ঢাকা ০৬:৩৮ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

৮ মহাদেশের টেলিস্কোপে ধরা পড়ল ব্ল্যাক হোল!

তথ্যপ্রযুক্তি ডেস্কঃ

ব্ল্যাক হোল এমন একটি মহাজাগতিক বস্তু যার সর্বগ্রাসী ক্ষুধার হাত থেকে কারো মুক্তি নেই। বেরিয়ে আসতে পারে না আলোও। অত্যন্ত শক্তিশালী অভিকর্য বলের টানে সবকিছুকেই নিজের দিকে টেনে নিয়ে আসে ব্ল্যাক হোল। এরপর গিলে ফেলে। তাই এই ব্রহ্মাণ্ডের কোনো ব্ল্যাক হোলেরই ছবি তোলা সম্ভব হয়নি এতদিন। তবে এবার পৃথিবীর ৮টি মহাদেশে বসানো অত্যন্ত শক্তিশালী ৮টি রেডিও টেলিস্কোপ দিয়ে ব্ল্যাক হোলের রেডিও তরঙ্গকে দেখা হয়েছে। সেই রেডিও তরঙ্গের মাধ্যমে সম্ভব হয়েছে ব্ল্যাক হোলের ছবি তোলা।

 

এই ব্রহ্মাণ্ডে আমাদের ঠিকানা মিল্কি ওয়ে গ্যালাক্সির ঠিক মাঝখানে। আমাদের থেকে ২৬ হাজার আলোকবর্ষ দূরে রয়েছে ব্ল্যাক হোল ‘স্যাজিটেরিয়াস এ*’। গত এক শতাব্দী ধরে এই ব্ল্যাক হোল নিয়ে পৃথিবীবাসীর যে অপার কৌতূহল ছিল তা হয়তো মিটবে এই মাসেই। বহু চেষ্টা করে দুই বছর ধরে তোলা হয়েছে ব্ল্যাক হোল ‘স্যাজিটেরিয়াস এ*’র ছবি। মিল্কি ওয়ে গ্যালাক্সির ঠিক মাঝখানে থাকা সেই ভয়ংকর ব্ল্যাক হোলটির ওজন আমাদের সূর্যের ভরের ৪০ লাখ গুণ! বৃত্তাকার এই দানবের ব্যাস দুই কোটি ৪০ লাখ কিলোমিটার।

ভয়ংকর দৈত্যাকার এই ব্ল্যাক হোলটির ছবি তোলার মতো অসাধ্য সাধন করেছে ইভেন্ট হরাইজন টেলিস্কোপ (ইএইচটি)। যা বানানো হয় পৃথিবীর ৮টি মহাদেশে বসানো অত্যন্ত শক্তিশালী ৮টি রেডিও টেলিস্কোপের নেটওয়ার্ক দিয়ে। যেটি কাজ শুরু করেছিল দুই বছর আগে, ২০১৭ সালে।

‘ব্ল্যাক হোল?স আর নট সো ব্ল্যাক’!

প্রয়াত কিংবদন্তি পদার্থবিদ স্টিফেন হকিংই প্রথম অঙ্ক কষে বলেছিলেন, ‘ব্ল্যাক হোলস আর নট সো ব্ল্যাক।’ ব্ল্যাক হোলরা পুরোপুরি কালো হয় না। তাদেরও কিছুটা ‘আলো’ থাকে। সেই আলোটা অবশ্য দেখা সম্ভব হয় না। কারণ সেই আলোটা বেরিয়ে আসে অসম্ভব ঠান্ডায়। অথচ তার চেয়ে অনেক বেশি গরম এই ব্রহ্মাণ্ডের কসমোলজিক্যাল মাইক্রোওয়েভ ব্যাকগ্রাউন্ড (সিএমবি)। সেই ‘আলো’র ও-পারে যে ব্ল্যাক হোল রয়েছে তাও জানা যায় না। শুধু বোঝা যায়, ও-পারে যেন কিছুই নেই। রয়েছে শুধুই শূন্যতা।

ব্ল্যাক হোলের কাছাকাছি যে জায়গাটা থেকে কিছুটা হলেও আলো বেরিয়ে আসতে পারে, স্টিফেন হকিং সেই জায়গাটার নাম দিয়েছিলেন ‘ইভেন্ট হরাইজন’। যা রয়েছে গোটা ব্ল্যাক হোলটার চার পাশে। ব্ল্যাক হোলটাকে চার দিক থেকে ঘিরে।

ব্ল্যাক হোলের ইভেন্ট হরাইজনে আলো আসে কোথা থেকে?

