ঢাকা ১১:৫৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ৩০ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৬ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ট্রেন নয়, এটি টাঙ্গাইলের একটি বিদ্যালয়ের ক্লাসরুমের ডিজাইন!

যাত্রীরা হুট করে ঢুকে পড়ছে ট্রেনের বগিতে। নিজের আসন গ্রহণ করছে সুন্দরভাবেই। তারপর একটা সফর। অতঃপর ঘন্টা পড়লে যাত্রার শেষে আবার তারা বেড়িয়ে আসছে ট্রেন থেকে। এটি কোনো সাধারণ ট্রেন নয়। সফরটাও নিছকই অর্থহীন কোনো সফর নয়, একদম নিখাদ শিক্ষাসফর। এমনটাই দেখতে পাবেন যদি আপনি টাঙ্গাইলের একটি স্কুলে যান।

স্কুলটার নাম দিগরবাইদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এই বিদ্যালয়টির অবস্থান টাঙ্গাইলের মধুপুরে। দুর্দান্ত এই বিদ্যালয়কে দেখে কিছুক্ষণের জন্যে মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকাই যায়। কারণ, এই স্কুলটির অভিনব একটি ব্যাপার আছে। স্কুলের ক্লাসরুমগুলোর বাইরের দেয়ালের ডিজাইন করা হয়েছে রেলগাড়ির বগির মতোন করে। অনেকেই তাই ভালবেসে স্কুলটিকে ডাকে ‘ট্রেন স্কুল’ বলে।

কেন এই অভিনবত্ব? এর উত্তর খুঁজতে একটু শৈশবে ফিরে যেতে হয়। আমরা সবাই ছোট বেলায় মাথা ঝাঁকিয়ে শামসুর রহমানের ট্রেন বিষয়ক একটা কবিতা পড়েছি না? মনে করিয়ে দেই..

“ঝক ঝক ঝক ট্রেন চলেছে
রাত দুপুরে অই।
ট্রেন চলেছে, ট্রেন চলেছে

ট্রেনের বাড়ি কই ?

একটু জিরোয়, ফের ছুটে যায়
মাঠ পেরুলেই বন।
পুলের ওপর বাজনা বাজে
ঝন ঝনাঝন ঝন।

দেশ-বিদেশে বেড়ায় ঘুরে
নেইকো ঘোরার শেষ।
ইচ্ছে হলেই বাজায় বাঁশি,
দিন কেটে যায় বেশ।

থামবে হঠাৎ মজার গাড়ি
একটু কেশে খক।
আমায় নিয়ে ছুটবে আবার
ঝক ঝকাঝক ঝক।”

এই কবিতাটা যখন আমরা পড়ি তখন হয়ত আমাদের বেশিরভাগেরই ট্রেন ভ্রমণ করার সুযোগ হয়নি। অথচ, কি দারুণ একটা কবিতা যা আমাদের কল্পনার জগতে রেলগাড়ি ভ্রমণের অভিজ্ঞতার সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়। ঝক ঝক ঝক শব্দটা মাথায় অনেকক্ষণ ধরে ঘুরতে থাকে। এই কবিতাটি আমার অত্যন্ত প্রিয়। কবিতার এই মাহাত্ম্য বেশি করে ছুঁয়ে গেছে বিদ্যালয়টির প্রধানশিক্ষকের হৃদয়েও। তিনি তাই ভাবলেন, কেমন হয় যদি রেলগাড়ির বাস্তব চিত্রটা বুঝানোর পাশাপাশি ছাত্রছাত্রীদের একটু আনন্দের ব্যবস্থা করা যায়। যেই ভাবা সেই কাজ। নিজেই উদ্যোগ নিলেন। ক্লাসরুমগুলোকে এমনভাবে রঙ করালেন, দেখে মনে সুস্থির একটা ট্রেন ইশটিশানে অপেক্ষা করছে। যাত্রী আসলেই ছেড়ে চলে যাবে। এই ট্রেন যদিও ছেড়ে যায় না ইশটিশান, কিন্তু এই ট্রেনের যাত্রী অর্থাৎ ছাত্রছাত্রীদের দারুণ একটা শিক্ষা সফর তো হয়!

বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষকের যুক্তি হলো, “কোমলমতি শিক্ষার্থীরা যাতে করে মজা পেয়ে লেখাপড়ায় মনযোগী হতে পারে, সেই চিন্তা থেকেই বিদ্যালয়টি ট্রেনের মত আকর্ষনীয় করে সাজানো হয়েছে। কবি শামসুর রাহমানের বিখ্যাত কবিতা ‘ট্রেন’র বাস্তব চিত্র শিক্ষার্থীদের বুঝানোর জন্যই আমি বিদ্যালয়টি ট্রেনের মতো করে রং করেছি। শিক্ষার্থীরা যাতে মজা পেয়ে লেখাপড়ায় মনযোগী হতে পারে সেই চিন্তা থেকেই এটি করা হয়েছে মূলত।”

 

অনেকেই এখন স্কুলটিকে দেখতে আসে। ট্রেন স্কুল রীতিমতো টাঙ্গাইলে জনপ্রিয়। মানুষ এসে মুগ্ধ হয়ে যায়। কত ছোট্ট একটা পরিবর্তন শিক্ষার পরিবেশকে কি আনন্দদায়ক করে তুলতে পারে। শিক্ষার্থীরা পড়ালেখা করতে এসে হাসিখুশি থাকছে, আনন্দ নিয়ে উপভোগ করছে সব কিছু, ট্রেন স্কুলের যাত্রী ভেবে নিজেরা কি দারুণ কল্পনার জগতে ডুবে যাচ্ছে কিছুক্ষণ – এই দৃশ্য কার না ভাল লাগবে! এমন অভিনব আইডিয়া আসলে ছড়িয়ে যাওয়া উচিত, শিক্ষার পরিবেশ আনন্দদায়ক হলে শিক্ষাদান আনন্দময় হলে সেই শিক্ষার গভীরতা অনেক বেশি বাস্তবজীবনে কাজে লাগে। পড়ালেখা ভীতিকর না হোক, পড়ালেখা হোক হাসতে হাসতে, আনন্দে, কল্পনায়, ভালবাসায়..

ট্যাগস
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

মুরাদনগর সেন্ট্রাল স্কুলের পরীক্ষার ফল প্রকাশ ও পুরষ্কার বিতরণ

ট্রেন নয়, এটি টাঙ্গাইলের একটি বিদ্যালয়ের ক্লাসরুমের ডিজাইন!

আপডেট সময় ০৪:৩১:২৬ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৪ মে ২০১৯

যাত্রীরা হুট করে ঢুকে পড়ছে ট্রেনের বগিতে। নিজের আসন গ্রহণ করছে সুন্দরভাবেই। তারপর একটা সফর। অতঃপর ঘন্টা পড়লে যাত্রার শেষে আবার তারা বেড়িয়ে আসছে ট্রেন থেকে। এটি কোনো সাধারণ ট্রেন নয়। সফরটাও নিছকই অর্থহীন কোনো সফর নয়, একদম নিখাদ শিক্ষাসফর। এমনটাই দেখতে পাবেন যদি আপনি টাঙ্গাইলের একটি স্কুলে যান।

স্কুলটার নাম দিগরবাইদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এই বিদ্যালয়টির অবস্থান টাঙ্গাইলের মধুপুরে। দুর্দান্ত এই বিদ্যালয়কে দেখে কিছুক্ষণের জন্যে মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকাই যায়। কারণ, এই স্কুলটির অভিনব একটি ব্যাপার আছে। স্কুলের ক্লাসরুমগুলোর বাইরের দেয়ালের ডিজাইন করা হয়েছে রেলগাড়ির বগির মতোন করে। অনেকেই তাই ভালবেসে স্কুলটিকে ডাকে ‘ট্রেন স্কুল’ বলে।

কেন এই অভিনবত্ব? এর উত্তর খুঁজতে একটু শৈশবে ফিরে যেতে হয়। আমরা সবাই ছোট বেলায় মাথা ঝাঁকিয়ে শামসুর রহমানের ট্রেন বিষয়ক একটা কবিতা পড়েছি না? মনে করিয়ে দেই..

“ঝক ঝক ঝক ট্রেন চলেছে
রাত দুপুরে অই।
ট্রেন চলেছে, ট্রেন চলেছে

ট্রেনের বাড়ি কই ?

