ঢাকা ০৩:৩২ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৪ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

খালেদার জামিন ২ মামলায় স্থগিত চেয়ে আবেদন

জাতীয় ডেস্কঃ

হত্যা ও বিশেষ ক্ষমতা আইনে কুমিল্লায় করা দুই মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে ছয় মাসের জামিন দিয়েছেন হাইকোর্ট। নড়াইলে করা মানহানির মামলায় জামিনের আবেদন উত্থাপিত হয়নি মর্মে খারিজ করেছেন আদালত। ওই মামলায় খালেদা জিয়ার আইনজীবীদের নিম্ন আদালতে যেতে বলা হয়েছে। বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি জে বি এম হাসানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ গতকাল সোমবার এ আদেশ দেন। নড়াইলের মামলায় সঠিক তথ্য জানাতে না পারায় খালেদা জিয়ার আইনজীবীদের প্রতি অসন্তোষ প্রকাশ করে আদালত বলেন, ‘আপনারা মামলার কোনো খোঁজই রাখেন না। এটা খুবই দুঃখজনক।’

এদিকে দুই মামলায় খালেদার জামিন মঞ্জুর করে আদেশ দেওয়ার পরপরই তা স্থগিত চেয়ে আপিল বিভাগের চেম্বার জজ আদালতে আবেদন করেছে রাষ্ট্রপক্ষ। ওই আবেদনের ওপর আজ মঙ্গলবার শুনানি হবে।

এ ছাড়া রাজাকার-আলবদর বাহিনীর নেতাকর্মীদের মন্ত্রী-এমপি বানিয়ে মানহানিকর অপরাধ করার অভিযোগে ২০১৬ সালের ৩ নভেম্বর ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে করা মামলায় এবং মিথ্যা তথ্য দিয়ে জন্মদিন পালনের অভিযোগে ২০১৬ সালের ৩০ আগস্ট খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে ঢাকার আদালতে করা মামলায় গতকাল বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহীমের নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চে শুনানি হয়নি। আজ শুনানির জন্য দিন ধার্য করা হয়েছে।

গতকাল দুই মামলায় জামিন মঞ্জুর হওয়ার পর খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা বলেন, সরকার যদি আর কোনো মামলায় গ্রেপ্তার না দেখায় তবে খালেদা জিয়ার মুক্তি পেতে আইনগত বাধা নেই। তবে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়ে তাঁর আইনজীবীদের বক্তব্য স্ট্যান্ডবাজি। আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দুই মামলায় জামিন আদেশের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ আবেদন করায় এবং জিয়ার অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় আপিল বিভাগের জামিনের রায় প্রকাশিত না হওয়ায় এ মুহূর্তে মুক্তি পাচ্ছেন না খালেদা জিয়া।

গতকাল প্রথমে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের জগমোহনপুর এলাকায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে আইকন পরিবহনের একটি বাসে ২০১৫ সালের ২ ফেব্রুয়ারি পেট্রলবোমা মেরে আট যাত্রীকে হত্যা ও ২০ জনকে আহত করার অভিযোগে ৩ ফেব্রুয়ারি করা মামলায় জামিন মঞ্জুর করেন আদালত। এরপর নড়াইলের মামলায় আদেশ দেন। নড়াইলের মামলার পর কুমিল্লার বিশেষ ক্ষমতা আইনের মামলায় জামিন মঞ্জুর করেন আদালত।

এরপর নড়াইলে করা মানহানির মামলার বিষয়ে খালেদা জিয়ার আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেনের কাছে সর্বশেষ তথ্য জানতে চান আদালত। খন্দকার মাহবুব হোসেন পেছনের দিকে তাকালে ব্যারিস্টার কায়সার কামাল এগিয়ে গিয়ে ফিসফিস করে কিছু বলেন। এরপর খন্দকার মাহবুব আদালতকে আমতা আমতা করে বলেন, ‘আমাদের ঠিকমতো নথি দেখতে দেওয়া হয় না।’ তখন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ড. মো. বশির উল্লাহ আদালতকে বলেন, আগামী ৩০ আগস্ট দিন ধার্য রেখেছেন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত। ওই সময় আদালত অসন্তোষ প্রকাশ করে খালেদা জিয়ার আইনজীবীদের উদ্দেশ করে বলেন, ‘আপনারা মামলার খোঁজই রাখেন না। ডিকটেশন নিয়ে এভাবে মামলা করেন, এটা খুবই দুঃখজনক।’

