ঢাকা ০৪:৩২ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ০২ অক্টোবর ২০২৪, ১৬ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মুরাদনগর উপজেলা ভূমি অফিসে বেড়েছে অনিয়ম দুর্নীতি

মো: আবুল খায়ের, বিশেষ প্রতিনিধিঃ

কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলা ভূমি অফিস যেন অনিয়ম দুর্নীতির আখড়া। এ অফিসের প্রধান কর্তা এ্যাসিল্যান্ড রায়হান মেহবুবের যোগশাজসে চলছে সীমাহীন ঘুষ বাণিজ্য ও অনিয়ম-দুর্নীতি। এখানে খারিজ করতে সর্ব নিন্ম খরচ লাগে পাঁচ হাজার টাকা। আর কোন প্রকার মার্জনিয় ত্রুটির জন্য সেবা প্রত্যাশীকে দিতে হয় ১০-১২ হাজার টাকা। এ ছাড়া ভিপি খারিজ হলে তো আর কোন কথাই নাই। চলে চুক্তি অনুসারে কাজ। অসাধু ভূমি কর্মকর্তাসহ তারই অধনস্থ কর্মচারীদের ঘুষ কেলেংকারীর কারণে সেবা প্রত্যাশীসহ এলাকাবাসীর মাঝে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে। এ অফিসের কানুনগোর মাধ্যমে এসিল্যান্ডের নিযুক্ত দালাল চক্রের সদস্যরা উপজেলা সদরে অফিস খুলে খারিজ সম্পাদন কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। এ দিকে সম্প্রতি নতুন মন্ত্রী সভার ভূমি উপমন্ত্রীর দুর্নীতি বিরোধী ঘোষণার পর এ কার্যালয়ে অনিময় দুর্নীতি আরো বেড়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

জানা যায়, অনিয়ম-দুর্নীতির জন্য বেশ কয়েক বছর যাবত গণমাধ্যমসহ জেলায় আলোচিত কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলা ভূমি অফিস। এ অফিসে এ্যাসিল্যান্ড যায়, এ্যাসিল্যান্ড আসে কিন্তু বন্ধ হয়না ঘুষ ও অনিয়ম দুর্নীতি। ইতিপুর্বে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগে এ কার্যালয়ের একাধিক এ্যাসিল্যান্ডসহ অন্যান্য কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন জাতীয় ও স্থানীয় দৈনিকে খবর প্রকাশ এবং তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। এ ছাড়া ভূমি মন্ত্রনালয়ের নির্দেশে একাধিক তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয়। কিন্তু এসব কমিটির তদন্ত আর আলোর মুখ দেখেনা বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর। এতো কিছুর পরেও এ ভূমি অফিসে অনিয়ম-দুর্নীতি বন্ধ হয়না। ভূক্তভোগীরা জানান, মুরাদনগর ভূমি অফিসে সকল কাগজপত্র সঠিক থাকলেও এগারোশত সত্তর টাকার খারিজ সম্পাদন করতে সেবা প্রত্যাশীকে পরিশোধ করতে হয় সর্ব নিন্ম পাঁচ হাজার টাকা। ১ মাসেরও বেশী সময় ঘুরাঘুরি করে হয়রানীর শিকারও হতে হয়। কাগজপত্র ঠিকঠাক থাকলেও এ অফিসের প্রধান কর্তা এ্যাসিল্যান্ড রায়হান মেহবুবকে প্রতি খারিজে স্বাক্ষরের জন্য দিতে হয় এক হাজার টাকা। ভিপি সম্পত্তির ক্ষেত্রে খারিজ টু খারিজের জন্য ১০-১৫ হাজার টাকা। কোন প্রকার কারেকশন থাকলে প্রতি স্বাক্ষরে দিতে হয় পাঁচ হাজার টাকা।