ব্ল্যাক হোল জোরালে অভিকর্ষ বলের টানে নক্ষত্র, ধুলোবালি আর গ্যাসের মেঘকে নিজের দিকে টেনে আনে। সেগুলো ব্ল্যাক হোলের পেটে গিয়ে পড়ার আগে দ্রুত ছুটে আসার সময় একে অন্যকে ধাক্কা মারে। ধাক্কা মারে ব্ল্যাক হোলের চার পাশে থাকা ধুলোবালি আর জমাট বাঁধা গ্যাসের মেঘকে। তার ফলে সৃষ্টি হয় এক ধরনের আলোর। যাকে বলা হয় এক্স-রে। যা আমরা দেখতে পাই না। তবে ইভেন্ট হরাইজনে প্রচুর আধানযুক্ত কণা থাকায় ব্ল্যাক হোলের চার পাশের ওই এলাকায় অত্যন্ত শক্তিশালী চৌম্বক ক্ষেত্র বা ম্যাগনেটিক ফিল্ডের জন্ম হয়। সেই শক্তিশালী চৌম্বক ক্ষেত্রগুলোর মধ্যে দিয়ে ইভেন্ট হরাইজ?ন থেকে ঠিকরে বেরিয়ে আসে আরো এক ধরনের আলো। যা আসলে রেডিও তরঙ্গ। যার তরঙ্গদৈর্ঘ্য অনেকগুণ বেশি। তা অনেক অনেক দূর পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়তে পারে। মূলত সেই রেডিও তরঙ্গকে ৮টি মহাদেশে বসানো অত্যন্ত শক্তিশালী ৮টি রেডিও টেলিস্কোপ দিয়ে দেখে তোলা হয়েছে ব্ল্যাক হোলের ছবি। -আনন্দবাজার

ট্যাগস
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

সাবেক মন্ত্রী কায়কোবাদের সঙ্গে তুর্কী এমপির সাক্ষাৎ

৮ মহাদেশের টেলিস্কোপে ধরা পড়ল ব্ল্যাক হোল!

আপডেট সময় ১১:৩৮:০৬ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৫ এপ্রিল ২০১৯
তথ্যপ্রযুক্তি ডেস্কঃ

ব্ল্যাক হোল এমন একটি মহাজাগতিক বস্তু যার সর্বগ্রাসী ক্ষুধার হাত থেকে কারো মুক্তি নেই। বেরিয়ে আসতে পারে না আলোও। অত্যন্ত শক্তিশালী অভিকর্য বলের টানে সবকিছুকেই নিজের দিকে টেনে নিয়ে আসে ব্ল্যাক হোল। এরপর গিলে ফেলে। তাই এই ব্রহ্মাণ্ডের কোনো ব্ল্যাক হোলেরই ছবি তোলা সম্ভব হয়নি এতদিন। তবে এবার পৃথিবীর ৮টি মহাদেশে বসানো অত্যন্ত শক্তিশালী ৮টি রেডিও টেলিস্কোপ দিয়ে ব্ল্যাক হোলের রেডিও তরঙ্গকে দেখা হয়েছে। সেই রেডিও তরঙ্গের মাধ্যমে সম্ভব হয়েছে ব্ল্যাক হোলের ছবি তোলা।

 

এই ব্রহ্মাণ্ডে আমাদের ঠিকানা মিল্কি ওয়ে গ্যালাক্সির ঠিক মাঝখানে। আমাদের থেকে ২৬ হাজার আলোকবর্ষ দূরে রয়েছে ব্ল্যাক হোল ‘স্যাজিটেরিয়াস এ*’। গত এক শতাব্দী ধরে এই ব্ল্যাক হোল নিয়ে পৃথিবীবাসীর যে অপার কৌতূহল ছিল তা হয়তো মিটবে এই মাসেই। বহু চেষ্টা করে দুই বছর ধরে তোলা হয়েছে ব্ল্যাক হোল ‘স্যাজিটেরিয়াস এ*’র ছবি। মিল্কি ওয়ে গ্যালাক্সির ঠিক মাঝখানে থাকা সেই ভয়ংকর ব্ল্যাক হোলটির ওজন আমাদের সূর্যের ভরের ৪০ লাখ গুণ! বৃত্তাকার এই দানবের ব্যাস দুই কোটি ৪০ লাখ কিলোমিটার।