নড়াইলের মামলায় সঠিক তথ্য আদালতকে না জানাতে পারায় অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম খান সজলসহ বিএনপিপন্থী বেশ কয়েকজন আইনজীবী ব্যারিস্টার কায়সার কামালের ওপর চড়াও হন। তাঁরা উত্তেজিত হয়ে আদালত কক্ষের মধ্যেই কায়সার কামালকে বিদ্রূপ করতে থাকলে অ্যাডভোকেট মাসুদ আহমেদ তালুকদার পরিস্থিতি শান্ত করেন।

আদালত থেকে বেরিয়ে বেশ কয়েকজন আইনজীবী বলেন, খালেদা জিয়ার মামলা যাঁদের দেখার দায়িত্ব তাঁরা সঠিকভাবে তা পালন না করায় আজ (সোমবার) নড়াইলের মামলায় জামিন পেলেন না খালেদা জিয়া।

কুমিল্লায় এক মামলায় শুনানি : কুমিল্লা থেকে নিজস্ব প্রতিবেদক জানান, কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে যাত্রীবাহী নৈশকোচে পেট্রল বোমা হামলার ঘটনায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে করা একটি মামলায় খালেদা জিয়াকে গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদনের ওপর শুনানি হয়েছে। গতকাল দুপুরে কুমিল্লা জেলা ও দায়রা জজ আদালতে ওই শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। আদালত পরবর্তী সময়ে আদেশ দেবেন বলে জানিয়েছেন।

ওই মামলায় খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে জারি থাকা ওয়ারেন্ট তামিলের প্রতিবেদন পাননি আদালত। প্রতিবেদনটি না পেলে কিংবা এই মামলায় তাঁকে গ্রেপ্তার না দেখানো পর্যন্ত তাঁর আইনজীবীরা জামিন আবেদন করতে পারবেন না বলে জানা যায়।

কুমিল্লার আদালত সূত্রে জানা যায়, চৌদ্দগ্রামে আট যাত্রী হত্যা ও নাশকতার ঘটনায় বিশেষ ক্ষমতা আইনের মামলায় খালেদাকে গ্রেপ্তার দেখানোর প্রক্রিয়া এখনো শুরু হয়নি। বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন থাকায় জামিন আবেদন করতে পারছেন না খালেদার আইনজীবীরা। গ্রেপ্তার দেখানো হলেই আসামিপক্ষের আইনজীবী জামিন আবেদন দাখিল করতে পারবেন।

ট্যাগস
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

মুরাদনগরে মাদ্রাসায় যান না পাঁচ বছর নিয়মিত বেতন তোলেন শিক্ষক

খালেদার জামিন ২ মামলায় স্থগিত চেয়ে আবেদন

আপডেট সময় ০২:৩৭:৩০ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৯ মে ২০১৮
জাতীয় ডেস্কঃ

হত্যা ও বিশেষ ক্ষমতা আইনে কুমিল্লায় করা দুই মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে ছয় মাসের জামিন দিয়েছেন হাইকোর্ট। নড়াইলে করা মানহানির মামলায় জামিনের আবেদন উত্থাপিত হয়নি মর্মে খারিজ করেছেন আদালত। ওই মামলায় খালেদা জিয়ার আইনজীবীদের নিম্ন আদালতে যেতে বলা হয়েছে। বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি জে বি এম হাসানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ গতকাল সোমবার এ আদেশ দেন। নড়াইলের মামলায় সঠিক তথ্য জানাতে না পারায় খালেদা জিয়ার আইনজীবীদের প্রতি অসন্তোষ প্রকাশ করে আদালত বলেন, ‘আপনারা মামলার কোনো খোঁজই রাখেন না। এটা খুবই দুঃখজনক।’

এদিকে দুই মামলায় খালেদার জামিন মঞ্জুর করে আদেশ দেওয়ার পরপরই তা স্থগিত চেয়ে আপিল বিভাগের চেম্বার জজ আদালতে আবেদন করেছে রাষ্ট্রপক্ষ। ওই আবেদনের ওপর আজ মঙ্গলবার শুনানি হবে।

এ ছাড়া রাজাকার-আলবদর বাহিনীর নেতাকর্মীদের মন্ত্রী-এমপি বানিয়ে মানহানিকর অপরাধ করার অভিযোগে ২০১৬ সালের ৩ নভেম্বর ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে করা মামলায় এবং মিথ্যা তথ্য দিয়ে জন্মদিন পালনের অভিযোগে ২০১৬ সালের ৩০ আগস্ট খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে ঢাকার আদালতে করা মামলায় গতকাল বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহীমের নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চে শুনানি হয়নি। আজ শুনানির জন্য দিন ধার্য করা হয়েছে।

