ঢাকা ১২:২৬ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০৩ অক্টোবর ২০২৪, ১৭ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কুমিল্লায় ছেলের জীবনের বিনিময়ে ৬০ শতক জমি বন্ধক নিলেন বাবা!

কুমিল্লা প্রতিনিধিঃ

কুমিল্লায় একটি ইট ভাটার ট্রাক্টরের চাপায় কামরুল হাসান জয় (১৭) নামে এক তরুণ নিহত হয়। এ ঘটনা চাপা দিতে ৮০ হাজার টাকায় সমঝোতা হয়েছে। তবে ট্রাক্টরের মালিক হাসান চৌধুরী ওই টাকা নগদ পরিশোধ করতে পারেনি। এজন্য তার কাছ থেকে ছেলের জীবনের বিনিময়ে ৬০ শতক জমি বন্ধক নিয়েছেন নিহত জয়ের বাবা তাজুল ইসলাম।

ঘটনাটি ঘটেছে গত বৃহস্পতিবার বিকালে জেলার লালমাই উপজেলার বেলঘর দক্ষিণ ইউনিয়নের যুক্তিখোলা গ্রামে।

 

এদিকে ছেলের জীবনের বিনিময়ে জমি বন্ধক নেওয়ার বিষয়টি এলাকায় জানাজানি হওয়ার পর ওই এলাকার সকল মহলে বেশ আলোচনা-সমালোচনার ঝড় বইছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ওই এলাকার একটি ইট ভাটা ও ঘাতক ট্রাক্টরের মালিক স্থানীয় ব্যবসায়ী হাসান চৌধুরী। ওই ইট ভাটার কাজের জন্য তিনি মিলন নামে অপ্রাপ্ত বয়স্ক এবং লাইসেন্সবিহীন এক চালক দিয়ে ওই ট্রাক্টর চালান। গত বৃহস্পতিবার মিলন বেপরোয়া গতিতে ট্রাক্টর চালানোর সময় এর নিচে চাপা পড়ে কামরুল হাসান জয় নিহত হন। এ ঘটনার পর ট্রাক্টরচালক মিলন পালিয়ে যায়।

মিলন মারা যাওয়ার পর তার বাবা তাজুল ইসলাম এ ঘটনায় মামলা করার প্রস্তুতি নেন। এতে বেলঘর দক্ষিণ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল মান্নান মনু, স্থানীয় মেম্বার মাহবুব, ট্রাক্টরের মালিক হাসান চৌধুরী, নিহতের বাবা তাজুল ইসলাম মিলে ঘটনার মীমাংসা করা হয়। নিহতের বাবাকে ক্ষতিপূরণ হিসেবে ৮০ হাজার টাকা পরিশোধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ট্রাক্টরের মালিক হাসান চৌধুরী ওই টাকা তাৎক্ষণিকভাবে নগদ পরিশোধ করতে না পারায় আলোচনার মাধ্যমে ওই টাকার বিনিময়ে নিহতের বাবা তাজুল ইসলামকে ৬০ শতক জমি বন্ধক দেন। এরপর ময়নাতদন্ত ছাড়াই ওইদিন নিহতের মরদেহ দ্রুত দাফন করা হয়।

নিহতের বাবা তাজুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা গরীব মানুষ। বিচার চাইলেই কি বিচার পাবো? থানা ও কোর্ট-কাচারি ঘুরে বিচার পেতে গিয়ে দীর্ঘসূত্রিতায় পড়ে হয়রানী হতে হয়। এলাকার গণ্যমান্য লোকজন ধরলেন মীমাংসার জন্য। তাই ৮০ হাজার টাকার পরিবর্তে ৬০ শতক জমি বন্ধক নিয়ে মীমাংসার পর ময়নাতদন্ত ছাড়াই ছেলের লাশ দাফন করে ফেলেছি। ট্রাক্টরের মালিক নগদ টাকা পরিশোধ না করা পর্যন্ত ওই জমি চাষাবাদ করবো।’

ব্রিক ফিল্ড ও ট্রাক্টরের মালিক হাসান চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, ‘প্রতিদিন অনেক মানুষ এক্সিডেন্টে মারা যায়। কার খবর কে রাখে? আল্লাহর মাল আল্লাহ নিয়ে গেছেন, আমাদের কি করার আছে! তাই স্থানীয়দের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী নিহতের বাবাকে ৮০ হাজার টাকা দিয়ে ঘটনার মীমাংসা করেছি।’

স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আবদুল মান্নান মনু সাংবাদিকদের বলেন, ‘ট্রাক্টর মালিক ও নিহতের বাবাসহ দুই পক্ষের মধ্যে ঘটনার আপোস মীমাংসা হয়েছে। ৮০ হাজার টাকা নিহতের বাবাকে নগদ দেওয়া হয়নি। ট্রাক্টর মালিকের ৬০ শতক জমি নিহতের বাবাকে বন্ধক হিসেবে দেওয়া হয়েছে। তিনি ওই জমি আপাতত চাষাবাদ করবেন। তারা মীমাংসায় উপনীত হওয়ার পর ময়নাতদন্ত না করে মরদেহ দাফন হয়েছে।’

সদর দক্ষিণ মডেল থানার অধীন লালমাই উপজেলার ভূশ্চি বাজার পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ তোফাজ্জল সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিষয়টি কেউ জানায়নি। এ বিষয়ে কেউ অভিযোগও করেনি। পরে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গেলে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান, মেম্বার, ট্রাক্টরের মালিক ও নিহতের বাবাসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিরা পুলিশকে জানান, তারা ঘটনার মীমাংশা করে নিহতের লাশ দাফন করে ফেলেছেন।’

ট্যাগস
আপলোডকারীর তথ্য

কুমিল্লায় ছেলের জীবনের বিনিময়ে ৬০ শতক জমি বন্ধক নিলেন বাবা!

