ঢাকা ১০:৩৪ অপরাহ্ন, বুধবার, ০২ অক্টোবর ২০২৪, ১৭ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

হোমনার বৈশাখকে কেন্দ্র করে শ্রীমর্দ্দির বাঁশি তৈরীতে ব্যস্ত বাঁশির কারিগররা’’

ফয়সল আহমেদ খান, বাঞ্ছারামপুর (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধি ঃ

শ্রীমর্দ্দি গ্রাম।এদত অঞ্চলের মানুষ এক নামে চিনেন বাঁশির গ্রাম হিসেবে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর উপজেলার পার্শবর্তী এলাকা হোমনা। নববর্ষকে সামনে রেখে কুমিল্লার হোমনা সদর থেকে ৪ কি: মি: দুরে তিতাস নদীর পাশে অবস্থিত শ্রীমর্দ্দি গ্রামে বাঁশি পল্লীতে পহেলা বৈশাখের শেষ সময়ের ব্যস্ততম সময় পার করছেন বাঁশির কারিগরা।ঐতিহ্যবাহী বাঁশের বাঁশির ব্যবহার দিনে দিনে কমে এলেও অত্র গ্রামের ৬৪টি পরিবার এখনও বাঁশি শিল্প ধরে রেখেছে। নতুন বছরের মেলায় বাঁশির যোগান দিতে দিনরাত ব্যস্ত সময় পার করছে এসব পরিবারের সদস্যরা।

কয়েকদিন পরেই নববর্ষ।আর নববর্ষ মানেই বৈশাখী মেলা। আর মেলায় বাঁশির কদর একটু বেশিই। তাই কুমিল্লার হোমনার শ্রীমদ্দি গ্রামের বাঁশি পল্লীতে তৈরি হচ্ছে নানান রকমের বাঁশি। মেলায় বাঁশির যোগান দিতে ব্যস্ত পল্লীর সবাই।

তাদের পরিবারের নতুন প্রজন্মের অনেকে বাঁশি তৈরির পেশা থেকে সরে যাচ্ছে। আবার বাঁশি তৈরির কাঁচামালের দাম বাড়তে থাকায় অনেকেই ছেড়ে দিয়েছেন এই পেশা। কালের বিবর্তনে বাঁশির চাহিদাও কমছে বলে মনে করেন করিগররা।

কয়েকজন কারিগরের জানান, বর্তমানে কয়লার দাম বেশি হওয়ার কারনে এই শিল্প থেকে দিনের পর দিন অনেক সরে দাড়াচ্ছে।বাশিঁর কারিগর আবুল কাশেম দুঃখ নিয়ে জানান, একশ’ থেকে সোয়াশ’ বছর ধরে চলছে বাঁশি তৈরির কাজ। পূর্বসূরীদের দেখানো পথে এখনও অন্তত ৬৪টি পরিবার বাংলার ঐতিহ্য লালন করতে পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছে বাঁশি তৈরির কাজ। প্রতিটি বাঁশি খুচরা মূল্য ৫ টাকা থেকে শুরু করে  ২৫০০  টাকা পর্যন্ত বিক্রি করেন। এছাড়া ও ইউরোপ, আমেরিকাসহ বিশ্বের ২০-২৫টি দেশে এই শিল্পের খ্যাতি রয়েছে।এ গ্রাম থেকে যায় বাশি।কথা বলে জানা গেছে,দেশের এক তৃতীয়াংশ বাশিঁ তৈরী হয় হোমনার শ্রীমর্দ্দিতে।

হোমনার শ্রীমর্দ্দি গ্রামের বাঁশি পাড়ার ৬০ বছরের বৃদ্ধ নারী-পুরুষ থেকে স্কুলগামী শিশুরাও বাঁশি তৈরির কাজ করে থাকে। বাঁশিতে নকশা তৈরি, ছিদ্র করা, ধোয়া-শুকানো এবং রং করার কাজ নারীরাও বেশ আগ্রহ নিয়ে কাজ করে থাকেন।

বাঁশির কারিগর তিব্বত সরকার (৬৫) বলেন, শ্রীমদ্দিতে ব্রিটিশ আমল থেকে বাঁশি তৈরি হয়ে আসছে। ১০-১২ বছর বয়স থেকেই এ কাজ করছি।কিন্তু,আমরা সরকারি,শিল্পকলা একাডেমী বা সুদমুক্ত কোন ব্যাংক ঋণ পাই না।
প্রতি বছর সাংবাদিকরা এই সময় এসে আমাদের দূর্দশার ছবি তুলে নিয়ে যায়,কিন্তু দূর্দশা আর যায় না।

আবুল হাসেম বলেন, আমার তৈরি বাঁশি ফ্রান্স, জার্মানি, কানাডা, স্পেন, ইতালিসহ বেশ কয়েকটি দেশে রফতানি হয়ে থাকে। আমরা প্রায় ১৫ ধরনের বাঁশি তৈরি করে থাকি। এগুলোর মধ্যে তোতা (মুখ) বাঁশি, মোহন বাঁশি, ফেন্সি বাঁশি, খানদানি বাঁশি, আর বাঁশি (ক্ল্যাসিক্যাল সুরের বাঁশি), বীণ বাঁশি, বেলুন বাঁশি রয়েছে। বিদেশের অনেক দেশেই বাঁশির কদর অনেক বেশি। কারণ এ বাঁশি একেবারেই প্রাকৃতিক। আমাদের দেশে বংশীবাদকের কাছে খানদানি বাঁশির কদর অনেক বেশি।

