ঢাকা ০৭:৪০ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মুরাদনগরে এক অসহায় মুক্তিযোদ্ধার বিচারের আকুতি

মোঃ নাজিম উদ্দিনঃ

রোজ বুধবার, ১১ নভেম্বর ২০১৫ ইং(মুরাদনগর বার্তা ডটকম):

আমাদের গর্বের প্রতীক ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধ। সেই মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়ে যারা আমাদের বাংলাদেশকে স্বাধীন করেছেন তারা মুক্তিযোদ্ধা। এই মুক্তিযুদ্ধারা বাঙ্গালী জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান এবং সর্বজনীন শ্রদ্ধেয় ব্যাক্তিত্ব।

তেমনি বাঙ্গালী জাতির একজন শ্রেষ্ঠ সন্তান কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার জাহাপুর ইউনিয়নর বইড়াকুড়ি গ্রামের মৃত মহরম আলীর ছেলে মুক্তিযোদ্ধা মোঃ ইসমাইল হোসেন। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে পাক হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে জীবন বাজী রেখে সম্মুখ সমরে যুদ্ধকরে দেশ স্বাধীন করলেও জীবন যুদ্ধে তিনি একজন পরাজিত সৈনিক। জীবন যুদ্ধে পরাজিত হয়ে আজ লোকচক্ষুর আড়ালে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। চারপাশের মানুষরুপি হিং¯্র মানবদের প্রতারনা ও মানসিক ভাবে নির্মম নির্যাতন ও কষাঘাতে তিনি আজ শান্ত রিক্ত হয়ে মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন ন্যায় বিচারের আশায়, করছেন আকুতি মিনুতী।

জানা যায়, অভাবের সংসার, নুন আনতে পান্তা ফুরায় তার, কখনও  অনাহারে বা অর্ধাহারে থেকে চলত তার জীবন চাকা। নিজের ভিটে বাড়ী নেই। থাকেন মেয়ের স্বামীর বাড়ীতে। স্ত্রী ও দু মেয়ে এবং একটি ছেলে নিয়ে  তার সংসার। কিছু দিন পূর্বে তাদের বাড়ীর পার্শবর্তী ওমান প্রবাসী জাহাঙ্গীর মিয়া ছুটিতে বাড়ীতে আসে। বাড়ীতে এসে মুক্তিযোদ্ধা ইসমাইলকে বলেন তার কাছে দুটি ভাল ভিসা আছে সেই ভিসায় তার মেয়ে দুটিকে ওমান পাঠাতে প্রস্তাব দেন জাহাঙ্গীর। ভিসা দুটির দাম জানান ছয় লক্ষ টাকা। পাশাপাশি প্রলোভন দেন এই ভিসায় ওমান গিয়ে অনেক টাকা রোজগার করা যাবে, তোমাদের পরিবারে আর কোন অভাব থাকবে না। ইসমাইল মিয়া প্রথমে রাজি না হলেও পরে পরিবারের সবার সম্মতিতে রাজি হন। ঘরে থাকা স্বর্নালংকার ও জমি বিক্রি করে এবং ধার কর্য করে টাকা জোগাড় করে সংসারের অভাব দুর করায় আশায় দুই মেয়ে রোকসানা আক্তার এবং জোসনা আক্তারকে ওমানে পাঠান। কিন্তু এখানেই সবকিছুর শেষ নয় সবে মাত্র শুরু।

