সমস্যা, এমনকি ক্যান্সারও হতে পারে। এ কারণে ইফতারের সময় দোকানের খাবারের পরিবর্তে বাসায় বানানো খাবারকে প্রাধান্য দিতে হবে।
২. রাস্তার পাশের আখের রস, বিভিন্ন ফলের শরবত ও পানীয় পান করলে ডায়রিয়া ও ভাইরাল হেপাটাইটিস হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। অতএব এগুলো পরিহার করতে হবে।
৩. বেশী তেলে ভাজা, পুনঃপুনঃ একই তেলে ভাজা এবং তৈলাক্ত খাবার পরিহার করতে হবে। কারণ বেশি চর্বি ও তৈলাক্ত খাবার খেলে রক্তে কোলেস্টেরল-এর পরিমান বেড়ে রক্তনালী গায়ে জমা হয়ে নালী পথতে সরু করে দিতে পারে। যা উচ্চ রক্তচাপ, হার্ট এ্যাটাক ও ব্রেইন স্ট্রোকের কারণ হতে পারে। পেয়াজু, চপ, বেগুনী, ছোলা ইত্যাদি বাসায় কম তেলে ভেজে খাওয়া যেতে পারে। এছাড়া দই, গুড় বা কলা দিয়ে ভেজানো চিড়া দিয়ে ইফতার করা যেতে পারে।
৪. নিয়মিত খাবার হিসেবে ইফতারিতে খেজুরসহ বিভিন্ন মিষ্টি ফল এবং মিষ্টি শরবত রাখা যেতে পারে। কারণ সারাদিন উপোষ থাকার পর রক্তে গ্লুকোজ সরবরাহ কমে যায়, ফলে যে খাবার দ্রুত রক্তে গ্লুকোজের পরিমান বাড়ায় এমন খাবার ইফতারে রাখা দরকার। পাশাপাশি বিভিন্ন ধরণের সবজির আইটেম থাকাও প্রয়োজন। এছাড়া রুচির বিভিন্নতা আনতে দই-চিড়া, সুপ, হালিম রাখা যেতে পারে। অবশ্যই তা হবে পরিমাণ মতো।
৫. বাংলাদেশে দুপুরে ও রাতে যে খাবারগুলোর আয়োজন থাকে তা সাধারণত স্বাস্থ্যকর ও সুপাচ্য হয়। সে হিসেবে একই খাবার যথাক্রমে মধ্যরাতে এবং সাহরীর সময় খাওয়া যাবে। মধ্যরাতের খাবার ভাত বা রুটি সাথে পর্যাপ্ত সবজি এবং প্রয়োজনীয় পরিমাণ প্রোটিন সরবরাহের জন্য মাছ, মাংস, ডিম ইত্যাদি রাখা প্রয়োজন। গরু ও খাসীর মাংসের ক্ষেত্রে চর্বি ছাড়িয়ে নেয়া জরুরী। মাঝে মাঝে রুচির বৈচিত্র আনতে খিচুড়ী, পোলাউ, রোস্ট, রেজালা ইত্যাদি ভারি খাবারের আয়োজন করা যেতে পারে। তবে এগুলো মাত্রাতিরিক্ত গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকতে হবে এবং খেয়াল রাখতে হবে যেন এ খাবারগুলো নিয়মিত রুটিনে পরিণত না হয়ে যায়।
৬. শেষ রাতের খাবার এমন হতে হবে যা সুপাচ্য এবং দিনের শুরুতে দীর্ঘ সময় প্রয়োজনীয় শক্তির যোগান দিতে পারে। এজন্য সাহরীর খাবারে রুটি বা ভাত থাকা জরুরী। ভাত, রুটি, আলু, ইত্যাদিকে বলে কমপ্লেক্স কার্বোহাইড্রেট শর্করা। যা ধীরে ধীরে হজম হয়। যেহেতু দিনে দীর্ঘ সময় না খেয়ে থাকতে হবে সেহেতু শুধু শরবত বা  অন্যান্য চিনি কিংবা দুধের তৈরী খাবার সেহরীতে গ্রহণ না করাই ভালো। এছাড়া সেহরীতে আশঁযুক্ত খাবার শাক সবজি বেশি খেতে হবে। যা ধীরে ধীরে হজম হয়ে শরীরকে সুস্থ রাখতে সহায়তা করে।
৭. প্রত্যেক বেলার খাবারে পর্যাপ্ত পানি পান করতে হবে এবং অতিরিক্ত লবণ পরিহার করা জরুরী। উপরোক্ত বিষয়গুলো সুস্থ মানুষের পাশাপাশি যারা ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপসহ নানা রোগে ভুগছেন তাদের জন্যও প্রযোজ্য। তবে ব্যক্তি পর্যায়ে রোগ ভেদে খাবারের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
৮. উপরোক্ত বিষয়গুলো তাদের জন্যই প্রযোজ্য যারা তুলনামূলক সুস্থ। অসুস্থ ব্যক্তি যেমন-ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তি রোজা রাখতে চাইলে চিকিত্সকের সঙ্গে পরামর্শ করে খাদ্যাভ্যাসের রুটিন তৈরি করে নেয়া দরকার।
লেখক : পরিচালক
দি লিভার সেন্টার, ঢাকা, বাংলাদেশ
মির্জা গোলাম হাফিজ রোড
বাড়ি নং-৬৪, রোড নং-৮/এ
ধানমন্ডি, ঢাকা
ট্যাগস
আপলোডকারীর তথ্য

মুরাদনগরে খাল খননের নামে চলছে হরিলুট, মাটি বিক্রি হচ্ছে ইটভাটায়!