ট্যাগস
আপলোডকারীর তথ্য

হোমনার বৈশাখকে কেন্দ্র করে শ্রীমর্দ্দির বাঁশি তৈরীতে ব্যস্ত বাঁশির কারিগররা’’

আপডেট সময় ০১:০৭:৫৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১১ এপ্রিল ২০১৯
ফয়সল আহমেদ খান, বাঞ্ছারামপুর (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধি ঃ

শ্রীমর্দ্দি গ্রাম।এদত অঞ্চলের মানুষ এক নামে চিনেন বাঁশির গ্রাম হিসেবে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর উপজেলার পার্শবর্তী এলাকা হোমনা। নববর্ষকে সামনে রেখে কুমিল্লার হোমনা সদর থেকে ৪ কি: মি: দুরে তিতাস নদীর পাশে অবস্থিত শ্রীমর্দ্দি গ্রামে বাঁশি পল্লীতে পহেলা বৈশাখের শেষ সময়ের ব্যস্ততম সময় পার করছেন বাঁশির কারিগরা।ঐতিহ্যবাহী বাঁশের বাঁশির ব্যবহার দিনে দিনে কমে এলেও অত্র গ্রামের ৬৪টি পরিবার এখনও বাঁশি শিল্প ধরে রেখেছে। নতুন বছরের মেলায় বাঁশির যোগান দিতে দিনরাত ব্যস্ত সময় পার করছে এসব পরিবারের সদস্যরা।

কয়েকদিন পরেই নববর্ষ।আর নববর্ষ মানেই বৈশাখী মেলা। আর মেলায় বাঁশির কদর একটু বেশিই। তাই কুমিল্লার হোমনার শ্রীমদ্দি গ্রামের বাঁশি পল্লীতে তৈরি হচ্ছে নানান রকমের বাঁশি। মেলায় বাঁশির যোগান দিতে ব্যস্ত পল্লীর সবাই।

তাদের পরিবারের নতুন প্রজন্মের অনেকে বাঁশি তৈরির পেশা থেকে সরে যাচ্ছে। আবার বাঁশি তৈরির কাঁচামালের দাম বাড়তে থাকায় অনেকেই ছেড়ে দিয়েছেন এই পেশা। কালের বিবর্তনে বাঁশির চাহিদাও কমছে বলে মনে করেন করিগররা।

কয়েকজন কারিগরের জানান, বর্তমানে কয়লার দাম বেশি হওয়ার কারনে এই শিল্প থেকে দিনের পর দিন অনেক সরে দাড়াচ্ছে।বাশিঁর কারিগর আবুল কাশেম দুঃখ নিয়ে জানান, একশ’ থেকে সোয়াশ’ বছর ধরে চলছে বাঁশি তৈরির কাজ। পূর্বসূরীদের দেখানো পথে এখনও অন্তত ৬৪টি পরিবার বাংলার ঐতিহ্য লালন করতে পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছে বাঁশি তৈরির কাজ। প্রতিটি বাঁশি খুচরা মূল্য ৫ টাকা থেকে শুরু করে  ২৫০০  টাকা পর্যন্ত বিক্রি করেন। এছাড়া ও ইউরোপ, আমেরিকাসহ বিশ্বের ২০-২৫টি দেশে এই শিল্পের খ্যাতি রয়েছে।এ গ্রাম থেকে যায় বাশি।কথা বলে জানা গেছে,দেশের এক তৃতীয়াংশ বাশিঁ তৈরী হয় হোমনার শ্রীমর্দ্দিতে।

হোমনার শ্রীমর্দ্দি গ্রামের বাঁশি পাড়ার ৬০ বছরের বৃদ্ধ নারী-পুরুষ থেকে স্কুলগামী শিশুরাও বাঁশি তৈরির কাজ করে থাকে। বাঁশিতে নকশা তৈরি, ছিদ্র করা, ধোয়া-শুকানো এবং রং করার কাজ নারীরাও বেশ আগ্রহ নিয়ে কাজ করে থাকেন।

বাঁশির কারিগর তিব্বত সরকার (৬৫) বলেন, শ্রীমদ্দিতে ব্রিটিশ আমল থেকে বাঁশি তৈরি হয়ে আসছে। ১০-১২ বছর বয়স থেকেই এ কাজ করছি।কিন্তু,আমরা সরকারি,শিল্পকলা একাডেমী বা সুদমুক্ত কোন ব্যাংক ঋণ পাই না।
প্রতি বছর সাংবাদিকরা এই সময় এসে আমাদের দূর্দশার ছবি তুলে নিয়ে যায়,কিন্তু দূর্দশা আর যায় না।

আবুল হাসেম বলেন, আমার তৈরি বাঁশি ফ্রান্স, জার্মানি, কানাডা, স্পেন, ইতালিসহ বেশ কয়েকটি দেশে রফতানি হয়ে থাকে। আমরা প্রায় ১৫ ধরনের বাঁশি তৈরি করে থাকি। এগুলোর মধ্যে তোতা (মুখ) বাঁশি, মোহন বাঁশি, ফেন্সি বাঁশি, খানদানি বাঁশি, আর বাঁশি (ক্ল্যাসিক্যাল সুরের বাঁশি), বীণ বাঁশি, বেলুন বাঁশি রয়েছে। বিদেশের অনেক দেশেই বাঁশির কদর অনেক বেশি। কারণ এ বাঁশি একেবারেই প্রাকৃতিক। আমাদের দেশে বংশীবাদকের কাছে খানদানি বাঁশির কদর অনেক বেশি।