রোকসানা ও জোসনাকে গত ১ জুলাই ওমানে পাঠানোর পর ইসমাইল ভেবে ছিলেন এই বুঝি সংসারের অভাব দুর হওয়ার সময় হয়ে কিন্তু সেই গুড়ে বালি পড়ল যখন ১০দিন পর ছোট মেয়ে রোকসানা দেশে ফিরে এলো। রোকসানা ফিরে আসার ১৮দিনপর বড় মেয়ে জোসনা মুমূর্ষ অবস্থায় ঢাকা বিমান বন্দরে এসে স্থানীয় এবং ঢাকার এক নিকটআত্বীয়র সহায়তায় হাসপাতালে ভর্তি হন। সেখান থেকে কিছুটা সুস্থ হয়ে বাড়িতে ফিরেন এবং পরিবারের সদস্যদের নিকট বর্ণনা দেন প্রবাসের নির্মম নির্যাতন ও অত্যাচারের।খবর পেয়ে কয়েকজন সংবাদকর্মী তাদের বাড়ীতে উপস্থিত হলে ন্যায় বিচার পাবার আশায় তাদের চোখে মুখে আশার আলো ফুটে ওঠে।
সংবাদকর্মীদের কাছে রোকসানা ও জোসনা জানান, তারা একই ফ্লাইটে ওমান যাবার পর বিমান বন্দরে জাহাঙ্গীর আলম তাদেরকে রিসিভ করে এবং সেখান থেকেই তাদেরকে অনেক টাকার বিনিময়ে অন্যত্র বিক্রি করে দেয়। তারপর দু’বোনকে দু’জন দুই গাড়ীতে করে দুই এলাকায় নিয়ে গিয়ে তাদের উপড় চালানো হত যৌন নির্যাতনসহ পাশবিক অত্যাচার। সেখান থেকে এক বাংঙ্গালী প্রবাসীর সহায়তায় পুলিশের মাধ্যমে উদ্ধার হয় রোকসানা এবং জোসনার ব্যাপারে যাবতীয় তথ্য সেখানকার পুলিশকে দেয়া হলে যাবার২৮দিনের মধ্যে পুলিশ জোসনাকে উদ্ধার করে বাংলাদেশে পাঠায়।

মুক্তিযোদ্ধা ইসমাইল বলেন, জাহাঙ্গীর আমাদের সাথে প্রতারনা করে আমার মেয়েদেরকে বিদেশ নিয়ে গিয়ে বিক্রি করে দিয়েছে। আমি এই প্রতারনার ব্যাপারে থানায় অভিযোগ করেছি। আমি এই ঘটনার ন্যায় বিচার চাই। ভিসার জন্য দেয়া ৬লক্ষ টাকা ফেরত চাওয়ায় তাকে হত্যার হুমকি দেয়া হচ্ছে বলে তিনি জানান।

এব্যাপারে মুরাদনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মিজানুর রহমান বলেন, লিখিত অভিযোগ পেয়েছি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

ট্যাগস
জনপ্রিয় সংবাদ

দীর্ঘ ১৩ বছর পর দেশে ফিরছেন কায়কোবাদ: স্বাগত জানাতে মুরাদনগরে ব্যাপক প্রস্ততি

মুরাদনগরে এক অসহায় মুক্তিযোদ্ধার বিচারের আকুতি

আপডেট সময় ০২:২৪:১০ অপরাহ্ন, বুধবার, ১১ নভেম্বর ২০১৫

মোঃ নাজিম উদ্দিনঃ

রোজ বুধবার, ১১ নভেম্বর ২০১৫ ইং(মুরাদনগর বার্তা ডটকম):

আমাদের গর্বের প্রতীক ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধ। সেই মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়ে যারা আমাদের বাংলাদেশকে স্বাধীন করেছেন তারা মুক্তিযোদ্ধা। এই মুক্তিযুদ্ধারা বাঙ্গালী জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান এবং সর্বজনীন শ্রদ্ধেয় ব্যাক্তিত্ব।

তেমনি বাঙ্গালী জাতির একজন শ্রেষ্ঠ সন্তান কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার জাহাপুর ইউনিয়নর বইড়াকুড়ি গ্রামের মৃত মহরম আলীর ছেলে মুক্তিযোদ্ধা মোঃ ইসমাইল হোসেন। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে পাক হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে জীবন বাজী রেখে সম্মুখ সমরে যুদ্ধকরে দেশ স্বাধীন করলেও জীবন যুদ্ধে তিনি একজন পরাজিত সৈনিক। জীবন যুদ্ধে পরাজিত হয়ে আজ লোকচক্ষুর আড়ালে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। চারপাশের মানুষরুপি হিং¯্র মানবদের প্রতারনা ও মানসিক ভাবে নির্মম নির্যাতন ও কষাঘাতে তিনি আজ শান্ত রিক্ত হয়ে মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন ন্যায় বিচারের আশায়, করছেন আকুতি মিনুতী।

