ঢাকা ০২:৪২ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০৩ অক্টোবর ২০২৪, ১৭ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মুরাদনগরে বিদ্যুৎ সংযোগ না পেলেও বকেয়া বিলের মামলায় দিনমজুর কারাগারে যাওয়ার ঘটনায় তদন্ত কমিটি

মো: হাবিবুর রহমান, বিশেষ প্রতিনিধিঃ

কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নের মোচাগড়া গ্রামে বিদ্যুৎ সংযোগ না পেয়েও বকেয়া বিলের মামলায় দিনমজুর আব্দুল মতিন মিয়া(৪৫) কারাগারে যাওয়ার ঘটনায় কুমিল্লা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ এর চান্দিনা অফিসের জেনারেল ম্যানেজার মোস্তাফিজুর রহমানের নির্দেশে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। ইতি মধ্যে তদন্ত কমিটি ঘটনারস্থল পরির্দশন করেছে।

কুমিল্লা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১’র অফিস সূত্রে জানা যায়, বৃহস্পতিবার দৈনিক রূপসী বাংলায়সহ বিভিন্ন জাতীয় ও আঞ্চলিক পত্রিকায় “বিদ্যুৎ সংযোগ না পেয়েও বকেয়া বিলের মামলায় দিনমজুর আব্দুল মতিন কারাগারে” বিষয়ে সংবাদ প্রকাশিত হলে ওই দিনই দেবিদ্বার জোনাল অফিসের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার মৃনাল কান্তি চৌধুরীকে আহবায়ক ও বাঙ্গরা-দৌলতপুর জোনাল অফিসের সহকারী জেনারেল ম্যানেজার মাহফুজুর রহমানকে সদস্য করে দুই সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটিকে ৪৮ ঘন্টার মধ্যে তদন্ত রির্পোট জমা দেওয়ার নির্দেশ প্রধান করা হয়েছে।

কারারুদ্ধ আব্দুল মতিন মিয়ার স্ত্রী আমেনা খাতুন কান্না বিজড়িত কন্ঠে জানান, আমরা খুব গরিব। টাকা দিয়েও আমরা বিদ্যুৎ সংযোগ পাইনি। তারপরও বকেয়া বিলের মামলায় আমার স্বামীকে জেলে যেতে হয়েছে। আপনারা আামার স্বামীকে জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার একটা ব্যবস্থা করে দেন।

মোচাগড়া এলাকার মানিক মাস্টার, সৈয়দ তরুণ মিয়া, যুবলীগ নেতা সেলিম সরকার ও মনির হোসেন জানান, পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের কিছু অসৎ কর্মকর্তা ও দালালদের অনিয়মের কারণে আজ এই দু:খজনক ঘটনাটি ঘটেছে। নিরপরাধ আব্দুল মতিন মিয়া গ্রেফতার হওয়ায় তার পরিবারের লোকজন নিদারুণ কষ্ট পাচ্ছে। নাওয়া খাওয়া বন্ধ হয়ে গেছে। আমরা তার দ্রুত মুক্তির ব্যবস্থাসহ ক্ষতি পূরণের দাবি জানাই। পাশাপাশি উক্ত ঘটনায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক বিচার দাবি করেছে এলাকাবাসী।

দেবিদ্বার জোনাল অফিসের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার ও তদন্ত কমিটির প্রধান মৃনাল কান্তি চৌধুরী ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে জানান, আব্দুল মতিন নামের মিটারটি প্রায় কোয়াটার কিলোমিটার দুরে সফিকুল ইসলামের বাড়িতে সংযোগ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সফিকুল ইসলামও বিষয়টি অফিসকে জানায়নি এবং বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করেনি। আব্দুল মতিন নোটিশ পেয়েও তার ঘরে বিদ্যুৎ না থাকায় বিষয়টি আমলে নেয়নি। যার ফলে এ ঘটনাটি ঘটেছে।

কুমিল্লা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ এর জেনারেল ম্যানেজার মোস্তাফিজুর রহমানের সাথে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও মোবাইন ফোনে (০১৭৬৯-৪০০০২১) বন্ধ থাকায় কথা বলা সম্ভব হয়নি।