রোজাদারের খাদ্যাভ্যাস কেমন হওয়া উচিত

আপডেট সময় ০৯:২৩:১৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৬ মে ২০১৮
 লাইফস্টাইল ডেস্কঃ
রমযান মাস রোজাদারের জন্য স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস গড়ে তোলার একটি দারুণ সুযোগ। রোজার উল্লেখিত উপকার পেতে হলেও স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস গড়ে তোলা জরুরি।
রোজার সময় মুসলিমরা সারাদিন পানাহার থেকে বিরত থাকার পর আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব, অফিসের সহকমী সবাই মিলে একসাথে বসে ইফতার করেন। ফলে, এর মধ্যে এক ধরণের উত্সব মুখরতাও কাজ করে। ইফতারকে কেন্দ্র করে পৃথিবীর প্রান্তে বিভিন্ন ধরণের আয়োজন চলে। ইফতারের আয়োজনে সাধারণত প্রাধান্য পায় শরবত, ফলমূল, ভাজাপোড়া, মুড়ি ও অন্যান্য ভারি খাবার। এছাড়া অধিকাংশ স্থানেই ইফতারের পর তারাবীর নামায শেষে মধ্যরাতের খাবার গ্রহণ করা হয়।
মধ্যরাতের খাবারের মেন্যুতে সাধারণত ভাত ও রুটির সাথে বিভিন্ন ধরণের ভর্তা, শাক, সবজি, মাছ, মাংস, দুধ আম ইত্যাদির আয়োজন থাকে এবং মাঝে ভারি খাবার যেমন: তেহারী, বিরিয়ানী ও পোলাউর আয়োজন করতে দেখা যায়। সাহরীর সময় ও মধ্যরাতের মতই আয়োজন থাকে।
বিভিন্ন রকম খাবারের ভিড়ে একজন রোজাদারের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো বুদ্ধিমত্তার সাথে স্বাস্থ্যকর খাদ্যের অভ্যাস গড়ে তোলা। যেহেতু রোজার সময় সারাদিন না খেয়ে থাকার পরে বেশ ক্ষুধা লাগতে থাকে, ফলে ইফতারে যে কোন ধরণের খাবার খাওয়ার প্রতি আলাদা আকর্ষণ কাজ করতে থাকে। বিশেষ করে তেলে ভাজা খাবার এবং ভারী খাবারের প্রতি আকর্ষণ বেশী অনুভূত হয়। অতএব, রমযান মাসকে কাজে লাগিয়ে যদি আমরা শারীরিক উপকার অর্জন করে নিতে চাই তাহলে আমাদের ইফতার ও সাহরীর খাবার চয়নে কিছু বিষয় লক্ষ্য রাখা দরকার।
১. রাস্তার পাশে ও ফুটপাতে যে খাবার বিক্রয় করা হয় তা একই তেলে পুনঃপুনঃ ব্যবহার করা হয়। সয়াবিন ও পাম অয়েল বার বার গরম করা হলে বিভিন্ন ধরণের ক্ষতিকর হাইড্রোকার্বণ তৈরী হয়, যা খাদ্যের মধ্যে প্রবেশ করতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে, বার বার ব্যবহূত তেলে ভাজা খাবার খেলে হার্টের সমস্যা, এমনকি ক্যান্সারও হতে পারে। এ কারণে ইফতারের সময় দোকানের খাবারের পরিবর্তে বাসায় বানানো খাবারকে প্রাধান্য দিতে হবে।
২. রাস্তার পাশের আখের রস, বিভিন্ন ফলের শরবত ও পানীয় পান করলে ডায়রিয়া ও ভাইরাল হেপাটাইটিস হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। অতএব এগুলো পরিহার করতে হবে।
