ঢাকা ১১:২১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারী ২০২৫, ৩ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

তিতাসে দু’গ্রুপের পাল্টাপাল্টি সংঘর্ষে আহত ১৫ ঘরবাড়ি ভাংচুর

কবির হোসেন সওদাগর :

কুমিল্লার তিতাসে দু’গ্রুপের পাল্টাপাল্টি সংঘর্ষের ঘটনায় ১৫ আহত হয়েছে। এদের মধ্যে দুজনের অবস্ঙ্ক। সংঘর্ষের পর ঘরবাড়ি ভাংচুর আসবাবপত্র ও গবাদি পশু লুটপাটের অভিযোগ উঠেছে। সোমবার বিকাল ৪টায় এবং মঙ্গলবার সকাল ৯টায় উপজেলার নারান্দিয়া ইউনিয়নের নয়াকান্দি গ্রামে এ দু’দফা সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। উক্ত ঘটনায় একপক্ষের ২টি মামলা রুজু হয়েছে। আটক আছে ৩জন। ঘটনার পর পুনরায় হামলা ও গ্রেফতারের ভয়ে পুরুষ শূন্য হয়ে পড়েছে অর্ধেক গ্রাম।

সরেজমিনে গেলে ¯’ানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, নয়াকান্দি গ্রামের মালয়েশিয়া প্রবাসী ফায়জুলের সমন্ধি উপজেলার কদমতুলী গ্রামের আইয়ুব আলীর সাথে নয়াকান্দি গ্রামের শিপনের বিদেশে ব্যবসায়ী লেনদেনের টাকা নিয়ে দ্বন্ধ চলে আসছিল। আইয়ুব আলী তার বোনের বাড়ি নয়াকান্দিতে বেড়াতে আসলে রবিবার রাত ৯টায় শিপনের বাড়ির সামনে আইয়ুবকে তার লেনদেনের টাকা ফেরত দিতে চাপ দেয়। শিপনের এমন ব্যবহার ভালোভাবে নিতে পারেনি আইয়ুব আলীর বোনের শ^শুর বাড়ীর লোকজন। শিপনদের সাথে আইয়ুব আলীর বোনের জামাই ফায়জুলদের আগে থেকে মামলা মোকাদ্দমা নিয়ে দ্বন্ধ চলে আসছিল। পূর্বের একটি মামলার বাদী হলেন আইয়ুব আলীর বোন নাজমা বেগম। অপরদিকে শিপনের ভাই রমজানের সাথে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দ্বন্ধ রয়েছে একই গ্রামের আবেদীন মেম্বার, তাহের আলী, শান্তি মিয়া, আজারুল, রিয়াজুল, রাইজুদ্দিন, তাইজুদ্দিন ও নূরে আলমের।

এদিকে আইয়ুব আলী ও শিপনের ঘটনাকে কেন্দ্র করে পূর্বের দ্বন্ধের বিষয়গুলো পুনরায় সামনে চলে আসে। নয়াকান্দি গ্রামের অর্ধেক অংশ পৃথক হয়ে যায় দুটি গ্রুপে। রমজান গ্রুপ ও আবেদীন মেম্বার গ্রুপে। সোমবার বিকাল ৪টায় প্রকাশ্যে রমজান ও তার গ্রুপের লোকজনদের বাড়িতে হামলা চালায় আবেদীন গ্রুপের লোকজন। এসময় রমজান গ্রুপের লোকজন প্রতিহত করতে গেলে উভয় গ্রুপ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। তখন রমজান গ্রুপের লোকজন মোঃ শামীম হোসেনকে কোমরে, হাতে ও পায়ে কুপিয়ে রক্তাক্ত জখম করে। এসময় রেনু মিয়া, চাঁন বাদশা, ফাইম, তাসমিম, আবু তাহের, গিয়াস উদ্দিন, আবু, অলি উল্লাহ, মামুন, শুভ তারা, মাসুদ ও রনিও আহত হয়। উক্ত ঘটনার পর অ¯’ীয়ভাবে নয়াকান্দি গ্রামের পুলিশ মোতায়েন করা হয়।

