ঢাকা ০৯:৩০ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৩ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ইয়েমেনে সব পক্ষ যুদ্ধাপরাধ করেছে

 অন্তর্জাতিক ডেস্কঃ

ইয়েমেন যুদ্ধে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষ ‘সম্ভবত’ যুদ্ধাপরাধ করেছে এবং এ যুদ্ধে সাধারণ মানুষ হতাহতের সংখ্যা কমাতে কোনো পক্ষই যথাযথ উদ্যোগ নেয়নি—সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে এমন মন্তব্য করেছে জাতিসংঘের একটি তদন্তদল। প্রতিবেদনটি সামনের মাসে জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদে উত্থাপন করা হবে। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র সতর্ক করে দিয়ে বলেছে, সৌদি আরবের নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট ইয়েমেনে সাধারণ মানুষের প্রাণহানির সংখ্যা কমানোর উদ্যোগ না নিলে তাদের সামরিক ও গোয়েন্দা সহায়তা হ্রাস করা হবে।

ইয়েমেনের শিয়াপন্থী হুতি বিদ্রোহীরা ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরে তৎকালীন সরকারের পতন ঘটিয়ে রাজধানী দখল করে নেয়। ইরানের সমর্থনপুষ্ট হুতি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে পরের বছর মার্চে সামরিক অভিযান শুরু করে সৌদি নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট। জাতিসংঘের হিসাবে, এ যুদ্ধে প্রায় ১০ হাজার মানুষের প্রাণহানি হয়েছে, যাদের দুই-তৃতীয়াংশই সাধারণ মানুষ। এ যুদ্ধে আহত মানুষের সংখ্যা প্রায় ৫৫ হাজার।

হুতি বিদ্রোহীদের হাতে সরকার পতনের সময় থেকে চলতি বছর জুন পর্যন্ত ইয়েমেনের পরিস্থিতি কেমন ছিল, তা জানতে অনুসন্ধান শুরু করে জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদের একটি বিশেষজ্ঞ দল। ‘গ্রুপ অব ইনডিপেনডেন্ট ইমিনেন্ট ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড রিজিওনাল এক্সপার্ট’ শীর্ষক এ দলের বিশেষজ্ঞরা তাঁদের প্রতিবেদনে বলেছেন, ইয়েমেনে সশস্ত্র সংঘাতে জড়িত সব পক্ষ উল্লেখযোগ্য হারে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন লঙ্ঘন করেছে এবং সেটা বিশ্বাস করার ‘বিশ্বাসযোগ্য’ ভিত্তি আছে। মানবাধিকার আইন ভঙ্গের অনেক ঘটনা যুদ্ধাপরাধের পর্যায়ে পড়তে পারে, প্রতিবেদনে এমন মন্তব্যও করেছেন বিশেষজ্ঞরা।

জাতিসংঘের এ দলটির চেয়ারম্যান কামেল জেন্দুবি এক বিবৃতিতে আরো বলেন, ‘সংঘাতে জড়িত পক্ষগুলো সাধারণ মানুষের হতাহতের সংখ্যা কমানোর কোনো চেষ্টা করেছে, এমন প্রমাণ খুব কম।’ তবে হতাহতের বেশির ভাগ দায় সৌদি সামরিক জোটের বলেই ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে। প্রতিবেদনের উপসংহার টানতে গিয়ে বলা হয়েছে, সাধারণ মানুষের হতাহতের যেসব ঘটনা লিপিবদ্ধ করা হয়েছে, সেগুলোর বেশির ভাগই ঘটেছে সৌদি ‘সামরিক জোটের বিমান হামলায়’। সন্দেহভাজন সামরিক অবস্থানের পরিবর্তে বিভিন্ন আবাসিক এলাকা, বাজার, শেষকৃত্যানুষ্ঠান, বিয়ে, চিকিৎসাকেন্দ্রসহ বিভিন্ন জনসমাগমস্থলে সৌদি জোটের হামলার কথা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

জাতিসংঘের এমন প্রতিবেদন প্রকাশের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম সিএনএন তাদের বিশ্বস্ত সূত্রের বরাত দিয়ে গত সোমবার জানায়, সাধারণ নাগরিকদের হতাহতের ব্যাপারে সৌদি আরবকে সতর্ক করে দিয়েছে পেন্টাগন। যুক্তরাষ্ট্রের সেনা সদর দপ্তর তাদের সতর্কবার্তায় বলেছে, সৌদি জোট ইয়েমেন যুদ্ধে সাধারণ মানুষের প্রাণহানির সংখ্যা কমাতে না পারলে তাদের প্রতি সামরিক ও গোয়েন্দা সহায়তা হ্রাস করা হবে। পেন্টাগনের কার্যক্রমের সঙ্গে সরাসরি জড়িত দুটি সূত্র জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষামন্ত্রী জেমস ম্যাটিস ও মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন সামরিক কার্যক্রমের প্রধান জেনারেল জোসেফ ভোটেল বিষয়টি নিয়ে বিশেষভাবে উদ্বিগ্ন। তবে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সৌদি জোটের প্রতি সহায়তা কমাতে রাজি কি না, তা জানা যায়নি। সূত্র : এএফপি, সিএনএন।

