জাতীয়:
ঢাকে পড়েছে কাঠি। আলো-সানাই-শঙ্খ আর কাঁসার রোয়াবে হিন্দু নারী-পুরুষ-শিশু-কিশোরদের প্রাণ আনচান করছে। মৃন্ময়ী থেকে আনন্দময়ীর রূপদান পর্বের সমাপ্তি। সনাতন বিশ্বাসে, কৈলাশ শিখর ছেড়ে পিতৃগৃহে আসা মা দুর্গার অকাল বোধন হয়েছে কাল। আকাশে-বাতাসে এখন শারদ উত্সবের শিহরণ। শিল্পী তার তুলির নিপুণ আঁচড়ে বর্ণাঢ্য বিভায় উদ্ভাসিত করে তুলেছে মহিষাসুর মর্দিনীকে। প্রতিমার অধিষ্ঠান হয়েছে মণ্ডপে মণ্ডপে। আজ খুলে যাবে তার আয়ত চোখের পলক। অসুর বধে চক্র, গদা, তীর, ধনুক, খড়গ-কৃপাণ-ত্রিশুল হাতে মাতৃরূপেন অসুরদলনী দেবী হেসে উঠবেন। এবার দূর কৈলাশ ছেড়ে মা পিতৃগৃহে আসবেন ঘোটকে। ফলে প্রাকৃতিক বিপর্যয়, রোগ-শোক, হানাহানি, মারামারি, সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংসারিক ক্ষেত্রে অস্থিরতা প্রকাশ পাবে। বিজয়া দশমীতে দেবী বিদায় নেবেন দোলায় চড়ে।
বিশুদ্ধ সিদ্ধান্ত পঞ্জিকা মতে-আজ পূর্বাহ ৯-৫৭ মিনিটের মধ্যে ষষ্ঠাদি কল্পারম্ভ, সায়ংকালে দেবীর আমন্ত্রণ ও অধিবাস। গতকাল সন্ধ্যা ৭টা ১০ মিনিট ৩৫ সেকেন্ডের পর ষষ্ঠী তিথির সূচনা ঘটে। আজ রাত ৮টা ২৩ মিনিট ৪৫ সেকেন্ড অব্দি তিথি থাকবে। অতঃপর শুরু হবে মহাসপ্তমী তিথি। কাল মহাসপ্তমীর প্রভাতে ঢাক-ঢোলক-কাঁসর বাজিয়ে কলাবউ স্নান ও আদরিণী উমার সপরিবারে তিথি বিহীত পূজা। বুধবার মহাঅষ্টমীতে ঢাকার রামকৃষ্ণ মিশনে অনুষ্ঠিত হবে কুমারী পূজা। বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা ৩০ মিনিটে শুরু হবে নবমী বিহীত পূজা। পরদিন শুক্রবার সকাল ৭টায় পূজা সমাপণ ও পরে দর্পণ বিসর্জন-শান্তিজল গ্রহণ।
বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, সাম্প্র্রদায়িক সম্প্রীতির প্রতি শ্রদ্ধা রেখে বিজয়া দশমীর দিন আগামী শুক্রবার হওয়ায় ১২টা থেকে ২টা পর্যন্ত বিজয় শোভাযাত্রা বন্ধ থাকবে এবং রাতে ১০টার মধ্যে নিরঞ্জন সম্পন্ন হবে।
সাধারণত আশ্বিন শুক্লপক্ষের ষষ্ঠ দিন অর্থাত্ ষষ্ঠী থেকে দশম দিন অর্থাত্ দশমী অবধি পাঁচদিন দুর্গোত্সব অনুষ্ঠিত হয়। এই পাঁচটি দিন যথাক্রমে দুর্গাষষ্ঠী, মহাসপ্তমী, মহাষ্টমী, মহানবমী ও বিজয়া দশমী নামে পরিচিত। আবার সমগ্র পক্ষটি দেবীপক্ষ। দেবীপক্ষের সূচনা হয় পূর্ববর্তী অমাবস্যার দিন; এই দিনটি মহালয়া। অন্যদিকে দেবীপক্ষের সমাপ্তি পঞ্চদশ দিন পূর্ণিমায়; এই দিনটি কোজাগরী পূর্ণিমা নামে পরিচিত ও সাম্বত্সরিক লক্ষ্মীপূজার দিন।
দেশজুড়ে ৩১ হাজার মণ্ডপ: বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের তথ্য অনুযায়ী, এবছর সারাদেশে ৩১ হাজার ২৭২টি মণ্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। আর রাজধানী ঢাকাতে এবার পূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে ২৩৪টি মণ্ডপে। দুর্গাপূজা উপলক্ষে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশের প্রতিটি পূজামণ্ডপের নিরাপত্তা রক্ষায় পুলিশ, আনসার, বিজিবি, র্যাবসহ অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা দায়িত্ব পালন করছেন। প্রতিটি মণ্ডপে রয়েছে স্বেচ্ছাসেবক বাহিনীও।
ঢাকা মহানগর সার্বজনীন পূজা উদযাপন কমিটি জানিয়েছে, ঢাকেশ্বরী মন্দির মেলাঙ্গণে পূজা কমিটির উদ্যোগে কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলা হয়েছে। ঢাকেশ্বরী মণ্ডপে পূজার পাশাপাশি ভক্তিমূলক সঙ্গীতানুষ্ঠান, বস্ত্র বিতরণ, মহাপ্রসাদ বিতরণ, আরতি প্রতিযোগিতা, স্বেচ্ছা রক্তদান ও বিজয়া শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়া ঢাকায় রামকৃষ্ণ মিশন ও মঠ পূজামণ্ডপ, গুলশান-বনানী সার্বজনীন পূজা পরিষদ মণ্ডপ, রমনা কালীমন্দির ও আনন্দময়ী আশ্রম, বরোদেশ্বরী কালীমাতা মন্দির ও শ্মশান, সিদ্ধেশ্বরী কালিমাতা মন্দির, ভোলানাথ মন্দির আশ্রম, জগন্নাথ হল, ঋষিপাড়া গৌতম মন্দির, বাসাবো বালুর মাঠ, শাঁখারীবাজারের পানিটোলা মন্দিরসহ অন্যান্য মণ্ডপে দুর্গোত্সবের ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। এ বছর সবচেয়ে বেশি পূজামণ্ডপ তৈরি করা হয়েছে সূত্রাপুর থানায়। তবে অন্য বছরের মতো এবারো এলাকাভিত্তিক মণ্ডপ তৈরিতে এগিয়ে আছে শাঁখারিবাজার ও তাঁতীবাজার। এদিকে পূজা উপলক্ষে কেনাকাটার ধুম পড়েছে।
থিমভিত্তিক প্রতিমা: পশ্চিমবঙ্গের কলকাতার মতো বাংলাদেশেও এবার থিম বা নির্দিষ্ট বিষয়ভিত্তিক মণ্ডপ ও প্রতিমা নির্মাণের প্রবণতা বেড়েছে। নিত্যনতুন থিম ও প্রতিমায় অভিনবত্বের পাশাপাশি থাকছে ঐতিহ্যের ভিন্নতা। কোনো কোনো মণ্ডপে প্রাচীন রোমান দেব-দেবী ধাঁচে প্রতিমা বানানো হয়েছে। পদ্মফুলের ওপর প্রতিমা, গহীন অরণ্যে দুর্গা, মহাপ্রলয়ের মাঝখানে, বরফের পাহাড়ে শ্বেত শুভ্র বসনে, বৃক্ষের মধ্যে, এমনকি মহাকাশের আবহে রোবটিক চেহারায় গড়া হয়েছে দুর্গাকে।