আপডেট সময় ০৬:১২:২৯ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৪ এপ্রিল ২০১৯
কুমিল্লা প্রতিনিধিঃ

কুমিল্লায় একটি ইট ভাটার ট্রাক্টরের চাপায় কামরুল হাসান জয় (১৭) নামে এক তরুণ নিহত হয়। এ ঘটনা চাপা দিতে ৮০ হাজার টাকায় সমঝোতা হয়েছে। তবে ট্রাক্টরের মালিক হাসান চৌধুরী ওই টাকা নগদ পরিশোধ করতে পারেনি। এজন্য তার কাছ থেকে ছেলের জীবনের বিনিময়ে ৬০ শতক জমি বন্ধক নিয়েছেন নিহত জয়ের বাবা তাজুল ইসলাম।

ঘটনাটি ঘটেছে গত বৃহস্পতিবার বিকালে জেলার লালমাই উপজেলার বেলঘর দক্ষিণ ইউনিয়নের যুক্তিখোলা গ্রামে।

 

এদিকে ছেলের জীবনের বিনিময়ে জমি বন্ধক নেওয়ার বিষয়টি এলাকায় জানাজানি হওয়ার পর ওই এলাকার সকল মহলে বেশ আলোচনা-সমালোচনার ঝড় বইছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ওই এলাকার একটি ইট ভাটা ও ঘাতক ট্রাক্টরের মালিক স্থানীয় ব্যবসায়ী হাসান চৌধুরী। ওই ইট ভাটার কাজের জন্য তিনি মিলন নামে অপ্রাপ্ত বয়স্ক এবং লাইসেন্সবিহীন এক চালক দিয়ে ওই ট্রাক্টর চালান। গত বৃহস্পতিবার মিলন বেপরোয়া গতিতে ট্রাক্টর চালানোর সময় এর নিচে চাপা পড়ে কামরুল হাসান জয় নিহত হন। এ ঘটনার পর ট্রাক্টরচালক মিলন পালিয়ে যায়।

মিলন মারা যাওয়ার পর তার বাবা তাজুল ইসলাম এ ঘটনায় মামলা করার প্রস্তুতি নেন। এতে বেলঘর দক্ষিণ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল মান্নান মনু, স্থানীয় মেম্বার মাহবুব, ট্রাক্টরের মালিক হাসান চৌধুরী, নিহতের বাবা তাজুল ইসলাম মিলে ঘটনার মীমাংসা করা হয়। নিহতের বাবাকে ক্ষতিপূরণ হিসেবে ৮০ হাজার টাকা পরিশোধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ট্রাক্টরের মালিক হাসান চৌধুরী ওই টাকা তাৎক্ষণিকভাবে নগদ পরিশোধ করতে না পারায় আলোচনার মাধ্যমে ওই টাকার বিনিময়ে নিহতের বাবা তাজুল ইসলামকে ৬০ শতক জমি বন্ধক দেন। এরপর ময়নাতদন্ত ছাড়াই ওইদিন নিহতের মরদেহ দ্রুত দাফন করা হয়।

নিহতের বাবা তাজুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা গরীব মানুষ। বিচার চাইলেই কি বিচার পাবো? থানা ও কোর্ট-কাচারি ঘুরে বিচার পেতে গিয়ে দীর্ঘসূত্রিতায় পড়ে হয়রানী হতে হয়। এলাকার গণ্যমান্য লোকজন ধরলেন মীমাংসার জন্য। তাই ৮০ হাজার টাকার পরিবর্তে ৬০ শতক জমি বন্ধক নিয়ে মীমাংসার পর ময়নাতদন্ত ছাড়াই ছেলের লাশ দাফন করে ফেলেছি। ট্রাক্টরের মালিক নগদ টাকা পরিশোধ না করা পর্যন্ত ওই জমি চাষাবাদ করবো।’

ব্রিক ফিল্ড ও ট্রাক্টরের মালিক হাসান চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, ‘প্রতিদিন অনেক মানুষ এক্সিডেন্টে মারা যায়। কার খবর কে রাখে? আল্লাহর মাল আল্লাহ নিয়ে গেছেন, আমাদের কি করার আছে! তাই স্থানীয়দের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী নিহতের বাবাকে ৮০ হাজার টাকা দিয়ে ঘটনার মীমাংসা করেছি।’

স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আবদুল মান্নান মনু সাংবাদিকদের বলেন, ‘ট্রাক্টর মালিক ও নিহতের বাবাসহ দুই পক্ষের মধ্যে ঘটনার আপোস মীমাংসা হয়েছে। ৮০ হাজার টাকা নিহতের বাবাকে নগদ দেওয়া হয়নি। ট্রাক্টর মালিকের ৬০ শতক জমি নিহতের বাবাকে বন্ধক হিসেবে দেওয়া হয়েছে। তিনি ওই জমি আপাতত চাষাবাদ করবেন। তারা মীমাংসায় উপনীত হওয়ার পর ময়নাতদন্ত না করে মরদেহ দাফন হয়েছে।’

সদর দক্ষিণ মডেল থানার অধীন লালমাই উপজেলার ভূশ্চি বাজার পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ তোফাজ্জল সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিষয়টি কেউ জানায়নি। এ বিষয়ে কেউ অভিযোগও করেনি। পরে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গেলে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান, মেম্বার, ট্রাক্টরের মালিক ও নিহতের বাবাসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিরা পুলিশকে জানান, তারা ঘটনার মীমাংশা করে নিহতের লাশ দাফন করে ফেলেছেন।’