৩. বেশী তেলে ভাজা, পুনঃপুনঃ একই তেলে ভাজা এবং তৈলাক্ত খাবার পরিহার করতে হবে। কারণ বেশি চর্বি ও তৈলাক্ত খাবার খেলে রক্তে কোলেস্টেরল-এর পরিমান বেড়ে রক্তনালী গায়ে জমা হয়ে নালী পথতে সরু করে দিতে পারে। যা উচ্চ রক্তচাপ, হার্ট এ্যাটাক ও ব্রেইন স্ট্রোকের কারণ হতে পারে। পেয়াজু, চপ, বেগুনী, ছোলা ইত্যাদি বাসায় কম তেলে ভেজে খাওয়া যেতে পারে। এছাড়া দই, গুড় বা কলা দিয়ে ভেজানো চিড়া দিয়ে ইফতার করা যেতে পারে।
৪. নিয়মিত খাবার হিসেবে ইফতারিতে খেজুরসহ বিভিন্ন মিষ্টি ফল এবং মিষ্টি শরবত রাখা যেতে পারে। কারণ সারাদিন উপোষ থাকার পর রক্তে গ্লুকোজ সরবরাহ কমে যায়, ফলে যে খাবার দ্রুত রক্তে গ্লুকোজের পরিমান বাড়ায় এমন খাবার ইফতারে রাখা দরকার। পাশাপাশি বিভিন্ন ধরণের সবজির আইটেম থাকাও প্রয়োজন। এছাড়া রুচির বিভিন্নতা আনতে দই-চিড়া, সুপ, হালিম রাখা যেতে পারে। অবশ্যই তা হবে পরিমাণ মতো।
৫. বাংলাদেশে দুপুরে ও রাতে যে খাবারগুলোর আয়োজন থাকে তা সাধারণত স্বাস্থ্যকর ও সুপাচ্য হয়। সে হিসেবে একই খাবার যথাক্রমে মধ্যরাতে এবং সাহরীর সময় খাওয়া যাবে। মধ্যরাতের খাবার ভাত বা রুটি সাথে পর্যাপ্ত সবজি এবং প্রয়োজনীয় পরিমাণ প্রোটিন সরবরাহের জন্য মাছ, মাংস, ডিম ইত্যাদি রাখা প্রয়োজন। গরু ও খাসীর মাংসের ক্ষেত্রে চর্বি ছাড়িয়ে নেয়া জরুরী। মাঝে মাঝে রুচির বৈচিত্র আনতে খিচুড়ী, পোলাউ, রোস্ট, রেজালা ইত্যাদি ভারি খাবারের আয়োজন করা যেতে পারে। তবে এগুলো মাত্রাতিরিক্ত গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকতে হবে এবং খেয়াল রাখতে হবে যেন এ খাবারগুলো নিয়মিত রুটিনে পরিণত না হয়ে যায়।
৬. শেষ রাতের খাবার এমন হতে হবে যা সুপাচ্য এবং দিনের শুরুতে দীর্ঘ সময় প্রয়োজনীয় শক্তির যোগান দিতে পারে। এজন্য সাহরীর খাবারে রুটি বা ভাত থাকা জরুরী। ভাত, রুটি, আলু, ইত্যাদিকে বলে কমপ্লেক্স কার্বোহাইড্রেট শর্করা। যা ধীরে ধীরে হজম হয়। যেহেতু দিনে দীর্ঘ সময় না খেয়ে থাকতে হবে সেহেতু শুধু শরবত বা  অন্যান্য চিনি কিংবা দুধের তৈরী খাবার সেহরীতে গ্রহণ না করাই ভালো। এছাড়া সেহরীতে আশঁযুক্ত খাবার শাক সবজি বেশি খেতে হবে। যা ধীরে ধীরে হজম হয়ে শরীরকে সুস্থ রাখতে সহায়তা করে।
৭. প্রত্যেক বেলার খাবারে পর্যাপ্ত পানি পান করতে হবে এবং অতিরিক্ত লবণ পরিহার করা জরুরী। উপরোক্ত বিষয়গুলো সুস্থ মানুষের পাশাপাশি যারা ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপসহ নানা রোগে ভুগছেন তাদের জন্যও প্রযোজ্য। তবে ব্যক্তি পর্যায়ে রোগ ভেদে খাবারের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
৮. উপরোক্ত বিষয়গুলো তাদের জন্যই প্রযোজ্য যারা তুলনামূলক সুস্থ। অসুস্থ ব্যক্তি যেমন-ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তি রোজা রাখতে চাইলে চিকিত্সকের সঙ্গে পরামর্শ করে খাদ্যাভ্যাসের রুটিন তৈরি করে নেয়া দরকার।
লেখক : পরিচালক
দি লিভার সেন্টার, ঢাকা, বাংলাদেশ
মির্জা গোলাম হাফিজ রোড
বাড়ি নং-৬৪, রোড নং-৮/এ
ধানমন্ডি, ঢাকা