এদিকে, মঙ্গলবার সকাল ৯টায় ঢাকা কলেজ মেডিকেলে চিকিৎসাধীন শামীম মারা গেছে এমন খবর ছড়িয়ে পড়লে রমজান ও তার গ্রুপের লোকজনদের বাড়িতে হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ করেন ছালেয়া বেগম, ছেনোয়ারা বেগম, হোসনেয়ারা, জায়েদা আক্তার ও তাজমোহন। তারা অভিযোগ করেন, প্রায় এক থেকে দেড়শ লোকের একটি দল সকালে ২টি বাড়িতে হামলা চালিয়ে রমজান, দিলু মিয়া, হালিম, ডালিম, দুলাল, আনোয়ার, জাকির, আলী মিয়া, ওসমান, কবির, আউয়াল, মন্টু মিয়া, মহিন ও ইসরাফিলের ঘরসহ প্রায় ১৫টি বসতঘর ভাংচুর করে লুটপাট চালায়। লুটপাটের সময় বিভিন্ন আসবাবপত্র, প্রায় ২০ ভরি স্বর্ণ ও ১৩টি গরু নিয়ে গেছে। উক্ত ঘটনায় রমজান গ্রুপের মারাত্মক ভাবে আহত হয় মাহমুদুর রহমানসহ মোস্তফা, মাকসুদুর রহমান, সাদ্দাম হোসেন ও হোসনেয়ারা। এদের মধ্যে মাহমুদুর রহমানকে কুমিল্লা কলেজ মেডিকেলে ভর্তি করা হয়েছে।

ফায়জুলের স্ত্রী নাজমা বেগম বলেন, রমজানদের সাথে পূর্বের একটি মামলার বাদী আমি। আমার ভাইকে তারা আটকিয়ে মামলা তুলে নেয়ার হুমকি দেয় শিপন ও রমজান। সোমবার বিকালে নয়াকান্দি বাজারে যাওয়ার সময় শামীমকে তারা কুপিয়ে মেরে ফেলতে চেয়েছিল। তাকে বাঁচাতে গেলে অন্যান্য লোকদের উপর হামলা চালায় রমজান বাহিনী। আমরা কোন লুটপাট করিনি, শামীম মারা গেছে এমন খবর শোনে রমজান ও তাদের লোকজন রাতেই সবকিছু নিয়ে বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে গেছে।

রমজান হোসেন মুঠুফোনে জানান, শিপনের সাথে আইয়ুব আলীর বিদেশী ব্যবসার টাকা নিয়ে দ্বন্ধ রয়েছে। উক্ত ঘটনাকে কেন্দ্র করে পূর্বের বিরোধের জের ধরে উদ্দেশ্যপ্রোণিতভাবে আবেদিন মেম্বার, তাহের আলী, শান্তি মিয়া, আজারুল, রিয়াজুল, রাইজুদ্দিন, তাইজুদ্দিন ও নূরে আলমের নেতৃত্বে তাদের লোকজন আমার বাড়িতে দু’দফা হামলা চালিয়েছে। ঘরবাড়ি ভাংচুর লুটপাট করে জিনিসপত্রসহ গরু ছাগল নিয়ে গেছে। তারা আমাদের প্রায় ৪০ লাখ টাকার ক্ষতিসাধন করেছে। থানায় অভিযোগ জমা দিলেও মামলা রুজু করা হ”েছ না।

তিতাস থানার অফিসার ইনচার্জ সৈয়দ আহসানুল ইসলাম বলেন, সোমবার বিকাল থেকে ঘটনা¯’লে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। এ ঘটনায় আবেদীন মেম্বার গ্রুপের নাজমা বেগম ও আমির হোসেন বাদী হয়ে দুটি মামলা করেছে। উক্ত মামলায় ৩জন আটক আছে। এরা হলো- ডালিম, উজ্জল ও নেকতার। তবে রমজানের পক্ষ থেকে কোন অভিযোগ পাওয়া যায়নি। অভিযোগ পেলে অবশ্যয় পুলিশ ব্যব¯’া নেবে।

