ঢাকা ০১:৩৩ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ০১ অক্টোবর ২০২৪, ১৫ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আলোকচিত্রী শহিদুল ৭ দিনের রিমান্ডে

জাতীয় ডেস্কঃ

রাজধানীর দৃক গ্যালারির কর্ণধার ও খ্যাতিমান আলোকচিত্রী ড. শহিদুল আলমকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৭ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।

সোমবার (০৬ আগস্ট ২০১৮) বিকেলে রমনা থানায় দায়ের হওয়া তথ্যপ্রযুক্তির ৫৭ ধারায় একটি মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে হাজির করা হয়। এ সময় তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১০দিনের রিমান্ড আবেদন করে পুলিশ।

‍শুনানি শেষে ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক আসাদুজ্জামান নূর চারদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

এর আগে রবিবার (০৫ আগস্ট) রাতে ধানমন্ডির বাসা থেকে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) পরিচয়ে শহিদুলকে তুলে নেওয়ার অভিযোগ করেন তার পরিবারের সদস্যরা। একই অভিযোগে গণমাধ্যমে বিবৃতিও দেয় দৃক গ্যালারি।

পরে সকালে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জানান, শহিদুল আলমকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডিবি কার্যালয়ে নেওয়া হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানানো হবে।

পরে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের আবেদন জানিয়ে দুপুরে তাকে আদালতে হাজির করানো হয়েছে।

পুলিশ সূত্রে জানা যায়, ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) উত্তর বিভাগের পরিদর্শক মেহেদী হাসান বাদী হয়ে শহিদুল আলমের বিরুদ্ধে তথ্যপ্রযুক্তি আইনে মামলাটি করেন।

মামলায় তার বিরুদ্ধে ফেসবুক ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় সরকারের বিরুদ্ধে অপপ্রচার ও চলমান আন্দোলন নিয়ে মিথ্যা তথ্য দিয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করার অভিযোগ আনা হয়েছে।

শহিদুলের স্ত্রী রেহনুমা জানান, চলমান ছাত্র বিক্ষোভ নিয়ে শহিদুল সম্প্রতি একটি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমকে সাক্ষাৎকার দেন। ফেসবুকেও বিভিন্ন সময় লাইভে এসে কথা বলেন তিনি।

তথ্য-প্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারায় করা মামলায় তার বিরুদ্ধে ‘কল্পনাপ্রসূত তথ্যের’ মাধ্যমে জনসাধারণের বিভিন্ন শ্রেণির মধ্যে ‘মিথ্যা প্রচার’ চালানো, উসকানিমূলক তথ্য উপস্থাপন, সরকারকে ‘প্রশ্নবিদ্ধ ও অকার্যকর’ হিসেবে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে উপস্থাপন, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির ‘অবনতি ঘটিয়ে’ জনমনে ‘ভীতি ও সন্ত্রাস ছড়িয়ে’ দেওয়ার ষড়যন্ত্র এবং তা বাস্তবায়নে ইলেকট্রনিক বিন্যাসে ‘অপপ্রচারের’ অভিযোগ আনা হয়েছে।

আল জাজিরাকে দেওয়া সাক্ষাতকারে তিনি সরকারের বিরুদ্ধে তীব্র সমালোচনা করেন। তাকে আলজাজিরার পক্ষ থেকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, নিরাপদ সড়কের দাবিতে যে আন্দোলন চলছে তা কি শুধুমাত্র সড়কের নিরাপত্তার অভাবেই শুরু হয়েছে নাকি এর পেছনে আরো বড় কিছু রয়েছে?

এমন প্রশ্নের জবাবে শহিদুল আলম বলেন, একটি অনির্বাচিত সরকার দীর্ঘ দিন ধরে ক্ষমতায় রয়েছে, যারা আসলে জনগণের ম্যান্ডেট ছাড়াই শাসন করছে, ব্যাংক লুট করছে, মিডিয়ায় নিয়ন্ত্রণ আরোপ করেছে, মোবাইল ইন্টারনেট বন্ধ করে দিয়েছে, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে চলেছে, বিরোধী মতের লোকজনকে গুম করা হচ্ছে, সরকারের প্রত্যেকটি স্তরে ঘুষ, এসবই চলছে দেশে। যে আবেগ বা ক্ষোভের বহি:প্রকাশ ঘটেছে এই আন্দোলনে তা আসলে শুধুমাত্র নিরাপদ সড়কের দাবিতে নয় এসবের কারণেও হয়েছে।