একটু জিরোয়, ফের ছুটে যায়
মাঠ পেরুলেই বন।
পুলের ওপর বাজনা বাজে
ঝন ঝনাঝন ঝন।

দেশ-বিদেশে বেড়ায় ঘুরে
নেইকো ঘোরার শেষ।
ইচ্ছে হলেই বাজায় বাঁশি,
দিন কেটে যায় বেশ।

থামবে হঠাৎ মজার গাড়ি
একটু কেশে খক।
আমায় নিয়ে ছুটবে আবার
ঝক ঝকাঝক ঝক।”

এই কবিতাটা যখন আমরা পড়ি তখন হয়ত আমাদের বেশিরভাগেরই ট্রেন ভ্রমণ করার সুযোগ হয়নি। অথচ, কি দারুণ একটা কবিতা যা আমাদের কল্পনার জগতে রেলগাড়ি ভ্রমণের অভিজ্ঞতার সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়। ঝক ঝক ঝক শব্দটা মাথায় অনেকক্ষণ ধরে ঘুরতে থাকে। এই কবিতাটি আমার অত্যন্ত প্রিয়। কবিতার এই মাহাত্ম্য বেশি করে ছুঁয়ে গেছে বিদ্যালয়টির প্রধানশিক্ষকের হৃদয়েও। তিনি তাই ভাবলেন, কেমন হয় যদি রেলগাড়ির বাস্তব চিত্রটা বুঝানোর পাশাপাশি ছাত্রছাত্রীদের একটু আনন্দের ব্যবস্থা করা যায়। যেই ভাবা সেই কাজ। নিজেই উদ্যোগ নিলেন। ক্লাসরুমগুলোকে এমনভাবে রঙ করালেন, দেখে মনে সুস্থির একটা ট্রেন ইশটিশানে অপেক্ষা করছে। যাত্রী আসলেই ছেড়ে চলে যাবে। এই ট্রেন যদিও ছেড়ে যায় না ইশটিশান, কিন্তু এই ট্রেনের যাত্রী অর্থাৎ ছাত্রছাত্রীদের দারুণ একটা শিক্ষা সফর তো হয়!

বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষকের যুক্তি হলো, “কোমলমতি শিক্ষার্থীরা যাতে করে মজা পেয়ে লেখাপড়ায় মনযোগী হতে পারে, সেই চিন্তা থেকেই বিদ্যালয়টি ট্রেনের মত আকর্ষনীয় করে সাজানো হয়েছে। কবি শামসুর রাহমানের বিখ্যাত কবিতা ‘ট্রেন’র বাস্তব চিত্র শিক্ষার্থীদের বুঝানোর জন্যই আমি বিদ্যালয়টি ট্রেনের মতো করে রং করেছি। শিক্ষার্থীরা যাতে মজা পেয়ে লেখাপড়ায় মনযোগী হতে পারে সেই চিন্তা থেকেই এটি করা হয়েছে মূলত।”

 

অনেকেই এখন স্কুলটিকে দেখতে আসে। ট্রেন স্কুল রীতিমতো টাঙ্গাইলে জনপ্রিয়। মানুষ এসে মুগ্ধ হয়ে যায়। কত ছোট্ট একটা পরিবর্তন শিক্ষার পরিবেশকে কি আনন্দদায়ক করে তুলতে পারে। শিক্ষার্থীরা পড়ালেখা করতে এসে হাসিখুশি থাকছে, আনন্দ নিয়ে উপভোগ করছে সব কিছু, ট্রেন স্কুলের যাত্রী ভেবে নিজেরা কি দারুণ কল্পনার জগতে ডুবে যাচ্ছে কিছুক্ষণ – এই দৃশ্য কার না ভাল লাগবে! এমন অভিনব আইডিয়া আসলে ছড়িয়ে যাওয়া উচিত, শিক্ষার পরিবেশ আনন্দদায়ক হলে শিক্ষাদান আনন্দময় হলে সেই শিক্ষার গভীরতা অনেক বেশি বাস্তবজীবনে কাজে লাগে। পড়ালেখা ভীতিকর না হোক, পড়ালেখা হোক হাসতে হাসতে, আনন্দে, কল্পনায়, ভালবাসায়..