ট্যাগস
আপলোডকারীর তথ্য

মুরাদনগরে ৪৬তম জাতীয় বিজ্ঞান মেলার পুরস্কার বিতরন অনুষ্ঠিত

তিতাসে দু’গ্রুপের পাল্টাপাল্টি সংঘর্ষে আহত ১৫ ঘরবাড়ি ভাংচুর

আপডেট সময় ০৩:৫৩:১৮ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১২ জুন ২০১৯
কবির হোসেন সওদাগর :

কুমিল্লার তিতাসে দু’গ্রুপের পাল্টাপাল্টি সংঘর্ষের ঘটনায় ১৫ আহত হয়েছে। এদের মধ্যে দুজনের অবস্ঙ্ক। সংঘর্ষের পর ঘরবাড়ি ভাংচুর আসবাবপত্র ও গবাদি পশু লুটপাটের অভিযোগ উঠেছে। সোমবার বিকাল ৪টায় এবং মঙ্গলবার সকাল ৯টায় উপজেলার নারান্দিয়া ইউনিয়নের নয়াকান্দি গ্রামে এ দু’দফা সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। উক্ত ঘটনায় একপক্ষের ২টি মামলা রুজু হয়েছে। আটক আছে ৩জন। ঘটনার পর পুনরায় হামলা ও গ্রেফতারের ভয়ে পুরুষ শূন্য হয়ে পড়েছে অর্ধেক গ্রাম।

সরেজমিনে গেলে ¯’ানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, নয়াকান্দি গ্রামের মালয়েশিয়া প্রবাসী ফায়জুলের সমন্ধি উপজেলার কদমতুলী গ্রামের আইয়ুব আলীর সাথে নয়াকান্দি গ্রামের শিপনের বিদেশে ব্যবসায়ী লেনদেনের টাকা নিয়ে দ্বন্ধ চলে আসছিল। আইয়ুব আলী তার বোনের বাড়ি নয়াকান্দিতে বেড়াতে আসলে রবিবার রাত ৯টায় শিপনের বাড়ির সামনে আইয়ুবকে তার লেনদেনের টাকা ফেরত দিতে চাপ দেয়। শিপনের এমন ব্যবহার ভালোভাবে নিতে পারেনি আইয়ুব আলীর বোনের শ^শুর বাড়ীর লোকজন। শিপনদের সাথে আইয়ুব আলীর বোনের জামাই ফায়জুলদের আগে থেকে মামলা মোকাদ্দমা নিয়ে দ্বন্ধ চলে আসছিল। পূর্বের একটি মামলার বাদী হলেন আইয়ুব আলীর বোন নাজমা বেগম। অপরদিকে শিপনের ভাই রমজানের সাথে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দ্বন্ধ রয়েছে একই গ্রামের আবেদীন মেম্বার, তাহের আলী, শান্তি মিয়া, আজারুল, রিয়াজুল, রাইজুদ্দিন, তাইজুদ্দিন ও নূরে আলমের।

এদিকে আইয়ুব আলী ও শিপনের ঘটনাকে কেন্দ্র করে পূর্বের দ্বন্ধের বিষয়গুলো পুনরায় সামনে চলে আসে। নয়াকান্দি গ্রামের অর্ধেক অংশ পৃথক হয়ে যায় দুটি গ্রুপে। রমজান গ্রুপ ও আবেদীন মেম্বার গ্রুপে। সোমবার বিকাল ৪টায় প্রকাশ্যে রমজান ও তার গ্রুপের লোকজনদের বাড়িতে হামলা চালায় আবেদীন গ্রুপের লোকজন। এসময় রমজান গ্রুপের লোকজন প্রতিহত করতে গেলে উভয় গ্রুপ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। তখন রমজান গ্রুপের লোকজন মোঃ শামীম হোসেনকে কোমরে, হাতে ও পায়ে কুপিয়ে রক্তাক্ত জখম করে। এসময় রেনু মিয়া, চাঁন বাদশা, ফাইম, তাসমিম, আবু তাহের, গিয়াস উদ্দিন, আবু, অলি উল্লাহ, মামুন, শুভ তারা, মাসুদ ও রনিও আহত হয়। উক্ত ঘটনার পর অ¯’ীয়ভাবে নয়াকান্দি গ্রামের পুলিশ মোতায়েন করা হয়।