উল্লেখ্য, মোচাগড়া গ্রামের দক্ষিন পাড়ার বিদ্যুৎহীন ২৫৬টি পরিবার বিদ্যুৎ সংযোগের জন্য চার বছর আগে কুমিল্লা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ এর কাছে আবেদন করে। আবেদনের প্রেক্ষিতে স্থানীয় মৃত আবুল কাশেম ওরফে অহিদ আলীর ছেলে বিদ্যুৎ অফিসের দালাল আবুল কালাম আজাদ ও মৃত আলফু হাজীর ছেলে বিদ্যুৎ অফিসের দালাল আবুল বাশার প্রতিটি গ্রাহকের কাছ থেকে মিটার প্রতি ১০/১৫ হাজার টাকা আদায় করে। ওই সময় মৃত অহিদ আলীর ছেলে আব্দুল মতিন মিয়ার নামেও কতৃপক্ষ বিদ্যুৎ সংযোগের ফ্ইাল অনুমোদন করে। কিন্তু আব্দুল মতিন মিয়া দালাল চক্রদের ৪ হাজার টাকা দিলেও বাকি টাকা দিতে না পারায় বিদ্যুৎ অফিসের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের যোগসাজসে অর্থের বিনিময়ে আব্দুল মতিন মিয়ার ছবি পাল্টিয়ে একই এলাকার মৃত আব্দুস ছামাদের ছেলে সফিকুল ইসলামের ছবি লাগিয়ে দেয়। বিগত ২০১৫ সালের ২২ মার্চ আব্দুল মতিন মিয়ার নামীয় মিটারটি প্রায়  পোয়া কিলোমিটার দুরে সফিকুল ইসলামের ঘরে সংযোগ প্রদান করলে সে ১৭ মাস বিদ্যুৎ বিল বকেয়া রাখে। ১৭ মাসের বকেয়া বিদ্যুৎ বিল চার হাজার সাত টাকা আদায়ের জন্য কুমিল্লা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ এর চান্দিনা অফিসের এজিএম লক্ষন চন্দ্র পাল বাদী হয়ে বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডে একটি মামলা করে। ওই মামলায় মঙ্গলবার রাতে এসআই কবির হোসেনের নেতৃত্বে একদল পুলিশ আব্দুল মতিন মিয়াকে আটক করে মুরাদনগর থানায় নিয়ে আসে। বুধবার দুপুরে তাকে আদালতের মাধ্যমে কুমিল্লার কেন্দ্রিয় কারাগারে প্রেরণ করে।

ট্যাগস
আপলোডকারীর তথ্য

মুরাদনগরে বিদ্যুৎ সংযোগ না পেলেও বকেয়া বিলের মামলায় দিনমজুর কারাগারে যাওয়ার ঘটনায় তদন্ত কমিটি

আপডেট সময় ১১:৩৭:০৪ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০১৯
মো: হাবিবুর রহমান, বিশেষ প্রতিনিধিঃ

কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নের মোচাগড়া গ্রামে বিদ্যুৎ সংযোগ না পেয়েও বকেয়া বিলের মামলায় দিনমজুর আব্দুল মতিন মিয়া(৪৫) কারাগারে যাওয়ার ঘটনায় কুমিল্লা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ এর চান্দিনা অফিসের জেনারেল ম্যানেজার মোস্তাফিজুর রহমানের নির্দেশে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। ইতি মধ্যে তদন্ত কমিটি ঘটনারস্থল পরির্দশন করেছে।

কুমিল্লা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১’র অফিস সূত্রে জানা যায়, বৃহস্পতিবার দৈনিক রূপসী বাংলায়সহ বিভিন্ন জাতীয় ও আঞ্চলিক পত্রিকায় “বিদ্যুৎ সংযোগ না পেয়েও বকেয়া বিলের মামলায় দিনমজুর আব্দুল মতিন কারাগারে” বিষয়ে সংবাদ প্রকাশিত হলে ওই দিনই দেবিদ্বার জোনাল অফিসের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার মৃনাল কান্তি চৌধুরীকে আহবায়ক ও বাঙ্গরা-দৌলতপুর জোনাল অফিসের সহকারী জেনারেল ম্যানেজার মাহফুজুর রহমানকে সদস্য করে দুই সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটিকে ৪৮ ঘন্টার মধ্যে তদন্ত রির্পোট জমা দেওয়ার নির্দেশ প্রধান করা হয়েছে।

কারারুদ্ধ আব্দুল মতিন মিয়ার স্ত্রী আমেনা খাতুন কান্না বিজড়িত কন্ঠে জানান, আমরা খুব গরিব। টাকা দিয়েও আমরা বিদ্যুৎ সংযোগ পাইনি। তারপরও বকেয়া বিলের মামলায় আমার স্বামীকে জেলে যেতে হয়েছে। আপনারা আামার স্বামীকে জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার একটা ব্যবস্থা করে দেন।