ভয়ংকর দৈত্যাকার এই ব্ল্যাক হোলটির ছবি তোলার মতো অসাধ্য সাধন করেছে ইভেন্ট হরাইজন টেলিস্কোপ (ইএইচটি)। যা বানানো হয় পৃথিবীর ৮টি মহাদেশে বসানো অত্যন্ত শক্তিশালী ৮টি রেডিও টেলিস্কোপের নেটওয়ার্ক দিয়ে। যেটি কাজ শুরু করেছিল দুই বছর আগে, ২০১৭ সালে।

‘ব্ল্যাক হোল?স আর নট সো ব্ল্যাক’!

প্রয়াত কিংবদন্তি পদার্থবিদ স্টিফেন হকিংই প্রথম অঙ্ক কষে বলেছিলেন, ‘ব্ল্যাক হোলস আর নট সো ব্ল্যাক।’ ব্ল্যাক হোলরা পুরোপুরি কালো হয় না। তাদেরও কিছুটা ‘আলো’ থাকে। সেই আলোটা অবশ্য দেখা সম্ভব হয় না। কারণ সেই আলোটা বেরিয়ে আসে অসম্ভব ঠান্ডায়। অথচ তার চেয়ে অনেক বেশি গরম এই ব্রহ্মাণ্ডের কসমোলজিক্যাল মাইক্রোওয়েভ ব্যাকগ্রাউন্ড (সিএমবি)। সেই ‘আলো’র ও-পারে যে ব্ল্যাক হোল রয়েছে তাও জানা যায় না। শুধু বোঝা যায়, ও-পারে যেন কিছুই নেই। রয়েছে শুধুই শূন্যতা।

ব্ল্যাক হোলের কাছাকাছি যে জায়গাটা থেকে কিছুটা হলেও আলো বেরিয়ে আসতে পারে, স্টিফেন হকিং সেই জায়গাটার নাম দিয়েছিলেন ‘ইভেন্ট হরাইজন’। যা রয়েছে গোটা ব্ল্যাক হোলটার চার পাশে। ব্ল্যাক হোলটাকে চার দিক থেকে ঘিরে।

ব্ল্যাক হোলের ইভেন্ট হরাইজনে আলো আসে কোথা থেকে?

ব্ল্যাক হোল জোরালে অভিকর্ষ বলের টানে নক্ষত্র, ধুলোবালি আর গ্যাসের মেঘকে নিজের দিকে টেনে আনে। সেগুলো ব্ল্যাক হোলের পেটে গিয়ে পড়ার আগে দ্রুত ছুটে আসার সময় একে অন্যকে ধাক্কা মারে। ধাক্কা মারে ব্ল্যাক হোলের চার পাশে থাকা ধুলোবালি আর জমাট বাঁধা গ্যাসের মেঘকে। তার ফলে সৃষ্টি হয় এক ধরনের আলোর। যাকে বলা হয় এক্স-রে। যা আমরা দেখতে পাই না। তবে ইভেন্ট হরাইজনে প্রচুর আধানযুক্ত কণা থাকায় ব্ল্যাক হোলের চার পাশের ওই এলাকায় অত্যন্ত শক্তিশালী চৌম্বক ক্ষেত্র বা ম্যাগনেটিক ফিল্ডের জন্ম হয়। সেই শক্তিশালী চৌম্বক ক্ষেত্রগুলোর মধ্যে দিয়ে ইভেন্ট হরাইজ?ন থেকে ঠিকরে বেরিয়ে আসে আরো এক ধরনের আলো। যা আসলে রেডিও তরঙ্গ। যার তরঙ্গদৈর্ঘ্য অনেকগুণ বেশি। তা অনেক অনেক দূর পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়তে পারে। মূলত সেই রেডিও তরঙ্গকে ৮টি মহাদেশে বসানো অত্যন্ত শক্তিশালী ৮টি রেডিও টেলিস্কোপ দিয়ে দেখে তোলা হয়েছে ব্ল্যাক হোলের ছবি। -আনন্দবাজার