জানা যায়, অভাবের সংসার, নুন আনতে পান্তা ফুরায় তার, কখনও  অনাহারে বা অর্ধাহারে থেকে চলত তার জীবন চাকা। নিজের ভিটে বাড়ী নেই। থাকেন মেয়ের স্বামীর বাড়ীতে। স্ত্রী ও দু মেয়ে এবং একটি ছেলে নিয়ে  তার সংসার। কিছু দিন পূর্বে তাদের বাড়ীর পার্শবর্তী ওমান প্রবাসী জাহাঙ্গীর মিয়া ছুটিতে বাড়ীতে আসে। বাড়ীতে এসে মুক্তিযোদ্ধা ইসমাইলকে বলেন তার কাছে দুটি ভাল ভিসা আছে সেই ভিসায় তার মেয়ে দুটিকে ওমান পাঠাতে প্রস্তাব দেন জাহাঙ্গীর। ভিসা দুটির দাম জানান ছয় লক্ষ টাকা। পাশাপাশি প্রলোভন দেন এই ভিসায় ওমান গিয়ে অনেক টাকা রোজগার করা যাবে, তোমাদের পরিবারে আর কোন অভাব থাকবে না। ইসমাইল মিয়া প্রথমে রাজি না হলেও পরে পরিবারের সবার সম্মতিতে রাজি হন। ঘরে থাকা স্বর্নালংকার ও জমি বিক্রি করে এবং ধার কর্য করে টাকা জোগাড় করে সংসারের অভাব দুর করায় আশায় দুই মেয়ে রোকসানা আক্তার এবং জোসনা আক্তারকে ওমানে পাঠান। কিন্তু এখানেই সবকিছুর শেষ নয় সবে মাত্র শুরু।

রোকসানা ও জোসনাকে গত ১ জুলাই ওমানে পাঠানোর পর ইসমাইল ভেবে ছিলেন এই বুঝি সংসারের অভাব দুর হওয়ার সময় হয়ে কিন্তু সেই গুড়ে বালি পড়ল যখন ১০দিন পর ছোট মেয়ে রোকসানা দেশে ফিরে এলো। রোকসানা ফিরে আসার ১৮দিনপর বড় মেয়ে জোসনা মুমূর্ষ অবস্থায় ঢাকা বিমান বন্দরে এসে স্থানীয় এবং ঢাকার এক নিকটআত্বীয়র সহায়তায় হাসপাতালে ভর্তি হন। সেখান থেকে কিছুটা সুস্থ হয়ে বাড়িতে ফিরেন এবং পরিবারের সদস্যদের নিকট বর্ণনা দেন প্রবাসের নির্মম নির্যাতন ও অত্যাচারের।খবর পেয়ে কয়েকজন সংবাদকর্মী তাদের বাড়ীতে উপস্থিত হলে ন্যায় বিচার পাবার আশায় তাদের চোখে মুখে আশার আলো ফুটে ওঠে।
সংবাদকর্মীদের কাছে রোকসানা ও জোসনা জানান, তারা একই ফ্লাইটে ওমান যাবার পর বিমান বন্দরে জাহাঙ্গীর আলম তাদেরকে রিসিভ করে এবং সেখান থেকেই তাদেরকে অনেক টাকার বিনিময়ে অন্যত্র বিক্রি করে দেয়। তারপর দু’বোনকে দু’জন দুই গাড়ীতে করে দুই এলাকায় নিয়ে গিয়ে তাদের উপড় চালানো হত যৌন নির্যাতনসহ পাশবিক অত্যাচার। সেখান থেকে এক বাংঙ্গালী প্রবাসীর সহায়তায় পুলিশের মাধ্যমে উদ্ধার হয় রোকসানা এবং জোসনার ব্যাপারে যাবতীয় তথ্য সেখানকার পুলিশকে দেয়া হলে যাবার২৮দিনের মধ্যে পুলিশ জোসনাকে উদ্ধার করে বাংলাদেশে পাঠায়।

মুক্তিযোদ্ধা ইসমাইল বলেন, জাহাঙ্গীর আমাদের সাথে প্রতারনা করে আমার মেয়েদেরকে বিদেশ নিয়ে গিয়ে বিক্রি করে দিয়েছে। আমি এই প্রতারনার ব্যাপারে থানায় অভিযোগ করেছি। আমি এই ঘটনার ন্যায় বিচার চাই। ভিসার জন্য দেয়া ৬লক্ষ টাকা ফেরত চাওয়ায় তাকে হত্যার হুমকি দেয়া হচ্ছে বলে তিনি জানান।

এব্যাপারে মুরাদনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মিজানুর রহমান বলেন, লিখিত অভিযোগ পেয়েছি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।