আলজাজিরাকে দেয়া সংক্ষিপ্ত সাক্ষাৎকারে শহিদুল আলম চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলন নিয়েও বক্তব্য দেন। তিনি বলেন, ‘ক্ষমতাসীন দলের নিকটজনেরা সরকারি চাকরি পাচ্ছে, চরম একটা বৈষম্য রয়েছে সেখানে। আন্দোলনকারীরা সেটার সংস্কার করতে বলেছে সেটাও প্রধানমন্ত্রী আশ্বাস দিয়েছেন, অনেক দিন হয়ে গেলেও তা বাস্তবায়ন করেননি।’

তিনি আরো বলেন, ‘আজকে রাস্তায় যা হচ্ছে এটার কারণ খোঁজা হচ্ছে। অথচ পুলিশ এই নিরাপদ সড়কের দাবি নিয়ে রাস্তায় নামা নিরস্ত্র শিক্ষার্থীদের নিবৃত্ত করতে সরকার দলীয় স্বশস্ত্র লোকদের সহযোগিতা নিয়েছে। এবং ঠিক সেমতে আজ আমি নিজেও রাস্তায় দেখেছি নিরস্ত্র ছাত্রদের ওপর অস্ত্রধারীরা ঝাঁপিয়ে পড়ছে এবং পুলিশ তা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছে এবং তারা কিছু কিছু ক্ষেত্রে একযোগে হামলা করছে।’

সরকারের হিসেব নিকেশে ভুল হচ্ছে মন্তব্য করে শহিদুল বলেন, বিরোধী মতের সবাইকে শত্রু জ্ঞান করে তাদের ধ্বংস করা হচ্ছে। পুরো রাষ্ট্র কাঠামোর সব কলকব্জা ব্যবহার করে স্বশস্ত্র পেটোয়া বাহিনী দিয়ে তাদেরকে শেষ করে দিতে চাইছে সরকার।

ট্যাগস
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

মুরাদনগরে জাতীয় কন্যা শিশু দিবস পালিত

আলোকচিত্রী শহিদুল ৭ দিনের রিমান্ডে

আপডেট সময় ০৩:০১:৩৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ৬ অগাস্ট ২০১৮
জাতীয় ডেস্কঃ

রাজধানীর দৃক গ্যালারির কর্ণধার ও খ্যাতিমান আলোকচিত্রী ড. শহিদুল আলমকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৭ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।

সোমবার (০৬ আগস্ট ২০১৮) বিকেলে রমনা থানায় দায়ের হওয়া তথ্যপ্রযুক্তির ৫৭ ধারায় একটি মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে হাজির করা হয়। এ সময় তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১০দিনের রিমান্ড আবেদন করে পুলিশ।

‍শুনানি শেষে ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক আসাদুজ্জামান নূর চারদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

এর আগে রবিবার (০৫ আগস্ট) রাতে ধানমন্ডির বাসা থেকে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) পরিচয়ে শহিদুলকে তুলে নেওয়ার অভিযোগ করেন তার পরিবারের সদস্যরা। একই অভিযোগে গণমাধ্যমে বিবৃতিও দেয় দৃক গ্যালারি।

পরে সকালে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জানান, শহিদুল আলমকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডিবি কার্যালয়ে নেওয়া হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানানো হবে।

পরে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের আবেদন জানিয়ে দুপুরে তাকে আদালতে হাজির করানো হয়েছে।

পুলিশ সূত্রে জানা যায়, ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) উত্তর বিভাগের পরিদর্শক মেহেদী হাসান বাদী হয়ে শহিদুল আলমের বিরুদ্ধে তথ্যপ্রযুক্তি আইনে মামলাটি করেন।

মামলায় তার বিরুদ্ধে ফেসবুক ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় সরকারের বিরুদ্ধে অপপ্রচার ও চলমান আন্দোলন নিয়ে মিথ্যা তথ্য দিয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করার অভিযোগ আনা হয়েছে।

শহিদুলের স্ত্রী রেহনুমা জানান, চলমান ছাত্র বিক্ষোভ নিয়ে শহিদুল সম্প্রতি একটি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমকে সাক্ষাৎকার দেন। ফেসবুকেও বিভিন্ন সময় লাইভে এসে কথা বলেন তিনি।

তথ্য-প্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারায় করা মামলায় তার বিরুদ্ধে ‘কল্পনাপ্রসূত তথ্যের’ মাধ্যমে জনসাধারণের বিভিন্ন শ্রেণির মধ্যে ‘মিথ্যা প্রচার’ চালানো, উসকানিমূলক তথ্য উপস্থাপন, সরকারকে ‘প্রশ্নবিদ্ধ ও অকার্যকর’ হিসেবে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে উপস্থাপন, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির ‘অবনতি ঘটিয়ে’ জনমনে ‘ভীতি ও সন্ত্রাস ছড়িয়ে’ দেওয়ার ষড়যন্ত্র এবং তা বাস্তবায়নে ইলেকট্রনিক বিন্যাসে ‘অপপ্রচারের’ অভিযোগ আনা হয়েছে।

আল জাজিরাকে দেওয়া সাক্ষাতকারে তিনি সরকারের বিরুদ্ধে তীব্র সমালোচনা করেন। তাকে আলজাজিরার পক্ষ থেকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, নিরাপদ সড়কের দাবিতে যে আন্দোলন চলছে তা কি শুধুমাত্র সড়কের নিরাপত্তার অভাবেই শুরু হয়েছে নাকি এর পেছনে আরো বড় কিছু রয়েছে?

এমন প্রশ্নের জবাবে শহিদুল আলম বলেন, একটি অনির্বাচিত সরকার দীর্ঘ দিন ধরে ক্ষমতায় রয়েছে, যারা আসলে জনগণের ম্যান্ডেট ছাড়াই শাসন করছে, ব্যাংক লুট করছে, মিডিয়ায় নিয়ন্ত্রণ আরোপ করেছে, মোবাইল ইন্টারনেট বন্ধ করে দিয়েছে, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে চলেছে, বিরোধী মতের লোকজনকে গুম করা হচ্ছে, সরকারের প্রত্যেকটি স্তরে ঘুষ, এসবই চলছে দেশে। যে আবেগ বা ক্ষোভের বহি:প্রকাশ ঘটেছে এই আন্দোলনে তা আসলে শুধুমাত্র নিরাপদ সড়কের দাবিতে নয় এসবের কারণেও হয়েছে।

আলজাজিরাকে দেয়া সংক্ষিপ্ত সাক্ষাৎকারে শহিদুল আলম চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলন নিয়েও বক্তব্য দেন। তিনি বলেন, ‘ক্ষমতাসীন দলের নিকটজনেরা সরকারি চাকরি পাচ্ছে, চরম একটা বৈষম্য রয়েছে সেখানে। আন্দোলনকারীরা সেটার সংস্কার করতে বলেছে সেটাও প্রধানমন্ত্রী আশ্বাস দিয়েছেন, অনেক দিন হয়ে গেলেও তা বাস্তবায়ন করেননি।’

তিনি আরো বলেন, ‘আজকে রাস্তায় যা হচ্ছে এটার কারণ খোঁজা হচ্ছে। অথচ পুলিশ এই নিরাপদ সড়কের দাবি নিয়ে রাস্তায় নামা নিরস্ত্র শিক্ষার্থীদের নিবৃত্ত করতে সরকার দলীয় স্বশস্ত্র লোকদের সহযোগিতা নিয়েছে। এবং ঠিক সেমতে আজ আমি নিজেও রাস্তায় দেখেছি নিরস্ত্র ছাত্রদের ওপর অস্ত্রধারীরা ঝাঁপিয়ে পড়ছে এবং পুলিশ তা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছে এবং তারা কিছু কিছু ক্ষেত্রে একযোগে হামলা করছে।’

সরকারের হিসেব নিকেশে ভুল হচ্ছে মন্তব্য করে শহিদুল বলেন, বিরোধী মতের সবাইকে শত্রু জ্ঞান করে তাদের ধ্বংস করা হচ্ছে। পুরো রাষ্ট্র কাঠামোর সব কলকব্জা ব্যবহার করে স্বশস্ত্র পেটোয়া বাহিনী দিয়ে তাদেরকে শেষ করে দিতে চাইছে সরকার।