মোচাগড়া এলাকার মানিক মাস্টার, সৈয়দ তরুণ মিয়া, যুবলীগ নেতা সেলিম সরকার ও মনির হোসেন জানান, পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের কিছু অসৎ কর্মকর্তা ও দালালদের অনিয়মের কারণে আজ এই দু:খজনক ঘটনাটি ঘটেছে। নিরপরাধ আব্দুল মতিন মিয়া গ্রেফতার হওয়ায় তার পরিবারের লোকজন নিদারুণ কষ্ট পাচ্ছে। নাওয়া খাওয়া বন্ধ হয়ে গেছে। আমরা তার দ্রুত মুক্তির ব্যবস্থাসহ ক্ষতি পূরণের দাবি জানাই। পাশাপাশি উক্ত ঘটনায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক বিচার দাবি করেছে এলাকাবাসী।

দেবিদ্বার জোনাল অফিসের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার ও তদন্ত কমিটির প্রধান মৃনাল কান্তি চৌধুরী ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে জানান, আব্দুল মতিন নামের মিটারটি প্রায় কোয়াটার কিলোমিটার দুরে সফিকুল ইসলামের বাড়িতে সংযোগ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সফিকুল ইসলামও বিষয়টি অফিসকে জানায়নি এবং বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করেনি। আব্দুল মতিন নোটিশ পেয়েও তার ঘরে বিদ্যুৎ না থাকায় বিষয়টি আমলে নেয়নি। যার ফলে এ ঘটনাটি ঘটেছে।

কুমিল্লা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ এর জেনারেল ম্যানেজার মোস্তাফিজুর রহমানের সাথে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও মোবাইন ফোনে (০১৭৬৯-৪০০০২১) বন্ধ থাকায় কথা বলা সম্ভব হয়নি।

উল্লেখ্য, মোচাগড়া গ্রামের দক্ষিন পাড়ার বিদ্যুৎহীন ২৫৬টি পরিবার বিদ্যুৎ সংযোগের জন্য চার বছর আগে কুমিল্লা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ এর কাছে আবেদন করে। আবেদনের প্রেক্ষিতে স্থানীয় মৃত আবুল কাশেম ওরফে অহিদ আলীর ছেলে বিদ্যুৎ অফিসের দালাল আবুল কালাম আজাদ ও মৃত আলফু হাজীর ছেলে বিদ্যুৎ অফিসের দালাল আবুল বাশার প্রতিটি গ্রাহকের কাছ থেকে মিটার প্রতি ১০/১৫ হাজার টাকা আদায় করে। ওই সময় মৃত অহিদ আলীর ছেলে আব্দুল মতিন মিয়ার নামেও কতৃপক্ষ বিদ্যুৎ সংযোগের ফ্ইাল অনুমোদন করে। কিন্তু আব্দুল মতিন মিয়া দালাল চক্রদের ৪ হাজার টাকা দিলেও বাকি টাকা দিতে না পারায় বিদ্যুৎ অফিসের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের যোগসাজসে অর্থের বিনিময়ে আব্দুল মতিন মিয়ার ছবি পাল্টিয়ে একই এলাকার মৃত আব্দুস ছামাদের ছেলে সফিকুল ইসলামের ছবি লাগিয়ে দেয়। বিগত ২০১৫ সালের ২২ মার্চ আব্দুল মতিন মিয়ার নামীয় মিটারটি প্রায়  পোয়া কিলোমিটার দুরে সফিকুল ইসলামের ঘরে সংযোগ প্রদান করলে সে ১৭ মাস বিদ্যুৎ বিল বকেয়া রাখে। ১৭ মাসের বকেয়া বিদ্যুৎ বিল চার হাজার সাত টাকা আদায়ের জন্য কুমিল্লা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ এর চান্দিনা অফিসের এজিএম লক্ষন চন্দ্র পাল বাদী হয়ে বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডে একটি মামলা করে। ওই মামলায় মঙ্গলবার রাতে এসআই কবির হোসেনের নেতৃত্বে একদল পুলিশ আব্দুল মতিন মিয়াকে আটক করে মুরাদনগর থানায় নিয়ে আসে। বুধবার দুপুরে তাকে আদালতের মাধ্যমে কুমিল্লার কেন্দ্রিয় কারাগারে প্রেরণ করে।