ঢাকা ০৯:৩২ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ০১ অক্টোবর ২০২৪, ১৬ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মুরাদনগরে খিরা চাষে বাম্পার ফলন, কৃষকদের সাফল্য

মো:মোশাররফ হোসেন মনিরঃ

লোকশানের ফলে কৃষি কাজ থেকে কৃষকরা মুখ ফিরিয়ে নেওয়ার ফলে অনাবাদি হচ্ছে হাজার হাজার হেক্টর জমি। ফলে বেকারত্ব যেমন বাড়ছে, তেমনি খাদ্যশষ্য আমদানি করতে হচ্ছে বিদেশ থেকে। এই অবস্থার উত্তোলন ঘটিয়ে অভাবনীয় সফল্যের মধ্যদিয়ে মুখে হাঁসি ফোটেছে কুমিল্লা মুরাদনগর উপজেলার নয় ১২০টি গ্রামের কৃষকদের। জলবায়ু পরিবর্তন অভিযোজন কৌশল হিসেবে কাঁদা মাটিতে খিরা চাষ করে অর্থনৈতিক ভাবে সাফল্য আর্জন করেছে তাঁরা।

কৃষকদের এ সাফল্যে সরজমনি দেখতে মঙ্গলবার দুপুরে উপজেলা সদর ইউনিয়নের করিমপুর ব্লক ও কামাল্লা ব্লক পরির্দশ করেন কুমিল্লা জেলা কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক দিলীপ কুমার অধিকারী, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আল মামুন রাসেল, কৃষি সম্প্রসারন কর্মকর্তা মাসুদুর রহমান, উপ-সহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষন কর্মকর্তা প্রদীপ কুমার সাহা, উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা সূফি আহাম্মদ, মোশাররফ হোসেন, তোফায়েল আহাম্মদ, খিরা চাষী নাতু মিয়া, জুরু মিয়া, মামুন মিয়া, মাসুদা বেগম, ঝর্না বেগম প্রমুখ। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আল মামুন রাসেল, কৃষি সম্প্রসারন কর্মকর্তা মাসুদুর রহমান, উপ-সহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষন কর্মকর্তা প্রদীপ কুমার সাহা, উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা সূফি আহাম্মদ, মোশাররফ হোসেন, তোফায়েল আহাম্মদ, খিরা চাষী নাতু মিয়া, জুরু মিয়া, মামুন মিয়া, মাসুদা বেগম, ঝর্না বেগম প্রমুখ।

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্র জানায়, উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সহযোগিতায় ২০১৬ সালে উপজেলার করিমপুর, ইউছুফনগর, নেয়ামতপুর গ্রামের ৪২ হেক্টর জমিতে গুটিকয়েক কৃষক কাদা মাটিতে খিরা চাষ শুরু করেন। এর সফলতা পাওয়ায় ২০১৭ সালে উপজেলা সদরসহ ৯টি গ্রামে ৫০ হেক্টর জমিতে খিরা চাষ করে বাম্পার ফলনে সক্ষম হয়েছিল। এ চাষে খুব লাভবান হওয়ায় কৃষকরা এ বছর উপজেলা কৃষি অধিদপ্তরের সহযোগিতায় ১৪৫ হেক্টর জমিতে খিরা চাষ করে কৃষকরা। প্রতি হেক্টর জমিতে ৫৪টন খিরা উৎপাধন হয়েছে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, এই পদ্ধতিতে কৃষকদের উৎপাদিত খিরা চাষ দেখে অনেকেই এতে আগ্রহী হয়ে চাষাবাদ করে স্বাবলম্বী হয়ে উঠছে। কাদা মাটি ধাপে উৎপাদিত খিরা বিক্রি করে তারা অর্থনৈতিকভাবেও স্বচ্ছলতা ফিরে পেয়েছে।

এ সময় ইউছুফনগর ও করিমপুর গ্রামের সফল কৃষক জুরু মিয়া, ঝর্ণা বেগম, মাহমুদা বেগম, নাতু মিয়া শাহআলম, ছাত্তার জানান, বর্ষা কালে যে সকল জমিতে বৃষ্টির পানি আটকে থাকে সে সব জমিতে কাদা পানি অবস্থায় ১ থেকে ২ ফুট প্রস্থের ও ৩৫ থেকে ৪০ ফুট দৈর্ঘ্যে লাইল তৈরি করে। সেখানে ছাই দিয়ে সেই ছাইয়ে খিরার বীজ রোপন করে তা পাতা দিয়ে ডেকে দেওয়ার মধ্যে খিরা সবজির চাষ করে। কোনো প্রকার রাসায়নিক ব্যবহার ছাড়াই তারা এ সব্জি চাষ করছেন। এ ফসল নিয়ে তারা আর বাজারে যেতে হচ্ছে না। ব্যাপারীরা ভোর হতেই মাঠে অধূরে সারি সারি গড়ি নিয়ে অপেক্ষমান থাকেন খিরা ক্রয় করতে। যেখানে বারো চাষে বিগা প্রতি ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা লোকসান হতো সেখানে খিরা চাষে ২৫-৩০ হাজার টাকা ব্যায় করে মাত্র আড়াই মাসে আয় হচ্ছে ৭০-৮০ হাজার টাকা। সেই কারণে এ চাষ খুব লাভ জনক হওয়ায় কৃষকরা আরও এ চাষে ঝুকছে।

উপজেলা সদর ইউনিয়ন ব্লকের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা তোফায়েল আহমেদ জানান, বর্ষা মৌসম হওয়ায় কাদা মাটিতে খিরা আবাদ করা হয়েছে। এতে কৃষকরা খুব কম খরচে অধিক পরিমাণ ফসল উৎপাদন করতে সক্ষম ও লাভবান হচ্ছেন।

এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আল মামুন রাসেল বলেন, এবছর খিরা চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিলো ১’শ হেক্টর, কিন্তুখিরা চাষে ব্যাপক সফলতায় কৃষকদের মাঝে খিরা চাষের আগ্রহ বৃদ্ধি পায় সেই আলোকে এবছর কৃষকরা ১৪৫হেক্টর জমিতে খিরার আবাদ করেছে। আগামী বৎসর কিভাবে আরো বেশি ফলন উৎপাদন করা যায় সেই লক্ষ্যে উপজেলা কৃষি অফিস জোড়ালো ভুমি রাখবে। মুরাদনগরের খিরা চাষ দেশে একটি মডেল হিসেবে পরিচিতি লাভ করবে আশা করে জানান, কৃষকদের মাঝে যে সারা পরেছে তাতে আগামী বছর আরো ২’শ হেক্টরেরও বেশি জমিতে খিরা চাষের পরিকল্পনা আমাদের রয়েছে।

ট্যাগস
আপলোডকারীর তথ্য

মুরাদনগরে খিরা চাষে বাম্পার ফলন, কৃষকদের সাফল্য

আপডেট সময় ১২:২৬:১২ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৮ নভেম্বর ২০১৮
মো:মোশাররফ হোসেন মনিরঃ

লোকশানের ফলে কৃষি কাজ থেকে কৃষকরা মুখ ফিরিয়ে নেওয়ার ফলে অনাবাদি হচ্ছে হাজার হাজার হেক্টর জমি। ফলে বেকারত্ব যেমন বাড়ছে, তেমনি খাদ্যশষ্য আমদানি করতে হচ্ছে বিদেশ থেকে। এই অবস্থার উত্তোলন ঘটিয়ে অভাবনীয় সফল্যের মধ্যদিয়ে মুখে হাঁসি ফোটেছে কুমিল্লা মুরাদনগর উপজেলার নয় ১২০টি গ্রামের কৃষকদের। জলবায়ু পরিবর্তন অভিযোজন কৌশল হিসেবে কাঁদা মাটিতে খিরা চাষ করে অর্থনৈতিক ভাবে সাফল্য আর্জন করেছে তাঁরা।

কৃষকদের এ সাফল্যে সরজমনি দেখতে মঙ্গলবার দুপুরে উপজেলা সদর ইউনিয়নের করিমপুর ব্লক ও কামাল্লা ব্লক পরির্দশ করেন কুমিল্লা জেলা কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক দিলীপ কুমার অধিকারী, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আল মামুন রাসেল, কৃষি সম্প্রসারন কর্মকর্তা মাসুদুর রহমান, উপ-সহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষন কর্মকর্তা প্রদীপ কুমার সাহা, উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা সূফি আহাম্মদ, মোশাররফ হোসেন, তোফায়েল আহাম্মদ, খিরা চাষী নাতু মিয়া, জুরু মিয়া, মামুন মিয়া, মাসুদা বেগম, ঝর্না বেগম প্রমুখ। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আল মামুন রাসেল, কৃষি সম্প্রসারন কর্মকর্তা মাসুদুর রহমান, উপ-সহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষন কর্মকর্তা প্রদীপ কুমার সাহা, উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা সূফি আহাম্মদ, মোশাররফ হোসেন, তোফায়েল আহাম্মদ, খিরা চাষী নাতু মিয়া, জুরু মিয়া, মামুন মিয়া, মাসুদা বেগম, ঝর্না বেগম প্রমুখ।

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্র জানায়, উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সহযোগিতায় ২০১৬ সালে উপজেলার করিমপুর, ইউছুফনগর, নেয়ামতপুর গ্রামের ৪২ হেক্টর জমিতে গুটিকয়েক কৃষক কাদা মাটিতে খিরা চাষ শুরু করেন। এর সফলতা পাওয়ায় ২০১৭ সালে উপজেলা সদরসহ ৯টি গ্রামে ৫০ হেক্টর জমিতে খিরা চাষ করে বাম্পার ফলনে সক্ষম হয়েছিল। এ চাষে খুব লাভবান হওয়ায় কৃষকরা এ বছর উপজেলা কৃষি অধিদপ্তরের সহযোগিতায় ১৪৫ হেক্টর জমিতে খিরা চাষ করে কৃষকরা। প্রতি হেক্টর জমিতে ৫৪টন খিরা উৎপাধন হয়েছে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, এই পদ্ধতিতে কৃষকদের উৎপাদিত খিরা চাষ দেখে অনেকেই এতে আগ্রহী হয়ে চাষাবাদ করে স্বাবলম্বী হয়ে উঠছে। কাদা মাটি ধাপে উৎপাদিত খিরা বিক্রি করে তারা অর্থনৈতিকভাবেও স্বচ্ছলতা ফিরে পেয়েছে।

এ সময় ইউছুফনগর ও করিমপুর গ্রামের সফল কৃষক জুরু মিয়া, ঝর্ণা বেগম, মাহমুদা বেগম, নাতু মিয়া শাহআলম, ছাত্তার জানান, বর্ষা কালে যে সকল জমিতে বৃষ্টির পানি আটকে থাকে সে সব জমিতে কাদা পানি অবস্থায় ১ থেকে ২ ফুট প্রস্থের ও ৩৫ থেকে ৪০ ফুট দৈর্ঘ্যে লাইল তৈরি করে। সেখানে ছাই দিয়ে সেই ছাইয়ে খিরার বীজ রোপন করে তা পাতা দিয়ে ডেকে দেওয়ার মধ্যে খিরা সবজির চাষ করে। কোনো প্রকার রাসায়নিক ব্যবহার ছাড়াই তারা এ সব্জি চাষ করছেন। এ ফসল নিয়ে তারা আর বাজারে যেতে হচ্ছে না। ব্যাপারীরা ভোর হতেই মাঠে অধূরে সারি সারি গড়ি নিয়ে অপেক্ষমান থাকেন খিরা ক্রয় করতে। যেখানে বারো চাষে বিগা প্রতি ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা লোকসান হতো সেখানে খিরা চাষে ২৫-৩০ হাজার টাকা ব্যায় করে মাত্র আড়াই মাসে আয় হচ্ছে ৭০-৮০ হাজার টাকা। সেই কারণে এ চাষ খুব লাভ জনক হওয়ায় কৃষকরা আরও এ চাষে ঝুকছে।

উপজেলা সদর ইউনিয়ন ব্লকের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা তোফায়েল আহমেদ জানান, বর্ষা মৌসম হওয়ায় কাদা মাটিতে খিরা আবাদ করা হয়েছে। এতে কৃষকরা খুব কম খরচে অধিক পরিমাণ ফসল উৎপাদন করতে সক্ষম ও লাভবান হচ্ছেন।

এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আল মামুন রাসেল বলেন, এবছর খিরা চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিলো ১’শ হেক্টর, কিন্তুখিরা চাষে ব্যাপক সফলতায় কৃষকদের মাঝে খিরা চাষের আগ্রহ বৃদ্ধি পায় সেই আলোকে এবছর কৃষকরা ১৪৫হেক্টর জমিতে খিরার আবাদ করেছে। আগামী বৎসর কিভাবে আরো বেশি ফলন উৎপাদন করা যায় সেই লক্ষ্যে উপজেলা কৃষি অফিস জোড়ালো ভুমি রাখবে। মুরাদনগরের খিরা চাষ দেশে একটি মডেল হিসেবে পরিচিতি লাভ করবে আশা করে জানান, কৃষকদের মাঝে যে সারা পরেছে তাতে আগামী বছর আরো ২’শ হেক্টরেরও বেশি জমিতে খিরা চাষের পরিকল্পনা আমাদের রয়েছে।