জাতীয় ডেস্কঃ
দেশের বিশিষ্ট ব্যক্তিরা বলেছেন, এই দেশে রাজনৈতিক সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। তবে সরকার চাইলে প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসন সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনে তাদেরকে সহায়তা করতে বাধ্য হবে। রবিবার সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) আয়োজিত গোলটেবিল বৈঠকে তারা এসব কথা বলেন। গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) ও সুষ্ঠু নির্বাচন শীর্ষক এ গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করে সুজন।
তড়িঘড়ি করে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২ (আরপিও) সংশোধনের মাধ্যমে সরকার নির্বাচনী আইনকে অস্ত্রে পরিণত করতে চাচ্ছে বলে সন্দেহ পোষণ করেন তারা। ইভিএম ব্যবহারের প্রতি নির্বাচন কমিশন অতি উত্সাহ দেখাচ্ছে বলে তারা অভিযোগ করেন। বৈঠকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও সুজন সভাপতি এম হাফিজউদ্দিন খান বলেন, আমরা মনে করি, সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের জন্য আরপিওসহ বিভিন্ন আইনের সংশোধন হওয়া দরকার। কিন্তু সেগুলো হওয়া উচিত রাজনৈতিক দলসহ সংশ্লিষ্টদের সাথে মতামতের ভিত্তিতে। কিন্তু আমরা দেখলাম নির্বাচন কমিশন হঠাত্ করে নির্বাচনে ইভিএমের প্রয়োগ নিয়ে উঠে পড়ে লেগেছে। অথচ অনেক দেশই ইভিএম প্রয়োগ থেকে সরে এসেছে।
সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন করতে আমরা সাংবিধানিক এবং আন্তর্জাতিকভাবে অঙ্গীকারাবদ্ধ। অথচ আমরা দেখতে পাচ্ছি, নির্বাচন কমিশন ইভিএমসহ অনেকগুলো বিষয়ে সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডারের মতামত উপেক্ষা করে এবং রাজনৈতিক দলগুলোকে না জানিয়ে আরপিওতে সংশোধনী আনার জন্য কতগুলো প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করেছে। অন্যদিকে, সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার বলেন, স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচনের জন্য ১ শতাংশ ভোটারের স্বাক্ষরের বিধান তুলে দেয়া দরকার। সিটি নির্বাচনগুলো সুষ্ঠুভাবে আয়োজন করতে নির্বাচন কমিশন ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
অনুষ্ঠানে সুজনের পক্ষ থেকে বিভিন্ন প্রস্তাব তুলে ধরেন সুজনের সমন্বয়কারী দিলীপ কুমার সরকার। প্রস্তাবে বলা হয়, আইনে ‘না’ ভোটের বিধানের পুনঃপ্রবর্তন করতে হবে, মনোনয়নপত্র অনলাইনে দাখিলের বিধান সংযোজন করতে হবে, জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত মহিলা আসনে নির্বাচনের ক্ষেত্রে মনোনয়নপত্রের সঙ্গে হলফনামা ও আয়কর বিবরণী দাখিলের বিধান সংযোজন করতে হবে। এ ছাড়া গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অনুসরণ করে প্রতিটি দলের তৃণমূলপর্যায়ের সদস্যদের সম্মতির ভিত্তিতে নির্দিষ্ট সংখ্যক প্রার্থীকে দিয়ে একটি প্যানেল তৈরি এবং এই প্যানেলের মধ্য থেকেই কেন্দ্র কর্তৃক মনোনয়ন চূড়ান্তকরণের বিধান সংযোজন করতে হবে, রাজনৈতিক দলের সকল স্তরের কমিটির সদস্যদের নামের তালিকা ওয়েবসাইটে প্রকাশ ও নিয়মিত অপডেট করার বাধ্যবাধকতা সৃষ্টি করতে হবে। এর বাইরে আরো বেশ কয়েকটি দাবি জানানো হয়।
অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য দেন গণফোরামের কার্যকরী সভাপতি সুব্রত চৌধুরী, সাবেক এমপি এ এস এম আকরাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক সি আর আবরার, আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়ুয়া, সৈয়দা রেজওয়ানা হাসান, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি প্রমুখ।