ট্যাগস
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

দীর্ঘ ১৩ বছর পর দেশে ফিরছেন কায়কোবাদ: স্বাগত জানাতে মুরাদনগরে ব্যাপক প্রস্ততি

ইয়েমেনে সব পক্ষ যুদ্ধাপরাধ করেছে

আপডেট সময় ০৩:০৪:৩৪ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৯ অগাস্ট ২০১৮
 অন্তর্জাতিক ডেস্কঃ

ইয়েমেন যুদ্ধে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষ ‘সম্ভবত’ যুদ্ধাপরাধ করেছে এবং এ যুদ্ধে সাধারণ মানুষ হতাহতের সংখ্যা কমাতে কোনো পক্ষই যথাযথ উদ্যোগ নেয়নি—সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে এমন মন্তব্য করেছে জাতিসংঘের একটি তদন্তদল। প্রতিবেদনটি সামনের মাসে জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদে উত্থাপন করা হবে। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র সতর্ক করে দিয়ে বলেছে, সৌদি আরবের নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট ইয়েমেনে সাধারণ মানুষের প্রাণহানির সংখ্যা কমানোর উদ্যোগ না নিলে তাদের সামরিক ও গোয়েন্দা সহায়তা হ্রাস করা হবে।

ইয়েমেনের শিয়াপন্থী হুতি বিদ্রোহীরা ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরে তৎকালীন সরকারের পতন ঘটিয়ে রাজধানী দখল করে নেয়। ইরানের সমর্থনপুষ্ট হুতি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে পরের বছর মার্চে সামরিক অভিযান শুরু করে সৌদি নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট। জাতিসংঘের হিসাবে, এ যুদ্ধে প্রায় ১০ হাজার মানুষের প্রাণহানি হয়েছে, যাদের দুই-তৃতীয়াংশই সাধারণ মানুষ। এ যুদ্ধে আহত মানুষের সংখ্যা প্রায় ৫৫ হাজার।

হুতি বিদ্রোহীদের হাতে সরকার পতনের সময় থেকে চলতি বছর জুন পর্যন্ত ইয়েমেনের পরিস্থিতি কেমন ছিল, তা জানতে অনুসন্ধান শুরু করে জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদের একটি বিশেষজ্ঞ দল। ‘গ্রুপ অব ইনডিপেনডেন্ট ইমিনেন্ট ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড রিজিওনাল এক্সপার্ট’ শীর্ষক এ দলের বিশেষজ্ঞরা তাঁদের প্রতিবেদনে বলেছেন, ইয়েমেনে সশস্ত্র সংঘাতে জড়িত সব পক্ষ উল্লেখযোগ্য হারে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন লঙ্ঘন করেছে এবং সেটা বিশ্বাস করার ‘বিশ্বাসযোগ্য’ ভিত্তি আছে। মানবাধিকার আইন ভঙ্গের অনেক ঘটনা যুদ্ধাপরাধের পর্যায়ে পড়তে পারে, প্রতিবেদনে এমন মন্তব্যও করেছেন বিশেষজ্ঞরা।

জাতিসংঘের এ দলটির চেয়ারম্যান কামেল জেন্দুবি এক বিবৃতিতে আরো বলেন, ‘সংঘাতে জড়িত পক্ষগুলো সাধারণ মানুষের হতাহতের সংখ্যা কমানোর কোনো চেষ্টা করেছে, এমন প্রমাণ খুব কম।’ তবে হতাহতের বেশির ভাগ দায় সৌদি সামরিক জোটের বলেই ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে। প্রতিবেদনের উপসংহার টানতে গিয়ে বলা হয়েছে, সাধারণ মানুষের হতাহতের যেসব ঘটনা লিপিবদ্ধ করা হয়েছে, সেগুলোর বেশির ভাগই ঘটেছে সৌদি ‘সামরিক জোটের বিমান হামলায়’। সন্দেহভাজন সামরিক অবস্থানের পরিবর্তে বিভিন্ন আবাসিক এলাকা, বাজার, শেষকৃত্যানুষ্ঠান, বিয়ে, চিকিৎসাকেন্দ্রসহ বিভিন্ন জনসমাগমস্থলে সৌদি জোটের হামলার কথা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

জাতিসংঘের এমন প্রতিবেদন প্রকাশের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম সিএনএন তাদের বিশ্বস্ত সূত্রের বরাত দিয়ে গত সোমবার জানায়, সাধারণ নাগরিকদের হতাহতের ব্যাপারে সৌদি আরবকে সতর্ক করে দিয়েছে পেন্টাগন। যুক্তরাষ্ট্রের সেনা সদর দপ্তর তাদের সতর্কবার্তায় বলেছে, সৌদি জোট ইয়েমেন যুদ্ধে সাধারণ মানুষের প্রাণহানির সংখ্যা কমাতে না পারলে তাদের প্রতি সামরিক ও গোয়েন্দা সহায়তা হ্রাস করা হবে। পেন্টাগনের কার্যক্রমের সঙ্গে সরাসরি জড়িত দুটি সূত্র জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষামন্ত্রী জেমস ম্যাটিস ও মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন সামরিক কার্যক্রমের প্রধান জেনারেল জোসেফ ভোটেল বিষয়টি নিয়ে বিশেষভাবে উদ্বিগ্ন। তবে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সৌদি জোটের প্রতি সহায়তা কমাতে রাজি কি না, তা জানা যায়নি। সূত্র : এএফপি, সিএনএন।