গতকাল দুই মামলায় জামিন মঞ্জুর হওয়ার পর খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা বলেন, সরকার যদি আর কোনো মামলায় গ্রেপ্তার না দেখায় তবে খালেদা জিয়ার মুক্তি পেতে আইনগত বাধা নেই। তবে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়ে তাঁর আইনজীবীদের বক্তব্য স্ট্যান্ডবাজি। আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দুই মামলায় জামিন আদেশের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ আবেদন করায় এবং জিয়ার অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় আপিল বিভাগের জামিনের রায় প্রকাশিত না হওয়ায় এ মুহূর্তে মুক্তি পাচ্ছেন না খালেদা জিয়া।

গতকাল প্রথমে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের জগমোহনপুর এলাকায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে আইকন পরিবহনের একটি বাসে ২০১৫ সালের ২ ফেব্রুয়ারি পেট্রলবোমা মেরে আট যাত্রীকে হত্যা ও ২০ জনকে আহত করার অভিযোগে ৩ ফেব্রুয়ারি করা মামলায় জামিন মঞ্জুর করেন আদালত। এরপর নড়াইলের মামলায় আদেশ দেন। নড়াইলের মামলার পর কুমিল্লার বিশেষ ক্ষমতা আইনের মামলায় জামিন মঞ্জুর করেন আদালত।

এরপর নড়াইলে করা মানহানির মামলার বিষয়ে খালেদা জিয়ার আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেনের কাছে সর্বশেষ তথ্য জানতে চান আদালত। খন্দকার মাহবুব হোসেন পেছনের দিকে তাকালে ব্যারিস্টার কায়সার কামাল এগিয়ে গিয়ে ফিসফিস করে কিছু বলেন। এরপর খন্দকার মাহবুব আদালতকে আমতা আমতা করে বলেন, ‘আমাদের ঠিকমতো নথি দেখতে দেওয়া হয় না।’ তখন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ড. মো. বশির উল্লাহ আদালতকে বলেন, আগামী ৩০ আগস্ট দিন ধার্য রেখেছেন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত। ওই সময় আদালত অসন্তোষ প্রকাশ করে খালেদা জিয়ার আইনজীবীদের উদ্দেশ করে বলেন, ‘আপনারা মামলার খোঁজই রাখেন না। ডিকটেশন নিয়ে এভাবে মামলা করেন, এটা খুবই দুঃখজনক।’

নড়াইলের মামলায় সঠিক তথ্য আদালতকে না জানাতে পারায় অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম খান সজলসহ বিএনপিপন্থী বেশ কয়েকজন আইনজীবী ব্যারিস্টার কায়সার কামালের ওপর চড়াও হন। তাঁরা উত্তেজিত হয়ে আদালত কক্ষের মধ্যেই কায়সার কামালকে বিদ্রূপ করতে থাকলে অ্যাডভোকেট মাসুদ আহমেদ তালুকদার পরিস্থিতি শান্ত করেন।

আদালত থেকে বেরিয়ে বেশ কয়েকজন আইনজীবী বলেন, খালেদা জিয়ার মামলা যাঁদের দেখার দায়িত্ব তাঁরা সঠিকভাবে তা পালন না করায় আজ (সোমবার) নড়াইলের মামলায় জামিন পেলেন না খালেদা জিয়া।

কুমিল্লায় এক মামলায় শুনানি : কুমিল্লা থেকে নিজস্ব প্রতিবেদক জানান, কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে যাত্রীবাহী নৈশকোচে পেট্রল বোমা হামলার ঘটনায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে করা একটি মামলায় খালেদা জিয়াকে গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদনের ওপর শুনানি হয়েছে। গতকাল দুপুরে কুমিল্লা জেলা ও দায়রা জজ আদালতে ওই শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। আদালত পরবর্তী সময়ে আদেশ দেবেন বলে জানিয়েছেন।

ওই মামলায় খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে জারি থাকা ওয়ারেন্ট তামিলের প্রতিবেদন পাননি আদালত। প্রতিবেদনটি না পেলে কিংবা এই মামলায় তাঁকে গ্রেপ্তার না দেখানো পর্যন্ত তাঁর আইনজীবীরা জামিন আবেদন করতে পারবেন না বলে জানা যায়।

কুমিল্লার আদালত সূত্রে জানা যায়, চৌদ্দগ্রামে আট যাত্রী হত্যা ও নাশকতার ঘটনায় বিশেষ ক্ষমতা আইনের মামলায় খালেদাকে গ্রেপ্তার দেখানোর প্রক্রিয়া এখনো শুরু হয়নি। বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন থাকায় জামিন আবেদন করতে পারছেন না খালেদার আইনজীবীরা। গ্রেপ্তার দেখানো হলেই আসামিপক্ষের আইনজীবী জামিন আবেদন দাখিল করতে পারবেন।