এ ছাড়া কানুনগোকে প্রতি স্বাক্ষরে চারশত থেকে এক হাজার টাকা। অফিস সহকারীকে চারশত থেকে ২হাজার টাকা, সার্ভেয়ারকে দুইশত থেকে ১ হাজার টাকা পর্যন্ত প্রতি খারিজে ঘুষ বাবদ দিতে হয়। এ অফিসের সকল কর্মকর্তরা সকালে খালি পকেটে আসলেও রাতে পকেট ও টিফিনবক্সে ভরে টাকা নিয়ে বাসায় যান। এখানে এ্যাসিল্যন্ডের নিযুক্ত দালাল সিন্ডিকেট রয়েছে। অফিসের কানুনগো এ দালাল সিন্ডিকেট পরিচালনা করে থাকেন। অনিয়মের অভিযোগে একজন এ্যাসিল্যান্ড মুরাদনগর থেকে বদলী হওয়ার পর রায়হান মেহবুব এখানে নিয়োগ পান। শুরু থেকেই তিনি বেপরোয়া ভাবে অনিয়ম দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েন। ইতিপুর্বে এ ভূমি অফিসের অনিয়ম নিয়ে গনমাধ্যমসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে খবর প্রকাশিত হলেও থামছেনা অনিয়ম দুর্নীতি। এ্যাসিল্যান্ড রায়হান মেহবুব গত ১ বছরেরও বেশী সময় এখানে কর্মরত থেকে কোটি টাকারও বেশী হাতিয়ে নিয়েছেন বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক দালাল জানান, কাগজপত্র সঠিক থাকলে একটা খারিজ থেকে আমরা ৫ হাজার টাকা নেই, এ্যাসিল্যান্ড স্যারকে প্রতি স্বাক্ষরে এক হাজার, অফিস সহকারীকে চারশত, কানুনগোকে চারশত টাকাসহ অফিসের প্রতিটি সেক্টরে টাকা দিতে হয়। এ দিকে অতিরিক্ত টাকা নিয়ে কারো কাছে অভিযোগ করলে খারিজ বাতিল করে দেয়া হবে বলে সেবা প্রত্যাশীদেরকে হুমকি ধমকি দেয়া হয়। যার ফলে বেশী টাকা প্রদান করে হয়রানীর ভয়ে কেউ মুখ খুলতে চায়না। অপরদিকে খারিজ সম্পাদনের জন্য দালাল চক্র মুরাদনগরে অফিস বানিয়ে কর্মকান্ড পরিচালনা করছে। এসব অফিসের সাথে কানোনগোর মাধ্যমে এ্যাসিল্যান্ড পরোক্ষভাবে জড়িত রয়েছে বলে জানা গেছে।

এ বিষয়ে এ্যাসিল্যান্ড রায়হান মেহবুব বলেন, আমি কোন অনিয়ম-দুর্নীতির সাথে জড়িত নই, আমি কোন খারিজ গ্রহিতার কাছ থেকে সরাসরি কোন টাকা পয়সা গ্রহন করি না। দালাল চক্রকে কেউ টাকা দিলে এর দায় আমার না। এ ব্যপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মিতু মরিয়ম বলেন, ভূমি অফিসের এ্যাসিল্যান্ডসহ কোন কর্মকর্তা কর্মচারীর বিরুদ্ধে অনিয়মের কোন অভিযোগ পেলে তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে।

ট্যাগস
আপলোডকারীর তথ্য

মুরাদনগর উপজেলা ভূমি অফিসে বেড়েছে অনিয়ম দুর্নীতি

আপডেট সময় ০২:২১:১৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৮ জানুয়ারী ২০১৯
মো: আবুল খায়ের, বিশেষ প্রতিনিধিঃ

কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলা ভূমি অফিস যেন অনিয়ম দুর্নীতির আখড়া। এ অফিসের প্রধান কর্তা এ্যাসিল্যান্ড রায়হান মেহবুবের যোগশাজসে চলছে সীমাহীন ঘুষ বাণিজ্য ও অনিয়ম-দুর্নীতি। এখানে খারিজ করতে সর্ব নিন্ম খরচ লাগে পাঁচ হাজার টাকা। আর কোন প্রকার মার্জনিয় ত্রুটির জন্য সেবা প্রত্যাশীকে দিতে হয় ১০-১২ হাজার টাকা। এ ছাড়া ভিপি খারিজ হলে তো আর কোন কথাই নাই। চলে চুক্তি অনুসারে কাজ। অসাধু ভূমি কর্মকর্তাসহ তারই অধনস্থ কর্মচারীদের ঘুষ কেলেংকারীর কারণে সেবা প্রত্যাশীসহ এলাকাবাসীর মাঝে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে। এ অফিসের কানুনগোর মাধ্যমে এসিল্যান্ডের নিযুক্ত দালাল চক্রের সদস্যরা উপজেলা সদরে অফিস খুলে খারিজ সম্পাদন কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। এ দিকে সম্প্রতি নতুন মন্ত্রী সভার ভূমি উপমন্ত্রীর দুর্নীতি বিরোধী ঘোষণার পর এ কার্যালয়ে অনিময় দুর্নীতি আরো বেড়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