এদিকে, মঙ্গলবার সকাল ৯টায় ঢাকা কলেজ মেডিকেলে চিকিৎসাধীন শামীম মারা গেছে এমন খবর ছড়িয়ে পড়লে রমজান ও তার গ্রুপের লোকজনদের বাড়িতে হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ করেন ছালেয়া বেগম, ছেনোয়ারা বেগম, হোসনেয়ারা, জায়েদা আক্তার ও তাজমোহন। তারা অভিযোগ করেন, প্রায় এক থেকে দেড়শ লোকের একটি দল সকালে ২টি বাড়িতে হামলা চালিয়ে রমজান, দিলু মিয়া, হালিম, ডালিম, দুলাল, আনোয়ার, জাকির, আলী মিয়া, ওসমান, কবির, আউয়াল, মন্টু মিয়া, মহিন ও ইসরাফিলের ঘরসহ প্রায় ১৫টি বসতঘর ভাংচুর করে লুটপাট চালায়। লুটপাটের সময় বিভিন্ন আসবাবপত্র, প্রায় ২০ ভরি স্বর্ণ ও ১৩টি গরু নিয়ে গেছে। উক্ত ঘটনায় রমজান গ্রুপের মারাত্মক ভাবে আহত হয় মাহমুদুর রহমানসহ মোস্তফা, মাকসুদুর রহমান, সাদ্দাম হোসেন ও হোসনেয়ারা। এদের মধ্যে মাহমুদুর রহমানকে কুমিল্লা কলেজ মেডিকেলে ভর্তি করা হয়েছে।

ফায়জুলের স্ত্রী নাজমা বেগম বলেন, রমজানদের সাথে পূর্বের একটি মামলার বাদী আমি। আমার ভাইকে তারা আটকিয়ে মামলা তুলে নেয়ার হুমকি দেয় শিপন ও রমজান। সোমবার বিকালে নয়াকান্দি বাজারে যাওয়ার সময় শামীমকে তারা কুপিয়ে মেরে ফেলতে চেয়েছিল। তাকে বাঁচাতে গেলে অন্যান্য লোকদের উপর হামলা চালায় রমজান বাহিনী। আমরা কোন লুটপাট করিনি, শামীম মারা গেছে এমন খবর শোনে রমজান ও তাদের লোকজন রাতেই সবকিছু নিয়ে বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে গেছে।

রমজান হোসেন মুঠুফোনে জানান, শিপনের সাথে আইয়ুব আলীর বিদেশী ব্যবসার টাকা নিয়ে দ্বন্ধ রয়েছে। উক্ত ঘটনাকে কেন্দ্র করে পূর্বের বিরোধের জের ধরে উদ্দেশ্যপ্রোণিতভাবে আবেদিন মেম্বার, তাহের আলী, শান্তি মিয়া, আজারুল, রিয়াজুল, রাইজুদ্দিন, তাইজুদ্দিন ও নূরে আলমের নেতৃত্বে তাদের লোকজন আমার বাড়িতে দু’দফা হামলা চালিয়েছে। ঘরবাড়ি ভাংচুর লুটপাট করে জিনিসপত্রসহ গরু ছাগল নিয়ে গেছে। তারা আমাদের প্রায় ৪০ লাখ টাকার ক্ষতিসাধন করেছে। থানায় অভিযোগ জমা দিলেও মামলা রুজু করা হ”েছ না।

তিতাস থানার অফিসার ইনচার্জ সৈয়দ আহসানুল ইসলাম বলেন, সোমবার বিকাল থেকে ঘটনা¯’লে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। এ ঘটনায় আবেদীন মেম্বার গ্রুপের নাজমা বেগম ও আমির হোসেন বাদী হয়ে দুটি মামলা করেছে। উক্ত মামলায় ৩জন আটক আছে। এরা হলো- ডালিম, উজ্জল ও নেকতার। তবে রমজানের পক্ষ থেকে কোন অভিযোগ পাওয়া যায়নি। অভিযোগ পেলে অবশ্যয় পুলিশ ব্যব¯’া নেবে।