জানা যায়, অনিয়ম-দুর্নীতির জন্য বেশ কয়েক বছর যাবত গণমাধ্যমসহ জেলায় আলোচিত কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলা ভূমি অফিস। এ অফিসে এ্যাসিল্যান্ড যায়, এ্যাসিল্যান্ড আসে কিন্তু বন্ধ হয়না ঘুষ ও অনিয়ম দুর্নীতি। ইতিপুর্বে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগে এ কার্যালয়ের একাধিক এ্যাসিল্যান্ডসহ অন্যান্য কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন জাতীয় ও স্থানীয় দৈনিকে খবর প্রকাশ এবং তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। এ ছাড়া ভূমি মন্ত্রনালয়ের নির্দেশে একাধিক তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয়। কিন্তু এসব কমিটির তদন্ত আর আলোর মুখ দেখেনা বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর। এতো কিছুর পরেও এ ভূমি অফিসে অনিয়ম-দুর্নীতি বন্ধ হয়না। ভূক্তভোগীরা জানান, মুরাদনগর ভূমি অফিসে সকল কাগজপত্র সঠিক থাকলেও এগারোশত সত্তর টাকার খারিজ সম্পাদন করতে সেবা প্রত্যাশীকে পরিশোধ করতে হয় সর্ব নিন্ম পাঁচ হাজার টাকা। ১ মাসেরও বেশী সময় ঘুরাঘুরি করে হয়রানীর শিকারও হতে হয়। কাগজপত্র ঠিকঠাক থাকলেও এ অফিসের প্রধান কর্তা এ্যাসিল্যান্ড রায়হান মেহবুবকে প্রতি খারিজে স্বাক্ষরের জন্য দিতে হয় এক হাজার টাকা। ভিপি সম্পত্তির ক্ষেত্রে খারিজ টু খারিজের জন্য ১০-১৫ হাজার টাকা। কোন প্রকার কারেকশন থাকলে প্রতি স্বাক্ষরে দিতে হয় পাঁচ হাজার টাকা।

এ ছাড়া কানুনগোকে প্রতি স্বাক্ষরে চারশত থেকে এক হাজার টাকা। অফিস সহকারীকে চারশত থেকে ২হাজার টাকা, সার্ভেয়ারকে দুইশত থেকে ১ হাজার টাকা পর্যন্ত প্রতি খারিজে ঘুষ বাবদ দিতে হয়। এ অফিসের সকল কর্মকর্তরা সকালে খালি পকেটে আসলেও রাতে পকেট ও টিফিনবক্সে ভরে টাকা নিয়ে বাসায় যান। এখানে এ্যাসিল্যন্ডের নিযুক্ত দালাল সিন্ডিকেট রয়েছে। অফিসের কানুনগো এ দালাল সিন্ডিকেট পরিচালনা করে থাকেন। অনিয়মের অভিযোগে একজন এ্যাসিল্যান্ড মুরাদনগর থেকে বদলী হওয়ার পর রায়হান মেহবুব এখানে নিয়োগ পান। শুরু থেকেই তিনি বেপরোয়া ভাবে অনিয়ম দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েন। ইতিপুর্বে এ ভূমি অফিসের অনিয়ম নিয়ে গনমাধ্যমসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে খবর প্রকাশিত হলেও থামছেনা অনিয়ম দুর্নীতি। এ্যাসিল্যান্ড রায়হান মেহবুব গত ১ বছরেরও বেশী সময় এখানে কর্মরত থেকে কোটি টাকারও বেশী হাতিয়ে নিয়েছেন বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক দালাল জানান, কাগজপত্র সঠিক থাকলে একটা খারিজ থেকে আমরা ৫ হাজার টাকা নেই, এ্যাসিল্যান্ড স্যারকে প্রতি স্বাক্ষরে এক হাজার, অফিস সহকারীকে চারশত, কানুনগোকে চারশত টাকাসহ অফিসের প্রতিটি সেক্টরে টাকা দিতে হয়। এ দিকে অতিরিক্ত টাকা নিয়ে কারো কাছে অভিযোগ করলে খারিজ বাতিল করে দেয়া হবে বলে সেবা প্রত্যাশীদেরকে হুমকি ধমকি দেয়া হয়। যার ফলে বেশী টাকা প্রদান করে হয়রানীর ভয়ে কেউ মুখ খুলতে চায়না। অপরদিকে খারিজ সম্পাদনের জন্য দালাল চক্র মুরাদনগরে অফিস বানিয়ে কর্মকান্ড পরিচালনা করছে। এসব অফিসের সাথে কানোনগোর মাধ্যমে এ্যাসিল্যান্ড পরোক্ষভাবে জড়িত রয়েছে বলে জানা গেছে।

এ বিষয়ে এ্যাসিল্যান্ড রায়হান মেহবুব বলেন, আমি কোন অনিয়ম-দুর্নীতির সাথে জড়িত নই, আমি কোন খারিজ গ্রহিতার কাছ থেকে সরাসরি কোন টাকা পয়সা গ্রহন করি না। দালাল চক্রকে কেউ টাকা দিলে এর দায় আমার না। এ ব্যপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মিতু মরিয়ম বলেন, ভূমি অফিসের এ্যাসিল্যান্ডসহ কোন কর্মকর্তা কর্মচারীর বিরুদ্ধে অনিয়মের কোন অভিযোগ পেলে তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে।